বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাত আসমান এবং অনুরূপ সংখ্যক পৃথিবী
আল্লাহ রাববুল আলামীন পৃথিবীকে বিচিত্র ধারায় সৃষ্টি করেছেন। সাত আসমানের মত পৃথিবীরও যে সাতটি স্তর রয়েছে, তা বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে পেশ করা হ’ল।-
পৃথিবীর সাত স্তর
আল্লাহ বলেন,
‘আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও সেইরূপ। এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়। যাতে তোমরা জানো যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী। আর আল্লাহ সবকিছুকে তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন’ (তালাক ৬৫/১২)।
সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
‘যে ব্যক্তি কারো জমির কিছু অংশ যুলূম করে কেড়ে নেয়, ক্বিয়ামতের দিন এর সাত তবক যমীন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে’।[1]
উক্ত আয়াতে سَمٰوٰتٍ বহুবচন এবং الأَرْض একবচন। তাই এখানে আসমান সাতটি হ’লেও পৃথিবী একটিই বুঝাচ্ছে। পৃথিবী তাদের অনুরূপ বলতে বুঝানো হচ্ছে আসমানসমূহ যেভাবে সজ্জিত ঠিক সেভাবে পৃথিবীও সজ্জিত। অর্থাৎ একটির উপর একটি আসমান যেভাবে সজ্জিত ঠিক তদ্রূপ পৃথিবীও ৭টি স্তরে সজ্জিত।
পরবর্তী হাদীসে এর সমর্থন পাওয়া যায়। উক্ত হাদীসে طُوِّقَ শব্দটি এসেছে যার অর্থ রিং, ফ্রেম। উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় সাত আসমানের মত পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় পৃথিবীর উপরিভাগ হ’তে কেন্দ্র পর্যন্ত সাতটি স্তরের পরিচয় পাওয়া যায়। যা নিম্নরূপ :
পৃথিবী প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত : ভূ-ত্বক, আবরণ ও কেন্দ্রস্থল। বায়ুমন্ডল নামে একটি গ্যাসীয় ঢাকনা পৃথিবীর সাথে মধ্যাকর্ষণীয়ভাবে সংযুক্ত এবং এটি পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবরণ আবার তিনটি উপস্তরে বিভক্ত : লিথোস্ফেয়ার, এস্থেনোস্ফেয়ার এবং মেসোস্ফেয়ার। কেন্দ্রস্থলও দু’টি উপস্তরে বিভক্ত। যথা- বহিঃকেন্দ্র এবং অন্তঃকেন্দ্র। কাজেই পৃথিবী মোট সাতটি স্তরে বিভক্ত : (১) বায়ুমন্ডল, (২) ভূ-ত্বক, (৩) লিথোস্ফেয়ার, (৪) এস্থেনোস্ফেয়ার, (৫) মেসোস্ফেয়ার, (৬) বহিঃকেন্দ্র এবং (৭) অন্তঃকেন্দ্র।
১. বায়ুমন্ডল (Atmosphere) : এটি হচ্ছে পৃথিবীর বহিঃস্তর। পৃথিবী পৃষ্ঠের ৫০০ কি. মি. উচ্চতা পর্যন্ত এ স্তরটি বিস্তৃত। ঐ উচ্চতার উপরে বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহ এত কম যে তারা পরস্পরের সাথে সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলে।
২. ভূ-ত্বক (Crust) : এটি হচ্ছে পৃথিবীর বহিরাবরণী। পৃথিবীর আয়তনের মাত্র ০.৬% ভাগ নিয়ে এটি গঠিত। এর পুরুত্ব স্থানবিশেষে আলাদা হয়ে থাকে। যেমন মহাসাগরতলে মোটামুটি একই রকম ৫ কি.মি. পর্যন্ত গভীরে, মহাদেশীয় পৃষ্ঠের ৩৫ কি. মি. গভীর পর্যন্ত এবং হিমালয়, আলপস প্রভৃতি পর্বতমালার নীচে ৮০ কি. মি. পর্যন্ত গভীর।
৩. লিথোস্ফেয়ার (Lithosphere) : এটি হচ্ছে ভূত্বকের ঠিক নীচের স্তর। প্রায় ১০০ কি. মি. পুরু কঠিন পদার্থের একটা স্তর এটি। আমাদের এই গ্রহটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এ সত্যটি যে, লিথোস্ফেয়ার সহ ভূপৃষ্ঠটি বেশ কয়েকটি কঠিন লিথোস্ফেরিক ফলকে বিভক্ত। লিথোস্ফেয়ারের নীচেই রয়েছে গঠন কাঠামোগত একটা বিঘোষিত পরিবর্তন। এতে রয়েছে একটা সীমারেখা, যার নাম ‘মোহো’ বিরামহীনতা (Moho discontinuity)। এর নীচেই আবরণীর বাকী অংশ বিস্তৃত। পৃথিবীর আয়তনের ৮২% ভাগেরও অধিক স্থান জুড়ে রয়েছে এ স্তরটি।
৪. এস্থেনোস্ফেয়ার (Aesthenosphere) : এটি হচ্ছে চতুর্থ স্তর যা ১০০ কি. মি. থেকে ২৫০ কি. মি. গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলে আবরণী উষ্ণ, অপেক্ষাকৃত নমনীয়, পুরু এক পুডিং সাগরের মত গলিত। এটিই এস্থেনোস্ফেয়ার নামে পরিচিত। গুড় সদৃশ (reacly) এ স্তরটি এর উত্তল গতির দ্বারা কঠিন লিথোস্ফেরিক ফলকসমূহকে ভূগোলকের চারপাশে স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
৫. মেসোস্ফেয়ার (Mesosphere) : এ আবরণীর বাকী অংশ মেসোস্ফেয়ার নামে পরিচিত।
৬. বহিঃকেন্দ্র (Outer core) : এটি দুই হাযার একশ কি.মি. পুরু। তরল লৌহের সাথে সামান্য পরিমাণ গন্ধক (Sulphur) মেশানো পদার্থ দ্বারা এ স্তরটি গঠিত।
৭. অন্তঃকেন্দ্র : অন্তঃকেন্দ্রটির ব্যাসার্ধ ভূ-কেন্দ্রে ১ হাযার ৩৭০ কি. মি.। অন্তঃকেন্দ্রটি সম্ভবত কঠিন, এতে রয়েছে লৌহ এবং অন্যান্য ভারী পদার্থ।
অতএব প্রতীয়মান হয় যে, বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে কুরআনের আয়াতে বর্ণিত বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।[2]
আমরা ১ম আসমানে বসবাস করি এবং পৃথিবীর ১ম স্তরে বসবাস করি। পৃথিবীর অভ্যন্তরে মানুষ এখন পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানীরা Seismic Monitoring এর সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরসমূহ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে। Seismic monitoring হ’ল এমন পরিমাপক যার মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ পরিমাপ করা হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর দিয়ে যাওয়ার কারণে এর গতিবেগ নির্ণয় করা হয় এবং স্কেলের সূত্র ব্যবহার করে শব্দের প্রতিসরণের জন্য বিভিন্ন অংশের ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়। এই মান পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে ব্যবহার করে তাপমাত্রা এবং চাপের বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর পরিমাপ করা হয়।
বিজ্ঞানের বেশীরভাগ তথ্য প্রভাবের (Effects) উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করা হয়। বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে পৃথিবীর সাত স্তর সম্পর্কে এতটুকুই জানা যায়। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে এই সাত স্তর সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আরোও বিস্তারিত জানা যাবে এবং এর মাধ্যমে আল-কুরআন যে নিঃসন্দেহে আল্লাহর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব, তা সংশয়বাদীদের কাছে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
সাত আসমান :
আল্লাহ বলেন,
‘আর আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ’ (নাবা ৭৮/১২)।
আল্লাহ বলেন,
‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে যা আছে সবকিছু। অতঃপর তিনি মনঃসংযোগ করেন আকাশের দিকে। অতঃপর তাকে সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন। বস্ত্ততঃ তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৯)।
অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মুসলিম বিদ্বান সপ্ত আকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ মহাকাশকে সাতটি বিশাল অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। সেগুলো নিম্নরূপ :
প্রথম অঞ্চলে রয়েছে সূর্য, পৃথিবী ও পৃথিবীর মত গ্রহসমূহ যেমন- বুধ, শুক্র ও পৃথিবী। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৮ আলোক মিনিট (অর্থাৎ আলো এক মিনিটে যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
দ্বিতীয় অঞ্চলে রয়েছে সৌরজগৎ, যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আমাদের বহিঃস্থ গ্রহসমূহ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, গ্রহাণুপুঞ্জ, শনি, ইউরেনাস এবং প্লুটো। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৫ আলোক ঘণ্টা (আলো এক ঘণ্টায় যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
তৃতীয় অঞ্চলে রয়েছে সূর্যের বিশটির মত প্রতিবেশী। এই গোলকাকৃতি অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২০ আলোকবর্ষ (আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
চতুর্থ অঞ্চলে রয়েছে ছায়াপথ নক্ষত্রমন্ডলী। আগে এটাকে সমগ্র বিশ্বজগৎ বলে মনে করা হ’ত। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রায় ১০
কোটির মত ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া গেছে।
পঞ্চম অঞ্চলে রয়েছে ২০টির মত হালকা, ঢিলে-ঢালা আকৃতির বন্ধনযুক্ত একগুচ্ছ প্রতিবেশী নক্ষত্রমন্ডলী বা গ্যালাক্সি। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ।
ষষ্ঠ অঞ্চলে রয়েছে একগুচ্ছ স্থানীয় ছায়াপথ গোষ্ঠী। এটি স্থানীয় বৃহৎ গুচ্ছ (Local super-cluster) নামে পরিচিত। এটাই হচ্ছে বৃহত্তম মহাজাগতিক সৃষ্টিকর্ম। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ সাড়ে সাত কোটি আলোকবর্ষ।
সপ্তম অঞ্চল জুড়ে যা রয়েছে তাই আমাদের পরিচিত বিশ্বজগৎ। ছায়াপথের সকল বৃহৎ গুচ্ছই এর অন্তর্ভুক্ত। এর ভিতর আরো রয়েছে কোয়াসার (quasar) যা সমস্ত মহাজাগতিক বস্ত্তর মধ্যে সর্বাধিক কৌতুহল উদ্দীপক। দুই হাযার কোটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিশাল দূরত্ব জুড়ে সবদিকেই এরা ছড়িয়ে আছে।[3]
অনেকে মহাবিশ্বের বস্ত্তগুলোকে সাতটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন, যথা : ১. তারকারাজি, ২. গ্রহ-নক্ষত্র, ৩. উপগ্রহসমূহ, ৪. ধূমকেতুসমূহ, ৫. নীহারিকামন্ডলী. ৬ ছায়াপথ, ৭. কোয়াসার।
ডঃ মরিস বুকাইলি সপ্ত আকাশকে ব্যাখ্যা করেছেন এই বলে, ‘সাতটি মানে বহুত্ব ছাড়া আর কিছু না; কাজেই বহু আসমান আর বহু পৃথিবী রয়েছে। আমাদের পৃথিবীর মত মহাবিশ্বে আরো পৃথিবী পাওয়া যেতে পারে। এ এমন এক সত্য যা আমাদের সময়ে মানুষ কর্তৃক যাচাই করা হয়নি’।[4]
মিসরীয় বিদ্বান শেখ মুহাম্মদ আবদুহু আকাশমন্ডলী এবং এর বিস্ময়কর গঠন কাঠামোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাধারণ মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের সাহায্য নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আকাশমন্ডলী হচ্ছে আপনার মাথার উপরিস্থিত যা কিছু আছে। তাই আসমান বা আকাশমন্ডলী শব্দটি শ্রবণ করে আপনি ভাববেন মহাকাশের কথা, যেখানে আছে সূর্য, চন্দ্র এবং আপন আপন কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি। এটাই সেই আসমান যা আল্লাহ নির্মাণ করেছেন অর্থাৎ ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন এবং তিনিই প্রতিটি গ্রহ ও নক্ষত্রকে বলতে গেলে এক-একটি ইটের মত করে বানিয়েছেন যা আপনারা আপনাদেরই চারপাশের ছাদ, গম্বুজ কিংবা দেয়ালে দেখতে পান, আর তিনিই প্রতিটি গ্রহকে তার প্রতিবেশীদের সাথে সাধারণ মহাকর্ষ বলের দ্বারা বেঁধে দিয়েছেন ঠিক যেমন কোন ইমারতের প্রত্যেকটি অংশকে কিছু দ্রব্য স্থাপনের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে আটকানো হয়ে থাকে’।[5]
এবার আসুন! আমরা জানার চেষ্টা করি সপ্ত আকাশ সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন বিদ্বানগণ যে মত প্রকাশ করেছেন তা কতটুকু সঠিক?
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
‘...তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছলাম, তখন জিব্রীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোল। তিনি বললেন, কে? উত্তর দিলেন, আমি জিব্রীল, আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ (ﷺ)। তিনি আবার বললেন, তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যঁা। তারপর আসমান খোলা হ’লে আমরা দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) উঠলাম’।[6]
এছাড়া সহীহ মুসলিমে (হা/৩০৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসে ১ম আসমানে আদম (আঃ), ২য় আসমানে ঈসা এবং ইয়াহইয়া (আঃ), ৩য় আসমানে ইউসুফ (আঃ), ৪র্থ আসমানে ইদরীস (আঃ), ৫ম আসমানে হারুণ (আঃ), ৬ষ্ঠ আসমানে মূসা (আঃ) এবং ৭ম আসমানে ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয় জিব্রীল (আঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর।
আল্লাহ বলেন,
‘অতঃপর আকাশমন্ডলীকে সপ্ত আকাশে পরিণত করলেন দু’দিনে এবং প্রত্যেক আকাশে তার নির্দেশ প্রেরণ করলেন। আর আমরা দুনিয়ার আকাশকে নক্ষত্ররাজি দিয়ে সুশোভিত করলাম এবং তাকে করলাম (দুনিয়ার জন্য) সুরক্ষা ছাদ স্বরূপ। বস্ত্ততঃ এটি হ’ল মহা পরাক্রান্ত ও মহা বিজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা’ (ফুছছিলাত ৪১/১২)।
আল্লাহ বলেন,
‘যিনি সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে। দয়াময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন ত্রুটি দেখতে পাবে না। পুনরায় দৃষ্টি ফিরাও! তুমি কোন ফাটল দেখতে পাও কি?’ (মূলক ৬৭/৩)।
কুরআনের আয়াত এবং হাদীস হ’তে জানা গেল আমরা রয়েছি ১ম আসমানে। যাকে বলা হয় দুনিয়ার আসমান।
সপ্ত আকাশ সম্পর্কে উপরে বর্ণিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন বিদ্বানগণের তত্ত্ব কুরআনের আয়াত এবং সহীহ হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেককে দেখা যায় কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদীসের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য যেকোন ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন আয়াত বা হাদীসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা যাবে না।
কুরআন এবং হাদীস হ’তে জানা যায় যে, পৃথিবী দুনিয়ার আসমানে অবস্থিত। আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় কুরআনের আয়াত এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার আলোকে দেখিয়েছি যে, এই মহাবিশ্ব আল্লাহ তা‘আলা সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হ’ল, আমাদের ১ম আসমানের শেষসীমা কোথায়? বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর (Planck Collaboration (2016))। সেই হিসাবে মহাবিশ্বের দূরত্ব এখন পর্যন্ত ১৩.৮ বিলিয়ন আলোক বর্ষ বা প্রায় ১০২৬ মিটার পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রশ্ন হ’ল মহাবিশ্বের আয়তন কি অসীম? উত্তর হ’ল মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন যে, এই মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয় এবং দূরত্ব সর্বোচ্চ ৩৭ ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ হ’তে পারে।[7]
এক্ষণে সপ্ত আসমানের ব্যাখ্যা কি হবে? এর উত্তর হ’ল, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর নিকটতম আসমানের সঠিক তথ্যও এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করতে পারেনি। আর সপ্ত আকাশ তো বহু দূরের বিষয়।
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, বহু নক্ষত্রের আলো আজও আমাদের দৃষ্টিপথে আসেনি। নভোমন্ডলের বিভিন্ন রহস্য মানবজাতির কাছে এখনো অজানা রয়েছে। তাই সাত আসমানের স্তর পরিচিতি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজ্ঞাত। মনুষ্যকুলের মধ্যে একমাত্র শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এই সব স্তর ভেদ করে অগ্নিস্ফুলিঙ্গসমূহ এড়িয়ে মে‘রাজে গিয়েছিলেন আল্লাহর হুকুমে। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও নির্দেশ ব্যতীত আসমান ও যমীনের সীমানা পেরিয়ে যাওয়া মানুষের সাধ্যের অতীত।[8]
আমাদের মতামত হ’ল মানুষ হয়তোবা গবেষণার মাধ্যমে সপ্ত আকাশের অস্তিত্ব নির্ণয় করতে পারবে কিন্তু কখনো ১ম আসমানে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ জিব্রীল (আঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নিয়ে ১ম আসমানের দ্বারে পৌঁছেছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অনুমতি আছে কি-না? যখন জিব্রীল (আঃ) বলেছিলেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তখন দ্বার খোলা হয়েছিল। অর্থাৎ ১ম আসমানে প্রবেশদ্বার রয়েছে এবং প্রবেশের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত হ’তে হবে।
এক্ষেত্রে একজন মুমিনের করণীয় হ’ল- পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসে সপ্ত আকাশ সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে তা কোন ধরনের শর্ত ছাড়া, সংকোচ ছাড়া মেনে নেওয়া, তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হোক আর না হোক। এটাও ঈমানের একটা পরীক্ষা যে, আল্লাহর দেওয়া তথ্য আপনি বিনা প্রমাণে বিশ্বাস করছেন কি-না। অপরদিকে একজন অমুসলিমের প্রতি আমাদের আহবান এই যে, কুরআনের অনেক আয়াত এবং হাদীস বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক তথ্য দ্বারা প্রমাণিত। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, সূর্যের নিজ অক্ষের ঘূর্ণন, চাঁদের নিজ অক্ষের ঘূর্ণন, সূর্যের নিজস্ব আলো, চাঁদের প্রতিফলিত আলো ইত্যাদি প্রসঙ্গে কুরআনের বর্ণনাসমূহ বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। তাই সপ্ত আকাশ সম্পর্কে বর্ণিত আয়াত এবং হাদীস ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে প্রমাণিত হবে।
আমরা উপরোক্ত আলোচনায় পৃথিবীর সাত স্তর এবং সাত আসমান সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি পেশ করার চেষ্টা করেছি। আল-কুরআন সর্বযুগে সর্বাধুনিক। তবে তা প্রকাশ পাবে কুরআনের অনুসারীদের মাধ্যমে। তাই আমাদেরকে সর্বদা কুরআন অধ্যয়ন ও অনুধাবন করা এবং এর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যরূরী। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। [ক্রমশঃ]
[1]. বুখারী হা/২৪৫২।
[2]. আল-কুরআনে বিজ্ঞান, পৃ-৫৪১-৫৪৩, (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রকাশকালঃ মার্চ-২০০৪)।
[3]. National Geographic Magazine, June, 1983.
[4]. Maurice Bucaille : The Bible, The Quran and Science, North America Trust Publications, USA, 1978.
[5]. El-Kirdany A. A. S., The Glimpses of the Scientific Unattainabi Marvels of the Quran, Cairo Edition, p. 19, 1977.
[6]. বুখারী হা/৩৪২।
[7]. Bigthink, 13 april, 2022.
[8]. তাফসীরুল কুরআন, ৩০তম পারা, পৃ-৪৭।
আল্লাহ রাববুল আলামীন পৃথিবীকে বিচিত্র ধারায় সৃষ্টি করেছেন। সাত আসমানের মত পৃথিবীরও যে সাতটি স্তর রয়েছে, তা বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে পেশ করা হ’ল।-
পৃথিবীর সাত স্তর
আল্লাহ বলেন,
اللهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا،
‘আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও সেইরূপ। এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়। যাতে তোমরা জানো যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী। আর আল্লাহ সবকিছুকে তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন’ (তালাক ৬৫/১২)।
সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
مَنْ ظَلَمَ مِنَ الأَرْضِ شَيْئًا طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ،
‘যে ব্যক্তি কারো জমির কিছু অংশ যুলূম করে কেড়ে নেয়, ক্বিয়ামতের দিন এর সাত তবক যমীন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে’।[1]
উক্ত আয়াতে سَمٰوٰتٍ বহুবচন এবং الأَرْض একবচন। তাই এখানে আসমান সাতটি হ’লেও পৃথিবী একটিই বুঝাচ্ছে। পৃথিবী তাদের অনুরূপ বলতে বুঝানো হচ্ছে আসমানসমূহ যেভাবে সজ্জিত ঠিক সেভাবে পৃথিবীও সজ্জিত। অর্থাৎ একটির উপর একটি আসমান যেভাবে সজ্জিত ঠিক তদ্রূপ পৃথিবীও ৭টি স্তরে সজ্জিত।
পরবর্তী হাদীসে এর সমর্থন পাওয়া যায়। উক্ত হাদীসে طُوِّقَ শব্দটি এসেছে যার অর্থ রিং, ফ্রেম। উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় সাত আসমানের মত পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় পৃথিবীর উপরিভাগ হ’তে কেন্দ্র পর্যন্ত সাতটি স্তরের পরিচয় পাওয়া যায়। যা নিম্নরূপ :
পৃথিবী প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত : ভূ-ত্বক, আবরণ ও কেন্দ্রস্থল। বায়ুমন্ডল নামে একটি গ্যাসীয় ঢাকনা পৃথিবীর সাথে মধ্যাকর্ষণীয়ভাবে সংযুক্ত এবং এটি পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবরণ আবার তিনটি উপস্তরে বিভক্ত : লিথোস্ফেয়ার, এস্থেনোস্ফেয়ার এবং মেসোস্ফেয়ার। কেন্দ্রস্থলও দু’টি উপস্তরে বিভক্ত। যথা- বহিঃকেন্দ্র এবং অন্তঃকেন্দ্র। কাজেই পৃথিবী মোট সাতটি স্তরে বিভক্ত : (১) বায়ুমন্ডল, (২) ভূ-ত্বক, (৩) লিথোস্ফেয়ার, (৪) এস্থেনোস্ফেয়ার, (৫) মেসোস্ফেয়ার, (৬) বহিঃকেন্দ্র এবং (৭) অন্তঃকেন্দ্র।
১. বায়ুমন্ডল (Atmosphere) : এটি হচ্ছে পৃথিবীর বহিঃস্তর। পৃথিবী পৃষ্ঠের ৫০০ কি. মি. উচ্চতা পর্যন্ত এ স্তরটি বিস্তৃত। ঐ উচ্চতার উপরে বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহ এত কম যে তারা পরস্পরের সাথে সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলে।
২. ভূ-ত্বক (Crust) : এটি হচ্ছে পৃথিবীর বহিরাবরণী। পৃথিবীর আয়তনের মাত্র ০.৬% ভাগ নিয়ে এটি গঠিত। এর পুরুত্ব স্থানবিশেষে আলাদা হয়ে থাকে। যেমন মহাসাগরতলে মোটামুটি একই রকম ৫ কি.মি. পর্যন্ত গভীরে, মহাদেশীয় পৃষ্ঠের ৩৫ কি. মি. গভীর পর্যন্ত এবং হিমালয়, আলপস প্রভৃতি পর্বতমালার নীচে ৮০ কি. মি. পর্যন্ত গভীর।
৩. লিথোস্ফেয়ার (Lithosphere) : এটি হচ্ছে ভূত্বকের ঠিক নীচের স্তর। প্রায় ১০০ কি. মি. পুরু কঠিন পদার্থের একটা স্তর এটি। আমাদের এই গ্রহটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এ সত্যটি যে, লিথোস্ফেয়ার সহ ভূপৃষ্ঠটি বেশ কয়েকটি কঠিন লিথোস্ফেরিক ফলকে বিভক্ত। লিথোস্ফেয়ারের নীচেই রয়েছে গঠন কাঠামোগত একটা বিঘোষিত পরিবর্তন। এতে রয়েছে একটা সীমারেখা, যার নাম ‘মোহো’ বিরামহীনতা (Moho discontinuity)। এর নীচেই আবরণীর বাকী অংশ বিস্তৃত। পৃথিবীর আয়তনের ৮২% ভাগেরও অধিক স্থান জুড়ে রয়েছে এ স্তরটি।
৪. এস্থেনোস্ফেয়ার (Aesthenosphere) : এটি হচ্ছে চতুর্থ স্তর যা ১০০ কি. মি. থেকে ২৫০ কি. মি. গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলে আবরণী উষ্ণ, অপেক্ষাকৃত নমনীয়, পুরু এক পুডিং সাগরের মত গলিত। এটিই এস্থেনোস্ফেয়ার নামে পরিচিত। গুড় সদৃশ (reacly) এ স্তরটি এর উত্তল গতির দ্বারা কঠিন লিথোস্ফেরিক ফলকসমূহকে ভূগোলকের চারপাশে স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
৫. মেসোস্ফেয়ার (Mesosphere) : এ আবরণীর বাকী অংশ মেসোস্ফেয়ার নামে পরিচিত।
৬. বহিঃকেন্দ্র (Outer core) : এটি দুই হাযার একশ কি.মি. পুরু। তরল লৌহের সাথে সামান্য পরিমাণ গন্ধক (Sulphur) মেশানো পদার্থ দ্বারা এ স্তরটি গঠিত।
৭. অন্তঃকেন্দ্র : অন্তঃকেন্দ্রটির ব্যাসার্ধ ভূ-কেন্দ্রে ১ হাযার ৩৭০ কি. মি.। অন্তঃকেন্দ্রটি সম্ভবত কঠিন, এতে রয়েছে লৌহ এবং অন্যান্য ভারী পদার্থ।
অতএব প্রতীয়মান হয় যে, বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে কুরআনের আয়াতে বর্ণিত বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।[2]
আমরা ১ম আসমানে বসবাস করি এবং পৃথিবীর ১ম স্তরে বসবাস করি। পৃথিবীর অভ্যন্তরে মানুষ এখন পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানীরা Seismic Monitoring এর সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরসমূহ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে। Seismic monitoring হ’ল এমন পরিমাপক যার মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ পরিমাপ করা হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর দিয়ে যাওয়ার কারণে এর গতিবেগ নির্ণয় করা হয় এবং স্কেলের সূত্র ব্যবহার করে শব্দের প্রতিসরণের জন্য বিভিন্ন অংশের ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়। এই মান পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে ব্যবহার করে তাপমাত্রা এবং চাপের বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর পরিমাপ করা হয়।
বিজ্ঞানের বেশীরভাগ তথ্য প্রভাবের (Effects) উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করা হয়। বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে পৃথিবীর সাত স্তর সম্পর্কে এতটুকুই জানা যায়। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে এই সাত স্তর সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আরোও বিস্তারিত জানা যাবে এবং এর মাধ্যমে আল-কুরআন যে নিঃসন্দেহে আল্লাহর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব, তা সংশয়বাদীদের কাছে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
সাত আসমান :
আল্লাহ বলেন,
وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا،
‘আর আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ’ (নাবা ৭৮/১২)।
আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ،
‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে যা আছে সবকিছু। অতঃপর তিনি মনঃসংযোগ করেন আকাশের দিকে। অতঃপর তাকে সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন। বস্ত্ততঃ তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৯)।
অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মুসলিম বিদ্বান সপ্ত আকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ মহাকাশকে সাতটি বিশাল অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। সেগুলো নিম্নরূপ :
প্রথম অঞ্চলে রয়েছে সূর্য, পৃথিবী ও পৃথিবীর মত গ্রহসমূহ যেমন- বুধ, শুক্র ও পৃথিবী। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৮ আলোক মিনিট (অর্থাৎ আলো এক মিনিটে যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
দ্বিতীয় অঞ্চলে রয়েছে সৌরজগৎ, যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আমাদের বহিঃস্থ গ্রহসমূহ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, গ্রহাণুপুঞ্জ, শনি, ইউরেনাস এবং প্লুটো। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৫ আলোক ঘণ্টা (আলো এক ঘণ্টায় যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
তৃতীয় অঞ্চলে রয়েছে সূর্যের বিশটির মত প্রতিবেশী। এই গোলকাকৃতি অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২০ আলোকবর্ষ (আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে)।
চতুর্থ অঞ্চলে রয়েছে ছায়াপথ নক্ষত্রমন্ডলী। আগে এটাকে সমগ্র বিশ্বজগৎ বলে মনে করা হ’ত। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রায় ১০
কোটির মত ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া গেছে।
পঞ্চম অঞ্চলে রয়েছে ২০টির মত হালকা, ঢিলে-ঢালা আকৃতির বন্ধনযুক্ত একগুচ্ছ প্রতিবেশী নক্ষত্রমন্ডলী বা গ্যালাক্সি। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ।
ষষ্ঠ অঞ্চলে রয়েছে একগুচ্ছ স্থানীয় ছায়াপথ গোষ্ঠী। এটি স্থানীয় বৃহৎ গুচ্ছ (Local super-cluster) নামে পরিচিত। এটাই হচ্ছে বৃহত্তম মহাজাগতিক সৃষ্টিকর্ম। এই গোলাকার অঞ্চলের ব্যাসার্ধ সাড়ে সাত কোটি আলোকবর্ষ।
সপ্তম অঞ্চল জুড়ে যা রয়েছে তাই আমাদের পরিচিত বিশ্বজগৎ। ছায়াপথের সকল বৃহৎ গুচ্ছই এর অন্তর্ভুক্ত। এর ভিতর আরো রয়েছে কোয়াসার (quasar) যা সমস্ত মহাজাগতিক বস্ত্তর মধ্যে সর্বাধিক কৌতুহল উদ্দীপক। দুই হাযার কোটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিশাল দূরত্ব জুড়ে সবদিকেই এরা ছড়িয়ে আছে।[3]
অনেকে মহাবিশ্বের বস্ত্তগুলোকে সাতটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন, যথা : ১. তারকারাজি, ২. গ্রহ-নক্ষত্র, ৩. উপগ্রহসমূহ, ৪. ধূমকেতুসমূহ, ৫. নীহারিকামন্ডলী. ৬ ছায়াপথ, ৭. কোয়াসার।
ডঃ মরিস বুকাইলি সপ্ত আকাশকে ব্যাখ্যা করেছেন এই বলে, ‘সাতটি মানে বহুত্ব ছাড়া আর কিছু না; কাজেই বহু আসমান আর বহু পৃথিবী রয়েছে। আমাদের পৃথিবীর মত মহাবিশ্বে আরো পৃথিবী পাওয়া যেতে পারে। এ এমন এক সত্য যা আমাদের সময়ে মানুষ কর্তৃক যাচাই করা হয়নি’।[4]
মিসরীয় বিদ্বান শেখ মুহাম্মদ আবদুহু আকাশমন্ডলী এবং এর বিস্ময়কর গঠন কাঠামোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাধারণ মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের সাহায্য নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আকাশমন্ডলী হচ্ছে আপনার মাথার উপরিস্থিত যা কিছু আছে। তাই আসমান বা আকাশমন্ডলী শব্দটি শ্রবণ করে আপনি ভাববেন মহাকাশের কথা, যেখানে আছে সূর্য, চন্দ্র এবং আপন আপন কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি। এটাই সেই আসমান যা আল্লাহ নির্মাণ করেছেন অর্থাৎ ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন এবং তিনিই প্রতিটি গ্রহ ও নক্ষত্রকে বলতে গেলে এক-একটি ইটের মত করে বানিয়েছেন যা আপনারা আপনাদেরই চারপাশের ছাদ, গম্বুজ কিংবা দেয়ালে দেখতে পান, আর তিনিই প্রতিটি গ্রহকে তার প্রতিবেশীদের সাথে সাধারণ মহাকর্ষ বলের দ্বারা বেঁধে দিয়েছেন ঠিক যেমন কোন ইমারতের প্রত্যেকটি অংশকে কিছু দ্রব্য স্থাপনের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে আটকানো হয়ে থাকে’।[5]
এবার আসুন! আমরা জানার চেষ্টা করি সপ্ত আকাশ সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন বিদ্বানগণ যে মত প্রকাশ করেছেন তা কতটুকু সঠিক?
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
أَخَذَ بِيَدِى فَعَرَجَ بِى إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَلَمَّا جِئْتُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ افْتَحْ . قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ . قَالَ هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ قَالَ نَعَمْ مَعِى مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ أُرْسِلَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ . فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا
‘...তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছলাম, তখন জিব্রীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোল। তিনি বললেন, কে? উত্তর দিলেন, আমি জিব্রীল, আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ (ﷺ)। তিনি আবার বললেন, তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যঁা। তারপর আসমান খোলা হ’লে আমরা দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) উঠলাম’।[6]
এছাড়া সহীহ মুসলিমে (হা/৩০৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসে ১ম আসমানে আদম (আঃ), ২য় আসমানে ঈসা এবং ইয়াহইয়া (আঃ), ৩য় আসমানে ইউসুফ (আঃ), ৪র্থ আসমানে ইদরীস (আঃ), ৫ম আসমানে হারুণ (আঃ), ৬ষ্ঠ আসমানে মূসা (আঃ) এবং ৭ম আসমানে ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয় জিব্রীল (আঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর।
আল্লাহ বলেন,
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ،
‘অতঃপর আকাশমন্ডলীকে সপ্ত আকাশে পরিণত করলেন দু’দিনে এবং প্রত্যেক আকাশে তার নির্দেশ প্রেরণ করলেন। আর আমরা দুনিয়ার আকাশকে নক্ষত্ররাজি দিয়ে সুশোভিত করলাম এবং তাকে করলাম (দুনিয়ার জন্য) সুরক্ষা ছাদ স্বরূপ। বস্ত্ততঃ এটি হ’ল মহা পরাক্রান্ত ও মহা বিজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা’ (ফুছছিলাত ৪১/১২)।
আল্লাহ বলেন,
الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ،
‘যিনি সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে। দয়াময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন ত্রুটি দেখতে পাবে না। পুনরায় দৃষ্টি ফিরাও! তুমি কোন ফাটল দেখতে পাও কি?’ (মূলক ৬৭/৩)।
কুরআনের আয়াত এবং হাদীস হ’তে জানা গেল আমরা রয়েছি ১ম আসমানে। যাকে বলা হয় দুনিয়ার আসমান।
সপ্ত আকাশ সম্পর্কে উপরে বর্ণিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন বিদ্বানগণের তত্ত্ব কুরআনের আয়াত এবং সহীহ হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেককে দেখা যায় কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদীসের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য যেকোন ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন আয়াত বা হাদীসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা যাবে না।
কুরআন এবং হাদীস হ’তে জানা যায় যে, পৃথিবী দুনিয়ার আসমানে অবস্থিত। আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় কুরআনের আয়াত এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার আলোকে দেখিয়েছি যে, এই মহাবিশ্ব আল্লাহ তা‘আলা সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হ’ল, আমাদের ১ম আসমানের শেষসীমা কোথায়? বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর (Planck Collaboration (2016))। সেই হিসাবে মহাবিশ্বের দূরত্ব এখন পর্যন্ত ১৩.৮ বিলিয়ন আলোক বর্ষ বা প্রায় ১০২৬ মিটার পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রশ্ন হ’ল মহাবিশ্বের আয়তন কি অসীম? উত্তর হ’ল মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন যে, এই মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয় এবং দূরত্ব সর্বোচ্চ ৩৭ ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ হ’তে পারে।[7]
এক্ষণে সপ্ত আসমানের ব্যাখ্যা কি হবে? এর উত্তর হ’ল, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর নিকটতম আসমানের সঠিক তথ্যও এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করতে পারেনি। আর সপ্ত আকাশ তো বহু দূরের বিষয়।
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, বহু নক্ষত্রের আলো আজও আমাদের দৃষ্টিপথে আসেনি। নভোমন্ডলের বিভিন্ন রহস্য মানবজাতির কাছে এখনো অজানা রয়েছে। তাই সাত আসমানের স্তর পরিচিতি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজ্ঞাত। মনুষ্যকুলের মধ্যে একমাত্র শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এই সব স্তর ভেদ করে অগ্নিস্ফুলিঙ্গসমূহ এড়িয়ে মে‘রাজে গিয়েছিলেন আল্লাহর হুকুমে। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও নির্দেশ ব্যতীত আসমান ও যমীনের সীমানা পেরিয়ে যাওয়া মানুষের সাধ্যের অতীত।[8]
আমাদের মতামত হ’ল মানুষ হয়তোবা গবেষণার মাধ্যমে সপ্ত আকাশের অস্তিত্ব নির্ণয় করতে পারবে কিন্তু কখনো ১ম আসমানে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ জিব্রীল (আঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নিয়ে ১ম আসমানের দ্বারে পৌঁছেছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অনুমতি আছে কি-না? যখন জিব্রীল (আঃ) বলেছিলেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তখন দ্বার খোলা হয়েছিল। অর্থাৎ ১ম আসমানে প্রবেশদ্বার রয়েছে এবং প্রবেশের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত হ’তে হবে।
এক্ষেত্রে একজন মুমিনের করণীয় হ’ল- পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসে সপ্ত আকাশ সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে তা কোন ধরনের শর্ত ছাড়া, সংকোচ ছাড়া মেনে নেওয়া, তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হোক আর না হোক। এটাও ঈমানের একটা পরীক্ষা যে, আল্লাহর দেওয়া তথ্য আপনি বিনা প্রমাণে বিশ্বাস করছেন কি-না। অপরদিকে একজন অমুসলিমের প্রতি আমাদের আহবান এই যে, কুরআনের অনেক আয়াত এবং হাদীস বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক তথ্য দ্বারা প্রমাণিত। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, সূর্যের নিজ অক্ষের ঘূর্ণন, চাঁদের নিজ অক্ষের ঘূর্ণন, সূর্যের নিজস্ব আলো, চাঁদের প্রতিফলিত আলো ইত্যাদি প্রসঙ্গে কুরআনের বর্ণনাসমূহ বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। তাই সপ্ত আকাশ সম্পর্কে বর্ণিত আয়াত এবং হাদীস ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে প্রমাণিত হবে।
আমরা উপরোক্ত আলোচনায় পৃথিবীর সাত স্তর এবং সাত আসমান সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি পেশ করার চেষ্টা করেছি। আল-কুরআন সর্বযুগে সর্বাধুনিক। তবে তা প্রকাশ পাবে কুরআনের অনুসারীদের মাধ্যমে। তাই আমাদেরকে সর্বদা কুরআন অধ্যয়ন ও অনুধাবন করা এবং এর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যরূরী। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। [ক্রমশঃ]
[1]. বুখারী হা/২৪৫২।
[2]. আল-কুরআনে বিজ্ঞান, পৃ-৫৪১-৫৪৩, (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রকাশকালঃ মার্চ-২০০৪)।
[3]. National Geographic Magazine, June, 1983.
[4]. Maurice Bucaille : The Bible, The Quran and Science, North America Trust Publications, USA, 1978.
[5]. El-Kirdany A. A. S., The Glimpses of the Scientific Unattainabi Marvels of the Quran, Cairo Edition, p. 19, 1977.
[6]. বুখারী হা/৩৪২।
[7]. Bigthink, 13 april, 2022.
[8]. তাফসীরুল কুরআন, ৩০তম পারা, পৃ-৪৭।
সূত্র: আত-তাহরীক।
Last edited: