সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ আল-জামীল নামের অর্থ ও ব্যাখ্যা

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,257
Credits
6,303
আল-জামীল (সুন্দর)[1]:

আল-জামীল হলেন যার সুন্দর ও ইহসানের গুণ রয়েছে।[2] আল্লাহ সত্ত্বগত, নামগত, গুণগত ও কর্মগত সব দিক থেকেই সুন্দর। কোন সৃষ্টির পক্ষে আল্লাহর সত্ত্বাগত সৌন্দর্যের সামান্য কিছুও বর্ণনা করা সম্ভব নয়; এমনকি জান্নাতে জান্নাতিরা সব ধরণের চিরস্থায়ী নি‘আমত, ভোগ-বিলাস, আনন্দ-খুশি পাওয়ার পরেও তারা তাদের রবকে দেখার পরে এসব নি‘আমত তাদের কাছে কিছুই মনে হবে না।

তারা তাদের রবের সৌন্দর্য উপভোগ করে জান্নাতের যাবতীয় নি‘আমত ভুলে যাবে এব তাদের সব আনন্দ-খুশি বৃথা মনে হবে। তারা আশা করবে আল্লাহর দর্শনের এ নি‘আমত যদি সব সময় বজায় থাকত যাতে তারা তাঁর সৌন্দর্য ও তাঁর নূর উপভোগ করতে পারেন। তাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহকে দেখার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ থাকবে। যেদিন তারা আল্লাহকে দেখবে সেদিন তাদের আনন্দ বহুগুণে হাজার গুণে বেড়ে যাবে যেন তাদের অন্তর পাখির মতো উড়ছে। এমনিভাবে তিনি নামগত দিক থেকেও সুন্দর। কেননা তাঁর সব নামই সুন্দর; বরং তাঁর সব নামই অন্য সব নামের তুলনায় অতি সুন্দর ও উত্তম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَا١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٧٩]​

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيّٗا٦٥﴾ [مريم: ٦٥]​

“তুমি কি তাঁর সমতুল্য কাউকে জান?” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৫] আল্লাহর সব নামই চূড়ান্ত প্রশংসা, সম্মান, মর্যাদা ও পরিপূর্ণতা প্রমাণ করে। তাঁর এসব নাম অন্যের জন্য পরিপূর্ণতা বুঝাতে ব্যবহার হয় না।

এমনিভাবে তিনি গুণাবলীতেও সুন্দর। কেননা তাঁর যাবতীয় গুণাবলীই পরিপূর্ণতার গুণ, প্রশংসা ও গুণকীর্তনের গুণ। তাঁর রয়েছে প্রশস্ত, ব্যাপক, সাধারণ গুণ। এসব গুণের অধিকাংশই তাঁর রহমত, দয়া, কল্যাণ, দানশীলতা ও দয়া প্রদর্শনের সাথে সম্পৃক্ত।

এমনিভাবে আল্লাহর যাবতীয় কাজ-কর্ম সুন্দর। কেননা তাঁর সব কাজই কল্যাণ ও ইহসানের মধ্যে ঘূর্ণয়মান যা প্রশংসনীয় ও শুকরিয়ার দাবীদার। আবার তাঁর কাজগুলো ন্যায় পরায়নতার সাথে সম্পৃক্ত যা তাঁর হিকমত ও প্রশংসা অনুযায়ী হয়ে থাকে। তাঁর কোন কাজই অনর্থক, বেহুদা, বোকামী ও যুলুম নয়; বরং তাঁর সব কাজই কল্যাণকর, হিদায়েতমূলক, রহমত, সুপথ প্রদর্শন ও ন্যায়পরায়ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ٥٦﴾ [هود: ٥٦]​

“নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৫৬]

তাঁর পূর্ণতা এতই পরিপূর্ণ কেউ তা প্রশংসা করে ও গননা করে শেষ করতে পারবে না। তাঁর পূর্ণতার কারণে তাঁর যাবতীয় কাজও পরিপূর্ণ ও সুন্দর। ফলে তাঁর হুকুমসমূহ সবচেয়ে সুন্দরতম হুকুম, তাঁর সৃষ্টি সবচেয়ে সুন্দরতম সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সব কিছু সুন্দরভাবে ও দৃঢ়ভাবে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ﴾​

“(এটা) আল্লাহর কাজ (সৃষ্টি), যিনি সব কিছু দৃঢ়ভাবে করেছেন।” [সূরা আন-নামাল, আয়াত: ৮৮]

তিনি সবকিছু উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ٱلَّذِيٓ أَحۡسَنَ كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقَهُ٧﴾ [السجدة : ٧]​

“যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ٥٠﴾ [المائ‍دة: ٥٠]​

“আর নিশ্চিত বিশ্বাসী জাতির জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫০]

এরপরে গ্রস্থকার[3] আল্লাহর সৌন্দর্যের ব্যাপারে আক্বলী দলিল পেশ করেন। তিনি বলেন, সৃষ্টিজগত যেহেতু নানা সৌন্দর্যে ভরপুর, আর এসবের সৌন্দর্য আল্লাহর সৌন্দর্য থেকে এসেছে, যিনি এগুলোকে সৌন্দর্যের চাদরে ঢেকে দিয়েছেন এবং তাদেরকে সৌন্দর্য দান করেছেন। তিনি তো এসবের চেয়ে অধিক সুন্দর। কেননা কাউকে সৌন্দর্য দানকারী নিজে সৌন্দর্যের অধিক হকদার।

দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৌন্দর্য, বিশেষ করে আল্লাহ জান্নাতী পুরুষ ও নারীকে যে সৌন্দর্য দান করবেন, জান্নাতী হুর যদি দুনিয়াতে তাদের হাতের তালু প্রকাশ করে তাহলে দুনিয়ার সূর্যের আলো মলিন হয়ে যাবে যেভাবে সূর্য তারকার আলো মলিন করে দেয়। তাহলে যিনি তাদেরকে এত সৌন্দর্য দান করবেন, যিনি তাদেরকে এত উত্তমরূপ ও পূর্ণতা দান করবেন তিনি তো সৌন্দর্যের দিক থেকে অধিক সুন্দরতম হওয়া অত্যাবশ্যকীয় ও হকদার। তাঁর অনুরূপ কোন কিছুই নেই। এ মাসআলায় এটি একটি স্পষ্ট গ্রহণযোগ্য আক্বলী দলিল। আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের ব্যাপারেও একই কথা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ٦٠﴾ [النحل: ٦٠]​

“এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে মহান উদাহরণ।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৬০] মাখলুকাতের মধ্যে যেসব পূর্ণ গুণ পাওয়া যায় তা অপূর্ণ হওয়া অত্যাবশ্যকীয় নয়। কেননা এসব গুণাবলী আল্লাহ দান করেছেন। তিনি যাদেরকে দান করেছেন তাদের চেয়ে তিনি নিজে এসব গুণেআ অধিকারী হওয়া অধিক হকদার। যেহেতু সৃষ্টির সাথে তাঁর কোন তুলনা হয় না, যেমন তাঁর যাতের সাথে সৃষ্টিজগতের যাতের কোন তুলনা হয় না, তাদের গুণের সাথে আল্লাহর গুণের তুলনা হয় না। সুতরাং যিনি তাদেরকে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, জীবন, ইলম, সক্ষমতা ও সৌন্দর্য দান করেছেন তিনি এসব গুণাবলীতে বিশেষিত হওয়া তাদের চেয়ে অধিক হকদার। তাঁর সৌন্দর্য কিভাবে আমরা প্রকাশ করব? সৃষ্টিজগতের সর্বাধিক জ্ঞানী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,

«لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ».​

“আপনি নিজের প্রশংসা যেভাবে করেছেন আমি সেভাবে আপনার প্রশংসা করতে সক্ষম নই।”[4]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«حِجَابُهُ النُّورُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ».​

“তাঁর পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। তিনি তাঁর পর্দা তুলে নিলে তাঁর চেহারার জ্যোতি বা মহিমা তাঁর সৃষ্টির দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত সব কিছু ভস্মীভূত করে দিত।”[5]

সুবহানাল্লাহ, আমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। যালিম ও আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকারকারীগণ যা কিছু অপবাদ করে তা থেকে তিনি পবিত্র। তাদের ধ্বংস ও শাস্তির জন্য এটিই যথেষ্ট যে, তারা আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর ভালোবাসা অর্জনে বঞ্চিত।

গ্রন্থকার রহ.[6] আল-জালীল ও আল-জামীলদ্বয়কে একত্রে উল্লেখ করেছেন। কেননা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব (ইবাদত) এ সম্মানিত নামদ্বয়ের দ্বারা দাসত্বকে বুঝায়। আল-জালীলের ইবাদত তাঁকে সম্মান, ভয়, আতঙ্ক, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব প্রকাশ বুঝায়। আর আল-জামীল নামের ইবাদত তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর কাছে ঝুঁকে পড়া, একনিষ্ঠ ভালোবাসার সাথে বান্দা তাঁর সমীপে নত হওয়া, তাঁকে প্রকৃত ভালোবাসা; যেহেতু অন্তর তাঁর পরিচয়ের বাগানে ও তাঁর সৌন্দর্যের ময়দানে সর্বদা তাঁর তাসবীহ পাঠ করে, তাঁর সৌন্দর্য ও পূর্ণতার প্রভাবে অন্তর পরিচালিত হয়। কেননা আল্লাহ মহামর্যাদা ও মহাসম্মানের অধিকারী।[7]



[1] সহীহ মুসলিমে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এ নামটি সাব্যস্ত আছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ».​

“নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।” সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১।
[2] তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১১৭।
[3] এখানে গ্রন্থকার বলতে ইবনুল কাইয়্যিম রহ. কে বুঝানো হয়েছে। তিনি তার কাসীদাতুন নুনিয়্যাহতে এ কথা বলেছেন।
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৬।
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৯।
[6] ইবনুল কাইয়্যিম রহ. তার কাসীদাতুন নুনিয়্যাহতে বলেছেন।
[7] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ২৯-৩২।
 
COMMENTS ARE BELOW
Top