- Joined
- Jul 24, 2023
- Threads
- 520
- Comments
- 533
- Reactions
- 5,571
- Thread Author
- #1
কখনো তালেবান, কখনো আল-কায়েদা, কখনো জেএমবি, কখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, কখনো আইএস; এভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে, যাদেরকে আমরা জঙ্গী গোষ্ঠী বলে জানি। সময়ের ব্যবধানে এক পর্যায়ে এদের সাময়িক পতনও হয়। কিন্তু মাঝখান দিয়ে প্রাণ হারায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ। গুরুতর আহত ও পঙ্গু হয় অনেকেই। ধ্বংস হয় বহু স্থাপনা। শুধু তাই নয়, প্রতিবারই সারা বিশ্বে মুসলমানদের দেখানো হয় একটা সন্ত্রাসী জাতি হিসাবে। আর এভাবেই একদল বিপথগামী চরমপন্থীদের কারণে ইসলাম, মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। অবস্থা এখন এমন যে, জঙ্গীবাদ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে মুসলমানদের চেহারা ভেসে ওঠে। অথচ জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে জঙ্গীবাদ একটি ভ্রান্তপথের নাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কর (তাদের বিরুদ্ধে) যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করছে। কিন্তু সীমালঙ্ঘন কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পসন্দ করেন না’ (বাকবারাহ ২/১৯০)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় মহানবী (ﷺ)-এর একটি হাদীস থেকে।
বুরাইদাহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন কোন সৈন্যদলকে প্রেরণ করতেন তখন বলতেন,
‘তোমরা আল্লাহর নামে তাঁর রাস্তায় যুদ্ধ কর। যুদ্ধ কর কিন্তু গণীমতের মাল খেয়ানত কর না। চুক্তি ভঙ্গ কর না। শত্রুর অঙ্গহানি কর না। শিশুদের হত্যা কর না’।[1]
উক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রথমতঃ যুদ্ধ করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু বর্তমানে সিংহভাগ আক্রমণই হ’ল সাধারণ মানুষদের বিরুদ্ধে। সুতরাং তাদের এহেন কর্ম ইসলাম সম্মত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
দ্বিতীয়তঃ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর হাদীসটির প্রথম বাক্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সেই যুদ্ধটা হ’তে হবে কোন শাসকের অধীনে। কিন্তু বর্তমান সময়ে চরমপন্থী জঙ্গীরা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে যেসব যুদ্ধ করছে তা তাদের দেশের শাসকের অধীনে তো নয়ই বরং শাসকের বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ করছে।
তৃতীয়তঃ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের সময়ে সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। আর হাদীস থেকে জানা যায় যে, সীমালঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে শিশুদের হত্যা করা এবং উপাসনাকারীদের হত্যা করা। কিন্তু জঙ্গীরা অহরহ আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ বিভিন্নভাবে অসংখ্য শিশু হত্যা করে চলেছে যা কখনোই ইসলাম সম্মত নয়। এছাড়াও তারা অনেক সময় বিভিন্ন উপাসনালয়ে (যেমন বিভিন্ন গীর্জা, মসজিদ ইত্যাদি) হামলা চালিয়ে উপাসনারত মুসলিম, অমুসলিমদের হত্যা করছে, যাকে সীমালঙ্ঘন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে কুরআন ও হাদীসে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করল’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, উক্ত দু’টি বিশেষ কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করারই শামিল। কিন্তু জঙ্গীরা নিরপরাধ সাধারণ মুসলিম, অমুসলিমদের তাদের অস্ত্রের লক্ষ্যবস্ত্ত বানাচ্ছে যেটা কখনোই ইসলাম সম্মত হ’তে পারে না।
ইসলামে যুদ্ধের সময়েও নারী-শিশু হত্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (ﷺ)-এর এক যুদ্ধে একজন নিহত মহিলাকে পাওয়া যায়। (এটা দেখে) তখন মহানবী (ﷺ) তা অপসন্দ করেন’।[2] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) যুদ্ধাবস্থাতেও নারী ও শিশু হত্যাকে নিষেধ করেছেন।[3] কিন্তু জঙ্গীরা যুদ্ধের সময় তো নয়ই বরং স্বাভাবিক অবস্থাতেও বিভিন্ন স্থানে বোমা মেরে অগণিত নারী-শিশু হত্যা করে চলেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফিৎনা দূরীভূত হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৩; আনফাল ৮/৩৯)। ইবনে ওমর (রাঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘তুমি কি জান ফিৎনা কী? নবী করীম (ﷺ) যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। তাদের উপরে আরোপিত হওয়াটাই ছিল ফিৎনা। তোমাদের মত যুদ্ধ নয়, যা হচ্ছে শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য’।[4]
আলোচ্য আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইবনে ওমর (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্নকারী ব্যক্তি শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ করাকে জায়েয মনে করত। আর ইবনে ওমর (রাঃ) সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বর্তমানে জঙ্গীদের সকল যুদ্ধ-বিগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হ’ল ঐ শাসন ক্ষমতা লাভ, যা ইসলাম সমর্থন করে না।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে সিলম বৃক্ষের পাতা দ্বারা পরিশোধিত এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলেতে করে সামান্য কিছু তাজা স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত খনিজ মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) চার ব্যক্তির মধ্যে স্বর্ণখন্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হ’লেন, উয়ায়না ইবনু বাদর, আকরা ইবনু হাবিস, যায়েদ আল-খায়ল এবং চতুর্থজন আলকামা কিংবা আমির ইবনু তুফাইল (রাঃ)। তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বললেন, এ স্বর্ণের ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। রাবী বলেন, কথাটি রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছল। তাই রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না? অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে? এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দু’টি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপালধারী, তার দাড়ি ছিল অতিশয় ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গি ছিল উপরের দিক উঠান। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহকে ভয় করুন। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি বেশি হকদার নই? আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, লোকটি (এ কথা বলে) চলে যেতে লাগলে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না, হ’তে পারে সে সালাত আদায় করে (বাহ্যত মুসলমান)। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক সালাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। রাসূল (ﷺ) বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমানের উপস্থিতি) দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। রাসূল (ﷺ) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটবে যারা শ্রুতিমধুর কন্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষেপকৃত জন্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার মনে হয় রাসূল (ﷺ) এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহ’লে অবশ্যই ছামূদ জাতির মতো হত্যা করব’।[5]
হাদীসটিতে দেখা যাচ্ছে, ঐ ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-কে বলেছেন, ‘আল্লাহকে ভয় করুন’। পরোক্ষভাবে ঐ ব্যক্তি এ কথাই বলেছে যে, আপনি এখন আল্লাহকে ভয় করছেন না। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শানে জঘন্য বেয়াদবী। লোকটি এ কথা বলতে পেরেছিল এ কারণে যে, সে শুধু নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই নবী করীম (ﷺ)-এর কাজকে বিচার করেছিল। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে কোন ব্যাখ্যা চায়নি। এভাবেই সে নিজেকে সঠিক আর রাসূল (ﷺ)-কে বেঠিক বলার মত দুঃসাহস দেখিয়েছিল।
হাদীসটিতে নবী করীম (ﷺ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, পরবর্তীতে এ ধরনের লোকের আবির্ভাব ঘটবে যাদেরকে তিনি নিজে ছামূদ জাতির মত হত্যা করতে চেয়েছেন।
এবার আসুন আমরা চরমপন্থী জঙ্গীদের দিকে একটু তাকাই। এরা কেবল নিজেদেরকেই সঠিক আর তাদের বিরোধীদের বেঠিক মনে করে। শুধু তাই নয়, এরা এদের বিরোধীদের কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে হত্যা করছে। এদের কাজ হাদীসের ঐ লোকটির সাথে মিলে যায়। সুতরাং আমরা কোন সন্দেহ ছাড়াই বলতে পারি যে, বর্তমান জঙ্গী গোষ্ঠীই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর সেই অভিশপ্ত দল।
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন অন্যায় দেখতে পায়, সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহ’লে সে যেন মুখ দিয়ে (সেটা প্রতিরোধ করে)। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহ’লে যেন অন্তর দিয়ে (সেটা ঘৃণা করে)। আর এটাই হ’ল ঈমানের সর্বনিম্ন পর্যায়’।[6]
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় অন্যায় হচ্ছে জঙ্গীবাদের মাধ্যমে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। তাই মুসলিম হিসাবে আমাদের উচিত এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১৭৩১, মিশকাত হা/৩৯২৯।
[2]. বুখারী হা/৩০১৪; মুসলিম হা/১৭৪৪।
[3]. বুখারী হা/৩০১৫।
[4]. বুখারী হা/৪৬৫১, ৭০৯৫।
[5]. বুখারী হা/৪০১৩, ৩৩৪৪, ৫০৫৮।
[6]. মুসলিম হা/৮৩; মিশকাত হা/৫১৩৭।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে জঙ্গীবাদ একটি ভ্রান্তপথের নাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْا إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ-
‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কর (তাদের বিরুদ্ধে) যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করছে। কিন্তু সীমালঙ্ঘন কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পসন্দ করেন না’ (বাকবারাহ ২/১৯০)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় মহানবী (ﷺ)-এর একটি হাদীস থেকে।
বুরাইদাহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন কোন সৈন্যদলকে প্রেরণ করতেন তখন বলতেন,
اغْزُوْا بِاسْمِ اللهِ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ قَاتِلُوْا مَنْ كَفَرَ بِاللهِ اغْزُوْا وَلاَ تَغُلُّوْا وَلاَ تَغْدِرُوْا وَلاَ تَمْثُلُوْا وَلاَ تَقْتُلُوْا وَلِيْدًا-
‘তোমরা আল্লাহর নামে তাঁর রাস্তায় যুদ্ধ কর। যুদ্ধ কর কিন্তু গণীমতের মাল খেয়ানত কর না। চুক্তি ভঙ্গ কর না। শত্রুর অঙ্গহানি কর না। শিশুদের হত্যা কর না’।[1]
উক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রথমতঃ যুদ্ধ করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু বর্তমানে সিংহভাগ আক্রমণই হ’ল সাধারণ মানুষদের বিরুদ্ধে। সুতরাং তাদের এহেন কর্ম ইসলাম সম্মত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
দ্বিতীয়তঃ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর হাদীসটির প্রথম বাক্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সেই যুদ্ধটা হ’তে হবে কোন শাসকের অধীনে। কিন্তু বর্তমান সময়ে চরমপন্থী জঙ্গীরা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে যেসব যুদ্ধ করছে তা তাদের দেশের শাসকের অধীনে তো নয়ই বরং শাসকের বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ করছে।
তৃতীয়তঃ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের সময়ে সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। আর হাদীস থেকে জানা যায় যে, সীমালঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে শিশুদের হত্যা করা এবং উপাসনাকারীদের হত্যা করা। কিন্তু জঙ্গীরা অহরহ আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ বিভিন্নভাবে অসংখ্য শিশু হত্যা করে চলেছে যা কখনোই ইসলাম সম্মত নয়। এছাড়াও তারা অনেক সময় বিভিন্ন উপাসনালয়ে (যেমন বিভিন্ন গীর্জা, মসজিদ ইত্যাদি) হামলা চালিয়ে উপাসনারত মুসলিম, অমুসলিমদের হত্যা করছে, যাকে সীমালঙ্ঘন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে কুরআন ও হাদীসে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا-
‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করল’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, উক্ত দু’টি বিশেষ কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করারই শামিল। কিন্তু জঙ্গীরা নিরপরাধ সাধারণ মুসলিম, অমুসলিমদের তাদের অস্ত্রের লক্ষ্যবস্ত্ত বানাচ্ছে যেটা কখনোই ইসলাম সম্মত হ’তে পারে না।
ইসলামে যুদ্ধের সময়েও নারী-শিশু হত্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (ﷺ)-এর এক যুদ্ধে একজন নিহত মহিলাকে পাওয়া যায়। (এটা দেখে) তখন মহানবী (ﷺ) তা অপসন্দ করেন’।[2] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) যুদ্ধাবস্থাতেও নারী ও শিশু হত্যাকে নিষেধ করেছেন।[3] কিন্তু জঙ্গীরা যুদ্ধের সময় তো নয়ই বরং স্বাভাবিক অবস্থাতেও বিভিন্ন স্থানে বোমা মেরে অগণিত নারী-শিশু হত্যা করে চলেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلَّهِ
‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফিৎনা দূরীভূত হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৩; আনফাল ৮/৩৯)। ইবনে ওমর (রাঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘তুমি কি জান ফিৎনা কী? নবী করীম (ﷺ) যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। তাদের উপরে আরোপিত হওয়াটাই ছিল ফিৎনা। তোমাদের মত যুদ্ধ নয়, যা হচ্ছে শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য’।[4]
আলোচ্য আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইবনে ওমর (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্নকারী ব্যক্তি শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ করাকে জায়েয মনে করত। আর ইবনে ওমর (রাঃ) সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বর্তমানে জঙ্গীদের সকল যুদ্ধ-বিগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হ’ল ঐ শাসন ক্ষমতা লাভ, যা ইসলাম সমর্থন করে না।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে সিলম বৃক্ষের পাতা দ্বারা পরিশোধিত এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলেতে করে সামান্য কিছু তাজা স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত খনিজ মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) চার ব্যক্তির মধ্যে স্বর্ণখন্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হ’লেন, উয়ায়না ইবনু বাদর, আকরা ইবনু হাবিস, যায়েদ আল-খায়ল এবং চতুর্থজন আলকামা কিংবা আমির ইবনু তুফাইল (রাঃ)। তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বললেন, এ স্বর্ণের ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। রাবী বলেন, কথাটি রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছল। তাই রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না? অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে? এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দু’টি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপালধারী, তার দাড়ি ছিল অতিশয় ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গি ছিল উপরের দিক উঠান। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহকে ভয় করুন। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি বেশি হকদার নই? আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, লোকটি (এ কথা বলে) চলে যেতে লাগলে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না, হ’তে পারে সে সালাত আদায় করে (বাহ্যত মুসলমান)। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক সালাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। রাসূল (ﷺ) বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমানের উপস্থিতি) দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। রাসূল (ﷺ) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটবে যারা শ্রুতিমধুর কন্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষেপকৃত জন্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার মনে হয় রাসূল (ﷺ) এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহ’লে অবশ্যই ছামূদ জাতির মতো হত্যা করব’।[5]
হাদীসটিতে দেখা যাচ্ছে, ঐ ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-কে বলেছেন, ‘আল্লাহকে ভয় করুন’। পরোক্ষভাবে ঐ ব্যক্তি এ কথাই বলেছে যে, আপনি এখন আল্লাহকে ভয় করছেন না। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শানে জঘন্য বেয়াদবী। লোকটি এ কথা বলতে পেরেছিল এ কারণে যে, সে শুধু নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই নবী করীম (ﷺ)-এর কাজকে বিচার করেছিল। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে কোন ব্যাখ্যা চায়নি। এভাবেই সে নিজেকে সঠিক আর রাসূল (ﷺ)-কে বেঠিক বলার মত দুঃসাহস দেখিয়েছিল।
হাদীসটিতে নবী করীম (ﷺ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, পরবর্তীতে এ ধরনের লোকের আবির্ভাব ঘটবে যাদেরকে তিনি নিজে ছামূদ জাতির মত হত্যা করতে চেয়েছেন।
এবার আসুন আমরা চরমপন্থী জঙ্গীদের দিকে একটু তাকাই। এরা কেবল নিজেদেরকেই সঠিক আর তাদের বিরোধীদের বেঠিক মনে করে। শুধু তাই নয়, এরা এদের বিরোধীদের কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে হত্যা করছে। এদের কাজ হাদীসের ঐ লোকটির সাথে মিলে যায়। সুতরাং আমরা কোন সন্দেহ ছাড়াই বলতে পারি যে, বর্তমান জঙ্গী গোষ্ঠীই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর সেই অভিশপ্ত দল।
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ-
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন অন্যায় দেখতে পায়, সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহ’লে সে যেন মুখ দিয়ে (সেটা প্রতিরোধ করে)। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহ’লে যেন অন্তর দিয়ে (সেটা ঘৃণা করে)। আর এটাই হ’ল ঈমানের সর্বনিম্ন পর্যায়’।[6]
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় অন্যায় হচ্ছে জঙ্গীবাদের মাধ্যমে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। তাই মুসলিম হিসাবে আমাদের উচিত এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১৭৩১, মিশকাত হা/৩৯২৯।
[2]. বুখারী হা/৩০১৪; মুসলিম হা/১৭৪৪।
[3]. বুখারী হা/৩০১৫।
[4]. বুখারী হা/৪৬৫১, ৭০৯৫।
[5]. বুখারী হা/৪০১৩, ৩৩৪৪, ৫০৫৮।
[6]. মুসলিম হা/৮৩; মিশকাত হা/৫১৩৭।
সূত্র: আত-তাহরীক।
Last edited: