আল-খাবীর (সম্যক অবগত, সর্বজ্ঞ)[1]: (আল-‘আলীম (সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী), আল-খাবীর):
আল-খাবীর, আল-‘আলীম হলেন, যিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, গোপনীয়-রহস্যময়, ঘোষিত-অঘোষিত, অত্যাবশ্যকীয়-অনত্যবশ্যকীয়, সম্ভব-অসম্ভব, ঊর্ধ্বজগত-নিম্নজগত, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সবকিছুই তিনি বেষ্টন করে রেখেছেন ও তিনি জ্ঞাত আছেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নয়।[2] তিনি মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা অত্যাবশ্যকীয়, সম্ভাব্য, অসম্ভব্য সব কিছুই বেষ্টন করে রেখেছেন। তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে, তাঁর পবিত্রতম গুণাবলী সম্পর্কে ও তাঁর মহান সিফাত সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। এগুলোর অস্তিত্ব বিরাজমান থাকা হলো ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয়। তিনি অত্যাবশ্যকীয়-না হওয়া জিনিসগুলোও অবগত। তিনি জানেন যে, এগুলো অস্তিত্বে আসলে কী হত। যেমন তিনি বলেছেন,
“যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২২]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯১]
সুতরাং আয়াতে উল্লিখিত অত্যাবশ্যকীয় নিষিদ্ধ জিনিস সম্পর্কে তিনি জানেন। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, সেগুলো অস্তিত্বে আসলে কী হতো, তিনি তাও জানেন। আল্লাহ সম্ভাব্য জিনিস সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। সম্ভাব্য বলতে বুঝায় যেসব জিনিসের অস্তিত্ব হওয়া ও না হওয়া উভয়টিই সম্ভব। তিনি যেগুলো অস্তিত্বে বিদ্যমান হওয়া চেয়েছেন, সেগুলো হয়েছে। আর তিনি যেগুলো অস্তিত্বে আসা চান নি, সেগুলো হয় নি। তিনি ঊর্ধ্বজগতের ও নিম্নজগতের সব কিছুই অবগত আছেন। তাঁর ইলম থেকে কোন স্থান, কাল কোন কিছুই বাদ পড়ে না। তিনি গায়েব (অদৃশ্য), উপস্থিত, বর্তমান, যাহির, বাতিন, স্পষ্ট ও অস্পষ্ট সব কিছুই জানেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩১]
আল্লাহর ইলমে সব কিছু বেষ্টন করে রাখা ও তাঁর জ্ঞানের সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত আলোচনা সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে, যা গননা করা অসম্ভব। আসমান ও জামিনে তাঁর ইলমের বাইরে একটি সরিষা কণা বা তারচেয়েও ক্ষুদ্র কোন কিছু গোপন থাকে না। ছোট-বড় কোন কিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না এবং তিনি কিছুই ভুলে যান না।[3] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।” [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৭]
সৃষ্টিকুলের জ্ঞান এত ব্যাপক ও বিচিত্র হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর অপরিসীম জ্ঞনের দিকে সম্পৃক্ত করলে তা কিছুই মনে হবে না, তা নিতান্তই নগন্য, যেমনিভাবে সৃষ্টিজগতের কুদরত আল্লারহ কুরতের সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত ও তুলনা করা যায় না। তারা যা জানে ও জানে না, তারা যা কিছু করতে পারে ও পারে না তাঁর ইলম সব কিছুই অবগত আছে। এমনিভাবে তাঁর ইলম ঊর্ধ্বজগত, নিম্নজগত, এর মধ্যকার সমস্ত সৃষ্টি, এদের মূল অস্তিত্ব, গুণাবলী, কর্ম ও যাবতীয় সবকিছু তিনি তাঁর ইলমের দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে যা কিছু হয়েছে, সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে, যা কিছুর অস্তিত্ব হয় নি; যদি হতো তাহলে তা কীভাবে হতো, শরী‘আত প্রযোজ্যদের (মুকাল্লিফ) যাবতীয় অবস্থা, মৃত্যুর পরে তাদের পরিণতি, আবার তাদের পুনরায় জীবিত করার পরের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। তাদের ভালো-মন্দ যাবতীয় কর্মসমূহ, এসব কাজের প্রতিদান, চিরস্থায়ী আবাস স্থানে[4] (জান্নাত বা জাহান্নামে) তাদের পরিণতি কী হবে তা সব কিছুই তিনি জানেন। অত:এব, নিজের কল্যাণকামী একজন মুমিনের উচিত আল্লাহর নামসূহ, সিফাতসমূহ, তাঁর মহত্ব ও পবিত্রতা জানতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। এ মাস’আলাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মাস’আলা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, যাতে তারা পূর্ণরূপরে কল্যাণের অধিকারী হয়ে সফলকাম হয়।
যেমন, বান্দা আল্লাহর আল-‘আলীম নামটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে সে জানতে পারবে যে, তার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ও সব ধরণের ব্যাপারে আল্লাহর জ্ঞান বিদ্যমান। ফলে আল্লাহ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎতের সব ব্যাপারে জানেন, স্পষ্ট-অস্পষ্ট, নগন্য-মূল্যবান ও ছোট-বড় সবই জ্ঞাত আছেন। তিনি বস্তুর যাহির, বাতিন, দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুই জানেন। সৃষ্টিকুল যা কিছু জানে ও যা কিছু জানে না সব কিছুই তাঁর কাছে দৃশ্যমান। তিনি অত্যাবশ্যকীয় ভাবে হওয়া বা যে সব বস্তু হওয়া অসম্ভব বা যা কিছু হওয়া সম্ভব এমন যাবতীয় জিনিস তিনি জ্ঞাত আছেন।
তিনি যেমন জমিনের নিচের সব কিছু জানেন তেমনি আসমানের উপরেরও সব কিছু জ্ঞাত। তিনি বস্তুর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশ, বস্তুর অন্তর্নিহিত যাবতীয় অদৃশ্য অংশ, বিশ্বে সংঘটিত গোপনীয় জিনিস ও সংঘটিতব্য যাবতীয় জিনিস সম্পর্কে অবগত। তাঁর ইলম সব সময় সব বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নয় এবং তিনি কিছুই ভুলে যান না। নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমাগুলো বারবার তিলাওয়াত করলে তাঁর জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
“আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২]
“নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯]
“আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৪]
“আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বল তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৭]
“তোমাদের মধ্যে কেউ কথা গোপন রাখুক বা প্রকাশ করুক। আর রাতে লুকিয়ে করুক বা দিনে প্রকাশ্যে করুক, সবই তাঁর নিকট সমান।” [সূরা আর-রাদ, আয়াত: ১০]
“তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭০]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]
“আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু সব কিছু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯]
“তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যার ফলে জমিন সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ স্নেহপরায়ণ, সর্ববিষয়ে সম্যকজ্ঞাত।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৬৩]
“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া।” [সূরা আল-জিন, আয়াত: ২৬-২৭]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তিনি জানেন জমিনে যা প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা বের হয়; আর আসমান থেকে যা নাযিল হয় এবং তাতে যা উঠে[5]। আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।” [সূরা সাবা’ আয়াত: ২]
“আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২৭]
“তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১৩]
“তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ৭]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৭]
উপরোক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো আল্লাহর আল-‘আলীম তথা মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ হওয়া প্রমাণ করে। এসব আয়াতের কিছু আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেই একজন সূক্ষ্ম দৃষ্টিমান মুমিনের জন্য আল্লাহর সর্ব বিষয়ে বেষ্টিত জ্ঞান, তাঁর পূর্ণ বড়ত্ব ও সুউচ্চ কুদরত সম্পর্কে জানা যথেষ্ট। তিনিই মহান রব, মহান মালিক।[6]
[1] এ নামের দলিল হচ্ছে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,
“নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]
[2] আত-তাফসীর, ৫/৬২১।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৩৬-৩৭।
[4] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৩৭-৩৮।
[5] জমিনে যা প্রবেশ করে তন্মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির পানি, বীজ ইত্যাদি। আর তা থেকে বের হয় অঙ্কুর, উদ্ভিদ ইত্যাদি। আসমান থেকে নাযিল হয় রিযক ও তাকদীর এবং আসমানে উঠে ফেরেশতা, রূহ প্রভৃতি। - অনুবাদক।
[6] আল-মাওয়াহিবুর রাব্বানিয়্যাহ মিনাল আয়াতিল কুরআনিয়্যাহ, পৃ. ৬৩-৬৪।
আল-খাবীর, আল-‘আলীম হলেন, যিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, গোপনীয়-রহস্যময়, ঘোষিত-অঘোষিত, অত্যাবশ্যকীয়-অনত্যবশ্যকীয়, সম্ভব-অসম্ভব, ঊর্ধ্বজগত-নিম্নজগত, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সবকিছুই তিনি বেষ্টন করে রেখেছেন ও তিনি জ্ঞাত আছেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নয়।[2] তিনি মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা অত্যাবশ্যকীয়, সম্ভাব্য, অসম্ভব্য সব কিছুই বেষ্টন করে রেখেছেন। তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে, তাঁর পবিত্রতম গুণাবলী সম্পর্কে ও তাঁর মহান সিফাত সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। এগুলোর অস্তিত্ব বিরাজমান থাকা হলো ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয়। তিনি অত্যাবশ্যকীয়-না হওয়া জিনিসগুলোও অবগত। তিনি জানেন যে, এগুলো অস্তিত্বে আসলে কী হত। যেমন তিনি বলেছেন,
﴿لَوۡ كَانَ فِيهِمَآ ءَالِهَةٌ إِلَّا ٱللَّهُ لَفَسَدَتَا٢٢﴾ [الانبياء: ٢٢]
“যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২২]
﴿مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۢ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ٩١ ﴾ [المؤمنون : ٩١]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯১]
সুতরাং আয়াতে উল্লিখিত অত্যাবশ্যকীয় নিষিদ্ধ জিনিস সম্পর্কে তিনি জানেন। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, সেগুলো অস্তিত্বে আসলে কী হতো, তিনি তাও জানেন। আল্লাহ সম্ভাব্য জিনিস সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। সম্ভাব্য বলতে বুঝায় যেসব জিনিসের অস্তিত্ব হওয়া ও না হওয়া উভয়টিই সম্ভব। তিনি যেগুলো অস্তিত্বে বিদ্যমান হওয়া চেয়েছেন, সেগুলো হয়েছে। আর তিনি যেগুলো অস্তিত্বে আসা চান নি, সেগুলো হয় নি। তিনি ঊর্ধ্বজগতের ও নিম্নজগতের সব কিছুই অবগত আছেন। তাঁর ইলম থেকে কোন স্থান, কাল কোন কিছুই বাদ পড়ে না। তিনি গায়েব (অদৃশ্য), উপস্থিত, বর্তমান, যাহির, বাতিন, স্পষ্ট ও অস্পষ্ট সব কিছুই জানেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ٢٣١﴾ [البقرة: ٢٣١]
“এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩১]
আল্লাহর ইলমে সব কিছু বেষ্টন করে রাখা ও তাঁর জ্ঞানের সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত আলোচনা সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে, যা গননা করা অসম্ভব। আসমান ও জামিনে তাঁর ইলমের বাইরে একটি সরিষা কণা বা তারচেয়েও ক্ষুদ্র কোন কিছু গোপন থাকে না। ছোট-বড় কোন কিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না এবং তিনি কিছুই ভুলে যান না।[3] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ٥٩﴾ [الانعام: ٥٩]
“আর কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।” [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَعۡلَمُ ٱلسِّرَّ وَأَخۡفَى٧﴾ [طه: ٧]
“তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৭]
সৃষ্টিকুলের জ্ঞান এত ব্যাপক ও বিচিত্র হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর অপরিসীম জ্ঞনের দিকে সম্পৃক্ত করলে তা কিছুই মনে হবে না, তা নিতান্তই নগন্য, যেমনিভাবে সৃষ্টিজগতের কুদরত আল্লারহ কুরতের সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত ও তুলনা করা যায় না। তারা যা জানে ও জানে না, তারা যা কিছু করতে পারে ও পারে না তাঁর ইলম সব কিছুই অবগত আছে। এমনিভাবে তাঁর ইলম ঊর্ধ্বজগত, নিম্নজগত, এর মধ্যকার সমস্ত সৃষ্টি, এদের মূল অস্তিত্ব, গুণাবলী, কর্ম ও যাবতীয় সবকিছু তিনি তাঁর ইলমের দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে যা কিছু হয়েছে, সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে, যা কিছুর অস্তিত্ব হয় নি; যদি হতো তাহলে তা কীভাবে হতো, শরী‘আত প্রযোজ্যদের (মুকাল্লিফ) যাবতীয় অবস্থা, মৃত্যুর পরে তাদের পরিণতি, আবার তাদের পুনরায় জীবিত করার পরের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। তাদের ভালো-মন্দ যাবতীয় কর্মসমূহ, এসব কাজের প্রতিদান, চিরস্থায়ী আবাস স্থানে[4] (জান্নাত বা জাহান্নামে) তাদের পরিণতি কী হবে তা সব কিছুই তিনি জানেন। অত:এব, নিজের কল্যাণকামী একজন মুমিনের উচিত আল্লাহর নামসূহ, সিফাতসমূহ, তাঁর মহত্ব ও পবিত্রতা জানতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। এ মাস’আলাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মাস’আলা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, যাতে তারা পূর্ণরূপরে কল্যাণের অধিকারী হয়ে সফলকাম হয়।
যেমন, বান্দা আল্লাহর আল-‘আলীম নামটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে সে জানতে পারবে যে, তার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ও সব ধরণের ব্যাপারে আল্লাহর জ্ঞান বিদ্যমান। ফলে আল্লাহ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎতের সব ব্যাপারে জানেন, স্পষ্ট-অস্পষ্ট, নগন্য-মূল্যবান ও ছোট-বড় সবই জ্ঞাত আছেন। তিনি বস্তুর যাহির, বাতিন, দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুই জানেন। সৃষ্টিকুল যা কিছু জানে ও যা কিছু জানে না সব কিছুই তাঁর কাছে দৃশ্যমান। তিনি অত্যাবশ্যকীয় ভাবে হওয়া বা যে সব বস্তু হওয়া অসম্ভব বা যা কিছু হওয়া সম্ভব এমন যাবতীয় জিনিস তিনি জ্ঞাত আছেন।
তিনি যেমন জমিনের নিচের সব কিছু জানেন তেমনি আসমানের উপরেরও সব কিছু জ্ঞাত। তিনি বস্তুর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশ, বস্তুর অন্তর্নিহিত যাবতীয় অদৃশ্য অংশ, বিশ্বে সংঘটিত গোপনীয় জিনিস ও সংঘটিতব্য যাবতীয় জিনিস সম্পর্কে অবগত। তাঁর ইলম সব সময় সব বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নয় এবং তিনি কিছুই ভুলে যান না। নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমাগুলো বারবার তিলাওয়াত করলে তাঁর জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
﴿وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ٢٨٢﴾ [البقرة: ٢٨٢]
“আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২]
﴿إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ١١٩﴾ [ال عمران: ١١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯]
﴿يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَيَعۡلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعۡلِنُونَۚ وَٱللَّهُ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ٤﴾ [التغابن : ٤]
“আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৪]
﴿وَإِن تَجۡهَرۡ بِٱلۡقَوۡلِ فَإِنَّهُۥ يَعۡلَمُ ٱلسِّرَّ وَأَخۡفَى٧﴾ [طه: ٧]
“আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বল তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৭]
﴿سَوَآءٞ مِّنكُم مَّنۡ أَسَرَّ ٱلۡقَوۡلَ وَمَن جَهَرَ بِهِۦ وَمَنۡ هُوَ مُسۡتَخۡفِۢ بِٱلَّيۡلِ وَسَارِبُۢ بِٱلنَّهَارِ١٠﴾ [الرعد: ١٠]
“তোমাদের মধ্যে কেউ কথা গোপন রাখুক বা প্রকাশ করুক। আর রাতে লুকিয়ে করুক বা দিনে প্রকাশ্যে করুক, সবই তাঁর নিকট সমান।” [সূরা আর-রাদ, আয়াত: ১০]
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ٧٠﴾ [الحج : ٧٠]
“তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭০]
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ٥ هُوَ ٱلَّذِي يُصَوِّرُكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡحَامِ كَيۡفَ يَشَآءُۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ٦﴾ [ال عمران: ٥، ٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট গোপন থাকে না কোন কিছু জমিনে এবং না আসমানে। তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে তিনি চান। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫-৬]
﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤﴾ [لقمان: ٣٤]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ٥٩﴾ [الانعام: ٥٩]
“আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু সব কিছু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯]
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَتُصۡبِحُ ٱلۡأَرۡضُ مُخۡضَرَّةًۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٞ٦٣﴾ [الحج : ٦٣]
“তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যার ফলে জমিন সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ স্নেহপরায়ণ, সর্ববিষয়ে সম্যকজ্ঞাত।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৬৩]
﴿عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ فَلَا يُظۡهِرُ عَلَىٰ غَيۡبِهِۦٓ أَحَدًا٢٦ إِلَّا مَنِ ٱرۡتَضَىٰ مِن رَّسُولٖ٢٧﴾ [الجن: ٢٦، ٢٧]
“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া।” [সূরা আল-জিন, আয়াত: ২৬-২৭]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَعۡلَمُ مَا يَلِجُ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَمَا يَخۡرُجُ مِنۡهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ وَمَا يَعۡرُجُ فِيهَا٢﴾ [سبا: ٢]
“তিনি জানেন জমিনে যা প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা বের হয়; আর আসমান থেকে যা নাযিল হয় এবং তাতে যা উঠে[5]। আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।” [সূরা সাবা’ আয়াত: ২]
﴿وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ٢٧﴾ [لقمان: ٢٧]
“আর জমিনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২৭]
﴿وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ١٣﴾ [المجادلة: ١٣]
“তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১৩]
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ٧﴾ [المجادلة: ٧]
“তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ৭]
﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ١٧﴾ [السجدة : ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৭]
উপরোক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো আল্লাহর আল-‘আলীম তথা মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ হওয়া প্রমাণ করে। এসব আয়াতের কিছু আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেই একজন সূক্ষ্ম দৃষ্টিমান মুমিনের জন্য আল্লাহর সর্ব বিষয়ে বেষ্টিত জ্ঞান, তাঁর পূর্ণ বড়ত্ব ও সুউচ্চ কুদরত সম্পর্কে জানা যথেষ্ট। তিনিই মহান রব, মহান মালিক।[6]
[1] এ নামের দলিল হচ্ছে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ٣٤﴾ [لقمان: ٣٤]
“নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]
[2] আত-তাফসীর, ৫/৬২১।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৩৬-৩৭।
[4] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৩৭-৩৮।
[5] জমিনে যা প্রবেশ করে তন্মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির পানি, বীজ ইত্যাদি। আর তা থেকে বের হয় অঙ্কুর, উদ্ভিদ ইত্যাদি। আসমান থেকে নাযিল হয় রিযক ও তাকদীর এবং আসমানে উঠে ফেরেশতা, রূহ প্রভৃতি। - অনুবাদক।
[6] আল-মাওয়াহিবুর রাব্বানিয়্যাহ মিনাল আয়াতিল কুরআনিয়্যাহ, পৃ. ৬৩-৬৪।