প্রবন্ধ ইসলামে বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব

Joined
Nov 17, 2023
Threads
389
Comments
482
Solutions
1
Reactions
10,893
ইসলামে বৃক্ষ রোপনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বহু হাদিস পাওয়া যায়। নিম্নে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:

১. আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلَّا كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَة، وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَلَا يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلَّا كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ.​

“একজন মুসলিম যখন কোনো গাছ লাগায় তো এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদকা হবে। পাখি খেলে সদকা হবে। (এমন কি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদকা হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম, হা/ ১৫৫২]

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‌ আরো বলেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلَّا كَانَ لَهُ بِه صَدَقَةٌ.​

“যখন কোনো মুসলিম কোন বৃক্ষ রোপন করে অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায় তা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।” [সহীহ বুখারী, হা/২৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৩]

৩. আরেক বর্ণনায় এসেছে, “কিয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদকায়ে জারিয়া (যে দানের সোয়াব অবিরাম ধারায় অব্যাহত থাকে) হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫২]

মূলত যে কোন গাছ মানুষের জন্য কল্যাণকর। তা ফুল, ফল, কাঠ, ঔষধি, ছায়াদার অথবা সাধারণ সৌন্দর্য বর্ধক ইত্যাদি যে গাছই হোক না‌ কেন।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের অপরিসীম অবদান:

গাছ আমাদের কী কী উপকার করে তার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা দেখি, গাছ আমাদেরকে ফল-ফসল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, কাঠ দেয় কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গাছ আমাদের আরো অনেক উপকার করে। যেমন:

গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সুস্থভাবে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি আর আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয় তা শুষে নেয়।

গাছ থেকে আমরা কাঠ পাই, যা দ্বারা আসবাব-পত্র তৈরি করি। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ঔষধ বানাই। ফুল গাছ আমাদের আঙিনা সুন্দর করে; রং-বে রঙের ফুল আমাদের হৃদয়কে রাঙিয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে নানান রকম ফলের স্বাদে-ঘ্রাণে আমরা বিমোহিত হই। এছাড়াও আমরা আরো কত শত উপকার লাভ করি গাছ থেকে!

মোটকথা, পৃথিবী বাসোপযোগী থাকা ও মানুষের জীবন ধারণের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে গাছ বা বৃক্ষ। ফলে ইসলাম বৃক্ষরোপণের প্রতি উৎসাহিত করেছে এবং একে ‘সদকায়ে জারিয়া’ হিসেবে গণ্য করেছে।

বিশেষ করে ফুল গাছ পরিবেশের সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে, ফুলের সৌন্দর্য দেখে মানুষ বিমোহিত হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করে। ফুলের পাপড়িতে নানা মেয়ের রংয়ের সুনিপুণ ছোঁয়া চিন্তাশীল হৃদয়ে মহান স্রষ্টার সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে চিন্তার খোরাক যোগায়, ফুলের রেনুতে বসে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। যে মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

শোভা বর্ধন ও সুগন্ধির উদ্দেশ্যে ফুল গাছ লাগানোর ব্যাপারে ফতোয়া:

বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. কে শুধুমাত্র শোভা বর্ধন এবং সুগন্ধির উদ্দেশ্যে গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

ليس في هذا بأس، ليس على الإنسان بأس أن يزرع في البيت من الأشجار والروائح الطيبة ما ينشرح له الصدر وتنبسط إليه النفس؛ فإن هذا من نعم الله على العباد​

“এতে কোনো অসুবিধা নেই। মানুষ যদি বাড়িতে সাধারণ গাছ বা সুগন্ধি যুক্ত ফুলের গাছ রোপন করে তাহলে এতে অন্তরে প্রশান্তি ও পুলক অনুভূত হয়। এটিও বান্দার উপরে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতরাজির মধ্যে অন্যতম।”
আল্লাহু আলাম।



আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top