• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ ইমাম আবু হানিফার নিকট বৃষ্টির নামাজ জায়েজ নেই

Farhad Molla

Susceptible

Exposer
Q&A Master
Reporter
Salafi User
Threads
155
Comments
234
Solutions
1
Reactions
1,566
Credits
1,460
ইমাম আবু হানিফার নিকট বৃষ্টির নামাজ জায়েজ নেই :

আমরা জানি, অনাবৃষ্টির সময় বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত স্থানে বের হওয়া, জামাআতে দু'রাকাত সালাত আদায় করা, খুতবাহ দেওয়া, হাত উঁচিয়ে দোয়া করা ইত্যাদি সুন্নাহ এবং রাসুলুল্লাহ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। যেমন, সুনানে তিরমিযীর ৫৫৬ নং হাদীস..

أن رسول الله ﷺ خَرَجَ بالناسِ يَسْتَسْقِي، فصلى بهم ركعتين، جَهَرَ بالقراءة فيهما، وحوّل رداءه، ورفع يديه واستسقى، واستقبل القبلة.​

"রাসুলুল্লাহ বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সাহাবীদের নিয়ে বের হলেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দু' রাক'আত সালাত আদায় করলেন।

উভয় রাক'আতে উচ্চস্বরে ক্বিরআত পাঠ করলেন। অতঃপর স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নিয়ে দু'হাত উঁচিয়ে বৃষ্টির জন্য দু'আ করলেন।"

এছাড়াও বুখারী মুসলিমের হাদীস..

خَرَجَ النبي إلى المُصَلَّى، فاستسقى واسْتَقْبَلَ القِبْلَةَ، وَقَلَبَ ردَاءَهُ، وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ​

"নবী সালাতের নির্ধারিত স্থানে বের হলেন। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া করলেন এবং চাদর উল্টিয়ে দিলেন আর দু'রাকাআত সালাত আদায় করলেন।"

কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এই প্রমাণিত সুন্নাহকে একেবারে অস্বীকার করেছেন। যেমন, হানাফী মাযহাবের পরম নির্ভরযোগ্য কিতাব মুখতাসার কুদুরীর ৪৪ পৃষ্ঠায় এসেছে,

قال أبو حنيفة : ليس في الاستسقاء صلاة مسنونة في جماعة فإن صلى الناس وحدانا جاز وإنما الاستسقاء الدعاء والاستغفار​

"ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য জামাআতে সুন্নাত নামাজ বলে কিছু নেই। তবে কেউ যদি একাকী পড়ে তাহলে সেটা জায়েজ। কেননা, দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনাই হলো ইসতিস্কা।"

এমনকি তিনি বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত যে রাসুলুল্লাহ আদায় করেছেন সেটাও অস্বীকার করেছেন।

যেমন, হানাফীদের নিকট অদ্বিতীয়তার দিক থেকে কুরআনের মত কিতাব হেদায়াহ'র ১/৮৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

ورسول الله ﷺ استسقى ولم ترو عنه الصلاة​

"রাসুলুল্লাহ বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন, তবে তিনি (বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য) সালাত আদায় করেছেন এ রকম কোন হাদীস তাঁর থেকে বর্ণিত হয়নি।"

আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এই ইসতিস্কার সালাতকে বিদআত মনে করতেন এমন কথাও এসেছে।

যেমন,

وَقَالَ أبو حنيفة الصَّلَاةُ لِلاسْتِسْقَاءِ بِدْعَةٌ​

"আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ইসতিস্কার সালাত বিদআত।" الحاوي الكبير ٥١٧/٢

ইন্না লিল্লাহ! যদিও হানাফী মাযহাবের নামে রটা এসব আস্সুম বাগুমের সাথে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর আদৌ সম্পর্ক ছিল কিনা আল্লাহই ভালো জানেন।

তবুও যদি এই অস্বীকার সত্য হয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে নিশ্চিত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সুন্নাহ'র বিরোধিতা করেছেন।

ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) তাঁর আল মুগনী কিতাবের ৩/৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

وقال أبو حنيفة: لا تُسَن الصلاةُ للاستسقاء، ولا الخروج لها؛ لأن النَّبِي اسْتَسْقَى على المِنْبَرِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، ولم يُصَلُّ لها، واسْتَسْقَى عمرُ بِالعَباسِ ولم يُصَلُّ. وليس هذا بِشيءٍ، فَإِنَّه قد ثَبَتَ بما رَوَاهُ عبد الله بن زيد، وابنُ عَبَّاسٍ، وأبو هُرَيْرَةَ أَنَّهُ خَرَجَ وصَلَّى،​

"ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য সালাতের কোন নিয়ম নেই এবং বের হবারও নিয়ম নেই। কেননা নবী বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন জুমআর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে। কিন্তু তিনি এটার জন্য কোন সালাত আদায় করেন নি। ওমর (রা.) আব্বাস (রা.) কে নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু সালাত আদায় করেন নি। (ইবনে কুদামা বলেন) এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। নিশ্চয় আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ, ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রা প্রমূখ (রা.) এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য বের হয়েছেন এবং সালাত আদায় করেছেন।"

ইমাম ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন,

ثَبَتَ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى صَلَاةَ الِاسْتِسْقَاءِ، وَخَطَبَ. وَبِهِ قَالَ عَوَامُ أهْلِ الْعِلْمِ إِلَّا أَبَا حَنِيفَةَ​

"নবী ইসতিস্কার সালাত আদায় করেছেন এবং খুতবাহ দিয়েছেন এটা প্রমাণিত। শুধুমাত্র আবু হানিফা (রহ.) ব্যতীত বাকি আহলে ইলমদের অবস্থান এ কথার উপরেই।"

একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বড়বড় ইমামগন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর এই অবস্থানের বিপক্ষে কথা বলেছেন।

এমনকি খোদ হানাফী মাযহাবেরই মুহাক্কিক ইমামগণ এটার সমালোচনা করেছেন। তারা ইচ্ছে করলে এটাকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ইজতিহাদী ভুল বলতে পারতেন।

কিন্তু কোন মুহাক্কিক সেটা বলেন নি; বরং বলেছেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সুন্নাহ'র খেলাফ করেছেন।

যেমন ইমাম কাসতালানী (রহ.) তাঁর المواهب اللدنية কিতাবের ৩/৩৬১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

ولم يخالف أحد من العلماء في سنية الصلاة في الاستسقاء إلا أبو حنيفة​

"আবু হানিফা (রহ.) ব্যতীত একজন আলেমও ইসতিস্কার সালাত সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে খেলাফ করেন নি।"

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন,

رسول الله ﷺ استسقي بالمصلى فصلى ركعتين فيه دليل للجماهير على سنية الصلاة للاستسقاء وخالف في ذلك أبو حنيفة​

"রাসুলুল্লাহ নির্ধারিত স্থানে বের হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া করেছেন এবং দু'রাকাআত সালাত আদায় করেছেন।- এই হাদীসে জমহুরের মতে ইসতিস্কার সালাত সুন্নাত হওয়ার দলিল রয়েছে।

আর আবু হানিফা (রহ.) এখানে খেলাফ করেছেন।"

مسند الشافعي - ١٦٨/١​

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন,

وقال النعمان أبو حنيفة : لا تُصلى صلاة الاستسقاء، ولا أمرهم بتحويل الرداء، ولكن يدعون ويرجعون بجملتهم؛ خالف السنة​

"আবু হানিফা নুমান (রহ.) বলেন, ইসতিস্কার সালাত পড়বে না, চাদরও উল্টাবে না। তবে দোয়া করবে এবং সবাই একসাথে ফিরে আসবে।

তিনি (আবু হানিফা) সুন্নাহ'র খেলাফ করেছেন।"

الترمذي (٥٥٩)​

এখন আমার প্রশ্ন হলো, যারা اذا صح الحديث فهو مذهبی উক্তিটির ব্যাখ্যা ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর সমস্ত ফতোয়াই সহিহ হাদীস নির্ভর বলে তাবীল করেন তারা এই মাসআলায় কী জবাব দিবেন?

বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য দু'রাকাআত সালাত জামাআতে আদায়ের উদ্দেশ্য বের হওয়াকে অস্বীকার করা, রাসুলুল্লাহ থেকে বর্ণিত হওয়া ইসতিস্কার সালাতের হাদীসকে অস্বীকার করা, এমনকি এটাকে বিদআত পর্যন্ত বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কোন সহিহ হাদীসের উপর নির্ভর করেছিলেন?

তাছাড়া আবু হানিফা (রহ.) এর সব ফতোয়াই যখন সহিহ হাদীস নির্ভর, তখন বর্তমান হানাফীরাই বা কেন ঘটা করে ইসতিস্কার সালাত আদায় করছেন?

সবশেষে মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া যে, তিনি অনাবৃষ্টির এই নেয়ামতকে তাঁর জমিনে সুন্নাহ বাস্তবায়নের একটি দারুন উপলক্ষ বানিয়ে দিয়েছেন।
 
Top