‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর ইবনে হাজার আসকালানি কি মিলাদুন্নবী উদযাপন জায়েয বলেছেন

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,138
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212
প্রশ্নঃ সত্যিই কি ইবনে হাজার আসকালানি মিলাদুন্নবী উদযাপন করা জায়েয বলেছেন? কারণ আমাদের আলজেরিয়াতে অনেক মাশায়েখ ইবনে হাজার আসকালানি এর জায়েয বলাকে মিলাদুন্নবী জায়েয হওয়ার পক্ষে দলিল দেন?


উত্তরঃ
আলহামদুলিল্লাহ।


এক:


মিলাদুন্নবী উদযাপন করা একটি নব উদ্ভাবিত বিদাত। সর্বপ্রথম এটি চালু করেছে উবাইদি ফাতেমি খলিফারা। তারা ছিল ইসলাম ত্যাগকারী পথভ্রষ্ট ফেরকাভুক্ত। উত্তম তিন প্রজন্মভুক্ত কোন একজন পূর্বসূরি থেকেও এ কর্ম মুস্তাহাব হওয়া কিংবা জায়েয হওয়া মর্মে কোন উদ্ধৃতি নেই।


[দেখুন: 70317 নং ও 128530 নং প্রশ্নোত্তর]


দুই:


যে কোন শরয়ি বিধান নির্ণয়ের মূল উৎস: কুরআন ও সুন্নাহ। আলেমগণ হচ্ছেন– নবীদের উত্তরসূরি। তাঁরা হচ্ছেন– ইলমের পতাকাবাহী। আল্লাহ্‌ তাআলা আলেমদেরকে দ্বীনি জ্ঞানে প্রজ্ঞা অর্জনের তাওফিক দিয়েছেন। প্রত্যেক আলেম আল্লাহ্‌ তার জন্য যতটুকু অর্জন করা সহজ করে দিয়েছেন ততটুকুই হাছিল করতে পেরেছেন। কোন আলেম যা কিছু বলেন এর সবটুকু হক্ব হওয়া বা সঠিক হওয়া অনিবার্য নয়। বরং তিনি মুজতাহিদ; যদি তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দেন, তাহলে তিনি পাবেন দুইটি সওয়াব: একটি তার ইজতিহাদের জন্য, অন্যটি তার অভিমত সঠিক হওয়ার জন্য। আর যদি তিনি ভুল সিদ্ধান্ত দেন তাহলেও তিনি ইজতিহাদের সওয়াব পাবেন। তার ভুলটি ক্ষমার্হ।


শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:


মুজতাহিদ আলেমগণের ব্যাপারে এটাই হচ্ছে কায়েদা বা নিয়ম: আলেমগণের মধ্যে যিনি হক বা সঠিক অভিমতে পৌঁছার জন্য ইজতিহাদ করেছেন, দলিল প্রমাণ বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন তিনি যদি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন তাহলে তিনি পাবেন দুইটি সওয়াব। আর যদি তিনি ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছেন তাহলে তিনি একটি সওয়াব পাবেন; তথা ইজতিহাদ করার সওয়াব।[মাজমু ফাতাওয়া বিন বায থেকে সমাপ্ত (৬/৮৯)]


তিন:


সুয়ুতি (রহঃ) বলেন:


শাইখুল ইসলাম, যুগশ্রেষ্ঠ হাফেযে হাদিস, ফযলের পিতা, ইবনে হাজারকে মিলাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি যে জবাব দেন সেটার ভাষ্য হল:


“মিলাদ কর্মের মূল বিধান হচ্ছে–বিদাত। সলফে সালেহীন তথা উত্তম তিন প্রজন্মের কারো থেকে এমন আমল বর্ণিত হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর মধ্যে কিছু ভাল ও ভাল এর বিপরীত বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি এর মধ্যে ভাল কাজগুলো করে এবং বিপরীত কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকে তাহলে সেটা ‘বিদাতে-হাসানা’ হবে; অন্যথায় নয়।”


তিনি আরও বলেন: “একটি সাব্যস্ত মূল দলিল থেকে এই বিধান নির্ণয়ন আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে সাব্যস্ত হয়েছে যে – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। তখন তিনি তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলল: এই দিন আল্লাহ্‌ ফেরাউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন, মুসাকে রক্ষা করেছেন। তাই আমরা আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দিনে রোযা রাখি।


এই হাদিস থেকে বিশেষ কোন দিনে আল্লাহ্ কোন নেয়ামত দিয়ে কিংবা কোন বিপদ দূর করে যে দয়া করেছেন সে দয়ার শুকরিয়া আদায় করা এবং প্রতি বছর সেটি পুনঃপুন পালন করার পক্ষে দলিল গ্রহণ করা যায়।


আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞতা কয়েক প্রকারের ইবাদতের মাধ্যমে আদায় করা যায়। যেমন– সিজদা দেয়া, রোযা রাখা ও কুরআন তেলাওয়াত করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মগ্রহণ করার চেয়ে বড় নেয়ামত ঐ দিনে আর কি হতে পারে?


উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে সে দিনটি নির্দিষ্টকরণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত; যাতে করে আশুরার দিনে মুসা আলাইহিস সালাম এর ঘটনার সাথে তা পুরোপুরি খাপ খায়। আর যারা এ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না তাদের কাছে ঐ মাসের যে কোন দিন মিলাদ পালন করায় কোন সমস্যা নেই। বরং একদল লোক পরিসরটাকে আরও বিস্তৃত করে বছরের যে কোন দিন মিলাদ পালন করার মত দিয়েছেন। অথচ এমন অভিমতে যে দুর্বলতা থাকার তাতো আছেই।


এই হলো মিলাদ পালনের মুল বিধান সংক্রান্ত কথা।


সেই দিন কি কি আমল করা হবে:


সেই দিন এমন কিছু করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, যা দ্বারা আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করা বুঝা যায়। ইতিপূর্বে যে ধরণের ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে ধরণের; যেমন- তেলাওয়াত করা, খাবার খাওয়ানো, দান করা, নাতে-রাসূল ও দুনিয়া-বিরাগতা সংক্রান্ত কিছু সংগীত পেশ করা, যেগুলো মানুষের অন্তরকে ভাল কাজের প্রতি ও আখেরাতের আমলের প্রতি তাড়িত করে।


এই দিনে এসব আমলের সাথে আরও যা কিছু ঘটে থাকে যেমন- গান শুনা, খেল-তামাশা ইত্যাদি: সে সবের ব্যাপারে বলা উচিত: সে সবের মধ্যে যা কিছু আল্লাহ্‌র শুকরিয়া প্রকাশের উপলক্ষ হিসেবে পালন করা বৈধ সেগুলো করতে কোন অসুবিধা নেই। আর যা কিছু হারাম কিংবা মাকরুহ সেগুলো করতে বাধা দেয়া হবে। অনুরূপভাবে যে সব কর্ম অনুত্তম সেগুলো করা থেকেও বাধা দেয়া হবে।”[আল-হাওয়ি লিল-ফাতাওয়া (১/২২৯)]


এখানে যা বলা যায়:


ইবনে হাজার থেকে উদ্ধৃত এ ভাষ্যটি বিশ্লেষণ করে তিনটি পয়েন্টে কথা বলা যায়:


এক. ইবনে হাজারের কথায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মিলাদ অনুষ্ঠান সলফে সালেহীন এর কর্ম ছিল না। সুতরাং এ দিক থেকে তা বিদাত। ইবনে হাজার যে, এই কথা দিয়ে তার ফতোয়াটি শুরু করেছেন সেটা ভুলে গেলে চলবে না।


দুই. তিনি আরও বলেছেন: “সেই দিন কি কি আমল করা হবে: সেই দিন এমন কিছু করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, যা দ্বারা আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করা বুঝা যায়। ইতিপূর্বে যে ধরণের ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে ধরণের; যেমন- তেলাওয়াত করা, খাবার খাওয়ানো, দান করা, নাতে-রাসূল ও দুনিয়া-বিরাগ সংক্রান্ত কিছু সংগীত পেশ করা, যেগুলো মানুষের অন্তরকে ভাল কাজের প্রতি ও আখেরাতের আমলের প্রতি তাড়িত করে।”


কিন্তু বর্তমান যামানায় মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান কিংবা অন্যান্য বিদাতি অনুষ্ঠানগুলোতে মানুষ যা কিছু করে সেসব ইবনে হাজার তার ফতোয়াতে যে নীতি নির্ধারণ করেছেন এর বিপরীত। বরং কেউ যদি বর্তমান যামানার বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা অবলোকন করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, এসব মিলাদ অনুষ্ঠানে সংঘটিত অধিকাংশ আমল বিদাত ও শরিয়ত-গর্হিত কর্মের অন্তর্ভুক্ত। বরং এগুলোতে রয়েছে এমন কিছু অশ্লীল পাপ ও শরয়ি লঙ্ঘন যেগুলোর জঘন্যতা সম্পর্কে আল্লাহ্‌ই সম্যক অবগত!!


ইমাম বুখারী (৮৬৯) ও ইমাম মুসলিম (৪৪৫) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “মহিলারা নতুন নতুন যা করা শুরু করেছে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি তাদেরকে দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন; যেভাবে বনী ইসরাইলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।”!!


এই যদি হয় সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তসম্মত বিষয়ের ক্ষেত্রে উম্মুল মুমিনীন এর মন্তব্য এবং এ ক্ষেত্রে মানুষের পরিবর্তন, যার ফলে তিনি যা বলার তাই বলেছেন; তাহলে যে কর্মটি মূলতঃই নব-উদ্ভাবিত, এরপর আবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয়, বিদাত ও শরিয়ত গর্হিত অনেক কিছু তাহলে?! চক্ষুষ্মানের কাছে বিষয়টি একেবারেই পরিষ্কার।


এ প্রসঙ্গে ইমাম শাতেবি (রহঃ) যা বলেছেন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সে কথাটি ভেবে দেখা উচিত:


“মুকাল্লাফ (শরয়ি ভারপ্রাপ্ত) ব্যক্তি যে সকল মাসয়ালার মুখোমুখি হয় যদি প্রত্যেক মাসয়ালায় মাযহাবগুলোর সহজ অভিমত (রোখসত) এর অনুসরণ করে, যে সব অভিমত নিজের মনোবৃত্তির সাথে খাপ খায় সেটার অনুকরণ করে; তাহলে সে তাকওয়ার রজ্জু খুলে ফেলল এবং নিরন্তর কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলল এবং শরিয়তপ্রণেতা যে সুদৃঢ় নির্দেশ দিয়েছেন সেটা লঙ্ঘন করল, যেটাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সেটাকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল।”[আল-মুওয়াফাকাত (৩/১২৩) থেকে সমাপ্ত]


আরও জানতে দেখুন: 107645 নং ও 128171 নং প্রশ্নোত্তর।


আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।


সূত্রঃ Islamqa.info
 

Share this page