akhi_sakib
Member
- Joined
- Jan 23, 2024
- Threads
- 1
- Comments
- 23
- Reactions
- 21
- Thread Author
- #1
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহি.)
― তিনি বলেন, কারো অধিকার নেই যে, সে উম্মাতের জন্য রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কাউকে খাঁড়া করে তার পথে মানুষকে আহ্বান করবে এবংসেই পথকে কোনো মুসলিমের সাথে আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়া বা না গড়ার মানদণ্ডহিসাবে গ্রহণ করবে। অনুরূপভাবে তার জন্য এটাও বৈধ নয় যে, সে আল্লাহ ও রাসূলছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বক্তব্য এবং যেসব বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ্র ইজমাহয়েছে, সেগুলো ব্যতীত অন্য কোনো বক্তব্যের জন্ম দিয়ে তাকে কোনো মুসলিমেরসাথে আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়া বা না গড়ার মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করবে। বরং এটিবিদ'আতীদের কাজ, যারা উম্মতের জন্য কোনো ব্যক্তি বা বক্তব্যকে দাঁড় করিয়ে তারমাধ্যমে তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে; ফলে তারা এই সৃষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেমিত্রতা বা শত্রুতা পোষণ করে।→ মানুষদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের জন্মদেয় এমন কোনো কাজ করা কোনো শিক্ষকের উচিত নয়। বরং তারা সবাই ভাই ভাইহয়ে থাকবে এবং পরস্পরে সৎ ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করবে। আল্লাহতা'আলা বলেন,"সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে তোমরা একে অন্যের সাহায্য কর। আর পাপ ওসীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহায়তা করো না"(সূরা আল মায়িদা ৫:২)
অনুরূপভাবে কোনো শিক্ষকের এটাও উচিত নয় যে, সে কারো পক্ষ থেকে মানুষদেরঅঙ্গীকার গ্রহণ করবে এমর্মে যে, সে যা-ই চাইবে, তা-ই সমর্থন করতে হবে এবং সেযার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে,অনুরূপভাবে সে যার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, তার সাথে শত্রুতা পোষণ করতেহবে। বরং যে ব্যক্তি এমনটি করবে, সে চেঙ্গিস খানদের মত, যারা কেবল তাদেরকেবন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, যারা তাদেরকে সমর্থন করে, পক্ষান্তরে যারা তাদের সমর্থন করে না, তাদেরকে শত্রু গণ্য করে। মনে রাখতে হবে, তাদের এবং তাদেরঅনুসারীদের উপর আল্লাহ ও তদীয় রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এরআনুগত্যের অঙ্গীকার রয়েছে।
যে ব্যক্তি কাউকে দাঁড় করিয়ে তার সমর্থনকে কেন্দ্র করে কারো সাথে সুসম্পর্কগড়ে বা শত্রুতা পোষণ করে, সে নিম্নোক্ত আয়াতের আওতায় পড়ে যাবে,
যদি তারা (কোনো দল) আল্লাহ তা'আলা ও রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশনার মধ্যে কোনো কিছু বৃদ্ধি করে বা কম করে, যেমন: কেউ তাদের দলেপ্রবেশ করলে হক্ব-বাতিলের তোয়াক্কা না করে তার পক্ষাবলম্বন করা, পক্ষান্তরে কেউতাদের দলে প্রবেশ না করলে সে হক্বের উপরে থাকুক কিংবা বাতিলের উপরে থাকুকতাকে প্রত্যাখ্যান করা । বস্তুত: এটিই হচ্ছে সেই বিভক্তি, আল্লাহ ও তার রসূল ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম যার নিন্দা করেছেন। কেননা আল্লাহ তা'আলা ও তার রসূলছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাআতবদ্ধভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলারনির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পারস্পরিক মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করতে নিষেধকরেছেন। অনুরূপভাবে তারা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পারস্পরিকসহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যেরসহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।"যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে" (সূরা রূম৩০:৩২)
মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহি.)
শাইখ আলবানী রা কে ইসলামের জামাআত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, এবং উনার উত্তর ছিলো এটিঃ
প্রশ্ন: হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান(রা) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিতকরবেন। তারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কল্যাণ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন,কিন্তু আমি কিসে অকল্যাণ আছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম...।” উক্ত হাদীছ থেকেবর্তমানের ইসলামী জামা'আতসমূহ সম্বন্ধে কি ইঙ্গিত পাওয়া যায়? বর্তমান সালাফীআন্দোলনের সংগঠন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
উত্তর: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তার রসূলেরপ্রতি। হুযায়ফা (রা) এর হাদীছটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিতকরে। আর তা হচ্ছে, মুসলিমদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া আদৌ বৈধ নয়; বরংতাদেরকে একটিমাত্র ইমারতের অধীনে এবং সে ইমারতের খলীফার তত্ত্বাবধায়নেএকক জামা'আত হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু যদি কখনও এমন হয় যে, মুসলিমরাদলমত নির্বিশেষে একক খলীফার বায়'আত করে একক জামা'আত হয়ে থাকতেপারছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুসরণ প্রিয়কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো একটি দলে যোগদান করা বৈধ নয়। বিশেষ করেযখন প্রত্যেকটি দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত থাকবে আর দাবী করবে যে,তার একজন নির্দিষ্ট আমীর রয়েছে এবং ঐ আমীরের দলে দলভুক্ত সবাইকে তারকাছে বায়'আত করতে হবে। আর যখন এ বায়'আতকে বাই'আতে কুবরা বা সর্ববৃহৎবায়'আত গণ্য করা হবে, তখন বিষয়টি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মনেরাখতে হবে, বাই'আতে কুবরা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র একক খলীফা ছাড়া অন্য কারোজন্য বৈধ নয়। বিষয়টি তখন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন প্রত্যেকটিজামা'আতের একজন করে বায়'আত গ্রহণকারী আমীর থাকেন এবং তার অনুসারীরাউক্ত বাই'আতের শর্তাবলী এমনভাবে মেনে চলে যে, তাদের কারো জন্য অন্য কারোমতামত গ্রহণের বৈধতা থাকে না। আমি অন্য কোনো আমীরের কথা বললাম না,কারণ আমীর কথাটি বললে অন্তত: নামের ক্ষেত্রে হলেও আমরা যেন তাদের সাথে।ঐক্যমত পোষণ করলাম। সেজন্য আমি আমীর না বলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা আলেমের কথা বললাম। অর্থাৎ তাদের দলভুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তি বা আলেমেরসাথে দলীল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য তার মতামত গ্রহণের সুযোগ থাকে না।অতএব, দলগুলির অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে সেগুলোতে যোগদান করা কোনোমুসলিমের জন্য বৈধ নয়; বরং তাকে একাকী থাকতে হবে। তবে তার মানে এই নয়যে, তার যেসব ভাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্র অনুসরণে আগ্রহী, সে তাদের থেকেদূরে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
আর তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক (সূরা তাওবা ৯:১১৯)
। অর্থাৎ সত্যবাদী যেইহোক না কেন এবং যেখানেই হোক না কেন তাদের সাথে থাক। সে কারণে রসূলছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযায়ফা (রা)-এর হাদীছে দলাদলির প্রত্যেকটিদলকে পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও উম্মতে মুহাম্মাদীকে নিম্নোক্ত হাদীছেসুসংবাদ প্রদান করেছেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি জনগোষ্ঠী হক্বেরউপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে; তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদিস ও হুযায়ফা (রা) এর হাদিছে স্ববিরোধী কোনো বক্তব্য নেই। কেননা হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীছে একদিকে যেমন দলাদলিকরতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ্র অনুসারী সত্যবাদীমুমিনদের সাথে থাকতে বলা হয়েছে এবং তাদেরকে একক কোনো ব্যক্তির অন্ধঅনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এই একক ব্যক্তি যদি দলমত নির্বিশেষেগোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়'আতকৃত ইমাম হন, তাহলে তার অনুসরণ করাজরুরী। মনে রাখতে হবে, মুসলিম উম্মাহ যদি একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির হাতে বায়'আত করে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। আমার ধারণামতে, দলাদলি সৃষ্টিকারীরা যদি ভয়াবহ সেই বিষয়টি জানত, তাহলে দলাদলি থেকেপশ্চাদ্ধাবন করত এবং হুযায়ফা (রা) এর হাদীছের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কাউকে তাদের আমীর হিসাবে গ্রহণ করত না। কারণ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একই সময়ে দু'জন খলীফার বায়'আত সংঘটিত হলে শেষের জনকে তোমরা হত্যা কর।অতএব, সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার জন্য একক খলীফা তৈরী পর্যন্ততাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার এই সময়ে তাদের জন্য কোনক্রমেই ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর বা দলপ্রধান নির্ধারণ ও তার হাতে বায়'আত বৈধ হবে না। কারণ এই বায়'আত মুসলিমদের বিভক্তি ও দলাদলিকে আরো বৃদ্ধি করবে।আমি বিভক্তি সৃষ্টির কথা না বলে বিভক্তি বৃদ্ধির কথা বললাম একারণে যে, দুঃখজনকহলেও সত্য মুসলিমরা ইতোমধ্যে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্তির পরে প্রত্যেকটি দল যদি তাদের আলাদা আলাদা দলীয় প্রধান নির্ধারণ করে, তাহলে এই নেতৃত্ব উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আরো বহু গুণে বৃদ্ধি করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
তোমরা পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। অন্যথায়, তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হবে (সূরা আন আলফাল ৮:৪৬)।
তবে মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে তার সাধ্যানুযায়ী সর্বজন স্বীকৃত একক খলীফাতৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এটিই হচ্ছে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির অর্থ। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়'আত না থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তার জাহেলী মৃত্যু হবে।মুসলিম ১৮৪৯ দলাদলি সৃষ্টিকারীদের মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষ এ হাদীছটি ভুল বুঝে থাকে। তারা মনে করে,প্রত্যেকটি মুসলিমের কাঁধে কারো না কারো বায়'আত অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু হাদীছটির মর্মার্থ তা নয়; বরং এর অর্থ দু'টি:
(১) সমগ্র মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা থাকলে কোনো মুসলিমের জন্য তারবায়'আত পরিত্যাগ করে জামা'আত থেকে পৃথক থাকা বৈধ নয়। আর এ বায়'আত পরিত্যাগ করে কারো মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্যু গণ্য করা হবে।
(২) যদি মুসলিমদের মধ্যে এমন খলীফা না থাকে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যইএমন খলীফা তৈরীর চেষ্টা করতে হবে, সবাই যার বায়আত করবে। এটিই হচ্ছে হাদীছের দ্বিতীয় অর্থ। হাদীছটির দ্বিতীয় এই অর্থকে কিছু ফিক্বহী ক্বায়েদা সমর্থনকরে। যেমন: যা ছাড়া ওয়াজিব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, সেটিও ওয়াজিব।
বুঝা গেল, মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা থাকা ওয়াজিব। এ খলীফা না থাকলে তাকে তৈরীর চেষ্টা করাও ওয়াজিব। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর এমন ইমাম না থাকলেতাদের দলে দলে বিভক্ত হয়ে থাকা ঠিক নয়। কেননা এ দলাদলি তাদের বিভক্তিকে আরো বৃদ্ধি করবে। সেজন্য আমার মতে, যারা কোনো দল বা সংগঠনের দিকেমানুষকে দাওয়াত দেয়, তাদের এ দাওয়াতের উদ্দেশ্য যদি হয় সংগঠন বা দল গঠন,যেসব দলের মূলনীতি ও শর্তসমূহ অন্যান্য সংগঠনের অনেক মূলনীতি থেকে ভিন্ন,তাহলে এ হাদীছে তা থেকে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তবে মুসলিমদেরকে দীন শিক্ষা দিতে এবং তদনুযায়ী আমলের জন্যতাদেরকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে; বরং তা অপরিহার্য বিষয়।কেননা মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা তৈরীর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মানুষকেআগে দীনের জ্ঞানে জ্ঞানী করে তুলতে হবে। অন্যথায় চূড়ান্ত এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না।প্রশ্ন: আন্দোলনধর্মী সংঘবদ্ধ দাওয়াতী কার্যক্রম যদি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতিএবং সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মতামতকি?
উত্তর: বর্তমান প্রচলিত সংগঠন এবং প্রচলিত সুবিন্যস্ত দাওয়াতী কার্যক্রমে আমরাবিশ্বাস করি না। কেননা সংগঠন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনী দায়িত্ব পালনে অক্ষমকরে দেয়। উল্লেখ্য যে, আত-তানযীম শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়;
- প্রথমত: এটি ব্যাপক অর্থে গোপন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে।
- দ্বিতীয়ত: সংক্ষিপ্ত পরিসরে এটি তাফসীর, হাদীছ, ফিকহ, আরবী ব্যাকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে মুসলিমদেরকে পাঠদানের সুবিন্যস্ত বন্দোবস্তকে বুঝায়। তবে এ ধরনের প্রশ্নে সাধারণতঃ দ্বিতীয় অর্থটি উদ্দেশ্য নয়; বরং দলাদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়াই এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য।
এখানে আমি একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে বিষয়ে বিশেষকরে ভাল মনের অনেক মানুষ সজাগ নন; বর্তমান ইসলামী বিশ্বে বিপ্লব ও জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ২০/৩০ বছর আগে ছিল না। আমার মত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলতে পারবেন যে, আগে এসব ছিল না। বর্তমান এ জাগরণের সাথে একই ধাঁচে যুক্ত হয়েছে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান। ইদানীং শেষোক্ত দাওয়াতের ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং অন্যান্যদলের লোকেরা মনে করছে, দেশ এখন সালাফী দাওয়াতের দখলে। সেকারণে প্রচলিত সালাফী দাওয়াত এখন সালাফী নাম দিয়ে বিভিন্ন দল গঠনের সুযোগ গ্রহণকরছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সালাফী দাওয়াত এসব দলাদলির অনেক ঊর্ধ্বে। সালাফে ছালেহীন কি এমন দলাদলির সৃষ্টি করেছিলেন?! কখনই না। এসব দলাদলি তো দূরের কথা তারা এমনকি রাজনৈতিক দলাদলিতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। এসব দলাদলি ইসলাম পরিপন্থী। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছেএবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত(সূরা আর রূম ৩০:৩১-৩২)।
সত্যিকার অর্থে এটিই হচ্ছে বর্তমান দলাদলির বাস্তব চিত্র। আমার মতে, কোনোদলের সাথে সালাফী শব্দটির ব্যবহার বিদ'আতের সাথে ইসলামী শব্দটি ব্যবহারের মত। যাহোক, সালাফী দাওয়াতে বিশ্বাসীদের মন কাড়ার জন্য এখন এ শব্দটি হাতিয়ারহিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত সালাফী দাওয়াত কখনই কোনো প্রকারদলাদলি সমর্থন করে না, যদিও বিশ্ব সেরা মানুষটিও সে দলাদলির পুরোধা হন।
কেউ দলাদলির দিকে আহ্বান করলেই বুঝতে হবে, সে সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। একদিন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবায়েকেরামের সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় তিনি মাটির উপর সোজা একটি দাগ টেনেনিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন,
নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে চলো না।তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে (সূরা আল আনআম৬ ১৫৩)।
অতঃপর সোজা দাগটির পাশে ছোট ছোট আরো কিছু দাগ টেনে বললেন, এইসোজা দাগটিই হচ্ছে আল্লাহ্র পথ এবং এর দুপাশের দাগগুলি এমন পথ, যেগুলিরপ্রত্যেকটির শেষ প্রান্তে শয়তান রয়েছে। সে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে। সরল-সোজা পথটির আশপাশের পথগুলি শুধুমাত্র প্রাচীন ছুফীদের পথ নয়; বরং আধুনিকনতুন নতুন দলগুলিও উক্ত পথের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে বিভ্রান্ত যেসব পথের কথা বলাহয়েছে, সেগুলোর কোনো কোনোটি আগে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করত এবং রাজনীতিরসাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। যেমন: মুতাযিলা, মুরজিয়া ইত্যাদি। আবার সেসবদলের কোনো কোনটি সরাসরি রাজনৈতিক দল ছিল। যেমন: খারেজী মতবাদ, যার মূলনীতিই হচ্ছে মুসলিম সরকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ।
পরিশেষে বলব, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট ছোট যেসব পথের কথা বলেছেন, সেগুলো তার আঁকা সোজা পথের বাইরের সব পথ, মত ও পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। যদি কেউ বলে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে
এসব দলের প্রয়োজন রয়েছে। জবাবে আমরা বলব, শরী'আত বিরোধী কোনো কাজ করে কোনো প্রকার কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব মুসলিমদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করেফেলছে, প্রত্যেকটি দল নিজের মূলনীতি নিয়ে খুশি থাকছে।প্রশ্ন: মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজে এবং পরহেযগারিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিকসহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে সংঘবদ্ধ দাওয়াতী কাজ-এর সঠিক ব্যাখ্যা কিহবে? কেননা কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নেতৃত্ব এবং আনুগত্য থাকতেহবে। আর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার আমীরেরঅবাধ্য হল, সে স্বয়ং আমার অবাধ্য হল।
উত্তর: উল্লেখিত হাদীছটি ছহীহ। এর অর্থ হচ্ছে, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খলীফা কর্তৃক নিযুক্ত আমীরের অনুসরণ করা ওয়াজিব। প্রশ্নকারী হাদীছটিকে যেব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তা সঠিক নয়, বরং হাদীছটি গোটা মুসলিম উম্মাহ্র একক খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা যেন মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আমাদেরকে পরিচালিত করবেন। যাহোক, মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা যদিআমাদের উপরে কাউকে আমীর হিসাবে নিযুক্ত করেন, তাহলে তার অনুসরণ করা ওয়াজিব। তিনি হুযায়ফা (রা) বর্ণিত ফেতনা সম্পর্কিত হাদীছটি উল্লেখ করার পর বলেন, হাদীছটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হাদীছটিতে বর্তমান মুসলিমদের বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ আজ একদিকে যেমন মুসলিম উম্মাহর প্রতিষ্ঠিত জামা'আত ও খলীফা নেই, অন্যদিকে তেমনি তারা চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি ওমূলনীতির ক্ষেত্রে শতধাবিভক্ত হয়ে গেছে। হাদীছটির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো মুসলিমএমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে কোনো দল, জামা'আত বা সংগঠনে যোগদান করবে না। অর্থাৎ যেহেতু এমন জামা'আত বর্তমানে নেই, যাদের নেতৃত্বে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়'আতকৃত একক খলীফা থাকার কথা, সেহেতু অন্য কোনোজামা'আতে যোগ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
- বইঃ দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়'আত
শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান
উত্তরঃ যুবক এবং সাধারণ মানুষদেরকে নিষিদ্ধ দলাদলি থেকে সতর্ক করা যরূরী। তা হলে মানুষ জাগ্রত জ্ঞান সহকারে থাকতে পারবে। কেননা আজ সাধারণ মানুষও হক মনে করে কিছু কিছু দলের ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে। আর আমরা যদি দলাদলি এবং বিভক্তির ভয়াবহতা মানুষদেরকে না বলি, তাহলে তাদের মধ্যে ভ্রষ্টতা প্রবেশ করবে। শিক্ষিত সমাজের চেয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ভয়টা আরো বেশী। কেননা উলামায়ে কেরাম চুপ থাকলে সাধারণ মানুষ মনে করবে, এটিই হচ্ছে হক।প্রশ্নঃ যুবক এবং সাধারণ মানুষদেরকে দলাদলি ও বিভক্তি সম্পর্কে সতর্ক করা ওলামায়ে কেরামের জন্য জায়েয আছে কি?
- ছাহেল আল-ফাওযান, আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ ফিল মানাহিজিল জাদীদাহ, পৃ: ৬৮