• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত ক্বাযা শব্দের অর্থ কি এবং ইসলামে ক্বাযা সালাতের বিধান কী?

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
379
Comments
450
Solutions
1
Reactions
8,759
Credits
22,167
প্রশ্ন: ক্বাযা শব্দের অর্থ কি? ইসলামে ক্বাযা সালাতের বিধান কী? ক্বাযা সালাত কত প্রকার?ক্বাযা সালাত আদায়ের কয়টি অবস্থা হতে পারে? এবং ফরজ সালাতের ক্বাযা কখন এবং কিভাবে আদায় করব এর কোন নিষিদ্ধ সময় আছে কি? বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন ইন শা আল্লাহ্।

উত্তর: ক্বাযা আরবী শব্দ,অর্থ দেরী করা,বিলম্ব করা। শরীয়তের পরিভাষায়ঃ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট কিছু রুকন আদায় না করে সেটা নিদিষ্ট সময় পরে সম্পাদন করাকে কাযা বলে।অর্থাৎ ফজর,যোহর, আসর.মাগরীব ও এশা এই ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের যে নিদিষ্ট সময় রয়েছে তা সময়ের পরে আদায় করার নাম কাযা।ইচ্ছাকৃত নামাজ কাজা করলে তা কুফরী হবে।

ইসলামে ক্বাযা সালাত আদায়ের বিধান কী?

ক্বাযা সালাত সমূহ তিন ভাগে বিভক্তঃ

প্রথম প্রকারঃ দেরী করার ওযর দূর হয়ে গেলেই ক্বাযা আদায় করে নিতে হয়। তা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ক্ষেত্রে। অনুরূপভাবে বিতর ও সুন্নাত নামায সমূহ।

দ্বিতীয় প্রকারঃ যার পরিবর্তে অন্য নামায ক্বাযা হিসেবে আদায় করবে। তা হচ্ছে, জুমআর নামায। এ নামায ছুটে গেলে তার পরিবর্তে যোহর নামায আদায় করবে। কেউ যদি জুমআর দিন ইমামের দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর নামাযে শামিল হয়, তবে সে যোহর নামায আদায় করবে। ঐ অবস্থায় যোহরের নিয়ত করে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ইমামের সালামের পর আসে তবে সেও যোহর পড়বে।

তবে কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাআতে ইমামের সাথে রুকূ পায়, তবে সে জুমআর নামাযই আদায় করবে। অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরালে এক রাকাআত আদায় করবে। অনেক লোক ইমামের দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর জুমআর নামাযে শামিল হয়। অতঃপর সালাম শেষে জুমআর নামায হিসেবে দু‘রাকাআত নামায আদায় করে। এটা ভুল। বরং তার জন্য উচিৎ হচ্ছে ইমামের সালাম ফেরানোর পর যোহর হিসেবে চার রাকাআত নামায আদায় করা।

তৃতীয় প্রকারঃ এমন নামায যা ছুটে যাওয়া সময়েই কাযা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে ঈদের নামায। কখনো ঈদের দিন সম্পর্কে জানা গেল না। কিন্তু সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর জানা গেল যে আজকে ঈদের দিন ছিল। এক্ষেত্রে বিদ্বানগণ বলেন, পরবর্তী দিন সকাল বেলা উক্ত ঈদের নামাযের কাযা আদায় করতে হবে। কেননা ঈদের নামায আদায় করার সময় হচ্ছে সকাল বেলা। [ইবনে উসাইমিন (রহঃ) ফতোয়া আরকানুল ইসলাম প্রশ্ন নং২০৯]

অনাদায়কৃত ক্বাযা সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে :

প্রথম অবস্থা :ঘুম বা ভুলে যাওয়ার মত শরিয়ত অনুমোদিত ওজরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া। এ অবস্থায় তার উপর ছুটে যাওয়া নামায ক্বাযা করা ওয়াজিব।

দ্বিতীয় অবস্থা:এমন ওজরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া যে সময় ব্যক্তির কোন হুঁশ থাকে না।যেমন-অজ্ঞান হওয়া। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিকে সালাতের বিধান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাই তাকে উক্ত সালাতের কাযা করতে হয় না কারণ, সে জ্ঞানহীন পাগলের পর্যায়ভুক্ত। আর পাগলের পাপ-পুণ্য কিছু নেই।[সুনানে তিরমিযী ১৪২৩,আবূ দাঊদ ৪৪০৩ মিশকাত ৩২৮৭ ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১,শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন রহঃ২/১২৬ সৌদি গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া ৬/২১] ইবনে উমার (রাঃ) অজ্ঞান অবস্থায় কোন নামায ত্যাগ করলে তা আর ক্বাযা পড়তেন না।[আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১] অবশ্য নামায পড়তে পারত এমন সময়ের পর অজ্ঞান হলে জ্ঞান ফিরার পর সেই সময়ের নামায কাযা পড়া জরুরী।[শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬-১২৭]

তৃতীয় অবস্থা:ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওজর ছাড়া সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত প্রথম ওয়াক্তের সালাত ত্যাগ করে,পরের ওয়াক্তে পড়ে তবে তার উক্ত কাযা আদায় শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন সালাত ত্যাগ করেছিল তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য ওজর ছিল না।আল্লাহ তো সুনির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করাকে তার উপর ফরজ করেছেন।আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন :“নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”[সূরানিসা, ৪:১০৩]অর্থাৎ নামাযের সুনির্দিষ্ট সময় আছে। আরেকটি দলীল হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:“যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যা আমাদের শরিয়তভুক্ত নয়-তবে তা প্রত্যাখ্যাত।[সহীহ বুখারী হা/২৬৯৭ সহীহ মুসলিম,হা/১৭১৮ আবু দাউদ হা/৪৬০৬ ফিকহুস
সুন্নাহ্‌ ১/২৪১-২৪৩, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু পৃ:৭৮]

ক্বাযা সালাত কখন এবং কিভাবে পড়তে হবে:

কেউ যথাসময়ে নামায পড়তে ঘুমিয়ে অথবা ভুলে গেলে এবং তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, স্মরণে আসা কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নিতে হবে। সে সময় সূর্য উদয়,অস্ত বা মাঝ বরাবর যেখানেই থাকুক। ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ,ইমাম আহমাদ ও ইসহাক (রহঃ)-এর এটাই মত।অন্য যে হাদীসে তিনটি সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে হাদীস সাধারণ অর্থবোধক অর্থাৎ নফলের সাথে সম্পর্কিত।[ইরওয়াউল গালীল,২৬৩ মিশকাত,৬০৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য ]

সুতরাং ক্বাযা সালাত আদায় করতে দেরী করা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে ক্বাযা সালাত আদায় করা যাবে না মর্মে সমাজে যে ধারনা চালু আছে তা সুস্পষ্ট সহীহ হাদীসের বিরোধী। বরং যখনই স্মরণ হবে কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখনই পবিত্রতা অর্জন করে ধারাবাহিক ভাবে ক্বাযা সালাত আদায় করে নিতে হবে।এর জন্য ইচ্ছেকৃত ভাবে ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করা যাবেনা অপেক্ষা করলে গুনাহগার হতে হবে। ফরজ সালাতের কায্বা আদায় করা ফরজ এবং সুন্নত সালাতের কায্বা আদায় করা সুন্নত।এটাই কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য।কেননা রাসূলুল্লাহ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, مَنْ نَسِىَ صَلاَةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا ‘কেউ ভুলে গেলে কিংবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা হল, ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণ হলে সাথে সাথে ক্বাযা সালাত আদায় করা’।[সহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ) ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮,মিশকাত হা/৬০৩, ৬৮৪, ৬৮৭,]

আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ কোন সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই যেন তা আদায় করে নেয়। এটুকুই তার জন্য কাফফারা।’[সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৪ ইঃফাঃ হা/১৪৫২ আবূ দাঊদ, হা/৪৪২]

তিনি আরো বলেন,নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেননা,মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর। [সূরা ত্বহা ২০/১৪, সহীহ মুসলিম ৬৮১, ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪১,সুনানে নাসায়ী ৬১৫,মিশকাত ৬০৪]

আর কায্বা আদায়ের ক্ষেত্রে মূল ওয়াক্তে যেভাবে সালাত আদায় করা হয় ঠিক ঐ নিয়মেই সালাত আদায় করতে হবে।অর্থাৎ যে নামায যে অবস্থায় কাযা হয়,সেই নামাযকে সেই অবস্থা ও আকারে পড়া জরুরী। সুতরাং রাতের নামায দিনে কাযা পড়ার সুযোগ হলে রাতের মতই করে জোরে ক্বিরাআত করতে হবে। কারণ, মহানবী (ﷺ) যখন ফজরের নামায দিনে কাযা পড়েছিলেন, তখন ঠিক সেই রুপই পড়েছিলেন, যেরুপ প্রত্যেক দিন ফজরের সময় পড়তেন।[সহীহ মুসলিম, ৬৮১]

তদনুরুপ ছুটে যাওয়া নামায রাতে কাযা পড়ার সুযোগ হলে দিনের মতই চুপে চুপে ক্বিরাআত পড়তে হবে। [নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭,আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২০৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১০]

সুন্নত সালাতের ক্বাযা আদায় করা যাবে কি?

যেকোন সুন্নাত সালাত ছুটে গেলে তা পরে ক্বাযা আদায় করা যায় [সহীহ বুখারী, হা/১২৩৩]। বরং যারা নিয়মিত এ সালাতগুলো আদায় করে তাদের ছুটে গেলে বা ব্যস্ততায় সময় না পেলে আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর মতে পড়াই উত্তম [মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৩]। শায়খ সালেহ আল-উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি সুন্নাত সালাত ছুটে যায়, তাহলে সেটা ক্বাযা আদায় করাও আরেকটি সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ঘুমে থাকা অবস্থায় সূর্য উঠে যায় অথচ ফযর আদায় করেননি। এ অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে প্রথমে সুন্নাত অতঃপর ফরজ আদায় করেন [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১]। কেউ যদি মনে করে এমন অবস্থায় কোন সালাত আগে আদায় করব? পূর্বেরটা প্রথমে না-কি যোহরের পরেরটাই প্রথমে? এক্ষেত্রে স্বাধীনতা রয়েছে সে যেকোন একটি আগে আদায় করতে পারে।[উন্মুক্ত সাক্ষাৎ, ইবনু উছায়মীন, বৈঠক নং ৭৪, প্রশ্ন নং ১৮; ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওতার, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫]।

ক্বাযা নামায পড়ার জন্য আযান ও ইকামত বিধেয়। কয়েক ওয়াক্তের নামায কাযা পড়তে হলে, প্রথমবার আযান ও তারপর প্রত্যেক নামাযের জন্য পূর্বে ইকামত বলা কর্তব্য।যেমন খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদেরকে নিয়ে মাগরিবের পর যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা এই চার ওয়াক্ত সালাত এক আযান ও চারটি পৃথক ইক্বামতে পরপর জামা‘আতের সাথে আদায় করেন। উক্ত সালাতগুলো স্ব স্ব ওয়াক্তে যেভাবে আদায় করতেন ঐ নিয়মেই আদায় করেন।[সহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ,ইঃফাঃ হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘সালাতের সময়’ অধ্যায়,ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (সাঃ) জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম হা/১৪৬২, ১/২২৭ নাসাঈ হা/৬৬১]

অতএব উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে এটা পরিস্কার যে ফরজ সালাতের ক্বাযা আদায়ের নিষিদ্ধ কোন সময় নেই।বরং স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পড়তে হয়।এর বিপরীতে যারা বলে তাদের বক্তব্য সঠিক নয়।

উলেখ্য, যে, দুটি হাদীসের সালাতের ৫ টি নিষিদ্ধ সময় বর্ণিত হয়েছে,এখন প্রশ্ন হল এই নিষিদ্ধ সময় কি সকল সালাতের জন্য নাকি শুধুমাত্র নফল সালাতের জন্য সেই বিষয়টি পরিস্কার করা দরকার।যেমন:

উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে তিন সময়ে নামায পড়তে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করতেন;
(১) ঠিক সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে একটু উঁচু না হওয়া পর্যন্ত,
(২) সূর্য ঠিক মাথার উপর আসার পর থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত এবং
(৩) সূর্য ডোবার কাছাকাছি হওয়া থেকে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত।[সহীহ মুসলিম ১৯৬৬, আহমাদ ১৭৩৭৭, আবূ দাঊদ ৩১৯৪, তিরমিযী ১০৩০, নাসাঈ ৫৬০, ইবনে মাজাহ ১৫১৯, মিশকাত ১০৪০ হাদিস সম্ভার,১৩৩]

অপর বর্ননায় সালাতের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটিঃ
১. সূর্যোদয়ের সময়
২. সূর্যাস্তের সময়
৩. ফজরের (ফজরের) সালাতের পর
৪. ‘আসরের সালাতের পর
৫. সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকার সময়[সহীহ বুখারী ৫৮৫, ৩২৮৩, মুসলিম ৮২৮ মিশকাত,১০৩৯]

উপরোক্ত হাদীস দুটির ব্যাখ্যায়: ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম ইসহাক (রহঃ) বলেন,ফরজ সালাতের ক্বাযা আদায়ের কোন নিষিদ্ধ সময় নেই।বরং একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্মরণে আসা কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নিতে হবে,এটাই বিশুদ্ধ কথা। অন্য যে হাদীসে তিনটি সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে হাদীস সাধারণ অর্থবোধক। আর স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে আদায় করার হাদীস বিশেষ অর্থবোধক। তাই এ দু’ হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই।এবং স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে আদায় করার হাদীস দ্বারা দু’টি বিষয় প্রমাণিত হয়, এক- সালাত আদায় ব্যতীত এর কোন প্রতিকার নেই। দুই- সালাত আদায় ভুলে গেলে কোন জরিমানা, অতিরিক্ত কিছু বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ইত্যাদি আদায় করা আবশ্যক নয়, যেমনটি সওম ছেড়ে দিলে করতে হয়।[মিশকাতুল মাসাবি,৬০৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]

ইবনু কুদামাহ, (রহঃ) বলেন,তিনটি সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা মূলতঃ সাধারণ নফল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ক্বাযা সালাত, জানাযার ছালাত, তাহিয়াতুল মাসজিদ, ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত নফল সালাত প্রভৃতি বিশেষ কারণযুক্ত সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।[ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৮১]

শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহঃ) বলেন,ক্বাযা সালাত আদায় করতে দেরী করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে ক্বাযা সালাত আদায় করা যাবে না মর্মে যে ধারণা সমাজে চালু আছে তা সহীহ হাদীসের বিরোধী। বরং যখনই স্মরণ হবে কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখনই ধারাবাহিকভাবে ক্বাযা সালাত আদায় করে নিবে।[সহীহ বুখারী হা/৫৯৬-৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, ইঃফাঃ হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ ফতোয়ায় আরকানুল ইসলাম প্রশ্ন নং ২০৯]

শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, যে,ক্বাযা সালাতের জন্য কোন নিষিদ্ধ ওয়াক্ত নেই।[আলবানী, মিশকাত হা/৬০২-এর টীকা দ্রঃ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯১]

উল্লেখ্য যে,সূর্যোদয়ের সময় ফজরের এক রাকাআত এবং সূর্য অস্তের সময় আসরের এক রাকাত পেলে পরিপূর্ণ সালাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে।কেননা,রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আছরের ছালাতের এক সিজদা পায়, তাহ’লে সে যেন ছালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের ছালাতের এক সিজদা পায়, তাহ’লে সে যেন ছালাত পূর্ণ করে নেয় [সহীহ বুখারী হা/৫৫৬; মিশকাত হা/৬০২]

হাদীসটির ব্যাখ্যা : জমহূরের মতে যে ব্যক্তি সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া সহ এক রাকআতের অন্যান্য ওয়াজিব যেমন, রুকূ’ ও সাজদাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করে ফজরের (ফজরের) এক রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সূর্য উদয়ের পূর্বে পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই নির্ধারিত ওয়াক্তে পেল। এক রাক্‘আতের কম পেলে সেটা ওয়াক্তের মধ্যে গণ্য হবে না। তার ঐ সালাত ক্বাযা হবে। এটাই জমহূরের মত।

ইমাম নাবাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,আলিমগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সূর্য উদয়কাল কিংবা অস্তকাল পর্যন্ত সালাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা বৈধ নয়। সূর্য উদয়ের পূর্বে এক রাক্‘আত পেলে এবং সূর্য উদয়ের পরে এক রাক্‘আত পড়লে তার সালাত পূর্ণ হয়ে যাবে। জমহূর ‘আলিমগণের এ মতের পক্ষে এ সম্পর্কে বায়হাক্বীতে দু’টি স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্‘আত পেল এবং এক রাক্‘আত সূর্য উদয়ের পরে পড়ল, সে যেন পূর্ণ সালাতই নির্দিষ্ট ওয়াক্তে পেল। বায়হাক্বীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের এক রাক্‘আত আদায় করলো এবং বাকী অংশ সূর্যাস্তের পর আদায় করলো, তার ‘আসরের সালাত নষ্ট হলো না। তিনি ফাজরের (ফজরের) সালাতের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছেন। বুখারীর বর্ণনায় এ হাদীসের শেষে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘সে যেন তার সালাতকে পূর্ণ করে’’। নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সালাতের (নির্দিষ্ট সময়ে) এক রাক্‘আত পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই পেল। তবে যে রাক্‘আত আদায় করতে পারেনি সে তা ক্বাযা করবে’’।

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্‘আত পেল সে যেন ফাজরের (ফজরের) পূর্ণ সালাতই পেল এবং সূর্য উদয়ের ফলে তার সালাত বাতিল হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সালাত পেল এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার ফলে তার সালাত বাতিল হবে না। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক (রহঃ)-এর মত এটিই, আর এটিই সঠিক মত।[শারহুন নাবাবী সহীহ মুসলিমের ৬০১ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ]

ইমাম আবূ হানীফাহ্ এ হাদীসের বিরোধী মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে এমতাবস্থায় সূর্য উদিত হলো তাহলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তিনি তিন সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস দ্বারা তার মতের পক্ষে দলীল প্রদান করেছেন। এর উত্তরে বলা যায় যে, সূর্য উদয়ের সময় সালাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত বিধান ‘আম্ তথা ব্যাপক আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীস খাস তথা বিশেষ হুকুম জ্ঞাপক।
[মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৬০২ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ]

পাশাপাশি এটাও জেনে রাখা ভালো যে,উলামাগণের মতামতের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, কারণ বিশিষ্ট নফল সালাত সমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় বলতে কোন কিছু নেই। নিষিদ্ধ সময়েও তা আদায় করতে কোন বাধা নেই। যেমন:তাহিয়্যাতুল ওযূ; ওযূ করলে পড়তে হয়। তাহিয়্যাতুল মসজিদ; মসজিদে প্রবেশ করলেই না বসে পড়তে হয়।[সহীহ বুখারী, হা/১১৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৪]মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকা’আত সালাত; তওয়াফ করলে পড়তে হয় ইত্যাদি।সুতরাং যখনই সাবাব তথা কারণ ঘটবে, তখনই সেই সালাত আদায় করা যাবে।

অনুরূপভাবে ঘুম বা ভুল বশত: ঘুমের কারণে অথবা ভুলে যাবার জন্য ছুটে যাওয়া যে কোন ওয়াক্তের ফরজ সালাত,এবং ফজরে দু রাকাআত সুন্নাত সালাত (তবে ফজরের দু রাকআত সুন্নত সূর্য উঠার পর পড়াই অধিক উত্তম), সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত, জানাযার সালাত ইত্যাদি এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে। অর্থাৎ এগুলো নিষিদ্ধ সময়েও পড়া জায়েয আছে। এ ব্যাপারে এটাই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অভিমত।

ক্বাযা উমরী (উমরী ক্বাযা) বলতে কোন সালাত আছে কি? অথবা এই অনাদায়ী সালাতের কোন কাফফারা আছে কি?

দীর্ঘ দিনের বা সারা জীবনের ক্বাযা সালাতকে ‘উমরী ক্বাযা’ বলা হয়।উমরী ক্বাযা’ অর্থাৎ বিগত বা অতীত জীবনের ক্বাযা সালাত সমূহ বর্তমানে নিয়মিত ফরয সালাতের সাথে যুক্ত করে ক্বাযা হিসাবে আদায় করা সম্পূর্ণরূপে একটি বিদ‘আতী প্রথা’ইসলামী শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই [আলোচনা দ্রষ্টব্য: আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২]

পূর্বের দুটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, ইচ্ছাকৃত সালাত পরিত্যাগ করা নিঃসন্দেহে কুফুরী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী বলতেন না, ছালাত ব্যতীত (তিরমিযী হা/২৬২২, ২/৯০ পৃ.; মিশকাত হা/৫৭৯, পৃ. ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২, ২/১৬৪ পৃ., সনদ সহীহ]

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেন,এমন ব্যক্তির পক্ষ্য থেকে ক্বাযা নেই।এমনকি সে ক্বাযা করে নিলেও তার পক্ষ্য থেকে ক্বাযা কবুল হবে না।বরং এক্ষেত্রে তার দায়িত্ব হল সে ক্বাযা না করে বেশী বেশী করে নফল সালাত আদায় করবে।[আল-এখতিয়ারাত-৩৪]

তাই কেউ ইচ্ছাকৃত দীর্ঘদিন সালাত ত্যাগ করলে সে সালাতের কোন ক্বাযা নেই।কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ও সাহাবায়ে কেরামের স্বর্ণযুগে উক্ত প্রথার অস্তিত্ব ছিল না তাই নতুন করে উমরী ক্বাযা চালু করা বিদআত। সুতরাং পূর্বের ছুটে যাওয়া সালাতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ চাইলে পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং তা নেকীতে পরিণত করতে পারেন [সূরা ফুরক্বান ৭০-৭১; যুমার ৫৩)। তাছাড়া ইসলাম তার পূর্বেকার সবকিছুকে ধসিয়ে দেয়।[মুসলিম হা/৩৩৬, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/২২১), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/২৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়।

সম্ভবতঃ একাধিক সালাত ক্বাযা হওয়ার কারণেই মহিলাদের মাসিক অবস্থার ছালাত পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়নি; বরং সিয়াম ক্বাযা করার কথা বলা হয়েছে।[ছহীহ মুসলিম হা/৭৮৯, ১/১৫৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৫৪), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; মিশকাত হা/২০৩২, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ক্বাযা সিয়াম’ অনুচ্ছেদ]

সুতরাং ব্যাক্তির জন্য ওয়াজিব এই যে, সে সর্বদা নামায ত্যাগ করার ঐ অবহেলাপূর্ণ পাপ ও ক্ষতির কথা মনে রেখে তার প্রতিকারের উদ্দেশ্যে (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) সদা সচেতন থাকবে। সম্ভবত: তার ঐ হারিয়ে দেওয়া দিনের কিছু ক্ষতিপূরণ অর্জন হয়ে যাবে।[আলমুমতে’,শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/১৩৫]

রসূল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে তার আমল সমূহের মধ্যে যে আমলের হিসাব সর্বাগ্রে নেওয়া হবে, তা হল নামায। নামায ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামায ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরয নামাযে কোন কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা ফিরিশ্‌তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল (নামায) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরো সকল আমলের হিসাব অনুরুপ গ্রহণ করা হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৭৭০, তিরমিযী, সুনান ৩৩৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১১৭নং, সহিহ তারগিব ১/১৮৫)

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নামায অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য ক্বাযা আছে। আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন। তার মনে অবহেলা ও শৈথিল্য না থাকলে তিনি তার ক্বাযা গ্রহণ করবেন। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “(এই ক্বাযা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা নেই।[সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০৩]

পক্ষান্তরে ক্বাযা আদায় করার সময় ও সুযোগ না পেলে কোন পাপ হয় না। সুতরাং এ কথা সুস্পষ্ট হয় যে, মরণের সময় অথবা পরে বেনামাযী অথবা কিছু নামায ত্যাগকারীর তরফ থেকে নামায-খন্ডনের উদ্দেশ্যে রাকআত হিসাব করে কাফফারা স্বরুপ কিছু দান-খয়রাত ইত্যাদি করা নিরর্থক ও নিষ্ফল। বরং এই উদ্দেশ্যে পাপ-খন্ডনের ঐ অনুষ্ঠান ও প্রথা এক বিদআত। (ইসলাহুল মাসাজিদ, আল্লামা আলবানীর টীকা সহ্‌ উর্দু তর্জমা মালেক, মুঅত্তা ২৯৬পৃ:, আহ্‌কামুল জানাইয, আলবানী ১৭৪, ২৭৫পৃ:, মু’জামুল বিদা’ ১৬৪পৃ:) বলা বাহুল্য এমন পাপস্খলনের রীতি তো অমুসলিমদের; যারা ইয়া বড় বড় পাপ করে কোন পানিতে ডুব দিলে অথবা কিছু অর্থ ব্যয় করলে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে!

অবশেষে,ক্বাযা সালাত আদায়ের জরুরী কিছু বিষয়ঃ

১) ঘুমের কারণে কাযা হলে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে পবিত্রতা অর্জন করে আদায় করতে হবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা যাবেনা।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০৩]

(২) ভুলে আদায় করা না হলে স্মরণ হওয়া মাত্র আদায় করতে হবে।ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে আদায় করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। [মুহাল্লা, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪১-২৪৩, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৭৮পৃ:]

(৩) অজ্ঞান হয়ে পড়লে সে সময়ের বাদ পরা সালাত আর আদায় করা লাগবে না। তবে ইচ্ছাকৃত হলে যেমন- চিকিৎসার জন্য বা অপারেশনের জন্য অজ্ঞান হলে জ্ঞান ফেরার পর কাযা আদায় করতে হবে।[মিশকাত: ৩২৮৭]।

(৪) পরপর একাধিক ওয়াক্ত কাযা সালাত আদায় করতে আযান দিবে মাত্র একবার, কিন্তু ইকামাত দিবে প্রতি সালাতেরই এটাই সুন্নাহ।[বুখারী ৩৪৪, মুসলিম, সহীহ ৬৮০]

(৫) রাতের নামায দিনে কাযা করলে ঐ নামায রাতের মতো স্বশব্দে পড়তে হবে। ঠিক এভাবে দিনের নামায রাতে কাযা করলে দিনের মতোই চুপিসারে তিলাওয়াত করতে হবে।[সহীহ মুসলিম, ৬৮১]

(৬) সফরে থাকার কসরের নামায ক্বাযা হলে বাড়ি ফিরে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থার নামায কাযা হলে সফরে গিয়ে পুরা করেই পড়বেন। মোট কথা যেমন নামায তেমন কাযা করবেন।[আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫১৮]

(৭) এক সঙ্গে কয়েক ওয়াক্ত নামায বাদ পড়ে গেলে ঐ কাযা নামাযগুলো ধারাবাহিকভাবে পড়বে। যেমন ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এ সিরিয়ালে।ক্রমধারা ভঙ্গ করা যাবে না।[ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮]

(৮) কেউ যদি যোহর না পড়ে আসরের ওয়াক্তে পৌঁছে যায় তাহলে আগে যোহর কাযা পড়বে, এরপর আসর পড়বে।[ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮]

(৯) কেউ যদি মসজিদে গিয়ে দেখে আসরের জামাআত চলছে, অথচ তার যোহর পড়া হয় নাই, তাহলে আসরের জামাআতেই শরীক হবে। কিন্তু সে নিয়ত করবে যোহরের নামাযের। এরপর সে আবার আসর পড়বে একাকী। তবু ক্রমধারা ভঙ্গ করা যাবে না। যোহরের আগে আসর পড়া যাবে না। ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন ভিন্ন হলেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১০]

(১২) একান্ত অপারগতায় ক্রমধারা লঙ্ঘন করা বৈধ। যেমন- পূর্ববর্তী সালাত এশা পড়ে নাই, আবার ফজরের সময়ও প্রায় চলে যাচ্ছে- এমতাবস্থায় ফজর পড়েও এশা পড়া যাবে।[আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/১৪০-১৪১, তুহ্‌ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৬৬পৃ:]

(১০) নফল-সুন্নাতের জামাআতের পেছনে ফরয সালাত এবং ফরয সালাতের জামাআতের পেছনে সুন্নাত নফল সালাত পড়া জায়েয আছে। রাসূল (স.)-এর যামানায় এ ধরনের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

(১১) একই নামায দু’বারও পড়া যায়। মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) মসজিদে নববীতে নামায পড়ে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে একই নামায আবার পড়েছেন ইমাম হয়ে।এক্ষেত্রে প্রথমটি ফরজ এবং দ্বিতীয়টির নফল হিসেবে গণ্য হবে।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৫০]

(১২) ফরজ সালাতের পাশাপাশি তাহিয়্যাতুল মসজিদ
তওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকা’আত সালাত;সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত, জানাযার সালাত ইত্যাদি ৫ টি নিষিদ্ধ সময় এর অন্তর্ভুক্ত নয় এটিই বিশুদ্ধ মত।

(১৩) যেকোন সুন্নাত সালাত ছুটে গেলে তা পরে ক্বাযা আদায় করা যায়।[সহীহ বুখারী, হা/১২৩৩] বরং যারা নিয়মিত এ ছালাতগুলো আদায় করে তাদের ছুটে গেলে বা ব্যস্ততায় সময় না পেলে আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর মতে পড়াই উত্তম। (মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৩]

(১৪)সুন্নত সালাতের কাযা আদায়ের ক্ষেত্রে কেউ যদি মনে করে এমন অবস্থায় কোন্ সালাত আগে আদায় করব? পূর্বেরটা প্রথমে না-কি যোহরের পরেরটাই প্রথমে? এক্ষেত্রে স্বাধীনতা রয়েছে সে যেকোন একটি আগে আদায় করতে পারে। [উন্মুক্ত সাক্ষাৎ, ইবনু উছায়মীন, বৈঠক নং ৭৪, প্রশ্ন নং ১৮; ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওতার, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫]

(১৫) উমরী ক্বাযা সালাত বলতে ইসলামি শরীয়তে কোন সালাত নেই তাই এই ধরনের নিয়ম চালু করা বিদআত।
মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)।



উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Last edited by a moderator:
Top