আকিদা স্রষ্টার অস্তিত্ব ও একত্বতা প্রমাণে আল কুরআনের নীতি

Habib Bin TofajjalVerified member

If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
690
Comments
1,228
Solutions
17
Reactions
7,152
স্রষ্টার অস্তিত্ব ও একত্বতা প্রমাণে কুরআনের নীতি সঠিক স্বভাব জাত ধর্ম এবং সুষ্ঠু বিবেক-জ্ঞানের সাথে একমত। আর সে নীতি হলো, মনোপুত বিশুদ্ধ দলীলের মাধ্যমে বিবাদী তথা প্রতিপক্ষকে আত্মসমর্পন করানো। ঐ সকল নীতিমালার কিছু নিম্নে পেশ করা হলো,

১। এটা সর্বজন বিদিত যে, প্রত্যেক কাজের একজন কর্তা প্রয়োজন: এটা আবশ্যক বিষয় যা স্বভাবজাত ধর্ম দ্বারা জানা যায়। এমনকি বাচ্চারাও তা জানে; যদি অসতর্ক অবস্থায় কোন বাচ্চাকে কেউ প্রহার করে এবং সে প্রহারকারীকে দেখতে না পায় তবে অবশ্যই সে বলবে, কে আমাকে প্রহার করল? যদি তাকে বলা হয়, কেউ তোমাকে প্রহার করেনি, তাহলে প্রহারকারী বিহীন এ প্রহারকে তার জ্ঞান মেনে নিবে না। অপর দিকে যদি বলা হয়, অমুক ব্যক্তি তোমাকে প্রহার করেছে, তবে প্রহারকারীকে প্রহার না করা পর্যন্ত সে কাঁদতে থাকে। এজন্য-আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা কি কোন কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে না তারাই স্রষ্টা? - সূরা তুর ৫২:৩৫

এ প্রকরণের মাধ্যমে স্রষ্টাকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অস্বীকার মূলক প্রশেড়বর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন। যাতে এটা স্পষ্ট হয় যে, এ প্রাথমিক বিষয়টি জানা আবশ্যক যা অস্বীকার করা অসম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা কি কোন স্রষ্টা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে? - সূরা আত তূর ৫২:৩৫

দু’টি বিষয়ই বাতিল। অর্থাৎ কোন স্রষ্টা ছাড়া তারা সৃষ্টি হয়নি এবং নিজেরাও নিজেদেরকে সৃষ্টি করেনি। এতে স্থির হলো যে, তাদের এমন একজন স্রষ্টা রয়েছেন যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনিই হলেন, আল্লাহ তা‘আলা। তিনি ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা (দুনিয়া ও আসমান এবং এতদু’ভয়ের সব কিছু) আল্লাহর সৃষ্টি। তোমরা আমাকে দেখাও আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করা হচ্ছে তারা কি সৃষ্টি করেছে? - সুরা লুক্বমান ৩১: ১১।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্যরা যমীনের কোন জিনিসটি সৃষ্টি করেছে তা তোমরা আমাকে দেখাও?। - সূরা আহ্কাফ ৪৬: ৪
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুন: আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী। - সূরা র্আ রা'দ ১৩: ১৬
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। সূরা হাজ্জ ২২: ৭৩। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ডাকে, ওরা তো কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয় - সূরা আন্ নাহল ১৬: ২০।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি সে লোকের সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না? তোমরা কি চিন্তা করবে না? সূরা আন্ নাহল ১৬: ১৭।

একাধিক বার এ সকল চ্যালেঞ্জ ঘোষণার পরও কেউ এ দাবী করেনি যে, সে কোন কিছু সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি সাব্যস্ত তো দূরের কথা কেউ এ দাবীই করেনি। এতে নির্দিষ্ট হলো যে, এক ও লা-শরীক আল্লাহ তা‘আলা হলেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।

২। পৃথিবীর সকল বিষয়াদির নিয়মতান্ত্রিক ও সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়া: দুনিয়া সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত হওয়া এ কথার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বহন করে যে, দুনিয়ার পরিচালক হলেন এক ইলাহ, এক রব্ব যার কোন শরীক নেই এবং এ বিষয়ে কোন বিবাদীও নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহ্ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সাথে কোন মাবূদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবূদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর চড়াও হয়ে আক্রমন করে বিজয়ী হত। সূরা মুমিনূন ২৩: ৯১।

সত্য মা‘বূদ হতে হলে অবশ্যই সৃষ্টি কর্তা ও দুনিয়া পরিচালনার যোগ্যতা থাকতে হবে। যদি আল্লাহর সাথে তার মালিকানায় শরীক (আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত) কোন ইলাহ থাকতো তাহলে তারও কিছু সৃষ্টি ও কর্ম থাকত। আর তখনই সে নিজের সহিত অন্য ইলাহের শরীকানা মেনে নিত না। বরং যদি সে তার শরীককে পরাভূত করে ইলাহ ও মালিকানার ক্ষেত্রে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হতো তবে তাই করতো। আর যদি এমনটি করতে সক্ষম না হতো তবে নিজের মালিকানা ও সৃৃষ্টিগুলো নিয়ে সে আলাদা হয়ে যেত। যেমন দুনিয়ার রাজা বাদশারা প্রত্যেকে নিজের রাজত্ব নিয়ে একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে যায়। তখনি বিভাজন ও বিভক্তির সৃষ্টি হয়ে তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি আবশ্যক হয়ে যায়:

ক. একজন অপর জনকে পরাজিত করে একক কর্তৃত্ব গ্রহণ করা।
খ. প্রত্যেকে নিজ নিজ সৃষ্টি ও মালিকানা নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে, যার ফলে বিভক্তির সৃষ্টি হবে।
গ. অথবা সকলে এক মালিকের নেতৃত্ব মেনে নিবে যিনি যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে পরিচালিত করবেন। ফলে তিনিই হবেন একমাত্র সত্য ইলাহ এবং দুনিয়ার সকলে হবে তার বান্দা। আর এটাই হলো বাস্তব সত্য। দুনিয়াতে কোন বিভক্তি ও ত্রুটি সৃষ্টি না হওয়া প্রমাণ করে যে, তার পরিচালক হলেন একজন তার কোন প্রতিদ্বন্দি নেই এবং তার মালিক হলেন একজন যার কোন শরীক নেই।

৩। সৃষ্টিজগতকে তাদের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করা এবং তার বৈশিষ্ট্য আঞ্জাম দেয়া: দুনিয়ায় এমন কোন মাখলূক্ব নেই যে, ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফেরআ'উনের প্রশেড়বর উত্তরে মূসা আলাইহিস সালাম এর দ্বারাই দলীল পেশ করে ছিলেন, হে মূসা তোমাদের দু'জনের রব্ব বা প্রভু কে? - সূরা ত্ব-হা ২০: ৪৯
তখন মূসা আ. যথেষ্ট ও স্পষ্ট উত্তর দিয়ে বলেছিলেন: আমাদের পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। সূরা ত্ব-হা ২০: ৫০।

অর্থাৎ আমাদের রব্ব তো তিনিই যিনি সকল মাখলুক্বাত সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি জিনিসকে তার উপযুক্ত আকৃতি দিয়েছেন। ফলে কোন জিনিসকে বড়, কোনটিকে ছোট, কোনটিকে মধ্যম আকৃতির করে তাদেরকে উপযুক্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন। এরপর প্রতিটি জিনিসকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ হিদায়াত হলো, দিক নির্দেশনা ও আন্তরিক অনুপ্রেরণা বা ইল্হাম পাঠানো। আর তা হলো সেই পরিপূর্ণ হিদায়াত যা প্রত্যেক মাখলুকের মাঝে দেখা যায়। প্রতিটি মাখলুকই যে কল্যাণের জন্য সৃষ্ট হয়েছে তা অর্জনে এবং নিজ হতে ক্ষতি রোধে সচেষ্ট। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা জতুষ্পদ জন্তুকেও অনুভূতি দিয়েছেন। যার দ্বারা তারাও নিজেদের উপকারী জিনিস করতে এবং অপকার রোধে সক্ষম। এ অনুভূতির মাধ্যমেই দুনিয়ায় তারা নিজেদের মিশন বা দায়িত্ব আদায় করে যাচ্ছে। এ জন্য-আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যিনি (আল্লাহ) তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন। সূরা সাজ্দা ৩২:৭।

অতএব, যিনি সকল মাখলুক্ব সৃষ্টি করে তাকে এমন সুন্দর আকৃতি দিয়েছেন-মানুষের জ্ঞান যার চেয়ে সুন্দর আকৃতির প্রস্তাবও করতে পারে না- এবং প্রতিটি জিনিসকে স্বীয় কল্যাণের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রকৃত পক্ষে তিনিই হলেন রব্ব বা পালন কর্তা। সেই মহান সত্তাকে অস্বীকার করলে সবচেয়ে মহান জিনিসের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হলো।

আর এটা হলো অহংকার, গোঁড়ামী এবং মিথ্যার ক্ষেত্রে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তা‘আলা দুুনিয়াতে মানুষের প্রয়োজনীয় বস্তু দান করে তার মাধ্যমে উপকার গ্রহণের পথও দেখিয়েছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি জিনিসকে উপযুক্ত আকৃতি ও গঠন দান করেছেন। বিবাহ, ভালোবাসা এবং একত্রিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নারী-পুরুষকে লিঙ্গভেদে আল্লাহ তা‘আলা যথাযথ গঠন দিয়েছেন। প্রতিটি অঙ্গের মাধ্যমে উপকার গ্রহণের জন্য তাকে মানানসই আকৃতি দিয়েছেন। এসব কিছুতে আল্লাহই একমাত্র রব্ব এবং অন্যরা নয়, কেবলমাত্র আল্লাহই ইবাদতের যোগ্য এ কথার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। কবি বলেন: প্রতিটি জিনিসে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে, যা প্রমাণ করে আল্লাহ তা‘আলা এক ও অদ্বিতীয়।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর একক প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো: এর মাধ্যমে কেবল মাত্র শরীকহীন এক আল্লাহর ইবাদত ওয়াজিব হওয়ার উপর প্রমাণ সাব্যস্ত করা। তা হলো, তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্। যদি কোন ব্যক্তি তাওহীদে রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করে কিন্তু তাওহীদে উলূহিয়্যাহকে অস্বীকার করে বা সঠিকভাবে তা পালন না করে তবে সে মুসলিম ও আস্তিক হতে পারবে না। বরং সে কাফির, অস্বীকারকারী, নাস্তিক। পরবর্তী পরিচ্ছেদে এ বিষয়েই আমরা আলোচনা করব। ইনশা আল্লাহ।

শাইখ ড. সালিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান।
অনুবাদ: শাইখ মুখলিসুর রহমান মানসুর।​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top