If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডারউইনের নাস্তিক্যবাদী মতাদর্শ সম্পর্কে আপত্তি ওঠে। ১৯৬৪ সালে Biology for Today নামের বইটি এ বিষয়ে স্পষ্ট করে তোলে। যেখানে বলা হয়, ‘ডারউইনের এ মতাদর্শ পুরোপুরি গ্রহণ করার ব্যাপারে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী আপত্তি উত্থাপন করেছেন। আপত্তি সমূহের মধ্যে নীচের দু’টি উল্লেখযোগ্য:
মেণ্ডেলের জেনেটিক্স :
ডারউইনের ‘প্রজাতির উৎস’ (Origin of Species) বই প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রেগর মেণ্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) একটি অখ্যাত পত্রিকায় ১৮৬৬ সালে প্রজনন শাস্ত্র Genetics বা জীবনের বংশানুক্রমিকতা বিষয়ে স্বীয় গবেষণা
প্রকাশ করেন। যা ৩০ বছর পর্যন্ত গোপন ছিল। তাতে ডারউইনের চিন্তাধারার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণিত হয়। Gregor Johann Mendel আধুনিক প্রজনন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা (The founder of the modern science of genetics) হিসাবে পরিচিত। তার বইয়ের নাম ছিল, The Laws of Genetics (1866).
প্রখ্যাত ক্রমবিকাশবাদী Jean Rostand Zuvi The origin book of Evolution (1961, p. 70) বইয়ে লিখেছেন, ‘নব্য ডারউইনবাদ (NeoDarwinism) দাবী করছে যে, ক্রমবিকাশবাদ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত হয়ে গেছে, তা কি বাস্তবিকই সত্য? ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মনে করি না। অন্যদের কথা বাদ দিয়ে আমি নিজে নব্য-ডারউইনবাদ সম্পর্কে কয়েকটি অতি সাধারণ (Banal) প্রশ্ন অবশ্যই তুলব’ (৪৮)।
অতঃপর তিনি বলেন, বিবর্তন তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মেরুদণ্ডহীন জীব মেরুদণ্ড সম্পন্ন জীবে রূপান্তরিত হওয়া সম্ভব নয়। হাত-পা সম্পন্ন জীব থেকে সরীসৃপ গড়ে উঠতে এবং সরীসৃপ থেকে স্তন্যপায়ী জীব সৃষ্টি হওয়াতে বিশ্বাস
স্থাপন করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়’...(৪৫)।
বিবর্তনবাদের ৬টি ভিত্তি :
চার্লস ডারউইন উপস্থাপিত বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ তত্ত্বের মূল ভিত্তি ছয়টি।-
(১) জীবজগতে সন্তান প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির গতি এত তীব্রভাবে চলে যে, সে সবের বংশের বিরাট অংশ ক্রমাগতভাবে ধ্বংস না হ’তে থাকলে তাদের সংখ্যা অগণিত মাত্রায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া অবধারিত।
(২) বসবাস উপযোগী স্থানের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা এবং খাদ্য পরিমাণের অপর্যাপ্ততার ফলে জীবন সংগ্রামের কার্যক্রমই যোগ্যতমের উদ্বর্তনের (Survival of the Fittest) অন্তর্নিহিত কারণ।
(৩) একই প্রজাতির জীবের ব্যক্তিসত্তার দেহ সংগঠনে সামান্য তারতম্য ও পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে। এ পরিবর্তন ও পার্থক্য প্রায়ই বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে।
(৪) পরিবেশের সাথে সঙ্গতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জীবন সংগ্রামের অব্যাহত ও ক্রমাগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতে প্রাণীদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে হালকা ধরনের পরিবর্তনের উদ্ভব হয়, তা জীববংশের স্থিতি ও দৃঢ়তার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তনের ক্রমাগত সমন্বয়ই বেঁচে থাকা বংশগুলিতে বিবর্তন কার্যক্রমের সক্রিয়তার কারণ হয়ে থাকে।
(৫) ক্রমবিবর্তনশীল স্তর ও পর্যায়সমূহ অতিক্রম করার এই কার্যক্রম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অব্যাহত ধারায় কার্যকর হয়ে থাকে।
(৬) জীব-জন্তু এবং প্রজাতি ও জাতি সমূহের অধিকাংশ একটি প্রজাতি অপর একটি প্রজাতির ক্রমবিবর্তিত আকার-আকৃতি বলে স্পষ্ট মনে হয়। যা প্রমাণ করে যে, মানুষ ‘বানর-উল্লুকের’ ক্রমবিকশিত ও বিবর্তিত রূপ। আর এ গোটা ক্রমবিকাশ বা পরিবর্তনের ধারার প্রাথমিক স্তর কোন এককোষ (Life cell) সম্পন্ন জীবাণু হবে বলে ধারণা জন্মে’ (৪৬-৪৭)।
এগুলিই হ’ল ক্রমবিকাশতত্ত্বের সারকথা। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলে একথা অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে যে, ডারউইনের এ তত্ত্ব বিশে−ষণে একবিন্দু অভিনবত্ব নেই। তা থেকে এমন কোন নতুন তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা পূর্বে কারুর জানা ছিল না। ডারউইন ক্রমাগত কয়েক বছরের অবিশ্রান্ত অনুসন্ধান ও চিন্তা-গবেষণার পর বিজ্ঞানের একটি সুষ্ঠু যুক্তি-প্রমাণভিত্তিক তত্ত্ব হিসাবে তাঁর মতকে জনসমক্ষে পেশ করেছেন, তাঁর একমাত্র কৃতিত্ব ও বিশেষত্ব এতটুকুই। কেননা জীবনের ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত চিন্তাধারা প্রাচীন গ্রীক দর্শনের একটি অংশ হিসেবে বর্ণিত ও বিধৃত হয়ে এসেছে বহুকাল আগে থেকেই। জীবনের বিভিন্ন আকার-আকৃতি (Forms of life) সহ বিশ্বলোকের প্রত্যেকটি বস্তু পরিবর্তন ও বিবর্তন লাভ করছে বলে গ্রীক দার্শনিক হিরাক্লিটাস খৃ. পূ. ৫০০ বছর আগেই মত প্রকাশ করেছিলেন (৪৭)।
উপরের আলোচনায় একথা পরিষ্কার যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব স্রেফ একটি ধারণা মাত্র। প্রাকৃতিক নির্বাচন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তন-এর সপক্ষে ডারউইন কোন অকাট্য যুক্তি বা ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। বরং এগুলি সবই আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি (আদম) হ’তে। অতঃপর তার থেকে তার জোড়া (‘হাওয়া’) সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন আট প্রকার গবাদিপশু। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে ত্রিবিধ অন্ধকারে একটার পর একটা সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনিই আল্লাহ। তিনি তোমাদের পালনকর্তা। তারই জন্য সকল রাজত্ব। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছ?’ (যুমার ৩৯/৬)।
আলোচ্য আয়াতে মানব সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে মাটি থেকে আদমকে সৃষ্টি, অতঃপর সিজদা অনুষ্ঠানের পর আল্লাহ আদমের জুড়ি হিসাবে তার অবয়ব হ’তে একাংশ নিয়ে অর্থাৎ তার পাঁজর হ’তে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন।৫ মাটি থেকে সৃষ্ট হওয়ায় আদমের নাম হ’ল ‘আদম’ এবং জীবন্ত আদমের পাঁজর হ’তে সৃষ্ট হওয়ায় তাঁর স্ত্রীর নাম হ’ল ‘হাওয়া’ অর্থ জীবন্ত (কুরতুবী, তাফসীর বাক্বারাহ ৩৪ আয়াত)। আর সেকারণেই নারী জাতি স্বভাবগতভাবে পুরুষের অনুগামী এবং পুরুষ হ’ল কর্তৃত্বশীল (নিসা ৪/৩৪)।
অতঃপর তাদের খাদ্যের জন্য আট প্রকার হালাল পশু সৃষ্টি করা হয়েছে। ভেড়ার নর ও মাদী, দুম্বা ও ছাগলের নর ও মাদী, উটের নর ও মাদী এবং গরুর নর ও মাদী (আন‘আম ৬/১৪৩-১৪৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আরোহণ ও শোভা বর্ধনের জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন বহু কিছু যা তোমরা অবগত নও’ (নাহল ১৬/৮)। এখানে তিনটি প্রাণীর কথা আল্লাহ বলেছেন, যারা একই জাতি ভুক্ত। অথচ হাযার হাযার বছর ধরে এরা একই প্রজাতির আছে, অন্য প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়নি।
একটি বৈজ্ঞানিক আয়াত :
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কেউ বুকে চলে। কেউ দু’পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কেউ চার পায়ে ভর দিয়ে চলে। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (নূর ২৪/৪৫)।
অত্র আয়াতে বলা হয়েছে যে, জীবজগতের সৃষ্টির মূল উপাদান হ’ল পানি। অতঃপর পানি থেকে মাটির সৃষ্টি। অতঃপর মাটি থেকে সবকিছু সৃষ্টি। অথচ একই উপাদানে সৃষ্ট এক একটি জীব এক এক ধরনের। কেউ বুকে ভর দিয়ে চলে। যেমন সাপ, মাছ ইত্যাদি। কেউ দু’পায়ে চলে। যেমন মানুষ। কেউ চার পায়ে ভর দিয়ে চলে। যেমন গরু-ছাগল-মহিষ ইত্যাদি। কে এগুলিতে পার্থক্য ঘটায়, কে এগুলিতে পৃথক মেধা ও কর্ম ক্ষমতা দান করে। তন্মধ্যে দু’পায়ে চলা মানুষকে বিশেষ জ্ঞান ও নৈতিকতা দিয়ে কে তাকে শ্রেষ্ঠজীবে পরিণত করল, বিজ্ঞানের ছাত্ররা কি তা বের করার চেষ্টা করবে না? হ্যাঁ এক সময় তাকে নির্বাক বিস্ময়ে বলে উঠতে হবে, তিনি আর কেউ নন, তিনি ‘আল্লাহ’। তিনিই বিশ্ব চরাচরের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। অথচ স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া সত্ত্বেও ডারউইনের মত জীববিজ্ঞানীরা আসল উৎস খুঁজে পাননি। আল্লাহ তাকে সেপথ দেখাননি। যদিও ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) ‘কোটি কোটি বছর পূর্বে আবদ্ধ পানিতে অতি সরল এককোষী জীবকণা সৃষ্টি হয়েছিল’ বলে অনুমান করেছেন। কতইনা ভাল হ’ত, যদি তিনি কুরআন পড়তেন। যার বিজ্ঞানপূর্ণ আয়াত সমূহ তার জন্মের দেড় হাযার বছর পূর্ব থেকে জগদ্বাসীকে সঠিক পথনির্দেশ দান করে আসছে।
আল্লাহ, মৃত্যু ও পরকালকে অস্বীকারকারী এযুগের অদ্বিতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৮ খৃ.)-এর ধারণা মতে ‘মানুষের মৃত্যু হ’ল তার মস্তিষ্কের মৃত্যু’। যা একটি কম্পিউটারের মত। যখনই এর উপকরণ সমূহ কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখনই এটি থেমে যায়। কম্পিউটার ভেঙ্গে গেলে যেমন তার স্বর্গ বা পরকাল বলে কিছুই থাকেনা, মানুষের অবস্থাও অনুরূপ। অতএব পরকালের ঘটনাবলী একটি ‘রূপকথার গল্প’ (Fairy story) মাত্র। তিনি ২০১১ সালে বলেছিলেন, আমরা চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন। কোন স্রষ্টা নেই। কেউ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি। কেউ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে না। সম্ভবতঃ নেই কোন জান্নাত, নেই কোন পরকাল। তাই আমাদের মহাবিশ্বের মহান নকশার কদর করতে হবে। আমি এই জীবন পেয়ে কৃতজ্ঞ’ (আত-তাহরীক জুন’১৮, ২১/৯ সংখ্যা)। হকিং কিন্তু বলেননি, তিনি তার জীবন কিভাবে পেলেন। তার মস্তিষ্কের কম্পিউটার কে সৃষ্টি করল ও কে থামিয়ে দিল বা ভেঙ্গে দিল। তার দেহটি ১৯৬২ সাল থেকে কেন নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল? সেসময় ২০ বছর বয়সের তরুণ হকিং-কে তার চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া দু’বছরের জীবন পেরিয়ে পরবর্তী ৫৬ বছর বাঁচিয়ে রাখল কে? গত ১৪ই মার্চ’১৮ বুধবার মৃত্যুবরণকারী ‘এযুগের আইনস্টাইন’৬ খ্যাত স্টিফেন হকিং জীবিত থাকতে এসবের কোন উত্তর দিয়ে যাননি। তার ভক্তরাও দিতে পারেননি। পারবেনও না কোনদিন।
সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তো সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ অবতীর্ণ করেছি। বস্তুতঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন’ (নূর ২৪/৪৬)। আর সৃষ্টির নিদর্শনসমূহের চমৎকারিত্বে কেউ খেই হারিয়ে নাস্তিক হয়ে যায়। কেউ উৎসের সন্ধান করে আল্লাহকে খুঁজে পান। আর এটাই হ’ল ছিরাতে মুস্তাক্বীমের সন্ধান লাভ। যা কেবল আল্লাহ্র রহমতেই সম্ভব হয়ে থাকে। যারা এই রহমত লাভ করেছে, তারাই ধন্য। তারাই ইহকালে ও পরকালে সফলকাম।
ক্রোমোজম :
জীবদেহের প্রত্যেকটি কোষে (life cell) এক বিশেষ ধরনের সূক্ষ্ম বস্তু থাকে। তার নাম ‘ক্রোমোজম’ (Chromosome)। প্রত্যেক প্রজাতির জন্য ‘ক্রোমোজম’-এর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন। মানব দেহের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজম থাকে। আর এই ক্রোমোজমই হয় উত্তরাধিকারমূলক গুণের ধারক। এটাই হয় জীবন স্থিত রাখার নিয়ামক। গ্রেগর মেণ্ডেল-এর আবিষ্কার ও পরবর্তীকালের অধিক গবেষণায় একথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে (৫৩)।
মায়ের গর্ভে লালিত ভ্রূণে তো খাদ্যপ্রাণকে রক্তে পরিণত করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু একক ভ্রূণ-কোষ থেকেই অস্থি, মাংস, রক্ত, স্নায়ু ও বিভিন্ন প্রধান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোষ সৃষ্টি এবং প্রত্যেকটির এক একটি বিশেষ কাজে নিযুক্ত হয়ে দৈহিক আকার-আকৃতির পূর্ণত্ব দান বাস্তবিকই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এ কারণেই জনৈক বিজ্ঞানীর স্বতঃস্ফূর্ত জিজ্ঞাসা, মানবদেহ তো একটা ‘বিউটিফুল স্ট্রাকচার’ (Beautiful structure)। মায়ের গর্ভের মধ্যে কে এই ড্রইং আর ডিজাইন, রক্ত-মাংসের এমন নিখুঁত ব্যালেন্স স্থির করে দিয়েছে? সেখানে কোন কারিগর আছে কি? (Is there any architect?)). (১৫৪)। আমরা বলব, নিশ্চয়ই আছেন। আর তিনিই হ’লেন ‘আল্লাহ’। যাকে চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখা যায়না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকে দেখা যায়। বস্তুতঃ এটিই তাঁর অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ডারউইনের বিবর্তনবাদের ৫ম ও ৬ষ্ঠ ধাপ হিসাবে বলা হয়েছে যে, মানুষকে বনমানুষ ও বানরের ক্রমবিকশিত ও উন্নত রূপ ধরে নেয়াই সমীচীন মনে হয়। আর এ গোটা ক্রমবিকাশ ধারার প্রাথমিক ধাপ এককোষ সমন্বিত জীবনের অধিকারী অণুবীক্ষণীমূলক সূক্ষ্মতম কীটই হবে, যা কখনো দুর্ঘটনাবশত অস্তিত্ব লাভ করে থাকবে’ (৬০)।
উপরের আলোচনায় বুঝা যাচ্ছে যে, ক্রমবিকাশবাদের ধারণাটাই কল্পনা নির্ভর। এতে বিজ্ঞানের কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের কাল্পনিক যুক্তি দিয়ে কথিত বিবর্তনবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।... সুতরাং আল্লাহ্র মহান সৃষ্টি এই মানুষকে বনমানুষ ও বানরের ন্যায় নিকৃষ্টতম জন্তুর বংশধর বলা স্রেফ বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু নয়।
William Samson Beck (১৯২৩-২০০৩) তাঁর Modern Science and the Nature বইয়ে (২২৪ পৃ.) লিখেছেন, জীব-জন্তুর বংশে কোন কোন পরিবর্তন বা পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে এ ধারণাই ক্রমবিকাশ
তত্ত্বের ভিত্তি। ডারউইন মেণ্ডেল-এর গবেষণা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাঁর গ্রন্থ ‘অরিজিন অব স্পীসিজ’ থেকে স্পষ্ট মনে হয়, উপার্জিত পরিবর্তন সমূহ বংশানুক্রমিক হবে, এ কল্পনাকে বাস্তব প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ডারউইন দৈহিক পরিবর্তন সমূহকে খুব ভয়ে ভয়ে ও সংকোচের সাথে পেঁচানো পন্থায় পেশ করেছেন’ (৫৩)।
ডারউইনের বইয়ের যেসব নতুন সংস্করণ এ যুগে প্রকাশিত হচ্ছে, তার কোন এক সংস্করণের ভূমিকায় সম্পাদকবৃন্দ নিম্নোক্ত মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন।-
১৮৫৯ সালে ডারউইনের বই প্রকাশের পর ১০ বছরের মধ্যেই (১৮৬৬ সালে) গ্রেগর মেণ্ডেলের ঐতিহাসিক ও বিপ−বী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। আর একথা সত্য যে, ডারউইনের যুগে আঙ্গিক পরিবর্তনের বংশানুক্রমিক সংক্রমণ নির্ভুলভাবে বুঝতে পারা যায়নি। এখন মানুষ চিন্তা করে যে, ডারউইন যদি মেণ্ডেলের প্রবন্ধ পাঠ করতে পারতেন, তাহ’লে তাঁর অবস্থা কি দাঁড়াত? বর্তমানে আমরা মেণ্ডেল প্রদর্শিত চিন্তার নবতর পদ্ধতিতে জানতে পেরেছি যে, বংশানুক্রমিক বস্তুর বিশেষ একক (টহরঃ) জিন যেমন নির্দিষ্ট, তেমনি মিশ্রণ অযোগ্য। অর্থাৎ এক প্রজাতির জিন অন্য প্রজাতির জিন-এ রূপান্তরিত বা সংক্রমিত হ’তে পারে না। তা বংশানুক্রমিক সংক্রমণে মূলতঃ পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র এবং নিজস্ব কোষের কেন্দ্রবিন্দুতে বন্দী।... এসব এককে পরিবর্তন অর্থাৎ জিন-এ পরিবর্তন সমূহ সব সময় আকস্মিকভাবেই সংঘটিত হয়ে থাকে। হয়ে থাকে কোষ সমূহের উপরিভাগে এবং পরিবর্তন কার্যক্রম ক্রমবিকাশ মূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসতে পারে না। এ বংশানুক্রমিক পরিবর্তন সমূহের কার্যক্রমে বিশেষ লক্ষ্যযোগ্য বিশেষত্ব এই যে, তা অসংবদ্ধ, পরস্পর সংযোগহীন এবং আকস্মিক। অধিকন্তু এসবের প্রতিক্রিয়ার স্বরূপও আকস্মিক দুর্ঘটনামূলক। তাদের গতি ও লক্ষ্যও অনির্দিষ্ট। এভাবে যে জীবের মধ্যে এসব পরিবর্তন সংঘটিত হয়, তার স্বভাবগত চাহিদার সাথে এসব পরিবর্তনের কোন সংযোগ আছে বলে কোন প্রমাণই পাওয়া যায় না’ (The Origin of Species. Introduction; p. 17. (৬১)।
হাক্সলে (Huxley)-এর ভুল স্বীকার :
টমাস হেনরী হাক্সলে (১৮২৫-১৮৯৫) ডারউইনের (১৮০৯-১৮৮২) মতাদর্শের একজন শক্তিশালী প্রচারক ছিলেন এবং তাঁর প্রতি ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয় সম্পন্ন। জৈব রসায়নে যান্ত্রিক মতবাদটিকে তিনি খুব সুন্দরভাবেই সম্মুখের দিকে অগ্রসর করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই হাক্সলেই শেষ পর্যন্ত স্বীয় পূর্বকালীন যাবতীয় প্রচার ও শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতিবাদ করেছেন এবং মানব জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন যে, তিনি সারা জীবন ধরে যেসব মতবাদ প্রবলভাবে ব্যাপক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে প্রচার করেছেন, সে সবকে তারা যেন প্রত্যাখ্যান করে দেয়’ (৬২)।
মনে হয়, মানুষের বাস্তব জীবনের উপর যান্ত্রিক জৈব মতবাদের কি রকম মারাত্মক প্রভাব প্রতিফলিত হয়, তা হাক্সলে নিজেই যখন গভীরভাবে চিন্তাগবেষণা করে দেখেছেন, তখন এসব মতবাদের প্রতি তাঁর মনে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক হয়েছিল’ (Modern Science and the Nature of life P. 144)।
চলবে...
৫. নিসা ৪/১; বুখারী হা/৫১৮৬; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
৬. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫ খৃ.) স্পষ্টভাবেই বলে গিয়েছেন, Religion without science is blind and Science without religion is lame. ‘বিজ্ঞান ব্যতীত ধর্ম অন্ধ এবং ধর্ম ব্যতীত বিজ্ঞান পঙ্গু’ (Albert Einstein, Religion and Science, New York Times Magazine, November 9, 1930, pp 1-4.)। এ বিষয়ে আরও পাঠ করুন! ‘হকিং-এর পরকাল তত্ত্ব’ (আত-তাহরীক, ১৪/৯ সংখ্যা, জুন ২০১১; লেখক প্রণীত ‘দিগদর্শন’ ২/১৬-১৯ পৃ.)।
(১) এ মতটি বংশানুক্রমিকতা সংক্রান্ত জানা সব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করছে না। যেমন কোন কোন পরিবর্তন কোন বংশানুক্রমিক ধারায় সংক্রমিত হ’ল, আর কোন কোন পরিবর্তন তা হ’ল না বা হ’তে পারল না, এই প্রশ্নের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এ মতটিতে নেই। কিছু পরিবর্তন এতই নগণ্য, সামান্য ও অনুল্লেখ্য (Trivial) যে, তা সম্ভবতঃ জীবন সংগ্রামে একটা দেহকে কোনরূপ সাহায্য করতে সক্ষম নয়।
(২) সামান্য নগণ্য পরিবর্তন সমূহের ক্রমশ একত্র সমাবেশ হওয়ার ফলে অধিকতর জটিল কাঠামো কেমন করে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে, যেমনটি উচ্চতর প্রাণীদেহে (higher organism) পরিদৃষ্ট হয়। ডারউইনের মতবাদ একথারও কোন ব্যাখ্যা দেয় না (Sayles B. Clark and J. Arbert Muold 1964 P. 321). (৩৯)।
এভাবেই ডারউইনের মতাদর্শ (যেমন তিনি উপস্থাপিত করেছেন) ভ্রান্ত ও ত্রুটিযুক্ত (Faulty) প্রমাণিত হয়েছে এবং এর অনেকগুলি দিকই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে (৩৯)।
মেণ্ডেলের জেনেটিক্স :
ডারউইনের ‘প্রজাতির উৎস’ (Origin of Species) বই প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রেগর মেণ্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) একটি অখ্যাত পত্রিকায় ১৮৬৬ সালে প্রজনন শাস্ত্র Genetics বা জীবনের বংশানুক্রমিকতা বিষয়ে স্বীয় গবেষণা
প্রকাশ করেন। যা ৩০ বছর পর্যন্ত গোপন ছিল। তাতে ডারউইনের চিন্তাধারার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণিত হয়। Gregor Johann Mendel আধুনিক প্রজনন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা (The founder of the modern science of genetics) হিসাবে পরিচিত। তার বইয়ের নাম ছিল, The Laws of Genetics (1866).
প্রখ্যাত ক্রমবিকাশবাদী Jean Rostand Zuvi The origin book of Evolution (1961, p. 70) বইয়ে লিখেছেন, ‘নব্য ডারউইনবাদ (NeoDarwinism) দাবী করছে যে, ক্রমবিকাশবাদ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত হয়ে গেছে, তা কি বাস্তবিকই সত্য? ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মনে করি না। অন্যদের কথা বাদ দিয়ে আমি নিজে নব্য-ডারউইনবাদ সম্পর্কে কয়েকটি অতি সাধারণ (Banal) প্রশ্ন অবশ্যই তুলব’ (৪৮)।
অতঃপর তিনি বলেন, বিবর্তন তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মেরুদণ্ডহীন জীব মেরুদণ্ড সম্পন্ন জীবে রূপান্তরিত হওয়া সম্ভব নয়। হাত-পা সম্পন্ন জীব থেকে সরীসৃপ গড়ে উঠতে এবং সরীসৃপ থেকে স্তন্যপায়ী জীব সৃষ্টি হওয়াতে বিশ্বাস
স্থাপন করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়’...(৪৫)।
বিবর্তনবাদের ৬টি ভিত্তি :
চার্লস ডারউইন উপস্থাপিত বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ তত্ত্বের মূল ভিত্তি ছয়টি।-
(১) জীবজগতে সন্তান প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির গতি এত তীব্রভাবে চলে যে, সে সবের বংশের বিরাট অংশ ক্রমাগতভাবে ধ্বংস না হ’তে থাকলে তাদের সংখ্যা অগণিত মাত্রায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া অবধারিত।
(২) বসবাস উপযোগী স্থানের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা এবং খাদ্য পরিমাণের অপর্যাপ্ততার ফলে জীবন সংগ্রামের কার্যক্রমই যোগ্যতমের উদ্বর্তনের (Survival of the Fittest) অন্তর্নিহিত কারণ।
(৩) একই প্রজাতির জীবের ব্যক্তিসত্তার দেহ সংগঠনে সামান্য তারতম্য ও পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে। এ পরিবর্তন ও পার্থক্য প্রায়ই বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে।
(৪) পরিবেশের সাথে সঙ্গতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জীবন সংগ্রামের অব্যাহত ও ক্রমাগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতে প্রাণীদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে হালকা ধরনের পরিবর্তনের উদ্ভব হয়, তা জীববংশের স্থিতি ও দৃঢ়তার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তনের ক্রমাগত সমন্বয়ই বেঁচে থাকা বংশগুলিতে বিবর্তন কার্যক্রমের সক্রিয়তার কারণ হয়ে থাকে।
(৫) ক্রমবিবর্তনশীল স্তর ও পর্যায়সমূহ অতিক্রম করার এই কার্যক্রম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অব্যাহত ধারায় কার্যকর হয়ে থাকে।
(৬) জীব-জন্তু এবং প্রজাতি ও জাতি সমূহের অধিকাংশ একটি প্রজাতি অপর একটি প্রজাতির ক্রমবিবর্তিত আকার-আকৃতি বলে স্পষ্ট মনে হয়। যা প্রমাণ করে যে, মানুষ ‘বানর-উল্লুকের’ ক্রমবিকশিত ও বিবর্তিত রূপ। আর এ গোটা ক্রমবিকাশ বা পরিবর্তনের ধারার প্রাথমিক স্তর কোন এককোষ (Life cell) সম্পন্ন জীবাণু হবে বলে ধারণা জন্মে’ (৪৬-৪৭)।
এগুলিই হ’ল ক্রমবিকাশতত্ত্বের সারকথা। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলে একথা অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে যে, ডারউইনের এ তত্ত্ব বিশে−ষণে একবিন্দু অভিনবত্ব নেই। তা থেকে এমন কোন নতুন তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা পূর্বে কারুর জানা ছিল না। ডারউইন ক্রমাগত কয়েক বছরের অবিশ্রান্ত অনুসন্ধান ও চিন্তা-গবেষণার পর বিজ্ঞানের একটি সুষ্ঠু যুক্তি-প্রমাণভিত্তিক তত্ত্ব হিসাবে তাঁর মতকে জনসমক্ষে পেশ করেছেন, তাঁর একমাত্র কৃতিত্ব ও বিশেষত্ব এতটুকুই। কেননা জীবনের ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত চিন্তাধারা প্রাচীন গ্রীক দর্শনের একটি অংশ হিসেবে বর্ণিত ও বিধৃত হয়ে এসেছে বহুকাল আগে থেকেই। জীবনের বিভিন্ন আকার-আকৃতি (Forms of life) সহ বিশ্বলোকের প্রত্যেকটি বস্তু পরিবর্তন ও বিবর্তন লাভ করছে বলে গ্রীক দার্শনিক হিরাক্লিটাস খৃ. পূ. ৫০০ বছর আগেই মত প্রকাশ করেছিলেন (৪৭)।
উপরের আলোচনায় একথা পরিষ্কার যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব স্রেফ একটি ধারণা মাত্র। প্রাকৃতিক নির্বাচন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তন-এর সপক্ষে ডারউইন কোন অকাট্য যুক্তি বা ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। বরং এগুলি সবই আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি (আদম) হ’তে। অতঃপর তার থেকে তার জোড়া (‘হাওয়া’) সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন আট প্রকার গবাদিপশু। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে ত্রিবিধ অন্ধকারে একটার পর একটা সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনিই আল্লাহ। তিনি তোমাদের পালনকর্তা। তারই জন্য সকল রাজত্ব। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছ?’ (যুমার ৩৯/৬)।
আলোচ্য আয়াতে মানব সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে মাটি থেকে আদমকে সৃষ্টি, অতঃপর সিজদা অনুষ্ঠানের পর আল্লাহ আদমের জুড়ি হিসাবে তার অবয়ব হ’তে একাংশ নিয়ে অর্থাৎ তার পাঁজর হ’তে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন।৫ মাটি থেকে সৃষ্ট হওয়ায় আদমের নাম হ’ল ‘আদম’ এবং জীবন্ত আদমের পাঁজর হ’তে সৃষ্ট হওয়ায় তাঁর স্ত্রীর নাম হ’ল ‘হাওয়া’ অর্থ জীবন্ত (কুরতুবী, তাফসীর বাক্বারাহ ৩৪ আয়াত)। আর সেকারণেই নারী জাতি স্বভাবগতভাবে পুরুষের অনুগামী এবং পুরুষ হ’ল কর্তৃত্বশীল (নিসা ৪/৩৪)।
অতঃপর তাদের খাদ্যের জন্য আট প্রকার হালাল পশু সৃষ্টি করা হয়েছে। ভেড়ার নর ও মাদী, দুম্বা ও ছাগলের নর ও মাদী, উটের নর ও মাদী এবং গরুর নর ও মাদী (আন‘আম ৬/১৪৩-১৪৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আরোহণ ও শোভা বর্ধনের জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন বহু কিছু যা তোমরা অবগত নও’ (নাহল ১৬/৮)। এখানে তিনটি প্রাণীর কথা আল্লাহ বলেছেন, যারা একই জাতি ভুক্ত। অথচ হাযার হাযার বছর ধরে এরা একই প্রজাতির আছে, অন্য প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়নি।
একটি বৈজ্ঞানিক আয়াত :
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কেউ বুকে চলে। কেউ দু’পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কেউ চার পায়ে ভর দিয়ে চলে। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (নূর ২৪/৪৫)।
অত্র আয়াতে বলা হয়েছে যে, জীবজগতের সৃষ্টির মূল উপাদান হ’ল পানি। অতঃপর পানি থেকে মাটির সৃষ্টি। অতঃপর মাটি থেকে সবকিছু সৃষ্টি। অথচ একই উপাদানে সৃষ্ট এক একটি জীব এক এক ধরনের। কেউ বুকে ভর দিয়ে চলে। যেমন সাপ, মাছ ইত্যাদি। কেউ দু’পায়ে চলে। যেমন মানুষ। কেউ চার পায়ে ভর দিয়ে চলে। যেমন গরু-ছাগল-মহিষ ইত্যাদি। কে এগুলিতে পার্থক্য ঘটায়, কে এগুলিতে পৃথক মেধা ও কর্ম ক্ষমতা দান করে। তন্মধ্যে দু’পায়ে চলা মানুষকে বিশেষ জ্ঞান ও নৈতিকতা দিয়ে কে তাকে শ্রেষ্ঠজীবে পরিণত করল, বিজ্ঞানের ছাত্ররা কি তা বের করার চেষ্টা করবে না? হ্যাঁ এক সময় তাকে নির্বাক বিস্ময়ে বলে উঠতে হবে, তিনি আর কেউ নন, তিনি ‘আল্লাহ’। তিনিই বিশ্ব চরাচরের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। অথচ স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া সত্ত্বেও ডারউইনের মত জীববিজ্ঞানীরা আসল উৎস খুঁজে পাননি। আল্লাহ তাকে সেপথ দেখাননি। যদিও ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) ‘কোটি কোটি বছর পূর্বে আবদ্ধ পানিতে অতি সরল এককোষী জীবকণা সৃষ্টি হয়েছিল’ বলে অনুমান করেছেন। কতইনা ভাল হ’ত, যদি তিনি কুরআন পড়তেন। যার বিজ্ঞানপূর্ণ আয়াত সমূহ তার জন্মের দেড় হাযার বছর পূর্ব থেকে জগদ্বাসীকে সঠিক পথনির্দেশ দান করে আসছে।
আল্লাহ, মৃত্যু ও পরকালকে অস্বীকারকারী এযুগের অদ্বিতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৮ খৃ.)-এর ধারণা মতে ‘মানুষের মৃত্যু হ’ল তার মস্তিষ্কের মৃত্যু’। যা একটি কম্পিউটারের মত। যখনই এর উপকরণ সমূহ কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখনই এটি থেমে যায়। কম্পিউটার ভেঙ্গে গেলে যেমন তার স্বর্গ বা পরকাল বলে কিছুই থাকেনা, মানুষের অবস্থাও অনুরূপ। অতএব পরকালের ঘটনাবলী একটি ‘রূপকথার গল্প’ (Fairy story) মাত্র। তিনি ২০১১ সালে বলেছিলেন, আমরা চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন। কোন স্রষ্টা নেই। কেউ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি। কেউ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে না। সম্ভবতঃ নেই কোন জান্নাত, নেই কোন পরকাল। তাই আমাদের মহাবিশ্বের মহান নকশার কদর করতে হবে। আমি এই জীবন পেয়ে কৃতজ্ঞ’ (আত-তাহরীক জুন’১৮, ২১/৯ সংখ্যা)। হকিং কিন্তু বলেননি, তিনি তার জীবন কিভাবে পেলেন। তার মস্তিষ্কের কম্পিউটার কে সৃষ্টি করল ও কে থামিয়ে দিল বা ভেঙ্গে দিল। তার দেহটি ১৯৬২ সাল থেকে কেন নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল? সেসময় ২০ বছর বয়সের তরুণ হকিং-কে তার চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া দু’বছরের জীবন পেরিয়ে পরবর্তী ৫৬ বছর বাঁচিয়ে রাখল কে? গত ১৪ই মার্চ’১৮ বুধবার মৃত্যুবরণকারী ‘এযুগের আইনস্টাইন’৬ খ্যাত স্টিফেন হকিং জীবিত থাকতে এসবের কোন উত্তর দিয়ে যাননি। তার ভক্তরাও দিতে পারেননি। পারবেনও না কোনদিন।
সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তো সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ অবতীর্ণ করেছি। বস্তুতঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন’ (নূর ২৪/৪৬)। আর সৃষ্টির নিদর্শনসমূহের চমৎকারিত্বে কেউ খেই হারিয়ে নাস্তিক হয়ে যায়। কেউ উৎসের সন্ধান করে আল্লাহকে খুঁজে পান। আর এটাই হ’ল ছিরাতে মুস্তাক্বীমের সন্ধান লাভ। যা কেবল আল্লাহ্র রহমতেই সম্ভব হয়ে থাকে। যারা এই রহমত লাভ করেছে, তারাই ধন্য। তারাই ইহকালে ও পরকালে সফলকাম।
ক্রোমোজম :
জীবদেহের প্রত্যেকটি কোষে (life cell) এক বিশেষ ধরনের সূক্ষ্ম বস্তু থাকে। তার নাম ‘ক্রোমোজম’ (Chromosome)। প্রত্যেক প্রজাতির জন্য ‘ক্রোমোজম’-এর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন। মানব দেহের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজম থাকে। আর এই ক্রোমোজমই হয় উত্তরাধিকারমূলক গুণের ধারক। এটাই হয় জীবন স্থিত রাখার নিয়ামক। গ্রেগর মেণ্ডেল-এর আবিষ্কার ও পরবর্তীকালের অধিক গবেষণায় একথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে (৫৩)।
মায়ের গর্ভে লালিত ভ্রূণে তো খাদ্যপ্রাণকে রক্তে পরিণত করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু একক ভ্রূণ-কোষ থেকেই অস্থি, মাংস, রক্ত, স্নায়ু ও বিভিন্ন প্রধান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোষ সৃষ্টি এবং প্রত্যেকটির এক একটি বিশেষ কাজে নিযুক্ত হয়ে দৈহিক আকার-আকৃতির পূর্ণত্ব দান বাস্তবিকই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এ কারণেই জনৈক বিজ্ঞানীর স্বতঃস্ফূর্ত জিজ্ঞাসা, মানবদেহ তো একটা ‘বিউটিফুল স্ট্রাকচার’ (Beautiful structure)। মায়ের গর্ভের মধ্যে কে এই ড্রইং আর ডিজাইন, রক্ত-মাংসের এমন নিখুঁত ব্যালেন্স স্থির করে দিয়েছে? সেখানে কোন কারিগর আছে কি? (Is there any architect?)). (১৫৪)। আমরা বলব, নিশ্চয়ই আছেন। আর তিনিই হ’লেন ‘আল্লাহ’। যাকে চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখা যায়না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকে দেখা যায়। বস্তুতঃ এটিই তাঁর অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ডারউইনের বিবর্তনবাদের ৫ম ও ৬ষ্ঠ ধাপ হিসাবে বলা হয়েছে যে, মানুষকে বনমানুষ ও বানরের ক্রমবিকশিত ও উন্নত রূপ ধরে নেয়াই সমীচীন মনে হয়। আর এ গোটা ক্রমবিকাশ ধারার প্রাথমিক ধাপ এককোষ সমন্বিত জীবনের অধিকারী অণুবীক্ষণীমূলক সূক্ষ্মতম কীটই হবে, যা কখনো দুর্ঘটনাবশত অস্তিত্ব লাভ করে থাকবে’ (৬০)।
উপরের আলোচনায় বুঝা যাচ্ছে যে, ক্রমবিকাশবাদের ধারণাটাই কল্পনা নির্ভর। এতে বিজ্ঞানের কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের কাল্পনিক যুক্তি দিয়ে কথিত বিবর্তনবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।... সুতরাং আল্লাহ্র মহান সৃষ্টি এই মানুষকে বনমানুষ ও বানরের ন্যায় নিকৃষ্টতম জন্তুর বংশধর বলা স্রেফ বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু নয়।
William Samson Beck (১৯২৩-২০০৩) তাঁর Modern Science and the Nature বইয়ে (২২৪ পৃ.) লিখেছেন, জীব-জন্তুর বংশে কোন কোন পরিবর্তন বা পার্থক্য সূচিত হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে এ ধারণাই ক্রমবিকাশ
তত্ত্বের ভিত্তি। ডারউইন মেণ্ডেল-এর গবেষণা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাঁর গ্রন্থ ‘অরিজিন অব স্পীসিজ’ থেকে স্পষ্ট মনে হয়, উপার্জিত পরিবর্তন সমূহ বংশানুক্রমিক হবে, এ কল্পনাকে বাস্তব প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ডারউইন দৈহিক পরিবর্তন সমূহকে খুব ভয়ে ভয়ে ও সংকোচের সাথে পেঁচানো পন্থায় পেশ করেছেন’ (৫৩)।
ডারউইনের বইয়ের যেসব নতুন সংস্করণ এ যুগে প্রকাশিত হচ্ছে, তার কোন এক সংস্করণের ভূমিকায় সম্পাদকবৃন্দ নিম্নোক্ত মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন।-
১৮৫৯ সালে ডারউইনের বই প্রকাশের পর ১০ বছরের মধ্যেই (১৮৬৬ সালে) গ্রেগর মেণ্ডেলের ঐতিহাসিক ও বিপ−বী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। আর একথা সত্য যে, ডারউইনের যুগে আঙ্গিক পরিবর্তনের বংশানুক্রমিক সংক্রমণ নির্ভুলভাবে বুঝতে পারা যায়নি। এখন মানুষ চিন্তা করে যে, ডারউইন যদি মেণ্ডেলের প্রবন্ধ পাঠ করতে পারতেন, তাহ’লে তাঁর অবস্থা কি দাঁড়াত? বর্তমানে আমরা মেণ্ডেল প্রদর্শিত চিন্তার নবতর পদ্ধতিতে জানতে পেরেছি যে, বংশানুক্রমিক বস্তুর বিশেষ একক (টহরঃ) জিন যেমন নির্দিষ্ট, তেমনি মিশ্রণ অযোগ্য। অর্থাৎ এক প্রজাতির জিন অন্য প্রজাতির জিন-এ রূপান্তরিত বা সংক্রমিত হ’তে পারে না। তা বংশানুক্রমিক সংক্রমণে মূলতঃ পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র এবং নিজস্ব কোষের কেন্দ্রবিন্দুতে বন্দী।... এসব এককে পরিবর্তন অর্থাৎ জিন-এ পরিবর্তন সমূহ সব সময় আকস্মিকভাবেই সংঘটিত হয়ে থাকে। হয়ে থাকে কোষ সমূহের উপরিভাগে এবং পরিবর্তন কার্যক্রম ক্রমবিকাশ মূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসতে পারে না। এ বংশানুক্রমিক পরিবর্তন সমূহের কার্যক্রমে বিশেষ লক্ষ্যযোগ্য বিশেষত্ব এই যে, তা অসংবদ্ধ, পরস্পর সংযোগহীন এবং আকস্মিক। অধিকন্তু এসবের প্রতিক্রিয়ার স্বরূপও আকস্মিক দুর্ঘটনামূলক। তাদের গতি ও লক্ষ্যও অনির্দিষ্ট। এভাবে যে জীবের মধ্যে এসব পরিবর্তন সংঘটিত হয়, তার স্বভাবগত চাহিদার সাথে এসব পরিবর্তনের কোন সংযোগ আছে বলে কোন প্রমাণই পাওয়া যায় না’ (The Origin of Species. Introduction; p. 17. (৬১)।
হাক্সলে (Huxley)-এর ভুল স্বীকার :
টমাস হেনরী হাক্সলে (১৮২৫-১৮৯৫) ডারউইনের (১৮০৯-১৮৮২) মতাদর্শের একজন শক্তিশালী প্রচারক ছিলেন এবং তাঁর প্রতি ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয় সম্পন্ন। জৈব রসায়নে যান্ত্রিক মতবাদটিকে তিনি খুব সুন্দরভাবেই সম্মুখের দিকে অগ্রসর করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই হাক্সলেই শেষ পর্যন্ত স্বীয় পূর্বকালীন যাবতীয় প্রচার ও শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতিবাদ করেছেন এবং মানব জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন যে, তিনি সারা জীবন ধরে যেসব মতবাদ প্রবলভাবে ব্যাপক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে প্রচার করেছেন, সে সবকে তারা যেন প্রত্যাখ্যান করে দেয়’ (৬২)।
মনে হয়, মানুষের বাস্তব জীবনের উপর যান্ত্রিক জৈব মতবাদের কি রকম মারাত্মক প্রভাব প্রতিফলিত হয়, তা হাক্সলে নিজেই যখন গভীরভাবে চিন্তাগবেষণা করে দেখেছেন, তখন এসব মতবাদের প্রতি তাঁর মনে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক হয়েছিল’ (Modern Science and the Nature of life P. 144)।
চলবে...
৫. নিসা ৪/১; বুখারী হা/৫১৮৬; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
৬. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫ খৃ.) স্পষ্টভাবেই বলে গিয়েছেন, Religion without science is blind and Science without religion is lame. ‘বিজ্ঞান ব্যতীত ধর্ম অন্ধ এবং ধর্ম ব্যতীত বিজ্ঞান পঙ্গু’ (Albert Einstein, Religion and Science, New York Times Magazine, November 9, 1930, pp 1-4.)। এ বিষয়ে আরও পাঠ করুন! ‘হকিং-এর পরকাল তত্ত্ব’ (আত-তাহরীক, ১৪/৯ সংখ্যা, জুন ২০১১; লেখক প্রণীত ‘দিগদর্শন’ ২/১৬-১৯ পৃ.)।