‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

সিয়াম এক শিশু বালিগ হওয়ার আগে রমযানের সাওম পালন করত, রমযানে দিনের মাঝে সে বালিগ হলো। তার কি সেই দিনের কাযা আদায় করতে হবে?

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,217
Solutions
17
Reactions
6,634
Credits
5,440
প্রশ্ন: এক শিশু বালিগ হওয়ার আগে রমযানের সাওম পালন করত, রমযানে দিনের মাঝে সে বালিগ হলো। তার কি সেই দিনের কাযা আদায় করতে হবে? একইভাবে রমযানে দিনের মাঝে একজন কাফির ইসলাম গ্রহণ করলে, একজন হায়েযপ্রাপ্ত নারী পবিত্র হলে, পাগল ব্যক্তি জ্ঞান ফিরে পায়, মুসাফির ব্যক্তি সাওম ভঙ্গরত অবস্থায় স্বদেশে ফিরে আসলে, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হলে (যে সেই দিন সাওম ভঙ্গ করে ফেলেছিল) এ সমস্ত ব্যক্তিদের কি সেই দিনের বাকি অংশ সাওম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা ও সেদিনের কাযা আদায় করা ওয়াজিব?

উত্তর: প্রশ্নে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সবার ক্ষেত্রে একই হুকুম প্রযোজ্য নয়।

প্রশ্নে উল্লিখিত ব্যক্তিদের দু’টি গ্রুপে ভাগ করা যেতে পারে:

১) কোনো শিশু যদি বালিগ হয়, কোনো কাফির যদি ইসলাম গ্রহণ করে, কোনো পাগল যদি জ্ঞান ফিরে পায়- তবে তাদের সবার হুকুম এক, আর তা হলো ওযর (অজুহাত) চলে যাওয়ার সাথে সাথে দিনের বাকি অংশে সাওম ভঙ্গকারী সমস্ত কিছু হতে বিরত থাকা ওয়াজিব এবং এক্ষেত্রে তাদের সেই দিনের কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়।

২) অপরদিকে হায়েযপ্রাপ্ত নারী যদি পবিত্র হয়, মুসাফির ব্যক্তি স্বদেশে ফিরে আসে, অসুস্থ ব্যক্তি যদি আরোগ্য লাভ করে, এদের সবার হুকুম এক। এদের সাওম ভঙ্গকারী যাবতীয় বস্তু থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়। কারণ, তারা বিরত থাকলেও কোনো উপকার পাবে না এবং তাদের ওপর সেই দিনের কাযা আদায় করা ওয়াজিব।

প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য:

প্রথম গ্রুপের মধ্যে তাকলীফের (দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার) শর্ত রয়েছে আর তা হলো বালিগ হওয়া, মুসলিম হওয়া ও ‘আক্বল (বুদ্ধি) সম্পন্ন হওয়া, তাই যদি তাদের ক্ষেত্রে শরী‘আতসম্মতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত (মুকাল্লাফ) হওয়া প্রমাণিত হয়, তবে তাদের ওপর সাওম ভঙ্গকারী সকল কিছু থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব এবং তাদের জন্য সেই দিনের কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। কারণ, যখন তাদের সাওম ভঙ্গকারী সকল বস্তু হতে বিরত থাকা ওয়াজিব ছিল তখন তারা তা থেকে বিরত থেকেছে এবং এর আগে তারা সিয়ামের ব্যাপারে মুকাল্লাফ (শরী‘আতসম্মতভাবে দায়িত্ব) ছিল না।

অপর দিকে দ্বিতীয় গ্রুপটি সিয়াম এর ব্যাপারে শরী‘আত সম্মতভাবে দায়িত্বশীল ছিল। তাই তা পালন করা তাদের ওপর ওয়াজিব ছিল, তবে শরী‘আত অনুমোদিত ওযর (অজুহাত) থাকায় তাদের জন্য সাওম ভঙ্গ বৈধ হয়েছিল যেমন হায়েয, সফর, রোগ ইত্যাদি কারণে আল্লাহ তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য সাওম ভঙ্গ বৈধ করেছেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে সেই দিনের সম্মানীয় কর্তব্য পালনের দায়িত্ব চলে যায়।

তাদের ওযরসমূহ (শরী‘আত অনুমোদিত অজুহাতসমূহ) রমযানে দিনের মাঝে দূরীভূত হলেও তারা সাওম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থেকে কোনো উপকার পাবে না এবং তাদের রমযানের পর সেই দিনের সাওম কাযা করতে হবে।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন রহ. বলেছেন, “যদি কোনো মুসাফির তার দেশে সাওম ভঙ্গরত অবস্থায় ফিরে আসে তবে তাঁর জন্য সাওম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়, সে দিনের বাকী অংশে খেতে ও পান করতে পারে কারণ তার বিরত থাকায় কোনো উপকার হবে না। এটি এজন্য যে, তাঁকে সেই দিনের কাযা আদায় করতে হবে। এটিই সঠিক মত।

এটি ইমাম মালিক ও ইমাম শাফে‘ঈ-এর মত এবং ঈমাম আহমাদ রহ. এর দু’টি বর্ণনার একটি। তবে তার প্রকাশ্যে আহার ও পান করা উচিৎ নয়।[1]

তিনি আরও বলেন: “কোনো হায়েযপ্রাপ্ত নারী অথবা নিফাসপ্রাপ্ত নারী দিনের মাঝে পবিত্র হলে তাদের জন্য সাওম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়, সে খেতে ও পান করতে পারে। কারণ, তার বিরত থাকায় কোনো উপকার হবে না। এটি এজন্য যে, তাকে সেই দিনের কাযা আদায় করতে হবে।

এটি ইমাম মালিক ও ইমাম শাফে‘ঈ-এর মত এবং ঈমাম আহমাদ-এর দু’টি বর্ণনার একটি।

ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
من أكل أول النهار فليأكل آخره
“যে দিনের প্রথম অংশে খেল সে যেন দিনের শেষ অংশেও খায়।”

‘অর্থাৎ যার জন্য দিনের প্রথম অংশে সাওম ভঙ্গ করা জায়েয তাঁর জন্য দিনের শেষ অংশেও সাওম ভঙ্গ করা বৈধ।’[2]

এই শাইখকে আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল:

যে রমযানে দিনের বেলায় শরী‘আত অনুমোদিত ওযরের কারণে সাওম ভঙ্গ করল, (সেই ওযর চলে যাওয়ার পর) দিনের বাকি অংশে তার জন্য খাওয়া ও পান করা কি জায়েয হবে?

তিনি উত্তরে বলেন: “তার জন্য খাওয়া ও পান করা জায়েয। কারণ, সে শরী‘আত অনুমোদিত ওযরে সাওম ভঙ্গ করেছে। সে যদি শরী‘আত সম্মত ওযরের কারণে সাওম ভঙ্গ করে তবে তার ক্ষেত্রে সেই দিনের সম্মানীয় কর্তব্য পালনের দায়িত্ব চলে যায়। ফলে সে খেতে ও পান করতে পারে।

এটি সেই ব্যক্তির অবস্থা থেকে ভিন্ন যে রমযানে দিনের বেলা কোনো ওযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করে। এক্ষেত্রে আমরা বলব: যে তার সাওম ভঙ্গকারী বিষয়বস্তু থেকে (দিনের বাকি অংশে) বিরত থাকা আবশ্যক। তার ক্ষেত্রে সাওম কাযা করা আবশ্যক হবে।

এই দু’টি মাসআলা এর পার্থক্যের দিকে সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করা ওয়াজিব।”[3]

তিনি আরও বলেন:

“সিয়াম সংক্রান্ত আমাদের গবেষণায় আমরা উল্লেখ করেছি যে কোনো নারী যদি হায়েযপ্রাপ্ত হয় এবং রমযানে দিনের মাঝে পবিত্র হয় তবে সে দিনের বাকী অংশে পানাহার থেকে বিরত থাকবেন কি না এ ব্যাপারে আলেমগণ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।

আমরা বলব: ইমাম আহমাদ রহ.-এর থেকে এ-ব্যাপারে দু’টি বর্ণনা রয়েছে।

তার মাশহুর (সর্বজনবিদিত) মতটি হলো- তাঁর সাওম ভঙ্গকারী যাবতীয় বস্তু থেকে দিনের বাকি অংশে বিরত থাকা ওয়াজিব। সে খাবে না, পানও করবে না।

দ্বিতীয়ত: তাঁর বিরত থাকা ওয়াজিব নয়, তাই তাঁর খাওয়া ও পান করা জায়েয।

আমরা বলব: দ্বিতীয় এই মতটি ইমাম মালিক ও ইমাম শাফে‘ঈ রহ.-এর মত। এটি ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
من أكل أول النهار فليأكل آخره
“যে দিনের প্রথম অংশে খেল সে যেন দিনের শেষ অংশেও খায়।”

আমরা বলব ভিন্ন মত আছে এমন মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে জ্ঞান অন্বেষণকারী শিক্ষার্থীর কর্তব্য হলো, দলীলসমূহ যাচাই করা এবং তার কাছে যে মতটি বেশি শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হয় সেটি গ্রহণ করা এবং কারও ভিন্ন মতের ব্যাপারে পরোয়া না করা যতক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে দলীল আছে, কারণ আমাদেরকে রাসূলদের অনুসরণ করতে আদেশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার বাণী:
وَيَوۡمَ يُنَادِيهِمۡ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبۡتُمُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ
“আর সেই দিন যখন তাদের আহবান করা হবে এবং বলা হবে তোমরা রাসূলদের কি উত্তর দিয়েছিলে?” [সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত: ৬৫]

আর এই হাদীস দ্বারা দলীল দেওয়া যা সহীহ বলে প্রমানিত হয়েছে যে, নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের মাঝে ‘আশুরা’-এর সিয়াম পালনের আদেশ করেছিলেন, তখন লোকেরা দিনের বাকি অংশে সাওম ভঙ্গকারী বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকলেন।

আমরা বলব, এই হাদীস তাদের পক্ষে কোনো দলীল নয়। কারণ, ‘আশুরা’ এর সাওমে ‘বাঁধা দানকারী বিষয় (যেমন হায়েয, নিফাস, কুফর ইত্যাদি) দূরীভূত হওয়ার’ কোনো ব্যাপার নেই; বরং এই ক্ষেত্রে ‘নতুন ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তানোর’ ব্যাপারটি রয়েছে।

‘বাধাদানকারী বিষয় দূরীভূত হওয়া’ ও ‘নতুন ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তানোর’ মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

‘নতুন ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তানোর’ অর্থ হলো সেই নির্দিষ্ট কারণ (যেমন ‘আশুরা’ এর দিন) উপস্থিতির আগে সেই হুকুমটি প্রতিষ্ঠিত হয় নি।

অপরদিকে ‘বাধাদানকারী বিষয় দূরীভূত হওয়ার’ অর্থ হলো সেই বাধাদানকারী বিষয়টি (যেমন হায়েয, নিফাস, কুফর ইত্যাদি)র উপস্থিতি সত্বেও এই হুকুমটি (যেমন সাওম পালন) প্রতিষ্ঠিত। যদি না এ ‘বাধাদানকারী বিষয়টি’ (যেমন হায়েয, নিফাস, কুফর) ইত্যাদি তা থেকে বাধা না হতো। আর বিধান প্রদানের কারণ (যেমন, বিবেকবান হওয়া) তার সাথে এই বাধাদানকারী বিষয়টি (যেমন, হায়েয হওয়া) এটি উপস্থিত থাকার অর্থ হলো সেই কাজটি (সাওম পালন) এই ‘বাধাদানকারী বিষয়টির (যেমন হায়েয, নিফাস, কুফর) উপস্থিতির কারণে শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্নকারীর উল্লিখিত মাসআলা-এর মতো আরেকটি উদাহরণ হলো দিনের মাঝে যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তার ক্ষেত্রে ‘নতুন করে ওয়াজিব দায়িত্ব’ বর্তায়।

এরকম আরেকটি উদাহরণ হলো, কোনো শিশু দিনের মাঝে সাওম ভঙ্গকারী অবস্থায় বালিগ হলে তাঁর ওপর ‘নতুন করে ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তায়। তাই যে দিনের মাঝে ইসলাম গ্রহণ করল আমরা তাঁকে বলব: আপনার জন্য (দিনের বাকি অংশে) সাওম ভঙ্গকারী বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবে আপনার ওপর কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়।

একই ভাবে দিনের মাঝে যে শিশু বালিগ হয়েছে, তাঁকে আমরা বলব: আপনার জন্য (দিনের বাকি অংশে) সাওম ভঙ্গকারী বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবে আপনার ওপর কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়।

তবে একজন হায়েযপ্রাপ্ত নারীর ক্ষেত্রে হুকুমটি ভিন্ন হবে। যদি (দিনের মাঝে) সে পবিত্র হয়। আলেমগণের মাঝে এ ব্যাপারে ইজমা’ (ঐকমত্য) রয়েছে যে তার ওপর সাওম কাযা করা ওয়াজিব। একজন হায়েযপ্রাপ্ত নারী দিনের মাঝে পবিত্র হয়ে দিনের বাকি অংশে সাওম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকলে, এই বিরত থাকা যে তাঁর কোনো উপকারে আসবে না ও সাওম বলে গণ্য হবে না এবং তাকে যে সাওম কাযা করতে হবে- এ ব্যাপারে ‘আলেমগণ ইজমা’ (ঐকমত্য) পোষণ করেছেন।

এ থেকে ‘নতুন করে ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তানো’ ও ‘বাধাদানকারী বিষয় দূরীভূত হওয়ার মধ্যে’ পার্থক্য জানা গেল।

সুতরাং একজন হায়েযপ্রাপ্ত নারী পবিত্র হওয়ার মাস‘আলাটি ‘বাধাদানকারী বিষয় দূরীভূত হওয়া’ শীর্ষক শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত এবং কোনো শিশুর বালিগ হওয়া অথবা প্রশ্নকারীর উল্লিখিত ‘আশুরা’ দিনের সাওম ওয়াজিব হওয়া (রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে) নতুন করে ওয়াজিব দায়িত্ব বর্তানো’ শীর্ষক শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহই তাওফীক দাতা।”[4]

ইসলাম কিউ.এ ফাতওয়া নং ৬৫৬৩৫


[1] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/৫৮ নং প্রশ্ন)।
[2] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/৫৯ নং প্রশ্ন)
[3] মাজমূ‘ ফাতওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/৬০ নং প্রশ্ন)
[4] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/৬০ নং প্রশ্ন)
 

Share this page