মানহাজ মাওয়ানিউত তাকফীর বা কাফির আখ্যাদানের প্রতিবন্ধক বিষয় - ০১

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
1,141
Comments
1,333
Solutions
1
Reactions
12,660
শরীআতের বিধান না জানার কারণে অজ্ঞতাবশত কুফরী করা:

কেউ যদি না-জানার কারণে বা অজ্ঞতাবশত কোনো কুফরী কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না। বরং তাকে আগে উক্ত কুফরী কাজের ব্যাপারে শরীআতের বিধান জানাতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

"আর রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে (পাঠিয়েছি), যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে"। (সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৫)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
"আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই"।(সূরা ইসরা, আয়াত: ১৫)

এ আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ তাআলা আগাম সতর্ক না করা পর্যন্ত কাউকে শাস্তি প্রদান করেন না। তাই যাদের কাছে শরীআতের বিধিবিধান পৌঁছেনি বা জানতে পারেনি, তাদেরকে প্রথমে শরীআতের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগত করতে হবে। হাদীসেও এর অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো:

ক. চার ব্যক্তির অভিযোগ সংক্রান্ত হাদীস কিয়ামতের দিন আল্লাহ চার ব্যক্তির ওজর গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করবেন। আসওয়াদ ইবন সারী (রহ:) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, চার ব্যক্তি কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে। একজন বধির, যে কিছুই শুনতে পেতো না। দ্বিতীয়জন বোকা, যার কোনো বিবেক-বুদ্ধি ছিল না। তৃতীয়জন বৃদ্ধ, যার কোনো হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। চতুর্থগুন যার কাছে নবুওয়াতের দাওয়াত পৌঁছেনি। বধির বলবে, হে আল্লাহ! ইসলাম এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পাইনি।' আহাম্মক, বৃদ্ধ ও অবুঝ শিশু বলবে, 'হে আল্লাহ! ইসলাম এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।' আর যার কাছে নবুওয়াতের দাওয়াত পৌঁছেনি সে বলবে, 'হে আল্লাহ! আমার কাছে তো তোমার কোনো রাসূল আসেনি।' আল্লাহ তা'আলা তাদের থেকে অঙ্গীকার নিবেন যে, তোমরা কি আমার বিধান পালন করতে?' অতঃপর আল্লাহ, তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়ে লোক পাঠাবেন। যারা তাঁর কথা শুনে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তারা আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং জাহান্নামের আগুন তাদের জন্য ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে যাবে। আর যারা নির্দেশ অমান্য করে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, তাদেরকে আল্লাহর নাফরমান হিসেবে টেনে হিচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসনাদ আহমাদ ১৬৩০১, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য)

খ. আল্লাহর শস্তি থেকে বাঁচার জন্য আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে উড়িয়ে দেওয়ার অসীয়ত সংক্রান্ত হাদীস। আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) বলেন, তোমাদের আগের এক লোকের কাহিনি। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রচুর ধনসম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন সে তার ছেলেদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করল, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলেন? তারা বলল, আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলল, আমি জীবনে কখনও কোনো নেক আমল করতে পারিনি। আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়ো এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ঐ ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিয়ো। সে মারা গেল। ছেলেরা অসীয়ত অনুযায়ী কাজ করল। আল্লাহ তাআলা তার ছাই জড়ো করে জিজ্ঞেস করলেন, এমন অসীয়ত করতে কে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করল? সে বলল, হে আল্লাহ! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে নিল। আল্লাহ তাকে বললেন, যাও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। (বুখারী, ৩৪৭৮)

ঘটনায় উল্লিখিত ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ক্ষমতাকে অস্বীকার করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কারণ, সে আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার ব্যাপারে অজ্ঞ ও জাহিল ছিল।

- মানহাজুস সালাফ, পৃ: ৪০৬,৪০৭,৪০৮; বিলিভার্স ভিশন পাবলিকেশন্স
 
Back
Top