আসমা ওয়াস সিফাত নফী ও ইছবাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সিফাত সাব্যস্ত করণ

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
344
Comments
475
Reactions
5,387
নফী ও ইছবাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সিফাত সাব্যস্ত করণ:

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

وَهُوَ سُبْحَانَهُ قَدْ جَمَعَ فِيمَا وَصَفَ وَسَمَّى بِهِ نَفْسَهُ بَيْنَ النَّفْيِ وَالْإِثْبَات فَلَا عُدُولَ لِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ عَمَّا جَاءَ بِهِ الْمُرْسَلُونَ فَإِنَّهُ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজেকে যেসব সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন এবং তিনি নিজেকে যেই অতি সুন্দর নামে নামকরণ করেছেন, তাতে তিনি নফী এবং ইছবাতকে একত্রিত করেছেন। অর্থাৎ তিনি নিজের সত্তার জন্য সিফাতে কামালিয়া সাব্যস্ত করেছেন এবং নিজেকে সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত করেছেন। সুতরাং রাসূলগণ আল্লাহর আসমা ওয়াস্ সিফাত ও অন্যান্য বিষয়ে যেই সংবাদ নিয়ে এসেছেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা তা থেকে সরে যায়না। কেননা সেটিই হচ্ছে সীরাতুল মুস্তাকীম।



ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তার জন্য আসমা ও সিফাত সাব্যস্ত করতে গিয়ে কুরআনের মধ্যে যেই মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এখানে উহাই বর্ণনা করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথা আসমা এবং সিফাতের বিষয়ে মুমিনদেরও উক্ত মূলনীতির উপর চলা আবশ্যক। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর সকল নাম ও গুণের ক্ষেত্রে নফী ও ইছবাতকে একত্রিত করেছেন। অর্থাৎ একদিকে যেমন তিনি নিজের জন্য আসমা এবং সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, অন্যদিকে নিজের পবিত্র সত্তা হতে সকল দোষ-ত্রুটিকে নফী করেছেন।

এ ক্ষেত্রে নফী অর্থ হচ্ছে, যেসব দোষ-ত্রুটি আল্লাহ তাআলার কামালিয়াতের পরিপন্থী, তাঁর সত্তা হতে সেগুলো সরিয়ে ফেলা ও দূর করে দেয়া। যেমন তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য সমকক্ষ, শরীক, তন্দ্রা-নিদ্রা, মৃত্যু এবং ক্লান্তি ইত্যাদির ধারণা হওয়াকে নফী করেছেন।

আর ইছবাত হচ্ছে, সিফাতে কামালিয়া তথা সুউচ্চ গুণাবলী এবং বড়ত্বের বৈশিষ্টগুলো আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত করা। যেমন সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾

‘‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ (অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সব কিছু সম্পর্কে অবগত), তিনি رحْمَنُ (পরম করুনাময়) এবং رَحِيمُ (অসীম দয়ালু)। তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি مَلِك (মালিক), قُدُّوس (অতি পবিত্র) سَلَام (পরিপূর্ণ শান্তিদাতা) مؤْمِن (নিরাপত্তা দানকারী), مُهَيْمن (রক্ষক), عَزِيز (পরাক্রমশালী), جَبَّار (প্রতাপশালী) এবং مُتَكَبِّر (মহিমান্বিত)। তারা যাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ তাআলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক) এবং مُصَوِّر (রূপদাতা), তাঁর জন্য রয়েছে অনেক সুন্দরতম নাম। আর তিনিই عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাবান)’’। আল্লাহর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর বিষয়ে এমনি আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যার বেশ কিছু নমুনা সম্মানিত শাইখ সামনে উল্লেখ করবেন।

فَلَا عُدُولَ لِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ عَمَّا جَاءَ بِهِ الْمُرْسَلُونَ ‘‘সুতরাং রাসূলগণ আল্লাহর আসমা ওয়াস্ সিফাত ও অন্যান্য বিষয়ে যেই সংবাদ নিয়ে এসেছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা তা থেকে সরে যায়না’’: তারা তা থেকে সরে অন্যদিকে ঝুকে পড়েনা এবং তারা তা থেকে বিচ্যুতও হয়না; বরং রাসূলদের অনুসরণ করে এবং তাদের নীতির উপরই চলে। আল্লাহ তাআলার জন্য অতি উত্তম ও সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত করা এবং সমস্ত মন্দ ও অশোভনীয় বৈশিষ্ট থেকে তাঁকে মুক্ত ও পবিত্র ঘোষণা করাও রাসূলদের আনীত দ্বীনের মধ্যে গণ্য। রাসূলগণ উপরোক্ত মহান মূলনীতিটি অর্থাৎ সিফাতে কামালীয়াগুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা এবং অশোভনীয় স্বভাব থেকে আল্লাহকে পবিত্র করার মূলনীতিটি সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু রাসূলদের শত্রুরা সেই মূলনীতি থেকে সরে পড়েছে।

فَإِنَّهُ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ কেননা সেটিই হচ্ছে সীরাতে মুস্তাকীম: আসমা এবং সিফাতের বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা নবী-রাসূলদের পথ থেকে সরে না যাওয়ার কারণ হলো এ ক্ষেত্রে নবী-রাসূলদের পথই হচ্ছে সীরাতুল মুস্তাকীম। সীরাতুল মুস্তাকীম বলা হয় ঐ সোজা পথকে, যাতে কোন ভিন্নতা ও দলাদলি নেই। সূরা ফাতিহায় এই সীরাতুল মুস্তাকীমের কথাই আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সোজা পথ দেখাও’’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ﴾

‘‘এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ করো। অন্যান্য পথে গমণ করোনা। কারণ সেসব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর পথ হতে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে৷ এই উপদেশ তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারো’’। (সূরা আনআমঃ ১৫৩) আমরা নামাযের প্রত্যেক রাকআতে আল্লাহর কাছে এই দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে এই সরল ও সোজা পথে পরিচালিত করেন।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

صِرَاطُ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ

‘‘ঐ সব লোকের পথ, যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন। তারা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মশীলগণ’’।



ব্যাখ্যা: আকীদাহ এবং অন্যান্য বিষয়ে নবী-রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ হতে যা নিয়ে এসেছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা যেই পথে চলেছে, তাই হচ্ছে সীরাতুল মুস্তাকীম। এটিই হচ্ছে সেই সব লোকের পথ, যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তাদেরকে সর্বপ্রকার নেয়ামত পূর্ণরূপে দান করেছেন, যা তাদেরকে চিরকাল সুখ ও সৌভাগ্যের মধ্যে রাখবে। এই নেয়ামতপ্রাপ্ত লোকেরাই ঐ সব লোক, যাদের পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর কাছে দুআ করার আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং এই চারপ্রকার লোকেরাই আল্লাহর সর্বপ্রকার ও পূর্ণ নেয়ামত পেয়ে ধন্য হবে। তারা হলোঃ

এক. النبيون নবীগণঃ النبي এর বহুবচন হচ্ছে النبيون। তারা হলো ঐসব মহাপুরুষ, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নবুওয়াত ও রেসালাতের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। নবী ও রাসূলের সংজ্ঞা এবং উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।

দুই. الصديقون সত্যবাদীগণঃ الصديق এর বহুবচন الصديقون। যে ব্যক্তি সত্য বলায় এবং সত্যকে সত্যায়ন করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী, তাকে সিদ্দীক বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহর জন্য পূর্ণ মুখলিস (নিবেদিত ও নিষ্ঠাবান) হওয়ার সাথে সাথে যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও পূর্ণ অনুসরণ করে, সেই সিদ্দীক।

তিন. وَالشُّهَدَاءِ শহীদগণঃ شهيد এর বহুবচন الشُّهَدَاءِ। আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে ব্যক্তি নিহত হয়, তাকে শহীদ বলা হয়। শহীদ শব্দটি شهادة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া, উপস্থিত হওয়া। শহীদকে শহীদ বলার কারণ হলো, তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে এবং রহমতের ফেরেশতাগণ তার সাথে উপস্থিত থাকেন।

চার. الصَّالِحِينَ সৎকর্মশীলগণঃ صالح এর বহুবচন الصالحون। সালেহ (সৎকর্মশীল) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে আল্লাহর হকসমূহ এবং আল্লাহর সৃষ্টির হকসমূহ আদায় করে।

صراط শব্দটিকে কখনো আল্লাহর দিকে ইযাফত (সম্বন্ধিত) করা হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ‘‘এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। (সূরা আনআমঃ ১৫৩) সীরাতকে আল্লাহর দিকে ইযাফত করার কারণ হলো, আল্লাহই এই পথকে মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং উহাকে তাদের জন্য ঠিক করেছেন।

আর মানুষ যেহেতু সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর চলে, তাই সীরাতকে মানুষের দিকেও ইযাফত করা হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, عَلَيْهِم صِرَاطُ الَّذِينَ أَنْعَمَتَ اللَّهُ ‘‘আমাদেরকে ঐসব লোকের পথ দেখাও, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো’’। যারা এই পথে চলে আল্লাহ তাআলার এই বাণী: عَلَيْهِم صِرَاطُ الَّذِينَ أَنْعَمَتَ اللَّهُ দ্বারা তাদের ফযীলত ও সম্মানের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তারা হলো ঐ সব লোক, যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন। তারা হলেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্মপরায়ন লোকগণ। এই পথের পথিক যখন জানতে পারবে যে, তাতে রয়েছে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্ম পরায়নগণ, তখন তার অন্তর থেকে সমসাময়িক লোকদের থেকে একাকীত্বের অনুভূতি দূর হয়ে যাবে।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এমন কিছু নমুনা ও দলীল উল্লেখ করেছেন, যা আল্লাহ তাআলার জন্য আসমা ও সিফাত সাব্যস্ত করে। বিভিন্ন অধ্যায় ও শিরোনামে তিনি সেই দলীলগুলো বর্ণনা করেছেন।

সোর্স: শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া
 
Back
Top