• আসসালামু আলাইকুম, খুব শীঘ্রই আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

যাকাত ও ফিতরা কোন খাতগুলোতে যাকাত বণ্টন করতে হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে খাতগুলোতে যাকাত বণ্টন করা ওয়াজিব সেগুলো আটটি। আল্লাহ্‌ তাআলা সুস্পষ্টভাবে সেগুলো বর্ণনা করেছেন এবং তিনি জানিয়েছেন যে, এভাবে বণ্টন করা ফরয এবং এটি জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নির্ভর। তিনি বলেন: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য এবং ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে তারা ও মুসাফিরদের খাতে। এটি আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০] এই হলো আটটি খাত; যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় খাত: ফকির ও মিসকীন: এদেরকে যাকাত দেয়া হবে তাদের জরুরত (অত্যাবশ্যকীয়) ও প্রয়োজন নিবারণ করার জন্য। ফকির ও মিসকীনেরর মধ্যে পার্থক্য হলো: ফকির বেশি দরিদ্র। ফকির হলো এমন ব্যক্তি যার কাছে তার নিজের ও তার পরিবারের অর্ধেক বছর চলার মত সম্পদ নাই। আর মিসকীনের অবস্থা ফকিরের চেয়ে ভাল। মিসকীনের কাছে তাদের প্রয়োজনের অর্ধেক বা ততোর্ধ অংশ পূরণ করার মত সম্পদ আছে; তবে সম্পূর্ণ প্রয়োজন পূরণ করার মত সম্পদ নাই। তাদেরকে তাদের প্রয়োজন নিবারণের জন্য যাকাত দেয়া হবে।

কিন্তু আমরা প্রয়োজনকে কিভাবে নির্ধারণ করব?

আলেমগণ বলেন: যা দিয়ে তারা ও তাদের পরিবার এক বছর চলতে পারবে ততটুকু তাদেরকে দেয়া হবে। কেননা বছর ঘুরলে সম্পদে যাকাত ফরয হয়। তাই যেহেতু বছরপূর্তি যাকাত ফরয হওয়ার সময়সীমা; এ কারণে বছরপূর্তি ফকির ও মিসকীনদের মাঝে যাকাত বণ্টনের সময়সীমা হওয়া বাঞ্চনীয়; যারা যাকাত গ্রহণের হকদার। এটি ভালো অভিমত। অর্থাৎ আমরা ফকীর ও মিসকীনকে গোটা এক বছর চলার মত যাকাত প্রদান করব; চাই আমরা তাদেরকে খাদ্যদ্রব্য ও পোশাকাদি দিই কিংবা নগদ অর্থ দিই যা দিয়ে তারা নিজেদের জন্য যা উপযুক্ত সেটা খরিদ করতে পারবে। কিংবা আমরা যদি তাদেরকে কোন যন্ত্র প্রদান করি যা দিয়ে সে উৎপাদন করতে পারবে যদি সে ঐ পেশা জানে; যেমন দর্জি, মিস্ত্রি, কামার ই্ত্যাদি। অর্থাৎ আমরা তাকে ও তার পরিবারকে একবছর চলার মত যাকাত দিব।

তিন: যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী: অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে যাদেরকে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কারণে আয়াতে বলা হয়েছে: ( وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا ) যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ৬০]; العاملون فيها বলা হয়নি— এই দিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, তাদের এক ধরণের কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা হচ্ছেন সে সকল ব্যক্তি যারা যাকাত দেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করেন, এবং যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাকাত বণ্টন করেন, হিসাব লিখে রাখেন। এ ধরণের যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে যাকাত থেকে দেওয়া হবে।

কিন্তু তাদেরকে কতটুকু দেওয়া হবে?

যাকাতের কর্মচারীরা কাজ অনুযায়ী যাকাতের হকদার হবেন। যে ব্যক্তি যতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি তার দায়িত্ব অনুযায়ী যাকাত পাবেন; চাই সেই ব্যক্তি ধনী হন; কিংবা ফকির হন। কেননা তারা তাদের কর্মের বিনিময়ে যাকাত গ্রহণ করেন; তাদের দারিদ্রের কারণে নয়। তাই তাদেরকে তাদের কর্ম অনুপাতে যাকাত থেকে দেওয়া হবে। ধরুন যাকাতের কর্মচারীরা ফকির; তখন তাদেরকে তাদের কর্মের বিনিময়ে যাকাত দেওয়া হবে এবং দারিদ্রের কারণে তাদেরকে এক বছর চলার মত যাকাত দেয়া হবে। কেননা তারা দুটো কারণে যাকাতের হকদার; কর্মের কারণে এবং দারিদ্রের কারণে। তাই দুটো কারণেই তাদেরকে যাকাত দেওয়া হবে। তবে আমরা যদি তাদেরকে কর্মের বিনিময়ে যাকাত দিই; কিন্তু এতে তাদের এক বছরের প্রয়োজন না মিটে; তাহলে আমরা তাদের এক বছরের প্রয়োজনের বাকীটুকু যাকাত থেকে দিয়ে পূর্ণ করব। উদাহরণতঃ এক বছরে তাদের দশ হাজার রিয়াল হলে চলে। আমরা যদি তাদের দারিদ্রের কারণে তাদেরকে যাকাত দিই তাহলে তারা দশ হাজার রিয়াল পাবে। আর তাদের কর্মগত পাওনা দুই হাজার রিয়াল। তাহলে আমরা তাদেরকে কর্মের বিনিময়ে দিব দুই হাজার রিয়াল, আর দারিদ্রের কারণে দিব আট হাজার রিয়াল।

চার: যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা: এরা হলো ঐ সমস্ত ব্যক্তি ইসলামের দিকে যাদের চিত্তকে আকর্ষণের জন্য তাদেরকে যাকাত দেওয়া হয়; চাই সে এমন কাফের হোক যার ইসলাম গ্রহণের আশা রয়েছে। কিংবা এমন কোন মুসলিম ইসলামকে তার অন্তরে মজবুত করার জন্য আমরা তাকে যাকাত দিব। কিংবা এমন কোন দুষ্ট লোক হোক তার ক্ষতি থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষা করার জন্য আমরা তাকে যাকাত দিব। কিংবা এমন কোন ব্যক্তি যার সাথে সখ্যতা করার মধ্যে মুসলমানদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

কিন্তু সেই ব্যক্তি তার গোত্রের নেতা হওয়া কি শর্ত; যাতে করে তার সাথে সখ্যতা করার মাধ্যমে মুসলমানদের সাধারণ স্বার্থ হাছিল হয়; নাকি ব্যক্তির চিত্তকে আকষর্ণ করার জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থেই তাকে যাকাত দেয়া যাবে; যেমন যাকাত দেয়ার মাধ্যমে ইসলামে সদ্যপ্রবেশকারী ব্যক্তির চিত্তকে আকর্ষণ করা ও তার হৃদয়ে ঈমানকে মজবুত করা?

এটি আলেমদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ বিষয়। আমার কাছে অগ্রগণ্য হলো: এমন ব্যক্তির ঈমানকে মজবুত করার জন্য তাকে যাকাত দিতে কোন আপত্তি নেই। এমনকি কেউ যদি গোত্রপতি না হয়; ব্যক্তি হিসেবেও তাকে যাকাত দেয়া যেতে পারে। যেহেতু আল্লাহ্‌র বাণী: “যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা এর মর্ম সার্বিক। কেননা আমরা যদি ফকিরকে তার শারীরিক ও দৈহিক প্রয়োজনে দিতে পারি তাহলে এই দুর্বল ঈমানদারকে তার ঈমান মজবুত করার জন্য দেওয়া আরও অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা কোন ব্যক্তির ঈমানকে মজবুত করা তার দেহের খাদ্যের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এই চার শ্রেণীর ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে যাকাত ওদেয়া হবে। অর্থাৎ তারা যাকাতের পরিপূর্ণ মালিক হবে; এমনকি বছরের মাঝখানে যদি তাদের যাকাত খাওয়ার বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়ে যায় তদুপরি গৃহীত যাকাত ফিরিয়ে দেয়া তাদের উপর আবশ্যক হবে না। বরং সেটা তাদের জন্য হালাল থাকবে। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে মালিকানার অর্থ প্রকাশক لِ ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন: إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ । এখানে তিনি লাম ব্যবহার করেছেন। এর মর্ম হচ্ছে: ফকির যদি বছরের মাঝখানে ধনী হয়ে যায় তাহলে গৃহীত যাকাত তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে না। উদাহরণতঃ আমরা যদি তাকে তার দারিদ্রের কারণে দশ হাজার রিয়াল প্রদান করি; যা তার এক বছরের জন্য প্রয়োজন। এরপর আল্লাহ্‌ তাআলা বছরের মাঝখানে তাকে ধনী করে দেন কোন সম্পদ উপার্জনের মাধ্যমে কিংবা কোন নিকটাত্মীয় মারা গিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি পাওয়ার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন উপায়ে; তাহলে সে যে যাকাত গ্রহণ করেছে সেটা থেকে যতটুকু বাকী আছে সেটা ফেরত দেওয়া আবশ্যক হবে না। কেননা সেটি তার মালিকানাধীন।

পাঁচ: যাকাতের হককার আরেকটি শ্রণী হচ্ছে— ক্রীতদাস: যেহেতু আল্লাহ্‌ বলেছেন: ক্রীতদাস । আলেমগণ ক্রীতদাসকে তিনটি বিষয় দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন: ১। মুকাতিব দাস; যে নিজেকে তার মালিকের কাছ থেকে বিলম্বে মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছে। এমন দাসকে যাকাত দেয়া হবে; যা সে তার মালিককে পরিশোধ করবে। ২। কারো মালিকানাধীন দাস; যাকে আজাদ করে দেয়ার জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে খরিদ করা হয়েছে।

৩। মুসলিম বন্দি; যাকে কাফের পক্ষ বন্দি করেছে। তখন সেই কাফের পক্ষকে যাকাত থেকে দেওয়া হবে যাতে করে তারা এই বন্দিকে মুক্তি দেয়। অনুরূপভাবে কিডন্যাপের ক্ষেত্রেও; যদি কোন কাফের বা মুসলিম অন্য কোন মুসলিমকে কিডন্যাপ করে তখন কিডন্যাপের শিকার এই মুসলিমের মুক্তিপণ হিসেবে যাকাত থেকে পরিশোধ করতে কোন বাধা নেই। যেহেতু কারণ অভিন্ন। সেটি হলো বন্দিত্ব থেকে একজন মুসলিমকে মুক্ত করা। এটি সেই ক্ষেত্রে যদি কোন অর্থ ছাড়া কিডন্যাপকৃত ব্যক্তিকে মুক্ত করা না যায় এবং কিডন্যাপকৃত ব্যক্তি মুসলিম হয়।

ছয়: ঋণগ্রস্ত। আলেমগণ ঋণগ্রস্তদেরকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। (ক) দুই পক্ষের বিবাদ মীমাংসা করতে গিয়ে যিনি ঋণী হয়েছেন এবং নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে যিনি ঋণী হয়েছেন। বিবাদ মীমাংসা করতে গিয়ে ঋণীর উদাহরণ দেয়া হয় এভাবে যে, দুটো গোত্রের মধ্যে বিবাদ, ঝগড়া ও যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া। তখন নেতৃত্বস্থানীয়, প্রভাবশালী ভালো মানুষ এগিয়ে এসে কিছু অর্থের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে দুই গোত্রের বিবাদ নিরসন করা। আমরা এই সংস্কারক ব্যক্তিকে তিনি যে অর্থগুলোর দায় নিয়েছেন সেগুলো যাকাত থেকে প্রদান করব। যে মহান কর্মটি তিনি সম্পাদন করেছেন এর বিনিময়স্বরূপ। যে কর্মটির মাধ্যমে মুমিনদের মাঝে হিংসা ও শত্রুতা নিরসন করা ও মানুষের জান হেফাযত করা সম্ভব হয়েছে। এই সংস্কারক ব্যক্তি ধনী হন; বা ফকির হন; তাঁকে যাকাত থেকে প্রদান করা যাবে। কেননা আমরা তাকে তার নিজের প্রয়োজনে যাকাত দিই না; বরং তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে বিবাদ মীমাংসার যে কাজটি পালন করেছেন সেজন্য আমরা তাকে যাকাত দিই।

(খ) যিনি নিজের জন্য ঋণী হয়েছেন। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যিনি নিজের প্রয়োজন নিবারণ করতে গিয়ে নিজের জন্য ঋণ নিয়েছেন কিংবা যিনি এমন কিছু খরিদ করেছেন যা তার প্রয়োজন; তিনি বাকীতে সেটা খরিদ করেছেন, কিন্তু তার কাছে অর্থ নাই। এমন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাত থেকে দেওয়া যাবে; তবে শর্ত হলো তার কাছে ঋণ পরিশোধ করার মত অর্থ না-থাকা।

মাসয়ালা: আমরা এই ঋণগ্রস্তকে তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাত দেয়া উত্তম? নাকি ঋণদাতার কাছে গিয়ে তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দেয়া উত্তম?

এর বিধান ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। যদি ঋণগ্রস্ত লোকটি ঋণ পরিশোধে ও দায়মুক্ত হতে আগ্রহী হয় এবং তাকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য যা দেয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে সে বিশ্বস্ত হয় তাহলে আমরা সরাসরি তাকেই দিব; যাতে করে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। কেননা এভাবে করাটা তার ইজ্জত রক্ষা করার জন্য অধিক উপযুক্ত এবং মানুষের সামনে লজ্জা দেয়ার চেয়ে অধিক দূরবর্তী।

আর যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি অপচয়কারী, সম্পদ নষ্ট করে এমন হয় এবং আমরা যদি তাকে তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য অর্থ দিই; আর সে গিয়ে এটা দিয়ে জরুরী নয় এমন সব জিনিস কিনে বসবে; তাহলে আমরা তাকে দিব না। আমরা তার ঋণদাতার কাছে গিয়ে বলব: অমুকের কাছে আপনি কত পাওনা আছেন? এরপর আমরা সাধ্যমত সেই সম্পূর্ণ ঋণ বা ঋণের অংশ বিশেষ পরিশোধ করে দিব।

সাত: আল্লাহ্‌র রাস্তা: আল্লাহ্‌র রাস্তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ; অন্য কিছু নয়। এর দ্বারা সব কল্যাণের রাস্তাকে উদ্দেশ্য নেয়া সঠিক নয়। কেননা যদি এর দ্বারা সকল কল্যাণের রাস্তা উদ্দেশ্য হত তাহলে আল্লাহ্‌র বাণী: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য এবং ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে তারা ও মুসাফিরদের খাতে। এটি আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০] এর মধ্যে যাকাত বণ্টনের খাতকে আটটিতে সীমাবদ্ধ করার আর কোন মর্ম থাকে না। কারণ এতে করে সীমাবদ্ধকরণ প্রভাবহীন হয়ে যায়। তাই আল্লাহ্‌র রাস্তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ। আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াইকারীকে যাকাত থেকে দেওয়া হবে। যাদের অবস্থা থেকে এটি ফুটে ওঠে যে, তারা আল্লাহ্‌র বাণীকে বুলন্দ করার জন্যই লড়াই করে; তাদেরকে তাদের খরচাদি, অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজনমত যাকাত থেকে দেওয়া হবে। যাকাতের অর্থ দিয়ে তাদেরকে অস্ত্র কিনে দেওয়াও জায়েয হবে। কিন্তু অবশ্যই আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াই হতে হবে। আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াই কি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন; যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যে ব্যক্তি বিশেষ প্রীতিবশতঃ বা বীরত্ব দেখাতে বা নিজের মর্যাদা দেখতে লড়াই করে; অর্থাৎ তাদের মধ্যে কে আল্লাহ্‌র রাস্তায়? তিনি বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র বাণীকে উচ্চকিত করার জন্য জিহাদ করে সেইই আল্লাহ্‌র রাস্তায়।

যে ব্যক্তি দেশীয় প্রীতিবশতঃ বা অন্য কোন প্রীতিবশতঃ জিহাদ করে সে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে না। তাই সেই ব্যক্তি সে সব কিছুর হকদার হবে না; আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তি দুনিয়াতে ও আখিরাতে যা কিছুর হকদার হন। যে ব্যক্তি বীরত্ববশতঃ জিহাদ করে তিনি বীরত্বকে ভালোবাসেন বিধায় লড়াই করেন। যিনি যে গুণে গুণান্বিত সাধারণত তিনি যে কোন অবস্থায় সেটি করতে ভালোবাসেন। এমন ব্যক্তিও আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে না। যে ব্যক্তি নিজের মর্যাদা দেখার জন্য জিহাদ করে সে ব্যক্তি লৌকিকতা ও শ্রবণেচ্ছার কারণে জিহাদ করে; আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে না। আর প্রত্যেক যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে না সে ব্যক্তি যাকাত থেকে কিছু পাওয়ার হকদার নয়। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আল্লাহর রাস্তায় । সেই ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় রয়েছেন যিনি আল্লাহ্‌র বাণীকে উচ্চকিত করার জন্য জিহাদ করেন।

আলেমগণ বলেন: আল্লাহ্‌র রাস্তার মধ্যে শামিল সেই ব্যক্তিও যিনি নিজেকে অন্য কিছু বাদ দিয়ে ইলমে শরয়ি অর্জনে নিমগ্ন রাখেন। তাই এমন ব্যক্তিকে তার খরচ, পোশাক, খাবার, পানীয়, বাসস্থান ও বইপুস্তক যা প্রয়োজন এগুলোর জন্য যাকাত থেকে প্রদান করা যাবে। কেননা ইলমে শরয়ি এক প্রকার আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ। বরং ইমাম আহমাদ বলেন: “ইলমের তুল্য কিছু নাই; যদি নিয়ত শুদ্ধ হয়।” কারণ ইলম হচ্ছে শরিয়তের সবকিছুর মূল। ইলম ছাড়া কোন শরিয়ত নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা কুরআন নাযিল করেছেন যাতে করে মানুষ ন্যায় বাস্তবায়ন করে, তাদের শরিয়তের বিধিবিধান শেখে এবং আবশ্যকীয় বিশ্বাস, কথা ও আমল জানে। হ্যাঁ; আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ সেটা সর্বোত্তম আমল। বরং ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। জিহাদের মর্যাদার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ইসলামে ইলমের মর্যাদাও অনেক বড়। তাই ইলম আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এটি সুস্পষ্ট; যাতে কোন আপত্তি নেই

আট: মুসাফির: তিনি এমন ব্যক্তি সফরের মধ্যে যিনি আটকা পড়ে গেছেন এবং যার খরচের অর্থ ফুরিয়ে গেছে। এমন ব্যক্তিকে যাকাত থেকে এতটুকু দেওয়া হবে যাতে করে তিনি তার দেশে ফিরে যেতে পারেন। এমনকি যদিও সেই ব্যক্তি তার দেশে ধনী হোক না কেন। কেননা সেই ব্যক্তি মুখাপেক্ষী। এই অবস্থায় আমরা এ কথা বলব না যে, তোমার উপর ঋণ নেয়া ও সেই ঋণ পরিশোধ করা অনিবার্য। কেননা তাহলে আমরা এ পরিস্থিতিতে ঋণী হওয়াকে তার উপর অনিবার্য করে দিচ্ছি। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি ঋণ নিতে চায়; যাকাত নিতে না চায়; তাহলে সেটি তার ব্যাপার। আমরা যদি এমন কোন ব্যক্তি পাই যে, তিনি মক্কা থেকে মদিনার পথে সফরে আছেন। সফরের মাঝে তার খরচের অর্থ হারিয়ে যায় এবং তার সাথে আর কোন অর্থ না থাকে; তাহলে সেই ব্যক্তি মদিনাতে ধনী হলেও আমরা তাকে মদিনায় পৌঁছা পরিমাণ যাকাতের অর্থ প্রদান করব; কেননা এইটুকু তার প্রয়োজন। আমরা তাকে এর চেয়ে বেশি দিব না।

আমরা যখন যাকাত বণ্টনের খাতগুলো জানলাম; অতএব এ খাতগুলোর বাইরে সাধারণ স্বার্থ ও ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রিক যে খাতগুলো রয়েছে সেগুলোর কোনটিতে যাকাত বণ্টন করা যাবে না। সুতরাং মসজিদ নির্মাণে যাকাত দেয়া যাবে না, রাস্তা মেরামতে যাকাত দেয়া যাবে না, লাইব্রেরী নির্মাণে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা যখন যাকাত বণ্টনের খাতগুলো উল্লেখ করেছেন তখন তিনি বলেছেন: فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ (এটি আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। অর্থাৎ এই বণ্টন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে ফরযকৃত। আল্লাহ্‌ হচ্ছেন: সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।)

এরপর আমরা বলব: যাকাতের এই হকদারদের প্রত্যেককে যাকাত দেয়া কি আবশ্যক; যেহেতু واو অব্যয়টি একত্রিতকরণের অর্থ দাবী করে?

জবাব হলো: সেটি ওয়াজিব নয়। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআ’য বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানোর কালে বলেন: “তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের সম্পদে যাকাত দেয়া ফরয করেছেন; যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে।” সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একটি খাতকে উল্লেখ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ্‌ তাআলা যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত খাতগুলো বর্ণনা করছেন; যাকাত বণ্টনে এ সবগুলো খাত শামিল হতে হবে; উদ্দেশ্য এমন নয়।

যদি কেউ বলে: এই আট খাতের মধ্যে কোন খাতটিতে যাকাত বণ্টন করা অধিক উপযুক্ত?

আমরা বলব: উপযুক্ত হলো: যেই খাতের প্রয়োজন অতি তীব্র। কারণ এরা প্রত্যেকে যাকাত খাওয়ার বৈশিষ্টধারী। সুতরাং যার প্রয়োজন তীব্র সেই সর্বাধিক উপযুক্ত। সাধারণতঃ এদের মধ্যে গরীব-মিসকীনরাই অধিক প্রয়োজনগ্রস্ত। এ কারণে আল্লাহ্‌ তাআলা তাদেরকে প্রথমে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য এবং ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে তারা ও মুসাফিরদের খাতে। এটি আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৮/৩৩১-৩৩৯)
 
Top