সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর মনমরা হবেন না- পরোপকার করুন

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,144
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212

মনমরা হবেন না- পরোপকার করুন​

অন্যদের নিকট কাজের হওয়া সুখের দিকে নিয়ে যায়। একটি নির্ভরযোগ্য হাদীসে আছে: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন – “আল্লাহ তা'য়ালা যখন বিচার দিবসে তার বান্দার বিচার করবেন তখন তিনি নিশ্চয় তার বান্দাকে বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম অথচ তুমি আমাকে খাওয়াওনি” সে উত্তর দিবে, যখন নাকি আপনি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক তখন আমি আপনাকে কীভাবে খাওয়াতে পারি? তিনি বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে, আমার বান্দা অমুকের পুত্র অমুক ক্ষুধার্ত ছিল কিন্তু তুমি তাকে খেতে দাওনি। হায়! তুমি যদি তাকে খেতে দিতে তবে তুমি তা (অর্থাৎ তার পুরস্কার) আমার নিকট পেতে। হে আদম সন্তান আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম অথচ তুমি আমাকে কিছু পান করতে দাওনি।” সে বলবে, আপনি হলেন সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আপনাকে আমি কীভাবে পান করতে দিতে পারি? তিনি বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে আমার বান্দা অমুকের পুত্র অমুক পিপাসার্ত ছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করতে কিছু দাওনি। হায়! যদি তুমি তাকে পান করাতে হবে তার পুরস্কার আমার নিকট পেতে। “হে আদম সন্তান আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি” সে বলবে, “আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে আসতে পারি? আপনিতো সারা বিশ্বজগতের প্রতিপালক” তিনি বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে, আমার বান্দা অমুকের পুত্র অমুক অসুস্থ ছিল, কিন্তু, তুমি তাকে দেখতে যাওনি। হায়! যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে, তবে তুমি আমাকে তার নিকট পেতে।” এখানে একটি মজার বিষয় হলো যে, হাদীসটির শেষ তৃতীয়াংশে “তুমি তার নিকট আমাকে পেতে।” কথাটি আছে। একথাটি হাদীসটির প্রথম দু'অংশের মতো নয়। সেসব স্থানে আছে– “তুমি তা (অর্থাৎ খাদ্য খেতে দেয়ার ও পানীয় পান করতে দেয়ার পুরস্কার) আমার নিকট পেতে।” পার্থক্যের কারণ হলো এই যে, পরম করুণাময় আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন যাদের মন দুর্দশাগ্রস্ত, যেমনটি অসুস্থ ব্যক্তির মন। এবং আরেকটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “প্রতিটি তাজা কলিজাতে পুরস্কার আছে (অর্থাৎ যে কোন জীবিত সৃষ্টির বা জীবের সেবাতেই পুরস্কার পাওয়া যাবে।)” আরো জেনে রাখুন যে, একটি তৃষ্ণাৰ্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে বনী ইসরাঈলের এক বেশ্যা মহিলাকে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং যে অন্য মানুষদেরকে খাদ্য দিয়ে, পানি দিয়ে এবং তাদের কষ্ট ক্লেশ অভাব-অনটন দূর করে তাদের সেবা করে তার (পুরস্কারের) বিষয়টি কতই না সুন্দর হবে! একখানি সহীহ হাদীসে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যার নিকট অতিরিক্ত পাথেয় আছে, সে যেন এর থেকে যার কোন পাথেয় নেই তাকে দেয়। এবং যার একটি অতিরিক্ত বাহন আছে সে যেন তা তাকে দেয় যার কোন বাহন নেই।” হাতেম তাই তাঁর চাকরকে মেহমান তালাশের আদেশ দিয়ে তাঁর সুন্দর এক কবিতার কয়েকটি পঙক্তিতে বলেছেন- “আগুন জ্বালাও, কেননা রাত্রিটি অবশ্যই ঠাণ্ডা, তুমি যদি আমাকে একজন মেহমান এনে দিতে পার তবে তুমি মুক্ত” এবং তিনি তার স্ত্রীকে বলেছেন- “যখন তুমি খাদ্য প্রস্তুত করবে তখন একজন ক্ষুধার্তের তালাশ করিও, কেননা, আমি একাকী খাই না।” ইবনে মুবারক (রহঃ)-এর প্রতিবেশী একজন ইহুদী ছিল। তিনি নিজের সন্তানদেরকে খাওয়ানোর পূর্বেই সর্বদা সে ইহুদীকে খাওয়াতেন এবং প্রথমে তাকে কাপড় দেয়ার পর তার সন্তানদেরকে কাপড়-চোপড় দিতেন। এক সময় কিছু লোক ইহুদীকে বলেছিল যে, “আমাদের নিকট তোমার বাড়িটি বিক্রি করে দাও।” সে উত্তর করল যে, “আমার বাড়ির দাম দু'হাজার দিনার, এক হাজার বাড়ির মূল্য আরেক হাজার ইবনে মুবারক (রহঃ) প্রতিবেশী হওয়ার কারণে।” আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) একথা শুনে পরমানন্দে চিৎকার দিয়ে বলেন, “হে আল্লাহ! তাকে ইসলামের পথ দেখান” তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছায় ইসলাম কবুল করেছিল। আরেক বার আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক হজ্জ্ব কাফেলার সাথে মক্কায় হজ্জ্ব করতে যাচ্ছিলেন। তিনি কাফেলার এক মহিলাকে নোংরা আবর্জনার স্থান থেকে একটি মরা কাক তুলে নিতে দেখলেন। তিনি তার খাদেমকে এ বিষয়ের তত্ত্ব-তালাশ করার জন্য পাঠালেন। সে যখন মহিলাটিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করল তখন মহিলাটি উত্তর দিল, “তিনদিন যাবৎ আমাদের কিছুই নেই তাই বাধ্য হয়ে একাজ করেছি” আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক যখন একথা শুনলেন তার নয়ন যুগল তখন অশ্রুতে ভরে গেল। তিনি তার সব পাথেয়কে সকল সদস্যের মাঝে বণ্টন করে দিতে আদেশ দিলেন এবং যাত্রা চালিয়ে যাওয়ার মতো কোন পাথেয় না থাকায় তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন এবং সে বছরের জন্য হজ্জ্ব মুলতবি রাখলেন। পরে তিনি দেখলেন যে, কেউ একজন বলছে, তোমার হজ্জ কবুল হয়েছে, যেমনটি হয়েছে তোমার অন্যান্য নেক আমলও এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” মহান আল্লাহ বলেন-

وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ​

“সে সব জিনিসের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যদেরকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়।” (৫৯-সূরা আল হাশর: আয়াত-৯) একজন কবি বলেছেন- “আমি যদি এমন ব্যক্তি হই যে তার বন্ধু থেকে বহুদূরে থাকে, তবুও তাকে আমার সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব করি এবং তার কষ্ট লাঘব করার ইচ্ছা রাখি। যদি সে চমৎকার নতুন পোশাকে সাজসজ্জা করে তবে আমি বলব না যে, “হায়! সে যে পোশাক পরে আছে তা পরে আমি যদি ধন্য হতাম” আল্লাহর কসম! কতইনা উত্তম আচরণ এবং কতইনা উদার হৃদয়। ভালো কাজে বাড়াবাড়ি করলেও কেউ অনুতপ্ত হয় না। অনুতাপ অনুশোচনা শুধু ভুলের জন্য এবং অন্যায় কৃতকৃর্মের জন্যই, এমনকি সে অন্যায় যদি ছোট খাট অন্যায়ও হয় তবুও।
 
Top