If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 667
- Comments
- 1,234
- Solutions
- 17
- Reactions
- 7,918
- Thread Author
- #1
মূল: কুরআন আল্লাহর কালাম বা কথা। কুরআন মাখলুক নয়। ‘তা মাখলুক নয়’ বলার ব্যাপারে দুর্বলতা অনুভব করবে না। কারণ, আল্লাহর কালাম আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আর যা আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, তা মাখলুক নয়।
ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদের কথা: ‘কুরআন আল্লাহর কালাম বা কথা। কুরআন মাখলুক নয়।’ অর্থাৎ কুরআনের শব্দ, ও অর্থ এবং কুরআনের বর্ণ ও বর্ণের অর্থ আল্লাহর কালাম; যেমনটি স্পষ্ট দলীল প্রমাণ করে এবং যেমনটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ স্বীকৃতি প্রদান করে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ স্বীকৃতি দেয় যে, আল্লাহর কালাম শব্দ ও অর্থকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং আল্লাহ তাআলা বর্ণ ও শ্রবণযোগ্য আওয়াজে কথা বলেন। কাজেই একজন মুমিনের ওপর আবশ্যক এই আকীদায় বিশ্বাসী হওয়া এবং তা মাখলুক নয় বিশ্বাস করা।
• প্রথম প্রকার: কোনো মধ্যস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ থেকে শ্রুত; যেমনটি সাহাবীগণ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যস্থতায় আল্লাহর কালাম শুনেছেন এবং যেমনটি পাঠকের কিরাআতের মধ্যস্থতায় আল্লাহর কালাম শ্রবণ করা হয়।
• দ্বিতীয় প্রকার: কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ থেকে শ্রুত, যেমন কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই জিবরীল সরাসরি আল্লাহ তাআলা থেকে শুনেছেন এবং মূসা কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ তাআলা থেকে শুনেছেন। আল্লাহ তাআলা এই কুরআনের মাধ্যমে বর্ণ, আওয়াজ ও শব্দ সহকারে কথা বলেছেন আর জিবরীল তাঁর থেকে তা শুনেছেন। এরপর জিবরীল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তরে কুরআন নিয়ে অবতরণ করেছেন, যেমনটি আল্লাহ তাআলা তাঁর মহান কিতাবে বলেছেন:
বিশ্বস্ত রূহ (জিবরীল) তা নিয়ে অবতরণ হয়েছেন, আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।[1]
তিনি আরও বলেন,
আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন; যাতে সে আল্লাহর কথা শুনতে পায়।[2]
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যাতে আল্লাহর কালাম বা কথা শুনতে পায়। তিনি বলেননি, যাতে আল্লাহর কালামের অর্থ শুনতে পায়, যেমনটি আশআরীরা বলে থাকে। আশআরীরা মনে করে, যে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তা মূলত আল্লাহর কালামের অর্থ; সরাসরি আল্লাহর কালাম নয়। এটি বাতিল কথা, যেমনটি পূর্বে বলা হলো। এ কারণে ইমাম বুখারী তদীয় ‘খলকু আফআলিল ইবাদ’ গ্রন্থে নিজস্ব সনদে সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ থেকে বর্ণনা করেন, সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, ‘আমি সত্তর বছর থেকে আমাদের শাইখদেরকে যেমন আমর ইবন দীনারকে এ কথা বলার ওপর পেয়েছি যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলুক নয়।’[3]
আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর কালাম বা কথা শুনেছেন। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলবেন এবং মানুষ কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই তাঁর কথা শুনবে। একইভাবে আল্লাহ তাআলা আদমের সাথে কিয়ামতের দিন কথা বলবেন এবং বলবেন ‘হে আদম’। আল্লাহ তাআলা তাকে আওয়াজ শুনিয়ে কথা বলবেন। হাদীসে রয়েছে:
তিনি তাদেরকে সশব্দে ডাকবেন, দূরবর্তীগণও তা শুনতে পাবে, যেমন শুনতে পাবে নিকটবর্তীরা।[4]
এটা আল্লাহর কালামের শ্রুত আওয়াজ। তাঁর এই কালাম শুনতে পাবে দূরের লোকেরা, যেমন শুনবে কাছের লোকেরা। কিন্তু মাখলুকের কথার আওয়াজ এমনটি নয়। মাখলুকের কথার আওয়াজ দূরের লোকেদের তুলনায় কাজের লোকেরা বেশি শুনতে পায়।
আমরা যে হাদীসের ভগ্নাংশ মাত্রই উল্লেখ করলাম, তাতে আরও রয়েছে:
মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা তোমাদের মধ্য হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হবে।[5]
ইমাম হাফিয আবূ দাউদ তয়ালিসী বলেন, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর থেকে তা বিচ্ছিন্ন নয়।’ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া বলেন, ‘সালাফগণ বলেছেন, আল্লাহর কালাম আল্লাহ থেকে শুরু হয়েছে এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। সালাফগণ তাদের এ কথা বোঝাননি যে, আল্লাহর কালাম তাঁর সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টির মাঝে প্রবেশ করেছে। অথচ মাখলুকের কালাম বরং মাখলুকের সকল গুণ মাখলুক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য কারো মাঝে স্থানান্তরিত হয় না। তাহলে আল্লাহর কালাম বা তাঁর অন্যান্য গুণ কীভাবে তাঁর সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে?’[6]
আবূ সাঈদ দারিমীর ‘আর-রদ্দু আলাল জাহমিয়া’ গ্রন্থে রয়েছে, সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, আমর ইবন দীনার বলেন, ‘আমি সত্তর বছর থেকে (যাবৎ) সাহাবী ও তাদের পরবর্তীদেরকে এ কথা বলতে পেয়েছি যে, আল্লাহ খালিক আর তিনি ব্যতীত সকল কিছু মাখলুক। কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর কালাম তাঁর থেকে শুরু হয়েছে এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।’[7] এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ‘তাঁর থেকে শুরু হয়েছে’ অর্থ আল্লাহ তাআলা কথা বলেছেন। ‘তাঁর কাছেই ফিরে যাবে’ অর্থ শেষ যুগে কুরআন তুলে নেওয়া হবে। কুরআন তুলে নেওয়া কিয়ামতের বড়ো আলামতসমূহের একটি আলামত। মানুষ যখন কুরআন অনুযায়ী আমল করা ছেড়ে দিবে, তখন তাদের বুক ও মুসহাফ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহর কাছে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
ইমাম বাইহাকী তদীয় ‘আল-আসমা ওয়াস সিফাত’ গ্রন্থে ইবন রাহাওয়াইহ-এর সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমর ইবন দীনার বাদরী, মুহাজির ও আনসারদের বিজ্ঞ সাহাবীদেরকে যেমন জাবির ইবন আবদুল্লাহ, আবূ সাঈদ খুদরী, আবদুল্লাহ ইবন আমর, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবন যুবাইরকে পেয়েছেন এবং বিজ্ঞ তাবিয়ীদেরকে পেয়েছেন। এ মতের ওপর উম্মাহর প্রথম প্রজন্ম অতিবাহিত হয়েছেন এবং তারা এ ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ করেননি যে, কুরআন আল্লাহর কালাম।’[8]
আবূ আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ বলেন, ‘আমার পিতাকে কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে আমি আমার পিতাকে একবার বলতে শুনেছি, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলুক নয়। তোমরা এ নিয়ে পরস্পরে বিবাদ কোরো না। যে বিবাদ করতে আসবে, তার সাথে তর্কবিতর্ক কোরো না।’[9]
কাজেই কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলুক নয় এবং আল্লাহ থেকে পৃথক নয়। অর্থাৎ আল্লাহ থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়নি।
ইমাম আহমাদের কথা: ‘আর যা আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, তা মাখলুক নয়।’ অর্থাৎ আল্লাহ থেকে অবিচ্ছিন্ন কোনো কিছুই মাখলুক নয়। আল্লাহর কালাম তাঁর একটি গুণ। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা, নামসমূহ ও গুণসমূহ সহকারে খালিক আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
অতএব, আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা, নামসমূহ ও গুণসমূহ সহকারে খালিক আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক। কিন্তু বিদআতীরা আল্লাহ তাআলা কালামের ব্যাপারে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে; যেমনটি ইমাম আহমাদ বলেছেন, ‘তারা কিতাব নিয়ে মতবিরোধ করে কিতাবের বিরোধিতা করে।’ কাজেই আহলুস সুন্নাহর আকীদা হলো: ‘নিশ্চয় কুরআন তার শব্দ ও অর্থ সহকারে আল্লাহর কালাম। তা শ্রুত বর্ণ ও আওয়াজবিশিষ্ট।’
[1] সূরা শুআরা, আয়াত: ১৯৩-১৯৫
[2] সূরা তাওবা, আয়াত: ৬
[3] খলকু আফআলিল ইবাদ, পৃ. ২৯
[4] আল-আদাবুল মুফরাদ, ৯৭৯, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য।
[5] সহীহুল বুখারী, ৩৩৪৮; সহীহ মুসলিম, ২২২
[6] আল-ফাতাওয়াল কুবরা, ৫/১০; মাজমূউল ফাতাওয়া, ১২/২৭৪
[7] আর-রদ্দু আলাল জাহমিয়া, নং ৩৪৪
[8] আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ১/৫৯৮
[9] আস-সুন্নাহ, ১/১৩২, নং ৮০
[10] সূরা রদ, আয়াত: ১৬
ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদের কথা: ‘কুরআন আল্লাহর কালাম বা কথা। কুরআন মাখলুক নয়।’ অর্থাৎ কুরআনের শব্দ, ও অর্থ এবং কুরআনের বর্ণ ও বর্ণের অর্থ আল্লাহর কালাম; যেমনটি স্পষ্ট দলীল প্রমাণ করে এবং যেমনটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ স্বীকৃতি প্রদান করে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ স্বীকৃতি দেয় যে, আল্লাহর কালাম শব্দ ও অর্থকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং আল্লাহ তাআলা বর্ণ ও শ্রবণযোগ্য আওয়াজে কথা বলেন। কাজেই একজন মুমিনের ওপর আবশ্যক এই আকীদায় বিশ্বাসী হওয়া এবং তা মাখলুক নয় বিশ্বাস করা।
আল্লাহর কালামের প্রকারভেদ
আল্লাহর কালাম দুই প্রকার:• প্রথম প্রকার: কোনো মধ্যস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ থেকে শ্রুত; যেমনটি সাহাবীগণ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যস্থতায় আল্লাহর কালাম শুনেছেন এবং যেমনটি পাঠকের কিরাআতের মধ্যস্থতায় আল্লাহর কালাম শ্রবণ করা হয়।
• দ্বিতীয় প্রকার: কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ থেকে শ্রুত, যেমন কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই জিবরীল সরাসরি আল্লাহ তাআলা থেকে শুনেছেন এবং মূসা কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ তাআলা থেকে শুনেছেন। আল্লাহ তাআলা এই কুরআনের মাধ্যমে বর্ণ, আওয়াজ ও শব্দ সহকারে কথা বলেছেন আর জিবরীল তাঁর থেকে তা শুনেছেন। এরপর জিবরীল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তরে কুরআন নিয়ে অবতরণ করেছেন, যেমনটি আল্লাহ তাআলা তাঁর মহান কিতাবে বলেছেন:
١٩٢ نَزَلَ بِهِ الرُّوۡحُ الۡاَمِيۡنُۙ ١٩٣ عَلٰى قَلۡبِكَ لِتَكُوۡنَ مِنَ الۡمُنۡذِرِيۡنَۙ ١٩٤ بِلِسَانٍ عَرَبِىٍّ مُّبِيۡنٍؕ ١٩٥
বিশ্বস্ত রূহ (জিবরীল) তা নিয়ে অবতরণ হয়েছেন, আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।[1]
তিনি আরও বলেন,
وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ
আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন; যাতে সে আল্লাহর কথা শুনতে পায়।[2]
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যাতে আল্লাহর কালাম বা কথা শুনতে পায়। তিনি বলেননি, যাতে আল্লাহর কালামের অর্থ শুনতে পায়, যেমনটি আশআরীরা বলে থাকে। আশআরীরা মনে করে, যে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তা মূলত আল্লাহর কালামের অর্থ; সরাসরি আল্লাহর কালাম নয়। এটি বাতিল কথা, যেমনটি পূর্বে বলা হলো। এ কারণে ইমাম বুখারী তদীয় ‘খলকু আফআলিল ইবাদ’ গ্রন্থে নিজস্ব সনদে সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ থেকে বর্ণনা করেন, সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, ‘আমি সত্তর বছর থেকে আমাদের শাইখদেরকে যেমন আমর ইবন দীনারকে এ কথা বলার ওপর পেয়েছি যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলুক নয়।’[3]
আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর কালাম বা কথা শুনেছেন। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলবেন এবং মানুষ কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই তাঁর কথা শুনবে। একইভাবে আল্লাহ তাআলা আদমের সাথে কিয়ামতের দিন কথা বলবেন এবং বলবেন ‘হে আদম’। আল্লাহ তাআলা তাকে আওয়াজ শুনিয়ে কথা বলবেন। হাদীসে রয়েছে:
فَيُنَادِيهِمْ بِصَوْتٍ يَسْمَعُهُ مَنْ بَعُدَ، أَحْسَبُهُ قَالَ: كَمَا يَسْمَعُهُ مَنْ قَرُبَ
তিনি তাদেরকে সশব্দে ডাকবেন, দূরবর্তীগণও তা শুনতে পাবে, যেমন শুনতে পাবে নিকটবর্তীরা।[4]
এটা আল্লাহর কালামের শ্রুত আওয়াজ। তাঁর এই কালাম শুনতে পাবে দূরের লোকেরা, যেমন শুনবে কাছের লোকেরা। কিন্তু মাখলুকের কথার আওয়াজ এমনটি নয়। মাখলুকের কথার আওয়াজ দূরের লোকেদের তুলনায় কাজের লোকেরা বেশি শুনতে পায়।
আমরা যে হাদীসের ভগ্নাংশ মাত্রই উল্লেখ করলাম, তাতে আরও রয়েছে:
يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى يَا آدَمُ فَيَقُوْلُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِيْ يَدَيْكَ فَيَقُوْلُ أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ قَالَ وَمَا بَعْثُ النَّارِ قَالَ مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِيْنَ ثُمَّ قَالَ أَبْشِرُوْا فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوْجَ وَمَأْجُوْجَ أَلْفًا
মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা তোমাদের মধ্য হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হবে।[5]
কুরআনের শব্দ ও অর্থ উভয়টি আল্লাহর কালাম।
ইমাম আহমাদের কথা: ‘তা মাখলুক নয়’ বলার ব্যাপারে দুর্বলতা অনুভব করবে না।’ অর্থাৎ তুমি এ কথা বলতে দুর্বল হবে না। তুমি তোমার আকীদার ব্যাপারে শক্তিশালী উৎসাহী হও এবং তোমার আকীদার ঘোষণা দিতে ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকীদা প্রকাশ করতে শক্তিশালী উৎসাহী হও। কাজেই তুমি বলো, ‘কুরআন মাখলুক নয়’। তুমি এ কথা বলতে বিদআতীদের সামনে দুর্বল হবে না। কোনো সুন্নী ব্যক্তির জন্য দুর্বল হওয়া সমীচীন নয়। বরং সুস্পষ্টভাষায় ও বুকে শক্তি নিয়ে তা বলা এবং হকের দীপ্ত ঘোষণা দেওয়া তার দায়িত্ব। সে সুনিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে বলবে, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলুক নয়’; যদিও এ কথা বিদআতীর সামনে বলতে হয়। কিছু মানুষকে দেখা যায়, তারা বিদআতীদের সামনে দুর্বলতা অনুভব করে এবং কখনো লজ্জাবোধ করে। এমন লোকেদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তা মাখলুক নয়’ বলার ব্যাপারে দুর্বলতা অনুভব করবে না। কারণ, আল্লাহর কালাম আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।’ অর্থাৎ কালাম আল্লাহ তাআলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি এবং তাঁর থেকে অন্য কোথায় স্থানান্তরিত হয়নি। আল্লাহ তাআলা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।ইমাম হাফিয আবূ দাউদ তয়ালিসী বলেন, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর থেকে তা বিচ্ছিন্ন নয়।’ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া বলেন, ‘সালাফগণ বলেছেন, আল্লাহর কালাম আল্লাহ থেকে শুরু হয়েছে এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। সালাফগণ তাদের এ কথা বোঝাননি যে, আল্লাহর কালাম তাঁর সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টির মাঝে প্রবেশ করেছে। অথচ মাখলুকের কালাম বরং মাখলুকের সকল গুণ মাখলুক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য কারো মাঝে স্থানান্তরিত হয় না। তাহলে আল্লাহর কালাম বা তাঁর অন্যান্য গুণ কীভাবে তাঁর সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে?’[6]
আবূ সাঈদ দারিমীর ‘আর-রদ্দু আলাল জাহমিয়া’ গ্রন্থে রয়েছে, সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ বলেন, আমর ইবন দীনার বলেন, ‘আমি সত্তর বছর থেকে (যাবৎ) সাহাবী ও তাদের পরবর্তীদেরকে এ কথা বলতে পেয়েছি যে, আল্লাহ খালিক আর তিনি ব্যতীত সকল কিছু মাখলুক। কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর কালাম তাঁর থেকে শুরু হয়েছে এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।’[7] এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ‘তাঁর থেকে শুরু হয়েছে’ অর্থ আল্লাহ তাআলা কথা বলেছেন। ‘তাঁর কাছেই ফিরে যাবে’ অর্থ শেষ যুগে কুরআন তুলে নেওয়া হবে। কুরআন তুলে নেওয়া কিয়ামতের বড়ো আলামতসমূহের একটি আলামত। মানুষ যখন কুরআন অনুযায়ী আমল করা ছেড়ে দিবে, তখন তাদের বুক ও মুসহাফ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহর কাছে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
ইমাম বাইহাকী তদীয় ‘আল-আসমা ওয়াস সিফাত’ গ্রন্থে ইবন রাহাওয়াইহ-এর সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমর ইবন দীনার বাদরী, মুহাজির ও আনসারদের বিজ্ঞ সাহাবীদেরকে যেমন জাবির ইবন আবদুল্লাহ, আবূ সাঈদ খুদরী, আবদুল্লাহ ইবন আমর, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবন যুবাইরকে পেয়েছেন এবং বিজ্ঞ তাবিয়ীদেরকে পেয়েছেন। এ মতের ওপর উম্মাহর প্রথম প্রজন্ম অতিবাহিত হয়েছেন এবং তারা এ ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ করেননি যে, কুরআন আল্লাহর কালাম।’[8]
আবূ আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ বলেন, ‘আমার পিতাকে কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে আমি আমার পিতাকে একবার বলতে শুনেছি, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলুক নয়। তোমরা এ নিয়ে পরস্পরে বিবাদ কোরো না। যে বিবাদ করতে আসবে, তার সাথে তর্কবিতর্ক কোরো না।’[9]
কাজেই কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলুক নয় এবং আল্লাহ থেকে পৃথক নয়। অর্থাৎ আল্লাহ থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়নি।
ইমাম আহমাদের কথা: ‘আর যা আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, তা মাখলুক নয়।’ অর্থাৎ আল্লাহ থেকে অবিচ্ছিন্ন কোনো কিছুই মাখলুক নয়। আল্লাহর কালাম তাঁর একটি গুণ। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা, নামসমূহ ও গুণসমূহ সহকারে খালিক আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ
আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা।[10]অতএব, আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা, নামসমূহ ও গুণসমূহ সহকারে খালিক আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক। কিন্তু বিদআতীরা আল্লাহ তাআলা কালামের ব্যাপারে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে; যেমনটি ইমাম আহমাদ বলেছেন, ‘তারা কিতাব নিয়ে মতবিরোধ করে কিতাবের বিরোধিতা করে।’ কাজেই আহলুস সুন্নাহর আকীদা হলো: ‘নিশ্চয় কুরআন তার শব্দ ও অর্থ সহকারে আল্লাহর কালাম। তা শ্রুত বর্ণ ও আওয়াজবিশিষ্ট।’
[1] সূরা শুআরা, আয়াত: ১৯৩-১৯৫
[2] সূরা তাওবা, আয়াত: ৬
[3] খলকু আফআলিল ইবাদ, পৃ. ২৯
[4] আল-আদাবুল মুফরাদ, ৯৭৯, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য।
[5] সহীহুল বুখারী, ৩৩৪৮; সহীহ মুসলিম, ২২২
[6] আল-ফাতাওয়াল কুবরা, ৫/১০; মাজমূউল ফাতাওয়া, ১২/২৭৪
[7] আর-রদ্দু আলাল জাহমিয়া, নং ৩৪৪
[8] আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ১/৫৯৮
[9] আস-সুন্নাহ, ১/১৩২, নং ৮০
[10] সূরা রদ, আয়াত: ১৬
Attachments