প্রশ্নোত্তর মহিলা ডাক্তার না থাকলে তখন পুরুষ ডাক্তারের সামনে ডেলিভারির সময় মহিলাদের গোপন স্থান বের করা কি গুনাহ হবে?

Joined
Feb 23, 2023
Threads
367
Comments
419
Reactions
2,143
পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক মহিলাদের সন্তান ডেলিভারির জন্য সিজার বা অস্ত্রোপচার করা: একটি আহ্বান

উত্তর: মূলতঃ স্বামী ছাড়া নারীদের গোপনাঙ্গ দেখা কোন পুরুষদের জন্য (চাই মাহরাম হোক বা নন মাহরাম হোক) অথবা অন্য নারীদের জন্য দেখা বা স্পর্শ করা হারাম। তবে জরুরি চিকিৎসা, সিজারিয়ান সেকশন বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করণ ইত্যাদি অপরিহার্য পরিস্থিতি হলে ভিন্ন কথা।

এ ক্ষেত্রে নারী ডাক্তার দ্বারা তা সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু অভিজ্ঞ নারী ডাক্তার না পাওয়া যায় বা পাওয়া কষ্টসাধ্য হয় তখন পুরুষ ডাক্তার দ্বারা তা সম্পন্ন করা জায়েজ।

তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. সিজারের রুমে তার স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ অথবা একাধিক বিশ্বস্ত নারী (যেমন: অন্যান্য মহিলা ডাক্তার, নার্স, অথবা তার নিকটাত্মীয় ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ) উপস্থিত থাকা আবশ্যক।
২. অত্যাবশ্যকীয় স্থান ছাড়া অসুস্থ নারীর শরীরের অন্য কোথাও স্পর্শ করা বা দেখা হারাম-ডাক্তার বা তার সাথে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের জন্য।
৩. স্বতন্ত্র রুমে পর্দার অন্তরালে তা সম্পন্ন করবে যেন কোনোভাবেই অসুস্থ নারীর গোপনাঙ্গ অন্যদের দৃষ্টিগোচর না হয়।
৪. পুরুষ ডাক্তার এ সময় হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করার চেষ্টা করবে যেন, নারীর শরীরে সরাসরি তার হাতের স্পর্শ না লাগে।

বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া:

পুরুষ ডাক্তার দ্বারা সিজারিয়ান ডেলিভারির বিধান​


প্রশ্ন: আমাদের দেশে নারী সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করার সময় পুরুষ ডাক্তাররা অপারেশন রুমে উপস্থিত থাকেন এবং তারা নারীর শরীরের গোপন অংশ দেখতে পান। এটা কি জরুরি প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত? কী করা উচিত? কারণ আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীই সিজার করেন। স্বাভাবিক প্রসব কঠিন। এবং অপারেশন রুমে নারী-পুরুষ মিশ্রিত পরিবেশ থাকে। এ বিষয়ে আপনাদের দিকনির্দেশনা কী? বারাকাল্লাহু ফীকুম।

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর।

খতিব শারবিনি [মিসরের বিখ্যাত ফকিহ, মুফাসসি ও নাহুবিদ মৃত্যু: ৯৭৭ হিজরি মোতাবেক ১৫৭০ খৃষ্টাব্দ]

(মুগনি আল-মুহতাজ) গ্রন্থে বলেন:

(وَ) اعْلَمْ أَنَّ مَا تَقَدَّمَ مِنْ حُرْمَةِ النَّظَرِ، وَالْمَسِّ هُوَ حَيْثُ لَا حَاجَةَ إلَيْهِمَا. وَأَمَّا عِنْدَ الْحَاجَةِ فَالنَّظَرُ وَالْمَسُّ (مُبَاحَانِ لِفَصْدٍ، وَحِجَامَةٍ، وَعِلَاجٍ) وَلَوْ فِي فَرْجٍ لِلْحَاجَةِ الْمُلْجِئَةِ إلَى ذَلِكَ؛ لِأَنَّ فِي التَّحْرِيمِ حِينَئِذٍ حَرَجًا، فَلِلرَّجُلِ مُدَاوَاةُ الْمَرْأَةِ وَعَكْسُهُ، وَلْيَكُنْ ذَلِكَ بِحَضْرَةِ مَحْرَمٍ أَوْ زَوْجٍ، أَوْ امْرَأَةٍ ثِقَةٍ إنْ جَوَّزْنَا خَلْوَةَ أَجْنَبِيٍّ بِامْرَأَتَيْنِ، وَهُوَ الرَّاجِحُ كَمَا سَيَأْتِي فِي الْعدَدِ إنْ شَاءَ اللَّهُ -تَعَالَى-. وَيُشْتَرَطُ عَدَمُ امْرَأَةٍ يُمْكِنُهَا تَعَاطِي ذَلِكَ مِنْ امْرَأَةٍ وَعَكْسُهُ، كَمَا صَحَّحَهُ فِي زِيَادَةِ الرَّوْضَةِ. انتهى​

"প্রয়োজন ছাড়া নারীর শরীর দেখা এবং স্পর্শ করা হারাম। তবে প্রয়োজনে তা বৈধ, যেমন—শল্যচিকিৎসা, রক্ত নেওয়া, সিঙ্গা লাগানো বা অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এমনকি যদি প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি হয়, তাহলে লজ্জাস্থান পর্যন্ত দেখা ও চিকিৎসা করা বৈধ। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব যদি কেবল পুরুষের ওপর বর্তায়, তাহলে তা অনুমোদিত হবে। তবে সম্ভব হলে স্বামী, মাহরাম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনও বিশ্বস্ত নারী উপস্থিত থাকা উচিত (যদি আমরা দু জন নারীর উপস্থিতিতে পরপুরুষের সাথে নির্জন ঘরে থাকাকে বৈধ বলি-সংখ্যা বিষয়ে এটাই অগ্রাধিকার যোগ্য কথা যেমনটি সামনে আলোচনা আসবে) । এবং যদি এমন কোনও নারী পাওয়া যায়, যিনি এই চিকিৎসা করতে পারেন, তবে তার কাছেই চিকিৎসা নেওয়া আবশ্যক।"

উপরোক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে, যদি অপারেশন রুমে উপস্থিত পুরুষ ডাক্তারদের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজনীয় হয় এবং কোনও নারী ডাক্তার সেই কাজ করার জন্য পাওয়া না যায়, তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তাদের জন্য নারীর শরীর দেখা বৈধ হবে। তবে, এটি কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।

কিন্তু যদি কোনও নারী ডাক্তার পাওয়া যায়, এমনকি সে অমুসলিম হলেও, তাহলে তার দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করাই বাধ্যতামূলক হবে এবং পুরুষ ডাক্তার দিয়ে করানো বৈধ হবে না।

এছাড়া, হাসপাতালে নারী-পুরুষের অবাধ মিশ্রণ ও অপ্রয়োজনীয় সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ, এটি ফিতনার অন্যতম বড় কারণ এবং বিপর্যয়ের দুয়ার খুলে দেয়। আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।”

[উৎস: islamweb]

আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই আল্লামা উসাইমীন রহ. মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরজে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।

সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে।

তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দ্বীনী বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।

সুতরাং এ সংকট থেকে আমাদের দ্বীনী বোনদেরকে রক্ষা করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের দেশের চিন্তাশীল ও দ্বীন দরদী ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

আল্লাহ সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন এবং দ্বীনের সেবায় কাজ করা তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।



উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top