যাকাত ও ফিতরা আমরা মরক্কোর একটি সংস্থার সদস্য, বার্সেলোনাতে বাস করি। আমরা কীভাবে যাকাতুল ফিতর হিসাব করব?

Abu Umar

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
666
Comments
1,234
Solutions
17
Reactions
7,697
উত্তর: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি মুসলিমদের ওপর যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন, আর তা হলো এক সাখেজুর বা এক সা‘ জব এবং তিনি সালাতের জন্য অর্থাৎ ঈদের (ফিতরের) সালাতে বের হওয়ার আগে তা আদায় করতে আদেশ করেছেন। আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
«كُنَّا نُعْطِيهَا فِي زَمَانِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ».
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে তা (যাকাতুল ফিতর) খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা‘ বা খেজুর থেকে এক সা‘ বা জব থেকে এক সা‘ বা কিসমিস থেকে এক সা‘ হিসেবে দিতাম।”[1]

একদল আলেম এই হাদীসে ব্যবহৃত ‘খাদ্যদ্রব্য’ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, তা হলো গম (বুর/কামহ)।

আবার অনেকে এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে এর উদ্দেশ্য হলো সে দেশের অধিবাসীগণ যা খায় তা গম, ভুট্টা, পার্ল মিলেট (pearl millet) বা এছাড়া অন্য যাই হোক না কেন- আর এটি সঠিক মত। কারণ যাকাত হলো দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি, আর তার (যাকে যাকাত দেওয়া হয়) দেশের খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কিছু দিয়ে সহানুভুতি প্রকাশ করা একজন মুসলিমের ওপর ওয়াজিব নয়। আর এতে সন্দেহ নেই যে, চাল- হারামাইনের দেশের (সউদি আরবের) প্রধান খাদ্য, এক উত্তম ও মূল্যবান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত যা বার্লি থেকে উত্তম, যে (বার্লি) হাদীসের পাঠে (মতনে) যথেষ্ট বলে উল্লেখ হয়েছে। তাই এ থেকে জানা গেল যে, চাল দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করায় কোনো দোষ নেই।

ওয়াজিব হলো সকল প্রকার খাবারের এক সা‘ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিসাব অনুযায়ী এক সা‘ (যাকাতুল ফিতর) আদায় করা। আর এর পরিমাপ হলো স্বাভাবিক দুই পূর্ণ হাতের চার মুঠো, যেমনটি আছে আল-ক্বামূস ও অন্যান্য অভিধানে ওজনের হিসাবে তা ৩ কিলোগ্রামের কাছাকাছি। যদি কোনো মুসলিম চাল বা তার দেশের খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা‘ দিয়ে (যাকাতুল ফিতর) আদায় করে, তবে আলেমগণের দুই মতের বেশি শক্তিশালী মতানুসারে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে যদিও বা তা এই হাদীসে উল্লিখিত খাদ্যদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর তা ওজনের হিসেবে প্রায় ৩ কিলোগ্রাম দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।

ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, স্বাধীন-দাস সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। আর আলেমগণের ইজমা‘ (ঐকমত্য) অনুসারে গর্ভের ভ্রূণের পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব নয়, তবে ‘উসমান-রাদিয়াল্লাহু আনহু (তা) করেছেন বলে মুস্তাহাব।

আর ওয়াজিব হলো ঈদের সালাতের আগেই তা আদায় করা, ঈদের সালাতের পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়। ঈদের আগে এক বা দুই দিন আগে তা আদায় করায় কোনো বাঁধা নেই। তাই এর মাধ্যমে জানা যায় যে, তা আদায়ের সময় শুরু হয় আলেমগণের মতামতের সবচেয়ে সঠিক মতটি অনুসারে ২৮তম রাতে। কারণ, এই (রমযান) মাস ২৯ দিনের হতে পারে আবার ৩০ দিনেরও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যাকাতুল ফিতর ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করতেন।

আর যাকাতুল ফিতর দিতে হবে ফকির ও মিসকীনদের। ইবন ‘আব্বাস-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন,
«فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنْ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنْ الصَّدَقَاتِ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন একজন সাওম পালনকারীর অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা হতে পবিত্রতাস্বরূপ ও মিসকীনদের জন্য খাওয়ার হিসেবে। যে তা ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে আদায় করবে, তার পক্ষ থেকে তা কবুল যোগ্য যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর যে তা ঈদুল ফিতরের সালাতের পর আদায় করবে, তা সাদাকাহসমূহের মধ্যে একটি বলে গণ্য হবে।”[2]

আর আলেমগণের অধিকাংশের মতে ও দলীলের বিবেচনায় বেশি সঠিক মত অনুসারে মূল্য দ্বারা (অর্থ দিয়ে) যাকাতুল ফিতর আদায় করা সঠিক নয় বরং ওয়াজিব হলো তা খাদ্যদ্রব্য থেকে আদায় করা; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ করেছেন এবং উম্মাতের অধিকাংশই (উলামা) এ মত প্রকাশ করেছেন। আমরা আল্লাহর কাছে চাই যাতে তিনি আমাদের ও সকল মুসলিমদেরকে তাঁর দীনের ফিকহ (বুঝ) ও তার ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফীক দেন, আমাদের অন্তরসমূহ ও কাজকর্মকে শুদ্ধ করেন, তিনি তো মহামহিম, পরম করুণাময়।”[3]

কিলোগ্রামের হিসেবে শাইখ ইবন বায-রহিমাহুল্লাহ-এর মতে যাকাতুল ফিত্বরের পরিমাণ–প্রায় ৩ কিলোগ্রাম।

আর এভাবেই ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। (৯/৩৭১)

শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. চাল দিয়ে এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন ২১০০ গ্রাম (অর্থাৎ ২.১ কিলোগ্রাম) [যেমনটি উল্লেখ আছে ‘ফাতাওয়া আয-যাকাত’ (পৃঃ ২৭৪-২৭৬)-এ]

আর এই মতভেদের কারণ হলো, সা‘ পরিমাণ দ্বারা নির্ধারিত, ওজন দ্বারা নির্দিষ্ট নয়।

তবে আলেমগণ তা ওজন দ্বারা হিসাব নির্ধারণ করেছেন কারণ তা হিসাব রাখার ক্ষেত্রে বেশি সহজ ও বেশি বিশুদ্ধ। আর এটি জানা কথা যে শস্যের দানার ওজন ভিন্ন ভিন্ন হয়। কারণ, তার কোনোটি হালকা আবার কোনোটি ভারী, আবার কোনোটি মাঝারী ওজনের; বরং কখনো আবার একই প্রকার শস্যদানার এক সা‘-এর ওজনও ভিন্ন ভিন্ন হয়। নতুন ফসলের ওজন পুরানো ফসলের ওজন থেকে বেশি হয়। আর তাই যদি কেউ সতর্কতাবশত কিছু বেশি আদায় করে, তবে তা বেশি নিরাপদ ও উত্তম।

দেখুন ‘আল-মুগনী’, (৪/১৬৮)। এতে ফসলের যাকাতের নিসাবের পরিমাণ ওজনের হিসাবে এরূপ উল্লিখিত হয়েছে।

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৭
[2] আবু দাঊদ, হাদীস নং ১৬০৯ এবং আল- আলবানী একে ‘সহীহ আবী দাঊদ’ এ হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
[3] মাজমূ ফাতওয়া আশ শাইখ ইবন বায (১৪/২০০)
 
Similar threads Most view View more
Back
Top