‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ কোন কোন কাজের মাধ্যমে পাপের কাফফারা হয়

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
375
Comments
439
Solutions
1
Reactions
8,171
Credits
21,451
ভূমিকা: আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আতে এমন কতিপয় আমল বাতলে দিয়েছেন যা সম্পাদন করলে গোনাহ সমূহ মাফ হয়। গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানী নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। আর শয়তান সেটাই চায়। সে চায় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাকে দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে তার পথে পরিচালিত করতে। এজন্য সে সদা একাজে নিয়োজিত থাকে।এর সঙ্গে আছে তার দোসর ও অসংখ্য মানবরূপী শয়তান, যারা আল্লাহর দেয়া শরী‘আত ও তাঁর আদেশ-নিষেধকে সর্বাবস্থায় অমান্য করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَفَأَمِنُوْا مَكْرَ اللهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُوْنَ ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউই নিরাপদ হ’তে পারে না। (সূরা আ‘রাফ ৭/৯৯)। রাসূল (ﷺ) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন,তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হ’তে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। (সহীহুল জামে‘ হা/২৬৮৭)

কিভাবে পাপের কাফফারা হয় এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি] বলেন: কুরআন সুন্নাহর গ্রন্থগুলি নির্দেশ করে যে প্রায় দশটি জিনিসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির উপর থেকে পাপের শাস্তি তুলে নেওয়া হয়:

(১) তওবা বা অনুশোচনা করা:

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩] অপর আয়াতে আরো বলেছেন :তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তার বান্দাদের তাওবাহ কবুল করেন এবং ‘সদকা’ গ্রহণ করেন, আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।(সূরা তওবা:৯/১০৪) আরো বলেছেন: আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপসমূহ মোচন করেন। (সূরা শূরা: ৪২/২৫)

(২) ক্ষমা প্রার্থনা করা:

আস সহীহাইন অর্থাৎ বুখারী মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ‘হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ‘রব’ আছেন? যে ‘রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। (সহীহ বুখারী হা/ ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম হা/ ২৭৫৮, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/ ৬২২)

সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭১০২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৫০; মিশকাত, হা/২৩২৮)

(৩) এমন নেক আমল করা যা গুনাহকে মুছে দেয়:

আল্লাহ তাআলা বলেন: আর আপনি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে*। নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। (সূরা হুদ: ১১/১১৪)

এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুম’আ পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত এবং এক রমযান দ্বারা পরবর্তী রমযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী যাবতীয় সগীরা গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হয়, যদি সে ব্যক্তি কবীরা গোনাহ হতে বিরত থাকে।(সহীহ মুসলিম হা/২৩৩)

অপর হাদীসে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী হা; ৩৭ সহীহ মুসলিম হা/১২৬৪) আরেক বর্ননায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা/৩৫)

রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। (বুখারী হা/১৫২১; মুসলিম হা/১৩৫০; মিশকাত হা/২৫০৭)

অপর বর্ননায়, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, এবং প্রতিবেশী দ্বারা সৃষ্ট ফিতনা-ফাসাদের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে সালাত, সাদকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দ্বারা। (সহীহ বুখারী হা/৩৫৮৫ সহীহ মুসলিম হা /৫১১৫০)

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্‌ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত করবেন। (সহীহ বুখারী হা/২৫১৭ সহীহ মুসলিম হা /২৭৭৭)

এগুলো এবং অনুরূপ হাদীস সহীহ কিতাবে বর্ণিত আছে। এবং তিনি বলেছেন: “সাদাকা (যাকাত বা দান -খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয় , যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়” হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলসমূহ খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানী কাঠ খেয়ে ফেলে। (তিরমিজি হা/৬১৪ ইবনে মাজাহ, হা/ ৪২১০ তাহক্বীক ইবনে মাজার সনদটি দুর্বল দেখুন সিলসিলা দঈফাহ হা/ ১৯০১)

(৪) মুমিনদের জন্য মুমিনদের দু’আ করা।

যেমন যখন তারা তার জন্য জানাযার নামায পড়ে। আয়েশা ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম যদি মারা যায় এবং একশত সংখ্যক মুসলিমের একটি দল তার সালাতুল জানাযা আদায় করে এবং তার জন্য শাফাআত করে তবে তার জন্য অবশ্যই তাদের শাফাআত কবূল করা হবে।(সহীহ মুসলিম হা/১৫৭৬ তিরমিজি হা/১০২৯)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিম মারা গেলে যদি তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করে না; তাহলে তার ব্যপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ ক্ববূল করেন। (সহীহ মুসলিম হা/১৫৭৭) এটি তার মৃত্যুর পর তার জন্য দু’আ করাকে বোঝায়।

(৫) মৃত ব্যক্তির জন্য সৎকাজ করা:

যেমন তার পক্ষ থেকে দান সদাকাহ ইত্যাদি। যা সুন্নাতের স্পষ্ট, সহীহ গ্রন্থ এবং ইমামগণের ঐক্যমত অনুসারে এটি তাকে উপকৃত করবে। একই কথা ক্রীতদাস মুক্ত করা এবং (তার পক্ষ থেকে) হজ্জের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, প্রকৃতপক্ষে এটি আস-সহীহায়নে প্রমাণিত যে,মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজের দায়িত্বে রোযা থাকা অবস্থায় মারা যাবে, তার তরফ থেকে তার অভিভাবক (ওয়ারেস) রোযা রাখবে।’’(সহীহ বুখারী হা/ ১৯৫২, সহীহ মুসলিম হা/ ১১৪৭)

(৬) কেয়ামতে শাফায়ত:

যারা পাপ করেছে তাদের জন্য কেয়ামতের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্যদের সুপারিশ সম্পর্কে মুতাওয়াতির হাদীছে বর্ণিত আছে, যেমন হাদিসে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আমার শাফায়াত হবে আমার উম্মতের মধ্যে যারা বড় গুনাহ করেছে তাদের জন্য” (আবু দাউদ হা/৪৭৩৯ সিলসিলায়ে সাহীহা, হা/৫৫৯৮) অপর বর্ননায় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন: “আমাকে আমার উম্মতের অর্ধেককে জান্নাতে প্রবেশ করানো এবং সুপারিশ করার মধ্যে একটি পছন্দ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং আমি সুপারিশকে বেছে নিয়েছিলাম।” (আলবানী সহীহ আল-জামি হা/৩৩৩৫)

(৭) বিপদাপদ:

বান্দার বিপদ আপদের মাধ্যমে আল্লাহ পাক দুনিয়ার গুনাহ কাফফারা করে দেন। আস সহীহাইন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন ঈমানদার ব্যক্তির শরীরে একটি মাত্র কাঁটার আঘাত কিংবা তার চাইতেও কোন নগণ্য আঘাত লাগলে আল্লাহ তা’আলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন কিংবা তার একটি গুনাহ মোচন করে দেন। (সহীহ মুসলিম হা/৬৪৫৬ ইফা ৬৩২৮, ইসে ৬৩৭৭)

(৮) কবরের আযাব,মাটিচাপা এবং যে আতঙ্ক সংঘটিত হয়। এগুলোও এমন জিনিস যার মাধ্যমে পাপের কাফফারা হয়ে যায়।

(৯) কেয়ামতের ভয়াবহতা, চরম দুর্দশা এবং কষ্ট।

(১০) কোন কারণ ছাড়াই বান্দার জন্য আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা। (ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৮৭-৫০১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।


উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
COMMENTS ARE BELOW

Share this page