মানুষের পক্ষে কি অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যৎ জানা সম্ভব, বিজ্ঞান কি বলে?
বিজ্ঞানের ভাষায় অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যৎ জানা এই জ্ঞানকে বলা হয় Precognition, যা দু’টি ল্যাটিন শব্দ prae (পূর্বে) এবং cognitio (অর্জিত জ্ঞান) হ’তে আগত। প্রাচীনকাল হ’তে মানুষের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে, মানুষের পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানা সম্ভব। কিন্তু সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কারো পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যৎ জানা সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন,
‘তুমি বল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্যের খবর কেউ রাখে না আল্লাহ ব্যতীত। আর তারা বুঝতেই পারবে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে’ (নামাল ২৭/৬৫)।
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,
‘তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারু নিকট প্রকাশ করেন না’ (জিন ৭২/২৬)।
উক্ত আয়াতগুলোতে ঘোষণা করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ অদৃশ্যের খবর জানেন না। এখন প্রশ্ন হ’ল অদৃশ্যের খবর কি?
অদৃশ্য হ’ল যা আমাদের পক্ষে চাক্ষুস জানা বা দেখা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, কবরের আযাব, জান্নাত, জাহান্নাম, ভবিষ্যতে কি হবে এরূপ আরো অনেক বিষয় যা মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এখন আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের পক্ষে ভবিষ্যৎ দেখা বা জানা সম্ভব কি-না এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কি বলে?
ধরে নিলাম, মানুষ ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে বা জানতে পারবে। এখন প্রশ্ন হ’ল তারা কি প্রক্রিয়ায় জানতে পারবে? এখন বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যৎ জানা সম্পর্কে যে গবেষণা করেছেন এবং সে সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করব।
১.Theory of Causality: ভবিষ্যতের কোন ঘটনা, প্রক্রিয়া, অবস্থা যদি বর্তমান কোন ঘটনা, প্রক্রিয়া বা অবস্থার উপর আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয় তবে ভবিষ্যতের ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলা যাবে তাকে Theory of Causality বলে।[1] যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হ’ল প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বলা যাবে ফেব্রুয়ারী মাসের এই এই তারিখ তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে অর্থাৎ ভবিষ্যতের একটি ঘটনা বলে দেওয়া গেল।
Theory of Causality অনুসারে গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে, ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার তাবলীগী ইজতেমার ঘটনাটি ঘটবে। এখন প্রশ্ন হ’ল, এটি কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে কি-না? প্রদত্ত আয়াতে বলা হয়েছে অদৃশ্যের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু উক্ত ঘটনাটি অদৃশ্য নয়; তা একটি সিদ্ধান্তের কারণে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ এই ঘটনার খবর দৃশ্যমান। তাই Theory of Causality কুরআনের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
২. Pseudoscience বা ছদ্ম বিজ্ঞান : এটি একটি প্রস্তাব, একটি অনুসন্ধান বা ব্যাখ্যা, যা বিজ্ঞান হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ এবং তথ্য-উপাত্ত অনুপস্থিত থাকে। এটির মূল ভিত্তি হ’ল বিশ্বাস। এটির কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, এটি স্রেফ বিশ্বাসের উপর ভবিষ্যতের খবর প্রদান করে। (Hansson SO (2008), "Science and Pseudoscience") যেহেতু এটির কোন প্রমাণ নেই এবং এর দ্বারা প্রদত্ত সংবাদ সত্যও হয় এবং মিথ্যাও হয়। তাই বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করেননি। Presudoscience-এর কিছু উদাহরণ :
(ক)Acupuncture (আকুপ্যাংচার থেরাপী) : এটি চীনের একটি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাদের দাবী এর দ্বারা মানুষের শরীরের শক্তির ব্যালেন্স হয়। কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তারা দেখাতে পারেনি। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি গৃহীত হয়নি।
(খ) Astrology (জ্যোতিষশাস্ত্র) : নক্ষত্রের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ বলার প্রক্রিয়াকে Astrology বলা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে এটি একটি মিথ্যা Presudoscience যা একটি অপ্রমাণিত ভিত্তির উপর নির্ভর করে মানুষের জন্মের সময় সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রের অবস্থানের অনুসারে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। এরা আগুন, বায়ু, পানি এবং পৃথিবীর সাথে চন্দ্র, সূর্য এবং নক্ষত্রের সম্পর্ক স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করে। সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে মানুষের ভবিষ্যতের দূরতমও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রসমূহ সৃষ্টির উদ্দশ্যে সমূহ বর্ণনা করেছেন। বিজ্ঞানীরা কুরআনের আয়াতের অনুরূপ তথ্য প্রদান করেছেন যে, এগুলোর সাথে ভবিষ্যৎ জানার কোন সম্পর্ক নেই।
বৈজ্ঞানিকভাবে কোন মানুষের ক্ষতি বলতে বুঝায় সে কোন কিছু দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হবে অর্থাৎ তার উপর বল প্রয়োগ করা হবে। মহাবিশ্বে চার ধরনের বলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যথা- তাড়িতচৌম্বক বল, মহাকর্ষ বল, সবল নিউক্লিয় বল, এবং দুর্বল নিউক্লিয়। চিরুনী মাথায় ঘষে ছোট কাগজের টুকরোর উপরে ধরলে তা কাগজকে আকর্ষণ করে। এই বল হ’ল তাড়িতচৌম্বক বল। কোন ভারী কিছুকে ছেড়ে তা মাটিতে গিয়ে পড়ে অর্থাৎ যে বলের কারণে তা মাটিতে পড়ে তা মহাকর্ষ বল। পারমাণবিক বোমা বা নিউক্লিয় পাওয়ার প্লান্টে যে বল কাজ করে তাতে সবল নিউক্লিয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বল কাজ করে।
যদি কোন বস্ত্ত মানুষের কোন ক্ষতি করে বুঝতে হবে এই চারটি বলের কোন একটি বল কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ : কারো চামড়া যদি এসিডে পূড়ে যায়, তবে সেখানে তাড়িতচৌম্বক বল কাজ করছে। কারো উপর ভারী কিছু পড়লে সেখানে মহাকর্ষ বল কাজ করছে। কোথাও পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে সেখানে নিউক্লিয়ার বল কাজ করছে ইত্যাদি।
এবার আসুন আমরা দেখি গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য যে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে বলে জ্যোতিষীরা যে দাবী করে তা বৈজ্ঞানিকভাবে কতটুকু সত্য?
গ্রহ, নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র রয়েছে যা তার সোলার সিস্টেমের বাইরে কাজ করে না। দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে মহাকর্ষ বল দুর্বল হয়ে পড়ে। বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায় যে, মানুষের মাথার মুকুটের ভর মাথার উপর যে বল ক্রিয়া করে তার তুলনায়ও গ্রহ, নক্ষত্রের প্রভাব অত্যন্ত নগণ্য। তাই বলা যায় যে, গ্রহ, নক্ষত্রের মহাকর্ষ বল মানব জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না। এবার দেখা যাক গ্রহ, নক্ষত্রের তাড়িতচৌম্বক বলের প্রভাব অর্থাৎ আলোক রশ্মির প্রভাব। মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম হ’ল সাইরাস। সাইরাস হ’তে আগত আলোক রশ্মি মানুষের চোখে যে প্রভাব ফেলে তা জোনাকির আলোর চাইতেও নগণ্য।
তাই বলা যায়, গ্রহ, নক্ষত্র যদি মানুষের জীবনে কোনরূপ প্রভাব বিস্তার করার সামর্থ্য রাখত তবে মুকুট আর জোনাকি তার চেয়ে অনেক বেশী প্রভাব বিস্তার করতে পারত। তাই গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ অনুসারে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া স্রেফ প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।[2] চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রসমূহের কাজ কি তা কুরআনের আয়াতের সাথে বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত তথ্যের কোন পার্থক্য নেই। যেমন সূর্য পৃথিবীতে আলো, তাপশক্তি, বিভিন্ন ধরনের তরংগ প্রেরণ করে, সূর্য-চন্দ্র বছর গণনায় সহায়তা করে, আবার চন্দ্রের কারণে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা হয়। জ্যোতিষরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য পুর্ণিমা এবং অমাবস্যার রাতের ভয়াবহতা উল্লেখ করে সমুদ্রের জোয়ারের উত্তালতা এবং ভাটার নীরবতার উদাহরণ পেশ করে।
অথচ সূর্য, চন্দ্র এবং পৃথিবী একই সমতলে আসার কারণে সমুদ্রের একাংশে জোয়ার বেড়ে যায় অপর অংশে ভাটা তৈরী হয়। উপরোক্ত আলোচনা হ’তে আমরা বলতে পারি যে, জ্যোতিষ বিদ্যার কোন ভিত্তি নেই এবং সম্পূর্ণ বানোয়াট যা স্রেফ মানুষের সাথে প্রতারণা করে। এই ভ্রান্তদের জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তিনি কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন? বস্ত্ততঃ তিনি অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছু সম্যক অবহিত’ (মুলক ৬৭/১৪)।
তারা চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্র সম্পর্কে এমন তথ্য পেশ করে যা সম্পর্কে এগুলোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা তার নাযিলকৃত গ্রন্থে কিছুই বলেননি।
এছাড়া আরোও কিছু Pseudoscience এর উদাহরণ হ’ল: Chiropractic, Conversion Therapy, Homeopathy
৩.Astro-Palmistry বা হস্তরেখায় ভাগ্য গণনা : মানুষের হস্ত রেখার সাহায্যে ব্যক্তির আয়ু, সংকট, দুর্ঘটনা, মৃত্যু, সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি কথিত পদ্ধতির নাম হ’ল Astro-Palmistry। এটি কোত্থেকে কিভাবে চালু হয়েছে এর কোন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় প্রাচীন ভারতে এই পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। এরপর তা চীন, তিববত, শাম, মিশর এবং গ্রীসে ছড়িয়ে পড়ে। ২৫০০ বছর আগে এরিস্টটল তার (De Historia Animalium (History of Animals) বইয়ে লিখেন- ‘হাতের রেখাগুলো কোন কারণ ছাড়া লেখা হয়নি’। এরিস্টটল সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিল। তার ধারণা এই হাতের রেখার কোন অর্থ থাকতে পারে কিন্তু তিনি বলেননি যে, এর দ্বারা মানুষের ভবিষ্যৎ বলা যাবে। যারা এই হস্তরেখা দিয়ে মানুষের ভাগ্য গণনা করে তার এর কোন ভিত্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা এভাবে হস্তরেখা দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
এবার আসুন আমরা দেখব হাতের এই রেখাসমূহের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি? প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিজ্ঞানীরা বলেন যে, একজন মা গর্ভবতী হওয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর হাতের রেখা গঠিত হয়। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, হাতের রেখাগুলো মূলতঃ হাতের তালুর চামড়া ভাজ করতে, চেপে ধরতে এবং প্রসারিত করতে সহায়তা করে। অধিকাংশ মানুষের তিন ধরনের রেখা থাকে। এছাড়া কারো হাতের তালুতে ছোট ছোট রেখার সংখ্যা কমবেশী যা মূলতঃ বংশগতি বা জীনতত্ত্বের উপর নির্ভর করে।[3]
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে এটা বলা যায় যে, হাতের রেখা দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার দাবী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত যা কুরআন দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এবং বিজ্ঞান দ্বারাও প্রত্যাখ্যাত।
৪. Telepathy(টেলিপ্যাথি) : শব্দটি দু’টি গ্রীক শব্দ têle (দূরত্ব) এবং páthos (অনুভূতি) হ’তে আগত। এর সংজ্ঞা হ’ল : একজন ব্যক্তির অন্তর বা মস্তিষ্ক হ’তে অপর ব্যক্তির অন্তর বা মস্তিষ্কে কোন ধরনের মাধ্যমের সাহায্য ছাড়া তথ্য বা সিগনাল প্রেরণ করার সিস্টেম কে টেলিপ্যাথি বলে। এই টেলিপ্যাথি শব্দটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন ১৮৮২ সালে Frederic W. H. Myers তিনি ছিলেন Society for Psychical Research এর প্রতিষ্ঠাতা।[4]
বিভিন্ন গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন যে, টেলিপ্যাথি যে বিদ্যমান এর কোন প্রমাণ নেই এবং এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অর্থাৎ মানুষ চাইলে তার অন্তর হ’তে আরেকজনের অন্তরে কোন সিগন্যাল বা তথ্য প্রেরণ করতে পারে না।
এবার আমরা দেখি ইসলামে এর অবস্থান কি?
নাফে‘ (রহঃ) বলেন, ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) একটি সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন যার আমীর ছিলেন সারিয়াহ। একদিন ওমর (রাঃ) জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার সময় বললেন, "ও সারিয়াহ! পাহাড়ের দিকে, ও সারিয়াহ! পাহাড়ের দিকে"। সারিয়াহ তৎক্ষণাৎ তার বাহিনী নিয়ে পাহাড়ের দিকে গমন করল। যদিও মদীনা থেকে ঐ স্থানের দূরুত্ব ১ মাসের অধিক।[5]
এখানে ওমর (রাঃ) কোন মাধ্যমের সাহায্য ছাড়ায় সারিয়াহর নিকট সংবাদ প্রেরণ করল। ইসলামী পরিভাষায় এই ধরনের তথ্য প্রেরণকে বলা হয় কাশফ এবং এই ঘটনাকে বলা হয় কারামাহ (আল্লাহ তার কোন বান্দাকে দিয়ে এমন কিছু ঘটান যা ঐ বান্দার সাধ্যের অতীত)। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই ঘটনার নাম হচ্ছে টেলিপ্যাথি। অর্থাৎ ইসলাম টেলিপ্যাথিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে না। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে এরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষের এর উপর কোন নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তবে ইসলামের নির্দেশ এবং বিজ্ঞানের গবেষণা একই তথ্য প্রকাশ করছে যে, একজন মানুষের পক্ষে নিজ ইচ্ছায় একজনের অন্তর হ’তে অন্যজনের অন্তরে কোন ধরনের সিগন্যাল বা তথ্য প্রেরণ সম্ভব নয়।
৫. Clairvoyance (ক্লেয়ারভয়েন্স) : দু’টি ফ্রেঞ্চ শব্দ clair (পরিষ্কার), voyance (দৃষ্টি) হ’তে আগত। এর সংজ্ঞায় বলা হয় যে, এটি একটি যাদুকরী বিদ্যা। যার সাহায্যে যেকোন বস্ত্ত, ব্যক্তি বা স্থান সম্পর্কে যেকোন তথ্য দেওয়া যাবে।[6]
যারা এই ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত তারা দাবী করে যে, এই বিদ্যার সাহায্যে মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবে। কিন্তু তারা কিসের ভিত্তিতে তা করবে এর কোন প্রমাণাদি পেশ করতে পারেনি। তাদের দাবী এটি তাদের বিশেষ ক্ষমতা। আমাদের সমাজে হাযিরা দেখা, গণক, জ্যোতিষ, বিভিন্ন ধরনের পীর-ফকীর এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
বিজ্ঞান অনুসারে Clairvoyance-কে বলা হয় প্রতারণা, হ্যালুসিনেশন, আত্ম-ভ্রম, ইচ্ছাকৃত চিন্তা-ভাবনা। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন ভিত্তি নেই।[7]
বিজ্ঞানী ডেভিড জি মেয়ারস Clairvoyance-এর ভিত্তি প্রমাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি এর উপর কয়েক হাযার পরীক্ষণ করেন। এতে দেখেন যে, কারো পক্ষে এই Clairvoyance-এর দ্বারা কোন ঘটনা সম্পর্কে না জেনে সে সম্পর্কে সঠিক উত্তর প্রদান করা সম্ভব হয়নি।[8] অতএব আমরা গবেষকদের তথ্যের আলোকে বলতে পারি Clairvoyance (গণক, জ্যোতিষ, হাযিরা দেখা, পীর-ফকীর) দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার দাবী একেবারেই ভ্রান্ত।
৬. Extrasensory perception বা ESPবা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় :
এটি একটি দাবীকৃত অলৌকিক ক্ষমতা যা স্বীকৃত শারীরিক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অর্জিত নয়, বরং মনের দ্বারা অদৃশ্যের তথ্য গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত।
আমরা জানি, পঞ্চ-ইন্দ্রিয় হ’ল স্বাদ, দেখা, শোনা, স্পর্শ এবং ঘ্রাণ। ধরুন, আমরা কোন রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি তখন আমাদের নাকে কোন কিছুর ঘ্রাণ আসল বা কানে কোন কিছুর শব্দ আসল তখন আমরা ঘ্রাণ শুকে বা শব্দ শুনে বুঝে নিতে পারি তা কিসের ঘ্রাণ বা কিসের শব্দ। যারা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির দাবী করে তারা কেবল অন্তর দিয়ে যেকোন কিছু সম্পর্কে বলে দিতে পারবে।
এইবার আমরা দেখব গবেষকরা কি বলে? ১৯৩০ সালে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে বি রাইম ও তার স্ত্রী লুইসা ই রাইম ESP-এর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিছু কার্ড তৈরী করেন যা জেনার কার্ড নামে পরিচিত। এর দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় যে, কারো নিকট ESP ক্ষমতা আছে কি-না এবং এর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যৎ বলতে পারে কি-না। শেষ পর্যন্ত তারা ফলাফল প্রকাশ করেছে যে, ESP বা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কোন অস্তিত্ব নেই।[9]
আমরা উপরে জ্যোতির্বিদ্যা, Telepathy, হস্তরেখা, Clairvoyance এবং ESP সম্পর্কে আলোচনা পেশ করেছি। বিজ্ঞানীদের গবেষণা হ’তে আমরা জানতে পারলাম যে, মানুষের পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানা সম্ভব নয়। যারা উপরোক্ত পদ্ধতিতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে পারে বলে যে দাবী করে তার কোন ভিত্তি নেই এবং তা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের সমাজে যত জ্যোতিষ, গণক, পীর-ফকীর রয়েছে এরা সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-নক্ষেত্রের নাম করে, হাত দেখার নাম করে, ধ্যান করার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে বিকারগস্ত করছে।
আমরা শুরুতে আল-কুরআনের দু’টি আয়াত উল্লেখ করেছি যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানে না। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণা কুরআনকেই মেনে নিল। কুরআনে এই সংক্রান্ত আরো আয়াত রয়েছে এবং এই সংক্রান্ত হাদীসও রয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي
نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ،
‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে ক্বিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন মায়ের গর্ভাশয়ে কি আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে খবর রাখেন’ (লোকমান ৩১/৩৪)।
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
গায়েবের চাবি হ’ল পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। (১) কেউ জানে না যে, আগামীকাল কী ঘটবে। (২) কেউ জানে না যে, আগামীকাল সে কী অর্জন করবে। (৩) কেউ জানে না যে, মায়ের গর্ভে কী আছে। (৪) কেউ জানে না যে, সে কোথায় মারা যাবে। (৫) কেউ জানে না যে, কখন বৃষ্টি হবে’।[10]
অতএব আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে জানা সম্ভব না কারো উপর কি বিপদ আসবে, গর্ভে সন্তান ছেলে আসবে না মেয়ে আসবে, বৃষ্টি কখন হবে, কখন মৃত্যুবরণ করবে ইত্যাদি।
আমাদের অনেক মুসলিম ভাই-বোন কুরআনের নির্দেশ জানার পরও বিভিন্ন পীর-ফকীর, জ্যোতিষ, গণকের নিকট যাচ্ছে হাযিরা দেখার জন্য, আয় বৃদ্ধির জন্য, সংসারে শান্তির জন্য, গর্ভবতী হওয়ার জন্য। তাদের জন্য এই প্রবন্ধে এই আহবান করা হচ্ছে যে, এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো আপনার ঈমান নষ্ট করে ফেলছে। পাশাপাশি যেসকল অমুসলিম এগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন তাদের নিকটও একই আহবান এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এরা কেবল আপনাদের সাথে প্রতারণা করে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে।
তাই সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান নিজেদের দুনিয়ার জীবন এবং পরকালের জীবনকে সুন্দর করার জন্য পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অনুসরণ করুন।
[1]. Causality and Modern Science. Nature. Vol. 187 (3, revised ed.) (published 2012). pp. 123–124.
[2]. Dr. Christopher S. Baied, space, 13 march, 2013.
[3]. Adesola Ayo Aderele, Punch, 30th march, 2017.
[4]. Hamilton, Trevor (2009).
[5]. ফাযায়েলে সাহাবা, ১/২৬৯, সিলসিলা সহীহাহ হা/১১১০।
[6]. Merriam-Webster Dictionary, February 22, 2022.
[7]. Carroll, Robert Todd. (2003), Clairvoyance, 2014-04-30.
[8]. Psychology, 8th edition.
[9]. A Skeptic's Handbook of Parapsychology. Prometheus Books. pp. 105–127.
[10]. বুখারী হা/১০৩৯।
বিজ্ঞানের ভাষায় অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যৎ জানা এই জ্ঞানকে বলা হয় Precognition, যা দু’টি ল্যাটিন শব্দ prae (পূর্বে) এবং cognitio (অর্জিত জ্ঞান) হ’তে আগত। প্রাচীনকাল হ’তে মানুষের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে, মানুষের পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানা সম্ভব। কিন্তু সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কারো পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যৎ জানা সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন,
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ وَمَا يَشْعُرُوْنَ أَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ،
‘তুমি বল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্যের খবর কেউ রাখে না আল্লাহ ব্যতীত। আর তারা বুঝতেই পারবে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে’ (নামাল ২৭/৬৫)।
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا
‘তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারু নিকট প্রকাশ করেন না’ (জিন ৭২/২৬)।
উক্ত আয়াতগুলোতে ঘোষণা করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ অদৃশ্যের খবর জানেন না। এখন প্রশ্ন হ’ল অদৃশ্যের খবর কি?
অদৃশ্য হ’ল যা আমাদের পক্ষে চাক্ষুস জানা বা দেখা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, কবরের আযাব, জান্নাত, জাহান্নাম, ভবিষ্যতে কি হবে এরূপ আরো অনেক বিষয় যা মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এখন আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের পক্ষে ভবিষ্যৎ দেখা বা জানা সম্ভব কি-না এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কি বলে?
ধরে নিলাম, মানুষ ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে বা জানতে পারবে। এখন প্রশ্ন হ’ল তারা কি প্রক্রিয়ায় জানতে পারবে? এখন বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যৎ জানা সম্পর্কে যে গবেষণা করেছেন এবং সে সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করব।
১.Theory of Causality: ভবিষ্যতের কোন ঘটনা, প্রক্রিয়া, অবস্থা যদি বর্তমান কোন ঘটনা, প্রক্রিয়া বা অবস্থার উপর আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয় তবে ভবিষ্যতের ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলা যাবে তাকে Theory of Causality বলে।[1] যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হ’ল প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বলা যাবে ফেব্রুয়ারী মাসের এই এই তারিখ তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে অর্থাৎ ভবিষ্যতের একটি ঘটনা বলে দেওয়া গেল।
Theory of Causality অনুসারে গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে, ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার তাবলীগী ইজতেমার ঘটনাটি ঘটবে। এখন প্রশ্ন হ’ল, এটি কুরআনের আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে কি-না? প্রদত্ত আয়াতে বলা হয়েছে অদৃশ্যের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু উক্ত ঘটনাটি অদৃশ্য নয়; তা একটি সিদ্ধান্তের কারণে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ এই ঘটনার খবর দৃশ্যমান। তাই Theory of Causality কুরআনের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
২. Pseudoscience বা ছদ্ম বিজ্ঞান : এটি একটি প্রস্তাব, একটি অনুসন্ধান বা ব্যাখ্যা, যা বিজ্ঞান হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ এবং তথ্য-উপাত্ত অনুপস্থিত থাকে। এটির মূল ভিত্তি হ’ল বিশ্বাস। এটির কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, এটি স্রেফ বিশ্বাসের উপর ভবিষ্যতের খবর প্রদান করে। (Hansson SO (2008), "Science and Pseudoscience") যেহেতু এটির কোন প্রমাণ নেই এবং এর দ্বারা প্রদত্ত সংবাদ সত্যও হয় এবং মিথ্যাও হয়। তাই বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করেননি। Presudoscience-এর কিছু উদাহরণ :
(ক)Acupuncture (আকুপ্যাংচার থেরাপী) : এটি চীনের একটি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাদের দাবী এর দ্বারা মানুষের শরীরের শক্তির ব্যালেন্স হয়। কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তারা দেখাতে পারেনি। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি গৃহীত হয়নি।
(খ) Astrology (জ্যোতিষশাস্ত্র) : নক্ষত্রের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ বলার প্রক্রিয়াকে Astrology বলা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে এটি একটি মিথ্যা Presudoscience যা একটি অপ্রমাণিত ভিত্তির উপর নির্ভর করে মানুষের জন্মের সময় সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রের অবস্থানের অনুসারে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। এরা আগুন, বায়ু, পানি এবং পৃথিবীর সাথে চন্দ্র, সূর্য এবং নক্ষত্রের সম্পর্ক স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করে। সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে মানুষের ভবিষ্যতের দূরতমও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রসমূহ সৃষ্টির উদ্দশ্যে সমূহ বর্ণনা করেছেন। বিজ্ঞানীরা কুরআনের আয়াতের অনুরূপ তথ্য প্রদান করেছেন যে, এগুলোর সাথে ভবিষ্যৎ জানার কোন সম্পর্ক নেই।
বৈজ্ঞানিকভাবে কোন মানুষের ক্ষতি বলতে বুঝায় সে কোন কিছু দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হবে অর্থাৎ তার উপর বল প্রয়োগ করা হবে। মহাবিশ্বে চার ধরনের বলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যথা- তাড়িতচৌম্বক বল, মহাকর্ষ বল, সবল নিউক্লিয় বল, এবং দুর্বল নিউক্লিয়। চিরুনী মাথায় ঘষে ছোট কাগজের টুকরোর উপরে ধরলে তা কাগজকে আকর্ষণ করে। এই বল হ’ল তাড়িতচৌম্বক বল। কোন ভারী কিছুকে ছেড়ে তা মাটিতে গিয়ে পড়ে অর্থাৎ যে বলের কারণে তা মাটিতে পড়ে তা মহাকর্ষ বল। পারমাণবিক বোমা বা নিউক্লিয় পাওয়ার প্লান্টে যে বল কাজ করে তাতে সবল নিউক্লিয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বল কাজ করে।
যদি কোন বস্ত্ত মানুষের কোন ক্ষতি করে বুঝতে হবে এই চারটি বলের কোন একটি বল কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ : কারো চামড়া যদি এসিডে পূড়ে যায়, তবে সেখানে তাড়িতচৌম্বক বল কাজ করছে। কারো উপর ভারী কিছু পড়লে সেখানে মহাকর্ষ বল কাজ করছে। কোথাও পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে সেখানে নিউক্লিয়ার বল কাজ করছে ইত্যাদি।
এবার আসুন আমরা দেখি গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য যে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে বলে জ্যোতিষীরা যে দাবী করে তা বৈজ্ঞানিকভাবে কতটুকু সত্য?
গ্রহ, নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র রয়েছে যা তার সোলার সিস্টেমের বাইরে কাজ করে না। দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে মহাকর্ষ বল দুর্বল হয়ে পড়ে। বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায় যে, মানুষের মাথার মুকুটের ভর মাথার উপর যে বল ক্রিয়া করে তার তুলনায়ও গ্রহ, নক্ষত্রের প্রভাব অত্যন্ত নগণ্য। তাই বলা যায় যে, গ্রহ, নক্ষত্রের মহাকর্ষ বল মানব জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না। এবার দেখা যাক গ্রহ, নক্ষত্রের তাড়িতচৌম্বক বলের প্রভাব অর্থাৎ আলোক রশ্মির প্রভাব। মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম হ’ল সাইরাস। সাইরাস হ’তে আগত আলোক রশ্মি মানুষের চোখে যে প্রভাব ফেলে তা জোনাকির আলোর চাইতেও নগণ্য।
তাই বলা যায়, গ্রহ, নক্ষত্র যদি মানুষের জীবনে কোনরূপ প্রভাব বিস্তার করার সামর্থ্য রাখত তবে মুকুট আর জোনাকি তার চেয়ে অনেক বেশী প্রভাব বিস্তার করতে পারত। তাই গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ অনুসারে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া স্রেফ প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।[2] চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রসমূহের কাজ কি তা কুরআনের আয়াতের সাথে বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত তথ্যের কোন পার্থক্য নেই। যেমন সূর্য পৃথিবীতে আলো, তাপশক্তি, বিভিন্ন ধরনের তরংগ প্রেরণ করে, সূর্য-চন্দ্র বছর গণনায় সহায়তা করে, আবার চন্দ্রের কারণে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা হয়। জ্যোতিষরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য পুর্ণিমা এবং অমাবস্যার রাতের ভয়াবহতা উল্লেখ করে সমুদ্রের জোয়ারের উত্তালতা এবং ভাটার নীরবতার উদাহরণ পেশ করে।
অথচ সূর্য, চন্দ্র এবং পৃথিবী একই সমতলে আসার কারণে সমুদ্রের একাংশে জোয়ার বেড়ে যায় অপর অংশে ভাটা তৈরী হয়। উপরোক্ত আলোচনা হ’তে আমরা বলতে পারি যে, জ্যোতিষ বিদ্যার কোন ভিত্তি নেই এবং সম্পূর্ণ বানোয়াট যা স্রেফ মানুষের সাথে প্রতারণা করে। এই ভ্রান্তদের জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
‘তিনি কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন? বস্ত্ততঃ তিনি অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছু সম্যক অবহিত’ (মুলক ৬৭/১৪)।
তারা চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্র সম্পর্কে এমন তথ্য পেশ করে যা সম্পর্কে এগুলোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা তার নাযিলকৃত গ্রন্থে কিছুই বলেননি।
এছাড়া আরোও কিছু Pseudoscience এর উদাহরণ হ’ল: Chiropractic, Conversion Therapy, Homeopathy
৩.Astro-Palmistry বা হস্তরেখায় ভাগ্য গণনা : মানুষের হস্ত রেখার সাহায্যে ব্যক্তির আয়ু, সংকট, দুর্ঘটনা, মৃত্যু, সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি কথিত পদ্ধতির নাম হ’ল Astro-Palmistry। এটি কোত্থেকে কিভাবে চালু হয়েছে এর কোন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় প্রাচীন ভারতে এই পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। এরপর তা চীন, তিববত, শাম, মিশর এবং গ্রীসে ছড়িয়ে পড়ে। ২৫০০ বছর আগে এরিস্টটল তার (De Historia Animalium (History of Animals) বইয়ে লিখেন- ‘হাতের রেখাগুলো কোন কারণ ছাড়া লেখা হয়নি’। এরিস্টটল সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিল। তার ধারণা এই হাতের রেখার কোন অর্থ থাকতে পারে কিন্তু তিনি বলেননি যে, এর দ্বারা মানুষের ভবিষ্যৎ বলা যাবে। যারা এই হস্তরেখা দিয়ে মানুষের ভাগ্য গণনা করে তার এর কোন ভিত্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা এভাবে হস্তরেখা দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
এবার আসুন আমরা দেখব হাতের এই রেখাসমূহের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি? প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিজ্ঞানীরা বলেন যে, একজন মা গর্ভবতী হওয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর হাতের রেখা গঠিত হয়। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, হাতের রেখাগুলো মূলতঃ হাতের তালুর চামড়া ভাজ করতে, চেপে ধরতে এবং প্রসারিত করতে সহায়তা করে। অধিকাংশ মানুষের তিন ধরনের রেখা থাকে। এছাড়া কারো হাতের তালুতে ছোট ছোট রেখার সংখ্যা কমবেশী যা মূলতঃ বংশগতি বা জীনতত্ত্বের উপর নির্ভর করে।[3]
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে এটা বলা যায় যে, হাতের রেখা দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার দাবী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত যা কুরআন দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এবং বিজ্ঞান দ্বারাও প্রত্যাখ্যাত।
৪. Telepathy(টেলিপ্যাথি) : শব্দটি দু’টি গ্রীক শব্দ têle (দূরত্ব) এবং páthos (অনুভূতি) হ’তে আগত। এর সংজ্ঞা হ’ল : একজন ব্যক্তির অন্তর বা মস্তিষ্ক হ’তে অপর ব্যক্তির অন্তর বা মস্তিষ্কে কোন ধরনের মাধ্যমের সাহায্য ছাড়া তথ্য বা সিগনাল প্রেরণ করার সিস্টেম কে টেলিপ্যাথি বলে। এই টেলিপ্যাথি শব্দটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন ১৮৮২ সালে Frederic W. H. Myers তিনি ছিলেন Society for Psychical Research এর প্রতিষ্ঠাতা।[4]
বিভিন্ন গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন যে, টেলিপ্যাথি যে বিদ্যমান এর কোন প্রমাণ নেই এবং এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অর্থাৎ মানুষ চাইলে তার অন্তর হ’তে আরেকজনের অন্তরে কোন সিগন্যাল বা তথ্য প্রেরণ করতে পারে না।
এবার আমরা দেখি ইসলামে এর অবস্থান কি?
নাফে‘ (রহঃ) বলেন, ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) একটি সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন যার আমীর ছিলেন সারিয়াহ। একদিন ওমর (রাঃ) জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার সময় বললেন, "ও সারিয়াহ! পাহাড়ের দিকে, ও সারিয়াহ! পাহাড়ের দিকে"। সারিয়াহ তৎক্ষণাৎ তার বাহিনী নিয়ে পাহাড়ের দিকে গমন করল। যদিও মদীনা থেকে ঐ স্থানের দূরুত্ব ১ মাসের অধিক।[5]
এখানে ওমর (রাঃ) কোন মাধ্যমের সাহায্য ছাড়ায় সারিয়াহর নিকট সংবাদ প্রেরণ করল। ইসলামী পরিভাষায় এই ধরনের তথ্য প্রেরণকে বলা হয় কাশফ এবং এই ঘটনাকে বলা হয় কারামাহ (আল্লাহ তার কোন বান্দাকে দিয়ে এমন কিছু ঘটান যা ঐ বান্দার সাধ্যের অতীত)। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই ঘটনার নাম হচ্ছে টেলিপ্যাথি। অর্থাৎ ইসলাম টেলিপ্যাথিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে না। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে এরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষের এর উপর কোন নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তবে ইসলামের নির্দেশ এবং বিজ্ঞানের গবেষণা একই তথ্য প্রকাশ করছে যে, একজন মানুষের পক্ষে নিজ ইচ্ছায় একজনের অন্তর হ’তে অন্যজনের অন্তরে কোন ধরনের সিগন্যাল বা তথ্য প্রেরণ সম্ভব নয়।
৫. Clairvoyance (ক্লেয়ারভয়েন্স) : দু’টি ফ্রেঞ্চ শব্দ clair (পরিষ্কার), voyance (দৃষ্টি) হ’তে আগত। এর সংজ্ঞায় বলা হয় যে, এটি একটি যাদুকরী বিদ্যা। যার সাহায্যে যেকোন বস্ত্ত, ব্যক্তি বা স্থান সম্পর্কে যেকোন তথ্য দেওয়া যাবে।[6]
যারা এই ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত তারা দাবী করে যে, এই বিদ্যার সাহায্যে মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবে। কিন্তু তারা কিসের ভিত্তিতে তা করবে এর কোন প্রমাণাদি পেশ করতে পারেনি। তাদের দাবী এটি তাদের বিশেষ ক্ষমতা। আমাদের সমাজে হাযিরা দেখা, গণক, জ্যোতিষ, বিভিন্ন ধরনের পীর-ফকীর এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
বিজ্ঞান অনুসারে Clairvoyance-কে বলা হয় প্রতারণা, হ্যালুসিনেশন, আত্ম-ভ্রম, ইচ্ছাকৃত চিন্তা-ভাবনা। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন ভিত্তি নেই।[7]
বিজ্ঞানী ডেভিড জি মেয়ারস Clairvoyance-এর ভিত্তি প্রমাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি এর উপর কয়েক হাযার পরীক্ষণ করেন। এতে দেখেন যে, কারো পক্ষে এই Clairvoyance-এর দ্বারা কোন ঘটনা সম্পর্কে না জেনে সে সম্পর্কে সঠিক উত্তর প্রদান করা সম্ভব হয়নি।[8] অতএব আমরা গবেষকদের তথ্যের আলোকে বলতে পারি Clairvoyance (গণক, জ্যোতিষ, হাযিরা দেখা, পীর-ফকীর) দ্বারা ভবিষ্যৎ বলার দাবী একেবারেই ভ্রান্ত।
৬. Extrasensory perception বা ESPবা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় :
এটি একটি দাবীকৃত অলৌকিক ক্ষমতা যা স্বীকৃত শারীরিক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অর্জিত নয়, বরং মনের দ্বারা অদৃশ্যের তথ্য গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত।
আমরা জানি, পঞ্চ-ইন্দ্রিয় হ’ল স্বাদ, দেখা, শোনা, স্পর্শ এবং ঘ্রাণ। ধরুন, আমরা কোন রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি তখন আমাদের নাকে কোন কিছুর ঘ্রাণ আসল বা কানে কোন কিছুর শব্দ আসল তখন আমরা ঘ্রাণ শুকে বা শব্দ শুনে বুঝে নিতে পারি তা কিসের ঘ্রাণ বা কিসের শব্দ। যারা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির দাবী করে তারা কেবল অন্তর দিয়ে যেকোন কিছু সম্পর্কে বলে দিতে পারবে।
এইবার আমরা দেখব গবেষকরা কি বলে? ১৯৩০ সালে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে বি রাইম ও তার স্ত্রী লুইসা ই রাইম ESP-এর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিছু কার্ড তৈরী করেন যা জেনার কার্ড নামে পরিচিত। এর দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় যে, কারো নিকট ESP ক্ষমতা আছে কি-না এবং এর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যৎ বলতে পারে কি-না। শেষ পর্যন্ত তারা ফলাফল প্রকাশ করেছে যে, ESP বা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কোন অস্তিত্ব নেই।[9]
আমরা উপরে জ্যোতির্বিদ্যা, Telepathy, হস্তরেখা, Clairvoyance এবং ESP সম্পর্কে আলোচনা পেশ করেছি। বিজ্ঞানীদের গবেষণা হ’তে আমরা জানতে পারলাম যে, মানুষের পক্ষে অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানা সম্ভব নয়। যারা উপরোক্ত পদ্ধতিতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে পারে বলে যে দাবী করে তার কোন ভিত্তি নেই এবং তা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের সমাজে যত জ্যোতিষ, গণক, পীর-ফকীর রয়েছে এরা সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-নক্ষেত্রের নাম করে, হাত দেখার নাম করে, ধ্যান করার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে বিকারগস্ত করছে।
আমরা শুরুতে আল-কুরআনের দু’টি আয়াত উল্লেখ করেছি যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ অদৃশ্যের খবর বা ভবিষ্যতের খবর জানে না। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণা কুরআনকেই মেনে নিল। কুরআনে এই সংক্রান্ত আরো আয়াত রয়েছে এবং এই সংক্রান্ত হাদীসও রয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي
نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ،
‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে ক্বিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন মায়ের গর্ভাশয়ে কি আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে খবর রাখেন’ (লোকমান ৩১/৩৪)।
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مِفْتَاحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ اللهُ لاَ يَعْلَمُ أَحَدٌ مَا يَكُونُ فِى غَدٍ، وَلاَ يَعْلَمُ أَحَدٌ مَا يَكُونُ فِى الأَرْحَامِ، وَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا، وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ، وَمَا يَدْرِى أَحَدٌ مَتَى يَجِىءُ الْمَطَرُ
গায়েবের চাবি হ’ল পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। (১) কেউ জানে না যে, আগামীকাল কী ঘটবে। (২) কেউ জানে না যে, আগামীকাল সে কী অর্জন করবে। (৩) কেউ জানে না যে, মায়ের গর্ভে কী আছে। (৪) কেউ জানে না যে, সে কোথায় মারা যাবে। (৫) কেউ জানে না যে, কখন বৃষ্টি হবে’।[10]
অতএব আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে জানা সম্ভব না কারো উপর কি বিপদ আসবে, গর্ভে সন্তান ছেলে আসবে না মেয়ে আসবে, বৃষ্টি কখন হবে, কখন মৃত্যুবরণ করবে ইত্যাদি।
আমাদের অনেক মুসলিম ভাই-বোন কুরআনের নির্দেশ জানার পরও বিভিন্ন পীর-ফকীর, জ্যোতিষ, গণকের নিকট যাচ্ছে হাযিরা দেখার জন্য, আয় বৃদ্ধির জন্য, সংসারে শান্তির জন্য, গর্ভবতী হওয়ার জন্য। তাদের জন্য এই প্রবন্ধে এই আহবান করা হচ্ছে যে, এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো আপনার ঈমান নষ্ট করে ফেলছে। পাশাপাশি যেসকল অমুসলিম এগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন তাদের নিকটও একই আহবান এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এরা কেবল আপনাদের সাথে প্রতারণা করে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে।
তাই সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান নিজেদের দুনিয়ার জীবন এবং পরকালের জীবনকে সুন্দর করার জন্য পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অনুসরণ করুন।
[1]. Causality and Modern Science. Nature. Vol. 187 (3, revised ed.) (published 2012). pp. 123–124.
[2]. Dr. Christopher S. Baied, space, 13 march, 2013.
[3]. Adesola Ayo Aderele, Punch, 30th march, 2017.
[4]. Hamilton, Trevor (2009).
[5]. ফাযায়েলে সাহাবা, ১/২৬৯, সিলসিলা সহীহাহ হা/১১১০।
[6]. Merriam-Webster Dictionary, February 22, 2022.
[7]. Carroll, Robert Todd. (2003), Clairvoyance, 2014-04-30.
[8]. Psychology, 8th edition.
[9]. A Skeptic's Handbook of Parapsychology. Prometheus Books. pp. 105–127.
[10]. বুখারী হা/১০৩৯।
সূত্র: আত-তাহরীক।
Last edited: