- Joined
- Jan 12, 2023
- Threads
- 792
- Comments
- 1,044
- Solutions
- 19
- Reactions
- 10,789
- Thread Author
- #1
প্রকৃতপক্ষে, ইখলাছই হল ইসলাম ধর্মের মূল বিষয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে (ইখলাছের সাথে) একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। (সূরা আল-বাইয়েনাহ : ৫)
আল্লাহ আরো বলেন :-
বলুন, আমি ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা যুমার : ১১)
আপনি ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন। জেনে রাখুন, ইখলাছপূর্ণ ইবাদতই আল্লাহর জন্য। (সূরা যুমার, আয়াত ২-৩)
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা ইখলাছপূর্ণ ইবাদতকেই তার জন্য স্বীকৃতি প্রদান করেছেন-অল্প হোক কিংবা বেশী, বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র, যে কোন ধরনের শিরক হতে যা বিমুক্ত ও পরিশ্রুত। আয়াতগুলো স্পষ্ট ঘোষণা করে যে, ইসলাম ধর্মে ইখলাছ এক গুরুত্বপূর্ণ শর্তের নাম, তাবৎ আম্বিয়া এ প্রক্রিয়ারই স্বীকৃতি বহন করেন ; দ্বীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, শরীয়তের প্রতিটি অনুঘটনায় ইখলাছের অনুসন্ধান প্রমাণ করে ইখলাছের মর্যাদা ও গুরুত্ব।
ইখলাছ নবী-রাসূলদের দাওয়াতের কুঞ্জিকা, যে নীতিমালা নিয়ে তারা আগত, তার মহোত্তম স্থানের অধিকারী।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :-
আল্লাহর ইবাদত করবার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি। সূরা আন-নাহল : ৩
ইবনু কাসীর রহ. বলেন, এ আদেশ নিয়ে রাসূলগণ পৃথিবীতে আগমন করেন ; নূহ আ. যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, সে জাতির মাঝেই সর্বপ্রথম যখন শিরকের উৎপত্তি হয়, তখন তাকে মানবজাতির জন্য প্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়, যে ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে, যার দাওয়াত বিস্তৃত ছিল জিন-ইনসান ও পৃথিবীর সকল জাতিবর্গের জন্য। পৃথিবীতে রাসূলরূপে আগত সকলের দায়িত্ব ছিল আল-কুরআনের ভাষায়-
আমি তোমার পূর্বে এ আদেশ ব্যতীত কোন রাসূল প্রেরণ করিনি যে আমি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই ; সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)
এ তাওহীদ ও ইখলাছ হল কলব বা হৃদয়ের কর্মের মাঝে সর্বোচ্চস-রের, এটাই বান্দার কর্মের উদ্দেশ্য, ও পরিমাণে-মর্যাদায় সর্ববৃহৎ।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বক্তব্যটির ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর দাসত্বের প্রাণ হল অন-রের কাজ। যদি অঙ্গ-প্রতঙ্গের দ্বারা দাসত্ব করা হয় কিন্তু অন্তর ইখলাছ ও তাওহীদ থেকে শূন্য থাকে তবে সে যেন একটি মৃতদেহ, যার কোন রূহ নেই। নিয়্যত হল অন্তরের আমল। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)
ইখলাছ হল ইবাদত কবুলের দু শর্তের একটি। ইখলাছ ব্যতীত কোন ইবাদত কবুল হবে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :-
আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন'ষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়। (বর্ণনায় : নাসায়ী)
যারা আল্লাহর ব্যাপারে ইখলাছ অবলম্বন করেছে আল্লাহ তাঁর কালামে প্রশংসার সাথে তাদের কথা আলোচনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা তার কালীম মূসা আ. -এর প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন-
স্মরণ কর, এ কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে ছিল রাসূল। (সুরা মারইয়াম, আয়াত ৫১)
এমনিভাবে তিনি ইউসূফ আ. সম্পর্কে বলেছেন :-
আমি তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবেই নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত (ইখলাছ অবলম্বনকারী) বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা ইউসূফ : ২৪)
এমনিভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন :-
বল, আল্লাহ সম্পর্কে তোমরা কি আমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক ও তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ও তোমাদের কর্ম তোমাদের ; এবং আমরা তার প্রতি একনিষ্ঠ (ইখলাছ অবলম্বনকারী)। (সূরা আল-বাকারা : ১৩৯)
এ সকল আয়াত থেকে বুঝে আসে আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালামের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা। (আখলাকুন্নবী ফি আল-কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ: হাদ্দাদ)
অপরদিকে ইখলাছশূন্য ব্যক্তির জন্য এসেছে কঠোর হুশিয়ারী ও শাস্তির সংবাদ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ শিরক ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা : ৪৮)
যারা শিরক করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা :-
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব অত:পর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)
আয়াতটি উল্লেখের পর ইবনুল কায়্যিম রহ. এর মন-ব্য এই যে, এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যর্থ কাজ বলতে ঐ সকল কাজকে বুঝিয়েছেন, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পদ্ধতিতে করা হয়নি অথবা তার পদ্ধতিতে করা হয়েছিল তবে একনিষ্ঠভাবে (ইখলাছের সাথে) আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়নি। (মাদারিজুস সালেকীন)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাসীর রহ. বলেন, মুশরিকরা রক্ষা লাভ ও শুভপরিণতির আশায় পার্থিবে যে কর্মসম্পাদন করেছে, তা যারপরনাই মূল্যহীন, কিছুই নয়, কারণ, ইখলাছ অথবা আল্লাহ প্রণীত বিধানের প্রতি আনুগত্য-শরীয়তের এ দুটি আবশ্যকীয় শর্তের কোনটিই তাতে উপস্থিত নেই। যে সকল কাজ খালেছ আল্লাহর জন্য করা হয় না কিংবা শরীয়তের অনুমোদিত পন্থায় পালন করা হয় না তা বাতিল বলে গণ্য -সন্দেহ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
হাদীসে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি শরীকদের শিরক থেকে একেবারেই বে-পরওয়া। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তাহলে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি। (বর্ণনায় : মুসলিম)
হাদীসে এসেছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে জ্ঞান অর্জন করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তা যদি কেউ পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে করে তাহলে সে কিয়মাত দিবসে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)
হাদীসে আরো এসেছে -
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করবে আলেমদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশে অথবা মূর্খদের সাথে অহমিকা প্রদর্শনের জন্যে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করাবেন। (বর্ণনায় : তিরমিজী)
সুতরাং, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য-যাবতীয় ইবাদতের ক্ষেত্রেই ইখলাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বান্দার কিছু আমল হবে ইখলাসে পূর্ণ, কিছু হবে শূন্য, কিছু মুআমালায় ইখলাছ হবে তার আদর্শ, অপরকিছু মুআমালা হবে ইখলাছ হতে বিচ্যুত-এ খুবই গর্হিত বিষয়, এ কখনো স্বীকৃত নয় শরীয়া মোতাবেক। ইবনে কায়্যিম রহ. ইখলাছের গুরুত্ব ও অবস্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, ইখলাছ ও আনুগত্য শূন্য আমল তুলনীয় এমন মুসাফিরের সাথে, যে অকাজের ধুলোয় পূর্ণ করেছে তার থলে এবং প্রচুর ক্লান্তি ও ঘর্মাক্ত দেহে আতিক্রম করছে মরুভূমির পর মরুভূমি, তার জন্য এ সফর নিশ্চয় নিস্ফল ও শুভপরিণতি শূন্য। (আল-ফাওয়ায়িদ : ইবনুল কায়্যিম)
ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ. (البينة : 5)
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে (ইখলাছের সাথে) একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। (সূরা আল-বাইয়েনাহ : ৫)
আল্লাহ আরো বলেন :-
قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ . (الزمر : 11)
বলুন, আমি ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা যুমার : ১১)
فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ ﴿২﴾ أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ. (الزمر : 2-3)
আপনি ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন। জেনে রাখুন, ইখলাছপূর্ণ ইবাদতই আল্লাহর জন্য। (সূরা যুমার, আয়াত ২-৩)
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা ইখলাছপূর্ণ ইবাদতকেই তার জন্য স্বীকৃতি প্রদান করেছেন-অল্প হোক কিংবা বেশী, বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র, যে কোন ধরনের শিরক হতে যা বিমুক্ত ও পরিশ্রুত। আয়াতগুলো স্পষ্ট ঘোষণা করে যে, ইসলাম ধর্মে ইখলাছ এক গুরুত্বপূর্ণ শর্তের নাম, তাবৎ আম্বিয়া এ প্রক্রিয়ারই স্বীকৃতি বহন করেন ; দ্বীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, শরীয়তের প্রতিটি অনুঘটনায় ইখলাছের অনুসন্ধান প্রমাণ করে ইখলাছের মর্যাদা ও গুরুত্ব।
ইখলাছ নবী-রাসূলদের দাওয়াতের কুঞ্জিকা, যে নীতিমালা নিয়ে তারা আগত, তার মহোত্তম স্থানের অধিকারী।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ (النحل: 36)
আল্লাহর ইবাদত করবার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি। সূরা আন-নাহল : ৩
ইবনু কাসীর রহ. বলেন, এ আদেশ নিয়ে রাসূলগণ পৃথিবীতে আগমন করেন ; নূহ আ. যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, সে জাতির মাঝেই সর্বপ্রথম যখন শিরকের উৎপত্তি হয়, তখন তাকে মানবজাতির জন্য প্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়, যে ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে, যার দাওয়াত বিস্তৃত ছিল জিন-ইনসান ও পৃথিবীর সকল জাতিবর্গের জন্য। পৃথিবীতে রাসূলরূপে আগত সকলের দায়িত্ব ছিল আল-কুরআনের ভাষায়-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ . (الأنبياء : 25)
আমি তোমার পূর্বে এ আদেশ ব্যতীত কোন রাসূল প্রেরণ করিনি যে আমি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই ; সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)
এ তাওহীদ ও ইখলাছ হল কলব বা হৃদয়ের কর্মের মাঝে সর্বোচ্চস-রের, এটাই বান্দার কর্মের উদ্দেশ্য, ও পরিমাণে-মর্যাদায় সর্ববৃহৎ।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বক্তব্যটির ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর দাসত্বের প্রাণ হল অন-রের কাজ। যদি অঙ্গ-প্রতঙ্গের দ্বারা দাসত্ব করা হয় কিন্তু অন্তর ইখলাছ ও তাওহীদ থেকে শূন্য থাকে তবে সে যেন একটি মৃতদেহ, যার কোন রূহ নেই। নিয়্যত হল অন্তরের আমল। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)
ইখলাছ হল ইবাদত কবুলের দু শর্তের একটি। ইখলাছ ব্যতীত কোন ইবাদত কবুল হবে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :-
আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন'ষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়। (বর্ণনায় : নাসায়ী)
যারা আল্লাহর ব্যাপারে ইখলাছ অবলম্বন করেছে আল্লাহ তাঁর কালামে প্রশংসার সাথে তাদের কথা আলোচনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা তার কালীম মূসা আ. -এর প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন-
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَى إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا. (مريم : 51)
স্মরণ কর, এ কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে ছিল রাসূল। (সুরা মারইয়াম, আয়াত ৫১)
এমনিভাবে তিনি ইউসূফ আ. সম্পর্কে বলেছেন :-
كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ. (يوسف : 24)
আমি তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবেই নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত (ইখলাছ অবলম্বনকারী) বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা ইউসূফ : ২৪)
এমনিভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন :-
قُلْ أَتُحَاجُّونَنَا فِي اللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ وَلَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُخْلِصُونَ (البقرة: 139)
বল, আল্লাহ সম্পর্কে তোমরা কি আমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক ও তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ও তোমাদের কর্ম তোমাদের ; এবং আমরা তার প্রতি একনিষ্ঠ (ইখলাছ অবলম্বনকারী)। (সূরা আল-বাকারা : ১৩৯)
এ সকল আয়াত থেকে বুঝে আসে আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালামের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ইখলাছ বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা। (আখলাকুন্নবী ফি আল-কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ: হাদ্দাদ)
অপরদিকে ইখলাছশূন্য ব্যক্তির জন্য এসেছে কঠোর হুশিয়ারী ও শাস্তির সংবাদ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ . (النساء: 48)
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ শিরক ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা : ৪৮)
যারা শিরক করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা :-
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا. (الفرقان : 23)
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব অত:পর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)
আয়াতটি উল্লেখের পর ইবনুল কায়্যিম রহ. এর মন-ব্য এই যে, এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যর্থ কাজ বলতে ঐ সকল কাজকে বুঝিয়েছেন, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পদ্ধতিতে করা হয়নি অথবা তার পদ্ধতিতে করা হয়েছিল তবে একনিষ্ঠভাবে (ইখলাছের সাথে) আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়নি। (মাদারিজুস সালেকীন)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাসীর রহ. বলেন, মুশরিকরা রক্ষা লাভ ও শুভপরিণতির আশায় পার্থিবে যে কর্মসম্পাদন করেছে, তা যারপরনাই মূল্যহীন, কিছুই নয়, কারণ, ইখলাছ অথবা আল্লাহ প্রণীত বিধানের প্রতি আনুগত্য-শরীয়তের এ দুটি আবশ্যকীয় শর্তের কোনটিই তাতে উপস্থিত নেই। যে সকল কাজ খালেছ আল্লাহর জন্য করা হয় না কিংবা শরীয়তের অনুমোদিত পন্থায় পালন করা হয় না তা বাতিল বলে গণ্য -সন্দেহ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
হাদীসে এসেছে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال الله تعالى : أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك معي فيه غيري تركته وشركه) . أخرجه مسلم2985 : (
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি শরীকদের শিরক থেকে একেবারেই বে-পরওয়া। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তাহলে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি। (বর্ণনায় : মুসলিম)
হাদীসে এসেছে
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تعلم علما مما يبتغى به وجه الله عز وجل لا يتعلمه إلا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يعني ريحها يوم القيامة .أخرجه أبو داود (3664) وصححه الألباني
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে জ্ঞান অর্জন করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তা যদি কেউ পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে করে তাহলে সে কিয়মাত দিবসে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)
হাদীসে আরো এসেছে -
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من طلب العلم ليجاري به العلماء أو ليماري به السفهاء أو ليصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله النار) . أخرجه الترمذي 2654: وحسنه الألباني(
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করবে আলেমদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশে অথবা মূর্খদের সাথে অহমিকা প্রদর্শনের জন্যে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করাবেন। (বর্ণনায় : তিরমিজী)
সুতরাং, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য-যাবতীয় ইবাদতের ক্ষেত্রেই ইখলাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বান্দার কিছু আমল হবে ইখলাসে পূর্ণ, কিছু হবে শূন্য, কিছু মুআমালায় ইখলাছ হবে তার আদর্শ, অপরকিছু মুআমালা হবে ইখলাছ হতে বিচ্যুত-এ খুবই গর্হিত বিষয়, এ কখনো স্বীকৃত নয় শরীয়া মোতাবেক। ইবনে কায়্যিম রহ. ইখলাছের গুরুত্ব ও অবস্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, ইখলাছ ও আনুগত্য শূন্য আমল তুলনীয় এমন মুসাফিরের সাথে, যে অকাজের ধুলোয় পূর্ণ করেছে তার থলে এবং প্রচুর ক্লান্তি ও ঘর্মাক্ত দেহে আতিক্রম করছে মরুভূমির পর মরুভূমি, তার জন্য এ সফর নিশ্চয় নিস্ফল ও শুভপরিণতি শূন্য। (আল-ফাওয়ায়িদ : ইবনুল কায়্যিম)
ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান