প্রবন্ধ তথাকথিত হিউম্যান রাইটস এবং হিউম্যানিজম

Shuaib

Salafi
Salafi User
Joined
Mar 16, 2023
Threads
4
Comments
4
Reactions
65
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘হিউম্যান বিয়িং' নামক সত্তাকেই একমাত্র মানুষ মনে করে। অন্যরা হলো বর্বর, অসভ্য; পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য। তাই এদের জন্য কোনো মানবাধিকার নেই। এদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হোক, হিংস্র পশুর শিকার বানানো হোক কিংবা যত নির্মম আচরণই তাদের সাথে করা হোক, এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না।” মানবাধিকার তখনই লঙ্ঘন হবে, যখন কেউ ইসলাম বাস্তবায়ন করবে কিংবা বাস্তবায়ন করতে চাইবে।

নিশ্চিতভাবেই ইসলাম কথিত আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটসকে প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামে হুকুকুল ইবাদের কনসেপ্ট আছে। যার অর্থ হলো বান্দার হক, গোলামের অধিকার। পক্ষান্তরে হিউম্যান রাইটস এমন সত্তার অধিকার, যে আল্লাহর দাসত্ব অস্বীকার করে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তি ও মানুষের বেঁধে দেওয়া বিধানের গোলামি করে। ইসলামে বান্দার অধিকার ও তার সীমা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। অধিকার এমন কোনো বিষয় নয়, যা নিজে নিজেই নির্ধারিত হয়। বরং কোনো কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্দেশ্যে তা নির্ধারণ করে থাকে। একজন মুমিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে নির্ধারণ-ক্ষমতার অধিকারী মানবে। আর একজন কাফের মানবে মানুষকে। যে আল্লাহর এই ক্ষমতা মেনে নেবে, সে মুসলিম থাকবে আর যে আল্লাহর ক্ষমতা প্রত্যাখ্যান করে মানুষের ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি দেবে, সে কাফের হয়ে যাবে।

আমরা অনেক সময় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কোনো কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজের সমালোচনা করি মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে। বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা থেকে এটা অনুপকারী এবং পরাজিত পদ্ধতি। বরং আমাদের দরকার ছিল তাদের হিউম্যান রাইটস চার্টারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা। আমরা যদি আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস চার্টার মেনে নিয়ে প্রশ্ন করি ‘শরিয়াহ আইনে কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়', তা হলে উত্তর আসবে ‘এটা পাশ্চাত্য ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করে।' আর জাতিসংঘের পুরো হিউম্যান চার্টারই তৈরি হয়েছে পাশ্চাত্য স্বাধীনতা, সমতা ও উন্নতির ধারণাকে ভিত্তি করে। স্বাধীনতা, সমতা ও উন্নতির পাশ্চাত্য ধারণার সাথে স্পষ্টতই ইসলামের মৌলিক সংঘর্ষ রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস মোতাবেক শরিয়াহ আইন বর্বর ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সুতরাং আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে হিউম্যান রাইটস নামক কুফুরি আয়োজনকে। এই টার্মকে ঢাল বানিয়ে জগতে বৈধতা পাচ্ছে সমস্ত অন্যায়-অনাচার, বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা, অশ্লীলতা-পাপাচার, কুফর- শিরক। আর নিষিদ্ধ হচ্ছে আল্লাহর দাসত্ব ও ইসলামি শরিয়াহ। আজ সমকামিতাকে মানবাধিকার বলা হচ্ছে, জিনাকে মানবাধিকার বলা হচ্ছে আর এগুলোর শরয়ি দণ্ডবিধিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলা হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে?এই হিউম্যান রাইটস চার্টারের ভিত্তিতে। তাই আমাদের হিউম্যান রাইটস-এর ধারণা প্রত্যাখ্যান করে হুকুকুল ইবাদের ধারণায় ফিরে আসতে হবে। মুসলিম হিসেবে আমরা আল্লাহর দেওয়া অধিকারেরই স্বীকৃতি দিই। এ ছাড়া সবকিছুকেই অনধিকার চর্চা এবং বান্দার অধিকার লঙ্ঘন মনে করি।

হিউম্যান রাইটস ও হিউম্যান বিয়িং মিলে হয় হিউম্যানিজম। হিউম্যানিজমের কালিমা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল ইনসান'। মানুষ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। পুঁজিবাদ, সমাজবাদসহ সব মতবাদ এই কালিমা বিশ্বাস করে। তাই এখানে আমরা সমাজবাদকে আলাদা করে আলোচনায় আনব না। বর্তমান সমাজতান্ত্রিক ব্লকগুলোও এই কালিমাতে বিশ্বাস করে। তাদের পলিসি বাস্তবায়নের পদ্ধতিই শুধু ভিন্ন। তারাও হিউম্যানিজমের চর্চা করে। সব মতবাদের মধ্যমণি হলো এই হিউম্যানিজম।

হিউম্যানিজমের নানা মুখরোচক স্লোগানে সাধারণ মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক ইসলামি ব্যক্তিত্ব প্রতারিত হচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থা মানবসেবার নাম করে মুসলমানদের ঈমানি গাইরাত ও মর্যাদাবোধ নষ্ট করে দিচ্ছে। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার নামে কুফুর ও শিরকের প্রতি মুমিনের সহজাত ঘৃণাকে বিলুপ্ত করে তাকে কুফুরে লিপ্ত করছে। তার কাছে তখন ওয়ালা-বারার মতো ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস হয়ে যায় উগ্রবাদ। ‘মুসলিম হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে' এইজাতীয় নীতিবাক্যের আড়ালে ব্যক্তির চিন্তাচেতনা ও জীবনধারা থেকে দীনের প্রভাব বিলুপ্ত করে দেওয়াই হিউম্যানিজমের প্রধান লক্ষ্য।
 
Back
Top