- Joined
- Mar 15, 2025
- Threads
- 1
- Comments
- 1
- Reactions
- 15
- Thread Author
- #1
(১) তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা :
মহান আল্লাহ বলেন:
‘আর যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে স্তরের উপর স্তর বিশিষ্ট সুউচ্চ প্রাসাদ। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না’ (যুমার ৩৯/২০)।
(২) আল্লাহর উপর ভরসা করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
‘আর যারা ঈমান আনে ও সে অনুযায়ী সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে আমরা অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহে স্থান দেব। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের জন্য। যারা দৃঢ় থাকে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে’ (আনকাবূত ২৯/৫৮-৫৯)।
(৩) ধৈর্যশীল হওয়া :
আল্লাহ বলেন,
‘তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতের কক্ষ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে অভিবাদন ও সালাম দ্বারা। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না সুন্দর সেই আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল!’ (ফুরক্বান ২৫/৭৫-৭৬)।
(৪) মসজিদ নির্মাণ করা :
ওছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।(সহীহ বুখারী হা/৪৫০;সহীহ মুসলিম হা/৫৩৩; মিশকাত হা/৬৯৭।)
অনুরূপভাবে যারা মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করবেন, তাদের জন্যও আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কবুতরের ডিম পাড়ার জায়গা পরিমাণ অথবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’।[ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১২৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৭১; সনদ ছহীহ।]
(৫) নিয়মিত নফল ও সুন্নাতে রাতেবা ছালাত আদায় করা :
উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বারো রাক‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। (সেগুলো হ’ল) যোহরের (ফরয ছালাতের) পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার ছালাতের পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক‘আত (সুন্নাত ছালাত)’। [তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত হা/১১৫৯, সনদ ছহীহ।]
(৬) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করা :
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি (সকাল বেলা) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করবে এবং যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নিমার্ণ করা হবে’।[তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪৭৫৩; ছহীহাহ হা/২৩৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৪০, সনদ হাসান।]
(৭) আল্লাহর পথে হিজরত করা ও জিহাদ করা :
ফাযালা বিন উবায়েদ (রাঃ) বলনে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের এবং মধ্যখানে একটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং হিজরত করল। আর আমি জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের, মধ্যখানে একটি ঘরের এবং জান্নাতের কক্ষসমূহের উপরিভাগে আরেকটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করল। যে ব্যক্তি এই কাজগুলো করবে, সে যদি কল্যাণের সন্ধান পরিত্যাগ না করে এবং মন্দ থেকে পলায়ন করার চেষ্টা নাও করে, (তবুও তার জন্য জান্নাত অবধারিত থাকবে) সে যেখানে চায় সেখানে মৃত্যুবরণ করলেও’।[নাসাঈ হা/৩১৩৩; ইবনু হিববান হা/৪৬১৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৩০০, সনদ ছহীহ।]
(৮) কাতারের ফাঁকা বন্ধ করা :
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁকা বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন'। [তাবারাণী, আল-মু'জামুল আওসাত্ব হা/৫৭৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২, সনদ ছহীহ ।]
(৯) তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া :
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে কতিপয় প্রাসাদ আছে, যেগুলোর ভিতর থেকে বাইরের এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়’। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, “হে আল্লাহ্'র রাসূল! এই প্রাসাদগুলো কাদের জন্য? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য দান করে, নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে (আল্লাহ্'র জন্য) ছালাত আদায় করে'। [তিরমিযী হা/১৯৮৪; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৫৭৪৩, সনদ হাসান ।]
(১০) সদাচরণকারী হওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সদাচরণকারী বান্দাদের জন্য জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে একটি বালাখানার ব্যাপারে যিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া- বিবাদ পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যিম্মাদার'।” [আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান।]
(১১) সালামের প্রসার ঘটানো :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 'জান্নাতে মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ আছে, যার বাইরের দৃশ্য ভিতর থেকে এবং ভিতরের দৃশ্য বাহির থেকে দেখা যায়। মহান আল্লাহ এসব প্রাসাদ সেই সকল লোকের জন্য তৈরী করেছেন, যারা অপরকে খাবার খাওয়ায়, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকলে (তাহাজ্জুদের) ছালাত আদায় করে’।[ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৫০৯; ছহীহুল জামে' হা/৯৪৭, সনদ ছহীহ।]
(১২) মানুষকে খাবার খাওয়ানো :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ আছে, যার বাইরের দৃশ্য ভিতর থেকে এবং ভিতরের দৃশ্য বাহির থেকে দেখা যায়। মহান আল্লাহ এসব প্রাসাদ যাদের জন্য তৈরী করেছেন, তন্মধ্যে অন্যতম হ'ল— যে ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ায়...'।”[ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৫০৯; ছহীহুল জামে' হা/৯৪৭, সনদ ছহীহ। ]
এ সম্পর্কে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিরমিজির ১৯৮৪ নং হাদীসটি যা তাহাজ্জুদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে সেটিও উল্লেখ যোগ্য।
(১৩) নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করা :
ফরয ছিয়ামের পাশাপাশি নিয়মিত নফল ছিয়ামের মাধ্যমে জান্নাতী অট্টালিকার অধিকারী হওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে কতিপয় প্রাসাদ আছে, যেগুলোর ভিতর থেকে বাইরের এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়'। এক বিদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, 'হে আল্লাহ্'র রাসূল! এই প্রাসাদগুলো কাদের জন্য? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য দেয়, নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে আল্লাহ্'র জন্য ছালাত আদায় করে’৷[তিরমিযী হা/১৯৮৪; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৫৭৪৩, সনদ: হাসান ]
(১৪) সূরা ইখলাছ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দশবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি বিশবার পাঠ করবে, তার জন্য দু'টি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার পাঠ করবে, তার জন্য তিনটি প্রাসাদ নিমার্ণ করা হবে। অতঃপর ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্'র রাসূল (ﷺ)! তবে তো আমাদের প্রাসাদেও সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ধারণার চেয়েও অধিক দাতা' ৷ [দারেমী হা/৩৪২৯; হাদীছটি প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটির রিজাল বুখারী- মুসলিমের এবং ছিক্কাত। আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন ।]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘কুল হওয়াল্লাহু আহাদ' বা সূরা ইখলাছ শেষ পর্যন্ত দশবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন' ।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে' হা/৬৪৭২, সনদ হাসান ।]
(১৫) দ্বীনি ভাই ও অসুস্থ-রোগীকে দেখতে যাওয়া :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 'যখন কোন ব্যক্তি তার অসুস্থ (মুসলিম) ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সাথে সাক্ষাত করতে যায়, তখন আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার পথচলা উত্তম হয়েছে, তুমি তো জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে নিলে’ । [আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৭৪, সনদ হাসান। ]
(১৬) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করা :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দার কোন সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, (সন্তানের মৃত্যুতে) আমার বান্দা কি বলেছে? ফেরেশতারা বলে, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন' পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ ‘বায়তুল হামদ’ বা ‘প্ৰশংসালয়’। [তিরমিযী হা/১০২১; ছহীহাহ হা/১৪০৮, সনদ হাসান। ]
(১৭) তর্ক-বিবাদ পরিহার করা :
রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার;[আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান।]
(১৮) কৌতুকের ছলে হ'লেও মিথ্যা পরিহার করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি জান্নাতের মধ্যখানে একটি বাড়ির যিম্মাদার সেই ব্যক্তির জন্য, যে কৌতুকবশত হ'লেও মিথ্যা বলা পরিহার করে'।[আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান ।]
(১৯) বাজারে প্রবেশের দো'আ পড়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,'যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে বলে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুওয়া হায়য়ুন, লা-ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খয়রু, ওয়াহুয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর' (অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা'বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই সব কিছুর ধারক এবং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ, তিনি সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান) আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরী করেন'।[তিরমিযী হা/৩৪২৯; মিশকাত হা/২৪৩১। সনদ হাসান।]
(২০) অন্যকে জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণকারী আমল শিক্ষা দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি অন্য কোন মানুষকে কোন নেক কাজের পথ দেখায় (উৎসাহিত করে), সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমান ছওয়াব পায়’৷ ’’ ( সহীহ মুসলিম ৪৭৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না-- সহীহ মুসলিম--৬৬৯৭ (সহীহ)
সংকলন: আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।)
সম্পাদনা: রাজিব রেজা
© আত তাহরীক
মহান আল্লাহ বলেন:
لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِنْ فَوْقِهَا غُرَفٌ مَبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللهِ لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيعَادَ،
‘আর যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে স্তরের উপর স্তর বিশিষ্ট সুউচ্চ প্রাসাদ। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না’ (যুমার ৩৯/২০)।
(২) আল্লাহর উপর ভরসা করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ، الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
‘আর যারা ঈমান আনে ও সে অনুযায়ী সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে আমরা অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহে স্থান দেব। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের জন্য। যারা দৃঢ় থাকে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে’ (আনকাবূত ২৯/৫৮-৫৯)।
(৩) ধৈর্যশীল হওয়া :
আল্লাহ বলেন,
أُولَئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا، خَالِدِينَ فِيهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا
‘তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতের কক্ষ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে অভিবাদন ও সালাম দ্বারা। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না সুন্দর সেই আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল!’ (ফুরক্বান ২৫/৭৫-৭৬)।
(৪) মসজিদ নির্মাণ করা :
ওছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) বলেন,
مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ،
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।(সহীহ বুখারী হা/৪৫০;সহীহ মুসলিম হা/৫৩৩; মিশকাত হা/৬৯৭।)
অনুরূপভাবে যারা মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করবেন, তাদের জন্যও আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ، أَوْ أَصْغَرَ، بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ،
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কবুতরের ডিম পাড়ার জায়গা পরিমাণ অথবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’।[ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১২৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৭১; সনদ ছহীহ।]
(৫) নিয়মিত নফল ও সুন্নাতে রাতেবা ছালাত আদায় করা :
উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الجَنَّةِ: أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ المَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الْفَجْرِ صَلَاةِ الْغَدَاةِ،
‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বারো রাক‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। (সেগুলো হ’ল) যোহরের (ফরয ছালাতের) পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার ছালাতের পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক‘আত (সুন্নাত ছালাত)’। [তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত হা/১১৫৯, সনদ ছহীহ।]
(৬) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করা :
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الضُّحَى أَرْبَعًا، وَقَبْلَ الْأُولَى أَرْبَعًا بُنِيَ لَهُ بِهَا بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ،
‘যে ব্যক্তি (সকাল বেলা) চার রাক‘আত চাশতের ছালাত আদায় করবে এবং যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নিমার্ণ করা হবে’।[তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪৭৫৩; ছহীহাহ হা/২৩৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৪০, সনদ হাসান।]
(৭) আল্লাহর পথে হিজরত করা ও জিহাদ করা :
ফাযালা বিন উবায়েদ (রাঃ) বলনে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
أَنَا زَعِيمٌ، وَالزَّعِيمُ الْحَمِيلُ لِمَنْ آمَنَ بِي، وَأَسْلَمَ وَهَاجَرَ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ، وَأَنَا زَعِيمٌ لِمَنْ آمَنَ بِي، وَأَسْلَمَ، وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللهِ، بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ، وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى غُرَفِ الْجَنَّةِ، مَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَلَمْ يَدَعْ لِلْخَيْرِ مَطْلَبًا، وَلَا مِنَ الشَّرِّ مَهْرَبًا، يَمُوتُ حَيْثُ شَاءَ أَنْ يَمُوتَ،
‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের এবং মধ্যখানে একটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং হিজরত করল। আর আমি জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের, মধ্যখানে একটি ঘরের এবং জান্নাতের কক্ষসমূহের উপরিভাগে আরেকটি ঘরের যিম্মাদার হ’লাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার প্রতি ঈমান আনল, ইসলাম গ্রহণ করল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করল। যে ব্যক্তি এই কাজগুলো করবে, সে যদি কল্যাণের সন্ধান পরিত্যাগ না করে এবং মন্দ থেকে পলায়ন করার চেষ্টা নাও করে, (তবুও তার জন্য জান্নাত অবধারিত থাকবে) সে যেখানে চায় সেখানে মৃত্যুবরণ করলেও’।[নাসাঈ হা/৩১৩৩; ইবনু হিববান হা/৪৬১৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৩০০, সনদ ছহীহ।]
(৮) কাতারের ফাঁকা বন্ধ করা :
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁকা বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন'। [তাবারাণী, আল-মু'জামুল আওসাত্ব হা/৫৭৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২, সনদ ছহীহ ।]
(৯) তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া :
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে কতিপয় প্রাসাদ আছে, যেগুলোর ভিতর থেকে বাইরের এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়’। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, “হে আল্লাহ্'র রাসূল! এই প্রাসাদগুলো কাদের জন্য? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য দান করে, নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে (আল্লাহ্'র জন্য) ছালাত আদায় করে'। [তিরমিযী হা/১৯৮৪; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৫৭৪৩, সনদ হাসান ।]
(১০) সদাচরণকারী হওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সদাচরণকারী বান্দাদের জন্য জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে একটি বালাখানার ব্যাপারে যিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া- বিবাদ পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের উপকণ্ঠে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যিম্মাদার'।” [আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান।]
(১১) সালামের প্রসার ঘটানো :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 'জান্নাতে মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ আছে, যার বাইরের দৃশ্য ভিতর থেকে এবং ভিতরের দৃশ্য বাহির থেকে দেখা যায়। মহান আল্লাহ এসব প্রাসাদ সেই সকল লোকের জন্য তৈরী করেছেন, যারা অপরকে খাবার খাওয়ায়, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকলে (তাহাজ্জুদের) ছালাত আদায় করে’।[ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৫০৯; ছহীহুল জামে' হা/৯৪৭, সনদ ছহীহ।]
(১২) মানুষকে খাবার খাওয়ানো :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ আছে, যার বাইরের দৃশ্য ভিতর থেকে এবং ভিতরের দৃশ্য বাহির থেকে দেখা যায়। মহান আল্লাহ এসব প্রাসাদ যাদের জন্য তৈরী করেছেন, তন্মধ্যে অন্যতম হ'ল— যে ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ায়...'।”[ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৫০৯; ছহীহুল জামে' হা/৯৪৭, সনদ ছহীহ। ]
এ সম্পর্কে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিরমিজির ১৯৮৪ নং হাদীসটি যা তাহাজ্জুদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে সেটিও উল্লেখ যোগ্য।
(১৩) নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করা :
ফরয ছিয়ামের পাশাপাশি নিয়মিত নফল ছিয়ামের মাধ্যমে জান্নাতী অট্টালিকার অধিকারী হওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে কতিপয় প্রাসাদ আছে, যেগুলোর ভিতর থেকে বাইরের এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়'। এক বিদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, 'হে আল্লাহ্'র রাসূল! এই প্রাসাদগুলো কাদের জন্য? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য দেয়, নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে আল্লাহ্'র জন্য ছালাত আদায় করে’৷[তিরমিযী হা/১৯৮৪; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৫৭৪৩, সনদ: হাসান ]
(১৪) সূরা ইখলাছ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দশবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি বিশবার পাঠ করবে, তার জন্য দু'টি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার পাঠ করবে, তার জন্য তিনটি প্রাসাদ নিমার্ণ করা হবে। অতঃপর ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্'র রাসূল (ﷺ)! তবে তো আমাদের প্রাসাদেও সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ধারণার চেয়েও অধিক দাতা' ৷ [দারেমী হা/৩৪২৯; হাদীছটি প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটির রিজাল বুখারী- মুসলিমের এবং ছিক্কাত। আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন ।]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘কুল হওয়াল্লাহু আহাদ' বা সূরা ইখলাছ শেষ পর্যন্ত দশবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন' ।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে' হা/৬৪৭২, সনদ হাসান ।]
(১৫) দ্বীনি ভাই ও অসুস্থ-রোগীকে দেখতে যাওয়া :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 'যখন কোন ব্যক্তি তার অসুস্থ (মুসলিম) ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সাথে সাক্ষাত করতে যায়, তখন আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার পথচলা উত্তম হয়েছে, তুমি তো জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে নিলে’ । [আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৭৪, সনদ হাসান। ]
(১৬) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করা :
আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দার কোন সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, (সন্তানের মৃত্যুতে) আমার বান্দা কি বলেছে? ফেরেশতারা বলে, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন' পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ ‘বায়তুল হামদ’ বা ‘প্ৰশংসালয়’। [তিরমিযী হা/১০২১; ছহীহাহ হা/১৪০৮, সনদ হাসান। ]
(১৭) তর্ক-বিবাদ পরিহার করা :
রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার;[আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান।]
(১৮) কৌতুকের ছলে হ'লেও মিথ্যা পরিহার করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি জান্নাতের মধ্যখানে একটি বাড়ির যিম্মাদার সেই ব্যক্তির জন্য, যে কৌতুকবশত হ'লেও মিথ্যা বলা পরিহার করে'।[আবূদাউদ হা/৪৮০০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৬৫৩, সনদ হাসান ।]
(১৯) বাজারে প্রবেশের দো'আ পড়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,'যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে বলে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুওয়া হায়য়ুন, লা-ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খয়রু, ওয়াহুয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর' (অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা'বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই সব কিছুর ধারক এবং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ, তিনি সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান) আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরী করেন'।[তিরমিযী হা/৩৪২৯; মিশকাত হা/২৪৩১। সনদ হাসান।]
(২০) অন্যকে জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণকারী আমল শিক্ষা দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি অন্য কোন মানুষকে কোন নেক কাজের পথ দেখায় (উৎসাহিত করে), সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমান ছওয়াব পায়’৷ ’’ ( সহীহ মুসলিম ৪৭৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না-- সহীহ মুসলিম--৬৬৯৭ (সহীহ)
সংকলন: আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।)
সম্পাদনা: রাজিব রেজা
© আত তাহরীক