সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Mahmud ibn Shahidullah

প্রবন্ধ কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব ও ফযীলত

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
LV
10
 
Awards
18
Credit
3,455
কর্যে হাসানাহ ইসলামের অর্থনীতিতে এক প্রশংসনীয় ব্যবস্থা। সূদবিহীন ধার দেয়ার পদ্ধতিই মূলত কর্যে হাসানাহ। যা প্রদানের মাধ্যমে অশেষ ছওয়াব লাভ করা যায়। আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে কর্যে হাসানাহ প্রদানের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব


কর্যে হাসানাহকে আমরা বলতে পারি বিনা সূদে ঋণ দেয়া। সূদবিহীন ঋণদান একটি কল্যাণকর অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। সমাজে কর্যে হাসানাহ চালু থাকলে সূদ নির্মূল করা সহজ। অন্যথা সূদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। মানুষ যখন সূদমুক্ত ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাবে তখন পর্যায়ক্রমে সূদী কারবার সমাজ থেকে উঠে যাবে। মানুষ স্বীয় প্রয়োজন পূরণের জন্যই ঋণ গ্রহণ করে থাকে। ঠিক এই সুযোগটি কাজে লাগায় পুঁজিবাদী সূদখোর ব্যক্তিরা।

ইংলান্ডের অষ্টম হেনরীর শাসনকালের পূর্বেই খৃস্টান প্রজাদিগের জন্য সূদী কারবার ও সূদী লেন-দেনকে আইনত নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই আইন শুধু এই জন্যই ব্যর্থ হয়েছিল যে, সে সাথে বিনাসূদে ঋণ দেয়ার কোন বাস্তব ব্যবস্থাই ছিল না। অন্যদিকে ইহুদীদেরকে সূদী কারবার করার অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। ফলে তাদের পদাংক অনুসরণ করে খৃস্টানরাও সূদী কারবার করতে শুরু করেছিল। অতঃপর সরকারকে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েই ক্ষ্যন্ত ও নিস্তব্ধ হয়ে থাকতে হল।[১]

ইতিহাস প্রমাণ করে অতীতে কোন কোন জাতি সূদমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি, সূদমুক্ত ঋণ প্রদান কর্মসূচি না থাকার কারণে। পক্ষান্তরে যাদের সূদে ঋণদান কর্মসূচি চালু ছিল তারা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদমুক্ত সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে শতভাগ সফল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজে সূদী কারবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আর সাহাবায়ে কেরাম সূদমুক্ত সমাজ গঠন করে বিশ্ববাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছেন। এমর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَقْرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِنًّا فَأَعْطَى سِنًّا فَوْقَهُ وَقَالَ خِيَارُكُمْ مَحَاسِنُكُمْ قَضَاءً​

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উট ঋণ করে আনেন। অতঃপর এর থেকে বড় একটি উট তাকে দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করে’।[২]

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহীত ঋণের চেয়ে উত্তম উট দ্বারা তা পরিশোধ করেছিলেন। ঋণগ্রহীতা চাইলে স্বেচ্ছায় ভালো কিছুর মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু ঋণদাতা বেশী কিছু চাইতে পারবে না বা আশা পোষণও করতে পারবে না। কোনরূপ দেন দরবার বা দরকষাকষি ব্যতীত গ্রহীতা চাইলে উত্তম পন্থায় তা পরিশোধ করতে পারে। এই হাদীস থেকে সূদ নেয়ার দলীল খোঁজা সত্যের অপলাপ মাত্র। ঋণ দেয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন,

اِنۡ تُقۡرِضُوا اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا یُّضٰعِفۡہُ لَکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ وَ اللّٰہُ شَکُوۡرٌ حَلِیۡمٌ​

‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন’ (সূরা আত-তাগাবুন : ১৭)। ইসলামের দৃষ্টিতে কর্যে হাসানাহ বা সূদমুক্ত ঋণপ্রদান করা অধিক পুণ্যের কাজ। এর ফযীলতও অনেক বেশি। কেননা এর মাধ্যমে ইসলামী অর্থনীতি সমৃদ্ধশীল হয়। তবে সর্বোত্তম পন্থায় ঋণ আদান-প্রদান হওয়া উচিত।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَحِمَ اللهُ رَجُلًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ وَإِذَا اشْتَرَى وَإِذَا اقْتَضَى​

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহম করুন, যে বিক্রয়কালে উদার, ক্রয়কালে উদার, ঋণ পরিশোধ কালে উদার এবং ঋণ আদায়কালেও উদার’।[৩]

কর্যে হাসানাহ বা সূদমুক্ত ঋণ আদান-প্রদান সমাজ জীবনে প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এতে করে পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জাগ্রত হয়। বিপদে-আপদে একে অপরের সাহায্যার্থে এগিয়ে যায়। কিন্তু গ্রহীতাকে তা পরিশোধে তৎপর থাকতে হবে। অন্যথা সম্পর্কে চিড় ধরতে বাধ্য। ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধে উদার ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষভাবে দু‘আ করেছেন। যেন আল্লাহ তার প্রতি ইহ-পরকালে দয়া করেন।

কর্যে হাসানাহ প্রদানের ফযীলত


কর্যে হাসানাহ প্রদান করলে দ্বিগুণ নেকী লাভ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে মানুষকে কর্যে হাসানাহ প্রদান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কেননা সমাজে সূদবিহীন ধার দেয়ার পদ্ধতি চালু থাকলে সূদ এমনিতেই বিদায় নিবে। কর্যে হাসানাহ ইসলামের এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার একটি। তাই কর্যে হাসানাহ প্রদানের এত বেশি ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।

১). দ্বিগুণ নেকী প্রদান করা হবে

ইসলামে কর্যে হাসানার গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা কেউ কর্যে হাসানাহ প্রদান করলে তাকে দ্বিগণ থেকে বহুগুণ নেকী প্রদান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یُقۡرِضُ اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا فَیُضٰعِفَہٗ لَہٗۤ اَضۡعَافًا کَثِیۡرَۃً ؕ وَ اللّٰہُ یَقۡبِضُ وَ یَبۡصُۜطُ ۪ وَ اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ​

‘এমন ব্যক্তি কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম কর্য প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্যকে তার জন্য আল্লাহ বহুগুণ বর্ধিত করে দিবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত করে থাকেন। আর তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪৫)। অপর এক আয়াতে বিধৃত হয়েছে,

اِنۡ تُقۡرِضُوا اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا یُّضٰعِفۡہُ لَکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ شَکُوۡرٌ حَلِیۡمٌ​

‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন’ (সূরা আত-তাগাবুন : ১৭)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা কর্যে হাসানাহ প্রসঙ্গে বলেন,

الصَّدَقَةُ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا وَالْقَرْضُ بِثَمَانِيَةِ عَشَرَ​

‘ছাদাক্বার ছওয়াব দশগুণ এবং কর্যে হাসানার ছওয়াব আঠারগুণ’।[৪] তবে এমর্মে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হাদীসটির সনদ ত্রুটিপূর্ণ।[৫]

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلَّا كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً​

‘যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে দু’বার ঋণ প্রদান করে তবে তার আমলনামায় এ অর্থ একবার ছাদাক্বাহ করে দেয়ার সমান ছওয়াব লিখা হবে’।[৬] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ قَالَ ثُمَّ سَمِعْتُهُ يَقُوْلُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ قُلْتُ سَمِعْتُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ تَقُوْلُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ ثُمَّ سَمِعْتُكَ تَقُوْلُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ قَالَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ قَبْلَ أَنْ يَحِلَّ الدَّيْنُ فَإِذَا حَلَّ الدَّيْنُ فَأَنْظَرَهُ فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ​

সুলাইমান ইবনু বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) স্বীয় পিতা এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোন দরিদ্র লোকের উপর স্বীয় প্রাপ্য আদায়ের ব্যাপারে ন¤্রতা প্রকাশ করে এবং তাকে অবকাশ দিয়ে থাকে; অতঃপর যতদিন পর্যন্ত সে তাকে তার প্রাপ্য পরিশোধ করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত সে প্রতিদিন সেই পরিমাণ দানের নেকী/পুণ্য পেতে থাকবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সে প্রতিদিন এর দ্বিগুণ পরিমাণ দানের পুণ্য পেতে থাকবে। একথা শুনে বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! পূর্বে আপনি ঐ পরিমাণ দানের পুণ্য প্রাপ্তির কথা বলেছিলেন। আর এখন তার দ্বিগুণ পরিমাণ পুণ্য প্রাপ্তির কথা বললেন? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, যে পর্যন্ত মেয়াদ অতিক্রান্ত না হবে সেই পর্যন্ত তার সমপরিমাণ দানের পুণ্য লাভ করবে এবং যখন মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন তার দ্বিগুণ পরিমাণ দানের পুণ্য লাভ করবে।[৭]

উপরের আয়াত ও হাদীসে কর্যে হাসানাহ প্রদানের ফযীলত ফুটে উঠেছে। কর্যে হাসানাহ প্রদান করলে, আল্লাহ তা দ্বিগুণ এমনকি বহুগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কেননা তিনিই তো কমানো বা বাড়ানোর একচ্ছত্র মালিক। কেউ দু’বার ঋণ প্রদান করলে একবার ছাদাকার নেকী তাকে দেয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষ দানের চেয়ে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বেশি নেকী লেখা হয়। কেননা সচ্ছল মানুষেরও ঋণের প্রয়োজন হয়। সে কারো কাছে হাত পাততে পারে না। কিছু টাকা কর্যে হাসানাহ স্বরূপ পেলে, তার প্রয়োজন পূরণ হয়।

২). আল্লাহ তা‘আলা তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন

মানুষকে সূদবিহীন ঋণ দিলে, আল্লাহ তা‘আলা তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। কর্যে হাসানাহ প্রদান করা পাপ মোচনের এক বড় মাধ্যম। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ فَكَانَ يَقُوْلُ لِفَتَاهُ إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ لَعَلَّ اللهَ يَتَجَاوَزُ عَنَّا فَلَقِىَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ​

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি লোকদেরকে ঋণ দিত। সে তার কর্মচারীকে বলত, কোন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধে অক্ষম দেখলে তাকে ক্ষমা করে দিও। এ কাজের বিনিময়ে আল্লাহ হয়তো আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। ঐ ব্যক্তি মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট পৌঁছলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন’।[৮] অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ أَنْجَاهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيامَةِ​

আবূ ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণ ক্ষমা করে দিবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দিবেন’।[৯]

ঋণ দিয়ে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা অত্যন্ত ভালো কাজ। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি পরিশোধে অক্ষম হলে তাকে অবকাশ দেয়া তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি অক্ষম ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তাহলে আল্লাহ তার উপর খুশী হন। ক্বিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন। তার পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেন। কোন ব্যক্তির পাপ ক্ষমা হয়ে গেলে তার আর কী বাকী থাকে!

৩). হাশরের মাঠে আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন

কর্যে হাসানাহ প্রদান করা এবং তাকে ঋণ পরিশোধে সুযোগ দেয়া অত্যন্ত নেকীর কাজ। এর বিনিময়ে সে অনেক নেকি লাভ করতে পারবে। এরূপ ব্যক্তিকে আল্লাহ বিচারের মাঠে আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন।

عَنْ أَبِي الْيَسَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْ مُعْسِرٍ أَظَلَّهُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ​

আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন স্বীয় ছায়ায় তাকে ছায়া দান করবেন’।[১০] অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

‘আব্বাদ ইবনু ওয়ালিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ও আমার পিতা বিদ্যানুসন্ধানে বের হই এবং আমরা বলি যে, আমরা আনছারদের নিকট হাদীস শিক্ষা করব। সর্বপ্রথম আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ ঘটে। তাঁর সাথে তাঁর একটি গোলাম ছিল, যার হাতে একখানা খাতা ছিল। গোলাম ও মনিব একই পোশাক পরিহিত ছিলেন। আমার পিতা তাঁকে বলেন, এই সময় আপনাকে দেখে রাগান্বিত বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, অমুক ব্যক্তির উপর আমার কিছু ঋণ ছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। ঋণ আদায়ের জন্য আমি তার বাড়ীতে গমন করি। সালাম দিয়ে সে বাড়ীতে আছে কি-না তা জিজ্ঞেস করি। বাড়ীতে নেই এই উত্তর আসে। ঘটনাক্রমে তার ছোট ছেলে বাইরে আসে। তাকে জিজ্ঞেস করি, তোমার আব্বা কোথায় রয়েছে? সে বলে, আপনার শব্দ শুনে তিনি খাটের নিচে লুকিয়ে গেছেন। আমি আবার ডাক দেই এবং বলি, তুমি যে ভিতরে রয়েছ তা আমি জানতে পেরেছি। সুতরাং লুকিয়ে থেকো না বরং এসে উত্তর দাও। সে আসলে আমি বলি, লুকিয়ে ছিলে কেন? সে উত্তরে বলে, আমার নিকট এখন অর্থ নেই। সুতরাং সাক্ষাৎ করলে হয় আমাকে মিথ্যা ওযর পেশ করতে হবে, না হয় মিথ্যা অঙ্গীকার করতে হবে। তাই আমি আপনার সামনে আসতে লজ্জাবোধ করছিলাম। আপনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী। সুতরাং আপনাকে মিথ্যা কথা কী করে বলি? তখন আমি বলি (আবুল ইয়াসার), তুমি আল্লাহর শপথ করে বলছ যে, তোমার নিকট অর্থ নেই। সে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! আমার নিকট কোন অর্থ নেই। তিনবার আমি তাকে শপথ করিয়ে নেই এবং সে তিনবারই শপথ করে। আমি খাতা হতে তার নাম কাটিয়ে দেই এবং ঋণের অর্থ পরিশোধ লিখে নিই। অতঃপর তাকে বলি যাও, তোমার নাম হতে এই অংক কেটে দিলাম। এরপর যদি অর্থ পেয়ে যাও তবে আমার এই ঋণ পরিশোধ করে দেবে, নচেৎ তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। জেনে রেখো, আমার এই চক্ষু যুগল দেখেছে, আমার এই কর্ণদ্বয় শুনেছে এবং আমার অন্তকরণ বেশ মনে রেখেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন স্বীয় ছায়ায় তাকে ছায়া দান করবেন’।[১১]

সাহাবীগণ ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাকে যথেষ্ট ছাড় দিতেন। তারা এর মাধ্যমে পরকালীন কল্যাণ চাইতেন। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে পরিশোধে ছাড় দিলে অথবা অক্ষম ব্যক্তির ঋণ মওকূফ করে দিলে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। বিচারের মাঠে তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। সেই দিন তিনি ঐ ঋণদাতাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।

৪). কর্যে হাসানাহ প্রদান জান্নাত লাভের মাধ্যম

কর্যে হাসানাহ প্রদানে আল্লাহ বান্দার কর্মে সন্তুষ্ট হন। উত্তম পন্থায় তা আদায়ের ব্যবস্থা করলে তার জন্য পরকাল সুখময় হয়। আর দরিদ্রদের ক্ষমা করে দিলে, আল্লাহ এরূপ ব্যক্তির জন্য জান্নাত নির্ধারণ করে দেন। হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

أُتِىَ اللهُ بِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِهِ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَقَالَ لَهُ مَاذَا عَمِلْتَ فِى الدُّنْيَا قَالَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا قَالَ يَا رَبِّ آتَيْتَنِىْ مَالَكَ فَكُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ وَكَانَ مِنْ خُلُقِى الْجَوَازُ فَكُنْتُ أَتَيَسَّرُ عَلَى الْمُوْسِرِ وَأُنْظِرُ الْمُعْسِرَ فَقَالَ اللهُ أَنَا أَحَقُّ بِذَا مِنْكَ تَجَاوَزُوْا عَنْ عَبْدِىْ​

‘ক্বিয়ামতের দিন একটি লোককে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আনা হবে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করবেন, বল, তুমি আমার জন্য কী পুণ্য করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি এমন একটি অণুপরিমাণও পুণ্যের কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট যাঞ্চা করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা তাকে পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করবেন এবং সে একই উত্তর দিবে। আল্লাহ তা‘আলা আবার জিজ্ঞেস করবেন। এবার লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে কিছু মালও আমাকে দিয়েছিলেন। আমি ব্যবসায়ী লোক ছিলাম। লোকেরা আমার নিকট হতে ধার কর্য নিয়ে যেত। আমি যখন দেখতাম যে, এই লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধের নির্ধারিত সময়ে সে কর্য পরিশোধ করতে পারল না, তখন আমি তাকে আরো কিছুদিন আবকাশ দিতাম। ধনীদের উপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিকে ক্ষমাও করে দিতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করব না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশী সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও।[১২]

অত্র হাদীসটি কর্যে হাসানাহ আদান-প্রদানের জন্য খুবই চমৎকার। কেননা ব্যবসায়ী মানুষ বাকীতে লেনদেন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হতে হবে সূদমুক্ত। পরিশোধের ক্ষেত্রে পীড়াপীড়ি না করে উত্তম পন্থায় তা আদায় করায় উত্তম। কেননা অবকাশ দিয়ে আদায় করলে দানের নেকী পাওয়া যায়। যা দ্বিগুণ থেকে বহুগুণে আল্লাহ পরিণত করে দেন। ঋণগ্রহীতা অতি দরিদ্র হলে তাকে ক্ষমা করে দিলে আল্লাহ দাতাকেও ক্ষমা করে দেন। তার পাপসমূহকে মিটিয়ে দেন। কেননা আল্লাহ সর্বোচ্চ ইহসানকারী। আর ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে ধন্য করেন।

ঋণ পরিশোধ না করার পরিণাম

ঋণ পরিশোধ না করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিচারের পর মানুষের অবস্থান হবে জান্নাত নতুবা জাহান্নাম। এই ঋণ মানুষের জন্য জান্নাতের প্রতিবন্ধক হতে পারে। তার ক্ষতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাকে ঠেলে দিতে পারে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার দিকে।

عَنْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ مَنْ فَارَقَ الرُّوْحُ الْجَسَدَ وَهُوَ بَرِىءٌ مِنْ ثَلَاثٍ دَخَلَ الْجَنَّةَ مِنَ الْكِبْرِ وَالْغُلُوْلِ وَالدَّيْنِ
ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি জিনিস থেকে পবিত্র থেকে মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হল, অহংকার, গনীমতের মালে খিয়ানত ও ঋণ’।[১৩]

অহংকার, গনীমতের সম্পদে খিয়ানত ও ঋণ জান্নাতে যাওয়ার জন্য অন্তরায়। স্রেফ এসবের কারণে কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে যেতে হবে। এরূপ নিন্দনীয় স্বভাবের মানুষ জান্নাতের জন্য উপযুক্ত নয়। বরং তার জন্য জাহান্নামই শোভনীয়। ঋণ পরিশোধ না করা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য প্রকারের পাপ। যে পাপ মোচনের কোন রাস্তাও নেই। যদি দাতা হৃদয় থেকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে ভিন্ন কথা। অন্যথা তা পরিশোধ করাই পরকালে বাঁচার একমাত্র পথ।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيْدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللهُ عَنْهُ وَمَنْ أَخَذَ يُرِيْدُ إِتْلَافَهَا أَتْلَفَهُ اللهُ​

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করেন’।[১৪]

বাংলায় একটা কথা আছে ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। বাস্তবে তাই, কোন ব্যক্তি কোন কাজের দৃঢ় পরিকল্পনা করলে তা এক সময় হয়েই যায়। দৃঢ় সংকল্প তাকে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দেয়। অনুরূপ কোন ব্যক্তি পরিশোধের দৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে ধার নিলে, আল্লাহ তা পরিশোধের পথ সহজ করে দেন। যে কোন উপায়ে তার একটা ব্যবস্থা করে দেন। পক্ষান্তরে ঋণ করে পরিশোধের ইচ্ছা না থাকলে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন। ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা না থাকলে সে ধ্বংস হতে বাধ্য।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ​

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধ না করার পাপ ছাড়া শহীদের সমস্ত পাপকে মাফ করে দেয়া হবে’।[১৫] অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মুহাম্মাদ বিন জাহশ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ! ঋণের ব্যাপারে কী কঠিনতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে মৃত্যুবরণ করে, অতঃপর জীবিত হয়ে পুনরায় জিহাদে মৃত্যুবরণ করে, অতঃপর আবার জীবিত হয়ে আবারও শহীদ হয়, আর সে ঋণগ্রস্ত হয়, তাহলে ঐ ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করতে সক্ষম হবে না’।[১৬]

সাধারণত শাহাদতের মর্যাদার চেয়ে বড়কিছু মুমিন জীবনে নেই। একজন মুসলিমের জন্য শাহাদত বরণ করা সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভের মাধ্যম। যার দরুন ব্যক্তির সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। কিন্তু ঋণ এমন একটি কর্ম, যা ক্ষমা হয় না। শাহাদত বরণকারী ব্যক্তিরও ঋণের পাপ ক্ষমা হয় না বরং তার পক্ষ থেকে উক্ত ঋণ পরিশোধ করতে হয়। নতুবা তা থেকেই যায়। যা তাকে বিচারের মাঠে স্বীয় নেকী দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। কোন মুসলিম বারংবার শাহাদত বরণকারী হলেও একই ফলাফল। অন্যথা এরূপ শহীদও জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। ইসলামে একদিকে ঋণ প্রদানের সীমাহীন ফযীলতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পরিশোধের ব্যাপারেও কঠোরতা আরোপ করেছে। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনীতি মুসলিমদেরকে উপহার দেয়ার লক্ষ্যেই ইসলামের এ আয়োজন। কর্যে হাসানার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সূদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।


তথ্যসূত্র :
[১]. ইসলামের অর্থনীতি, পৃ. ২৪৬।
[২]. সহীহ মুসলিম, হা/১৬০১; তিরমিযী, হা/১৩১৬।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/২০৭৬; তিরমিযী, হা/১৩২০; ইবনু মাজাহ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/২৭৯০।
[৪]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৫৬৪; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৯৭৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৭, সনদ হাসান।
[৫]. ইবনু মাজাহ, হা/২৪৩১; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৩৬৩৭, সনদ যঈফ।
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/২৪৩০; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯০১, সনদ সহীহ ।
[৭]. তিরমিযী, হা/১৩০৬; ইবনু মাজাহ, হা/২৪১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৯৬; সহীহুল জামে, হা/৬১০৮, সনদ সহীহ।
[৮]. সহীহ বুখারী, হা/৩৪৮০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬২; মিশকাত, হা/২৯০১।
[৯]. সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৩; মিশকাত, হা/২৯০৩।
[১০]. সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫০৪৪; মিশকাত, হা/২৯০৪।
[১১]. সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৬; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫০৪৪; মিশকাত, হা/২৯০৪।
[১২]. সহীহ মুসলিম, হা/১৫০৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫২৪৩।
[১৩]. তিরমিযী, হা/১৫৭৩; ইবনু মাজাহ, হা/২৪১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৮৫, সনদ সহীহ।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/২৩৮৭; ৫১৩৫; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৯; মিশকাত, হা/২৯১০।
[১৫]. সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৬; আহমাদ, হা/৭০৫১; মিশকাত, হা/২৯১২।
[১৬]. নাসাঈ, হা/৪৬৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/৩৬০০; মিশকাত, হা/২৯২৯, সনদ হাসান।



ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর​

 
Last edited:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,349Threads
Total Messages
17,209Comments
Total Members
3,678Members
Latest Messages
Md. Nur HabibLatest member
Top