মানুষ বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে কেন? - বিবর্তনবাদের বিভ্রান্তি ৮

Habib Bin TofajjalVerified member

If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
690
Comments
1,228
Solutions
17
Reactions
7,152
পাঁচটি কারণে মানুষ বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে। (১) স্কুল জীবনের শুরু থেকেই এগুলি চূড়ান্ত সত্য বলে শিখানো হয়। (২) তাদের ধারণায় ধর্ম সৃষ্টি রহস্যের কোন বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারে না। (৩) ধর্মীয় ব্যাখ্যা মেনে নিলে ধর্মের বিধি-বিধানও মানতে হবে- যা বিজ্ঞানীদের অনেকের পক্ষে চিন্তারও বাইরে। যেমন স্যার আর্থার কীথ বলেন, Evolution is unproved and unprovable. We believe it only, because the only alternative, is special creation and that is unthinkable. ‘বিবর্তন অপ্রমাণিত এবং অপ্রমাণযোগ্য। তবু আমরা বিশ্বাস করি শুধু এজন্য যে, তা বিশ্বাস না করলে তার বিকল্প হিসাবে বিশেষ সৃষ্টিকর্মকে মেনে নিতে হয়। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা অচিন্ত্যনীয়’ (১৪৪-১৪৫)। অথচ এটি আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক আচরণ নয়। বরং তাদের উচিৎ ছিল সত্যকে মেনে নেওয়া। (৪) প্রায় দেশে শাসন কর্তৃপক্ষ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ এমনকি এক শ্রেণীর ধর্মপ্রচারক ক্রমবিকাশবাদকে চূড়ান্ত সত্যরূপে প্রচার করে থাকেন। (৫) এই মত গ্রহণের উপরেই বিজ্ঞানে ডিগ্রী অর্জন নির্ভর করে। সেকারণ শিক্ষার্থীরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় একে সত্য বলে মেনে নেয়’ (১৪৭)।

হাক্সলের কৈফিয়ত

বিবর্তনবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হাক্সলে (১৮২৫-১৮৯৫) বিবর্তনবাদের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দানে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা নিস্কৃতি চেয়েছিলাম বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে এবং বিশেষ ধরনের নৈতিকতা থেকে।... কেননা তা আমাদের যৌন স্বাধীনতার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল’ (১৪৬)। অথচ বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব ছিল নিরাসক্তভাবে সত্যকে মেনে নেওয়া ও নৈতিক মূল্যবোধকে সমর্থন দেওয়া। কিন্তু তার বদলে মাদী বানরের ন্যায় মরা বাচ্চাকে জীবন্ত মনে করে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ানো তাদের নিকট কারু কাম্য নয়। বস্তুতঃ মানুষকে বানরের বংশধর বানাতে পারলেই তাদের স্বাধীন যৌনাচার ও স্বেচ্ছাচারকে বৈধ করা সম্ভব হয়। অথচ প্রকৃত মানুষ কখনো নৈতিকতার বন্ধন ছিন্ন করতে পারে না।

কুরআনের পথনির্দেশ

আল্লাহ বলেন, ‘বল, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন?’ (আনকাবূত ২৯/২০)। তিনি বলেন, ‘তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনিই এর পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তাঁর জন্য খুবই সহজ। বস্তুতঃ আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (রূম ৩০/২৭)।

উক্ত আয়াতদ্বয়ের প্রকাশভঙ্গী থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সৃষ্টিরহস্য উদ্ঘাটন মানবীয় যোগ্যতা ও ক্ষমতার পক্ষে কিছুমাত্র অসম্ভব নয়। আর সে অনুসন্ধান-অভিযানের ফলে যা কিছু লাভ করা গেছে, তা হ’ল এই যে, বিশ্বলোকের সৃষ্টি সংক্রান্ত বিস্ময়কর তথ্য সমূহের প্রতি পদে পদে একজন মহাজ্ঞানী ও মহাশক্তিমান সৃষ্টিকর্তারই সন্ধান দেয়। আর নিশ্চিতভাবে সৃষ্টির পুনরাবৃত্তিই সৃষ্টির সূচনার অকাট্য সাক্ষী।

ডারউইনের ক্রমবিকাশবাদ ও বিবর্তনবাদ যখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রত্যেক প্রজাতির ক্রোমোজম ও জিন (Gene) যখন পৃথক সাব্যস্ত হয়েছে, তখন নিঃসন্দেহে এটাও মেনে নিতে হবে যে, এসবের প্রাথমিক জীবন কোষ স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই জীবন কোষ কোন ‘দুর্ঘটনা’ বশতঃ (accidentally) নয়, বরং সুপরিকল্পিতভাবে (Planned way) আল্লাহর কুদরতেই সৃষ্টি হয়েছে, অন্য কোনভাবে নয়। আল্লাহ বলেন, ‘সাবধান! সৃষ্টি ও আদেশের মালিক কেবল তিনিই। বিশ্বপালক আল্লাহ বরকতময়’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)। তিনি বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় কর্ম পরিচালনা করেন’ (সাজদাহ ৩২/৪)। তিনি মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে গভীর গবেষণায় লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের আগমন-নির্গমনে জ্ঞানীদের জন্য (আল্লাহর) নিদর্শন সমূহ নিহিত রয়েছে’। ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করোনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!’ (আলে ইমরান ৩/১৯০-৯১)।

তিনটি বক্তব্য
জীবন পথের প্রতি পদে পদে আল্লাহর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট নিদর্শন চোখের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এক্ষণে বিশ্বলোকের অস্তিত্ব পর্যায়ে তিনটি বক্তব্য ছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনাই থাকতে পারে না। (১) বিশ্বলোক কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই অস্তিত্ব লাভ করেছে। (২) সে স্বয়ম্ভূ এবং নিজস্ব শক্তি বলে অস্তিত্ব লাভ করেছে। (৩) কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহ একে সৃষ্টি করেছেন। উক্ত তিনটি বক্তব্যের প্রথম দু’টির উত্তর নিঃসন্দেহে না বাচক। কেবল তৃতীয় সম্ভাবনাটাই নিশ্চিতভাবে হ্যাঁ বাচক (১৫৬)।

অবিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কুরআন বলেছে, ‘তারা কি কোন কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা?’ ‘নাকি তারা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং আসলেই তারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়’ (তূর ৫২/৩৫-৩৬)। বরং ওরা স্রেফ কল্পনা বিলাসী ও প্রবৃত্তি পূজারী। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি তার যিম্মাদার হবে?’ (ফুরক্বান ২৫/৪৩)। নাস্তিকরা অনুমান দিয়ে কুরআনকে অস্বীকার করতে চেয়েছে। অথচ অনুমান কখনো সত্যকে বাতিল করতে পারেনা।

বস্তুতঃ মানুষ বা প্রাণীজগতের যদি ‘স্বয়ম্ভূ’ হওয়ার যোগ্যতাই থাকত, তাহ’লে তার সর্ব প্রকারের অসহায়ত্ব, অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাকে সে নিজেই ঘোচাতে পারত। নিজের সব রোগের প্রতিকার সে নিজেই করে নিত নিজের ক্ষমতা বলে। কিন্তু তা কি সে কখনো পেরেছে?

চলবে...


 
Back
Top