মদীনার ইমাম ও বিচারপতি সালামা ইবনে দিনার (রহ:) বলেন:
'আমি গেলাম খলীফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনে আবদুল আযীযের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘকাল আমাদের সাক্ষাৎ নেই। এর মাঝে আমাদের বয়স বেড়ে বেড়ে বার্ধক্য এসে পৌঁছেছে। বাড়ির সদরেই তাঁকে দেখতে পেলাম।
প্রথম দৃষ্টিতে আমি নিশ্চিত হতে পারলাম না যে, মদীনার গভর্নর থাকাকালে যাকে দেখেছিলাম তিনি আর এইমাত্র দেখা মানুষটি একই ব্যক্তি কি না। আমার সন্দেহের কারণ আগের সেই মানুষটি ও আজকের দেখা মানুষটির মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক।'
তিনি আমাকে স্বাগত জানিয়ে বললেন-
'হে আবু হাযেম! এসো, এসো।'
আমি কাছে গিয়ে আরও নিরীক্ষণ করলাম, তারপর জিজ্ঞাসা করলাম-
'আপনি কি আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে আবদুল আযীয নন?'
'নিশ্চয়।'
'আপনার এমন কী হয়েছে! মদীনার গভর্নর থাকাকালীন আপনার চেহারায় ছিল কত উজ্জ্বলতা, ত্বকে ছিল কত মসৃণতা, আর কত সুখ ও স্বাচ্ছন্দে ভরপুর ছিল জীবন আপনার! আর এখন!'
'হ্যাঁ, নিশ্চয় ছিল।'
'তবে কেন আজ আপনার এত পরিবর্তন অথচ আজ আপনি সোনালী (স্বর্ণ) ও সাদার (রোপ্য) মালিক হয়েছেন। হয়েছেন মুসলিম জাহানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মসনদে আসীন। আজ আপনি আমীরুল মুমিনীন।'
'আমার মধ্যে কী পরিবর্তন হয়েছে হে আবু হাযেম?
'আপনার দেহ আজ দুর্বল কৃশকায়...
ত্বকের মসৃণতা হারিয়ে বিবর্ণ...
সেই সুন্দর মুখমণ্ডল কি না আজ রুগীর মতো হলুদ বর্ণ...
দু'চোখের উজ্জ্বলতা নিষ্প্রভ।'
দু'চোখের অশ্রুবান নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করে তিনি বললেন-
'কবরের মধ্যে যদি তুমি আমাকে দেখতে পেতে তবে তোমার কি অবস্থা হত!
তুমি সেখানে যদি দেখতে আমার কুঠুরি থেকে দু'চোখ গলে গালের ওপর পড়েছে ঝরে....
ফুলে ফেটে গেছে আমার পেট....
পোকারা আমার এই দেহের ওপর কিলবিল করছে,
আবু হাযেম! মৃত্যুর পর কবরে আমাকে যদি ওই অবস্থায় দেখতে তবে নিশ্চয় আজকের চেয়ে আরও বেশি খারাপ লাগত।'
এরপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
'আবু হাযেম! তোমার কি মনে পড়ে সেই হাদীসটির কথা, যা তুমি মদীনাতে আমার কাছে বর্ণনা করেছিলে!'
আমি তো অনেক হাদীস বর্ণনা করেছি। আপনি কোন্ হাদীসটির কথা বলতে চাচ্ছেন?'
'যে হাদীসটির মুল বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু'
'হ্যাঁ, মনে পড়েছে এবার...'
'শোনাও আরও একবার, সেই হাদীসখানা তোমার মুখে।'
আমি আবু হুরায়রাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন-
'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সম্মুখে রয়েছে এমন একটি ভয়ংকর ঘাটি, যা কেউই অতিক্রম করতে পারবে না। ইবাদত আর জিহাদে ক্লিষ্ট কৃশকায় দুর্বল ব্যক্তি ছাড়া।'
এরপর দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদতে থাকলেন উমর ইবনে আবদুল আযীয।
তিনি বার বার তাঁর চোখের পানি মুছলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
'আবু হাযেম! আমি যদি সেই ভয়ঙ্কর ঘাটি থেকে মুক্তির আশায় নিজেকে একটু কৃশকায়-দুর্বল করে থাকি, তবে তুমি কি আমায় ভর্ৎসনা করবে!'
[সুওয়ারুম মিন হায়াতিত্তাবিঈন, ড. আবদুর রহমান রাফাত পাশা]
'আমি গেলাম খলীফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনে আবদুল আযীযের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘকাল আমাদের সাক্ষাৎ নেই। এর মাঝে আমাদের বয়স বেড়ে বেড়ে বার্ধক্য এসে পৌঁছেছে। বাড়ির সদরেই তাঁকে দেখতে পেলাম।
প্রথম দৃষ্টিতে আমি নিশ্চিত হতে পারলাম না যে, মদীনার গভর্নর থাকাকালে যাকে দেখেছিলাম তিনি আর এইমাত্র দেখা মানুষটি একই ব্যক্তি কি না। আমার সন্দেহের কারণ আগের সেই মানুষটি ও আজকের দেখা মানুষটির মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক।'
তিনি আমাকে স্বাগত জানিয়ে বললেন-
'হে আবু হাযেম! এসো, এসো।'
আমি কাছে গিয়ে আরও নিরীক্ষণ করলাম, তারপর জিজ্ঞাসা করলাম-
'আপনি কি আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে আবদুল আযীয নন?'
'নিশ্চয়।'
'আপনার এমন কী হয়েছে! মদীনার গভর্নর থাকাকালীন আপনার চেহারায় ছিল কত উজ্জ্বলতা, ত্বকে ছিল কত মসৃণতা, আর কত সুখ ও স্বাচ্ছন্দে ভরপুর ছিল জীবন আপনার! আর এখন!'
'হ্যাঁ, নিশ্চয় ছিল।'
'তবে কেন আজ আপনার এত পরিবর্তন অথচ আজ আপনি সোনালী (স্বর্ণ) ও সাদার (রোপ্য) মালিক হয়েছেন। হয়েছেন মুসলিম জাহানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মসনদে আসীন। আজ আপনি আমীরুল মুমিনীন।'
'আমার মধ্যে কী পরিবর্তন হয়েছে হে আবু হাযেম?
'আপনার দেহ আজ দুর্বল কৃশকায়...
ত্বকের মসৃণতা হারিয়ে বিবর্ণ...
সেই সুন্দর মুখমণ্ডল কি না আজ রুগীর মতো হলুদ বর্ণ...
দু'চোখের উজ্জ্বলতা নিষ্প্রভ।'
দু'চোখের অশ্রুবান নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করে তিনি বললেন-
'কবরের মধ্যে যদি তুমি আমাকে দেখতে পেতে তবে তোমার কি অবস্থা হত!
তুমি সেখানে যদি দেখতে আমার কুঠুরি থেকে দু'চোখ গলে গালের ওপর পড়েছে ঝরে....
ফুলে ফেটে গেছে আমার পেট....
পোকারা আমার এই দেহের ওপর কিলবিল করছে,
আবু হাযেম! মৃত্যুর পর কবরে আমাকে যদি ওই অবস্থায় দেখতে তবে নিশ্চয় আজকের চেয়ে আরও বেশি খারাপ লাগত।'
এরপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
'আবু হাযেম! তোমার কি মনে পড়ে সেই হাদীসটির কথা, যা তুমি মদীনাতে আমার কাছে বর্ণনা করেছিলে!'
আমি তো অনেক হাদীস বর্ণনা করেছি। আপনি কোন্ হাদীসটির কথা বলতে চাচ্ছেন?'
'যে হাদীসটির মুল বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু'
'হ্যাঁ, মনে পড়েছে এবার...'
'শোনাও আরও একবার, সেই হাদীসখানা তোমার মুখে।'
আমি আবু হুরায়রাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন-
'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সম্মুখে রয়েছে এমন একটি ভয়ংকর ঘাটি, যা কেউই অতিক্রম করতে পারবে না। ইবাদত আর জিহাদে ক্লিষ্ট কৃশকায় দুর্বল ব্যক্তি ছাড়া।'
এরপর দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদতে থাকলেন উমর ইবনে আবদুল আযীয।
তিনি বার বার তাঁর চোখের পানি মুছলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
'আবু হাযেম! আমি যদি সেই ভয়ঙ্কর ঘাটি থেকে মুক্তির আশায় নিজেকে একটু কৃশকায়-দুর্বল করে থাকি, তবে তুমি কি আমায় ভর্ৎসনা করবে!'
[সুওয়ারুম মিন হায়াতিত্তাবিঈন, ড. আবদুর রহমান রাফাত পাশা]