আন-নূর (আলোক)[1]:
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে আরেকটি নাম হলো আন-নূর। এ নামটি আল্লাহর বড় গুণ, সুন্দরতম নাম ও পরিপূর্ণ সিফাত। আল্লাহর রহমত, হামদ ও হিকমতের পূর্ণ গুণ রয়েছে। তিনি আসমান ও জমিনের নূর[2], যিনি আরেফীনদের (তাঁর পরিচয় লাভকারী) অন্তর তাঁর পরিচয় ও ঈমানের দ্বারা আলোকিত করেন। তিনি তাদের অন্তরসমূহকে হিদায়েতের দ্বারা আলোকিত করেন। তিনি আসমান ও জমিনকে স্থাপিত আলোর দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর হিজাব তথা পর্দা নূর, যদি তা প্রকাশ পায় তাহলে দৃষ্টি সীমার যতদূর তাঁর দৃষ্টি যায় ততদূর তাঁর নূরে জ্বলে-পুড়ে যাবে।[3] তাঁর নূরের দ্বারাই জান্নাতুন না‘ঈম আলোকিত হয়েছে। তাঁর সিফাতের নূর হলো তাঁর অনেক বড় গুণ। অন্যদিকে সৃষ্টিকুলের মধ্যকার নূর দু প্রকার:
প্রথমত: বাহ্যিক নূর, যেমন সূর্য, চাঁদ, তারকারাজি ও অন্যান্য সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির অনুভূত নূর।
দ্বিতীয়ত: অপ্রকাশ্য বা উহ্য নূর। আর তা হলো জ্ঞান, ঈমান ও আনুগত্যের নূর। আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় লাভ, ঈমানের বিশুদ্ধতা, আনুগত্যের স্বাদ ও ভালোবাসার আনন্দের মাত্রা অনুযায়ী মুমিনের অন্তরে রয়েছে নূর। এ ধরণের নূর ব্যক্তিকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে, কল্যাণের কাজে আকর্ষিত করে এবং আল্লাহর পূর্ণ ইখলাসের দিকে আহ্বান করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ ছিল:
“হে আল্লাহ, আমার ক্বলবে (অন্তরে) নূর দান করুন, আমার আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর দান করুন। আমাকে নূর দান করুন। অথবা তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ, আমাকে নূর দিয়ে দিন।”[4]
আল্লাহ প্রদত্ত বান্দাকে দেওয়া এ নূর তাঁর পক্ষ থেকে অনেক বড় অনুগ্রহ ও কল্যাণ। এ নূর যতোই শক্তিশালী হোক তা আল্লাহর সৃষ্টি। অত:এব, সাবধান! আপনার দূরদৃষ্টি যেন দুর্বল না হয়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ও ইলমের স্বল্পতা যেন আপনাকে দুর্বল না করে যে, এ নূর স্বয়ং নূর ও অন্তরে আল্লাহর যাতের নূরের মুশাহাদা; বরং এ নূর হলো জ্ঞানের নূর, ঈমানের নূর। কিছু সুফী এখানে পরীক্ষায় পতিত হয়ে যায়, নূরের ব্যাপারে তাদের মধ্যে এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেয় যা ইলম ও ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক, বিপরীত। যেমন শুষ্ক স্বভাবের লোকদের গোমরাহীর অন্ধকার ও অসচেতনতা এতোই বেশি যে, তারা এ নূর থেকে কিছুই পায় না; বরং কখনো কখনো তাদের বোকামী ও অজ্ঞতার কারণে তাদের এ ধরণের অবস্থা ও যুহুদ আরো বৃদ্ধি পায়। অত:এব, কুরআন, সুন্নাহ ও আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর সিফাতসমূহের সঠিক জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে দয়া ও অনুগ্রহ করেন, এর দ্বারা সে আল্লাহর ইবাদত করে, ইহসানের দরজার পৌঁছতে সে প্রচেষ্টা করে, তখন সে আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করে যে, সে যেন তাঁকে দেখছে, আর যদি সে তাঁকে (আল্লাহ) নাও দেখতে পায় তাহলে তিনি তাকে (বান্দাকে) দেখছেন। সে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে জিহ্বা ভিজে রাখে, তার অন্তর আলোকিত হয়, জ্ঞানের স্বাদ অর্জিত হয়, ঈমানের স্বাদ সবচেয়ে উত্তম স্বাদ যা সে পেয়ে থাকে। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। তিনি অনুগ্রহশীল ও মহান।[5]
মুমিন যখন ঈমানে পরিপূর্ণ হয় তখন আল্লাহ তার অন্তরকে আলোকিত করে দেন, তখন তার কাছে সব কিছুর হাকীকত স্পষ্ট হয়ে যায়, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, এ নূর তখন তার জীবনের উপাদান হয়ে, ইলম ও আমলের সমন্বয়ে কল্যাণের উপর তাকে শক্তিশালী করে তোলে। ইলম ও ইয়াকীন এবং গাফেলাতি ও অন্ধকারের দ্বিধা-সংশয় তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তখন তার অন্তরে থাকে নূর, তার কথায় নূর, তার ইলমে নূর, তার চারিদিকে শুধু নূর আর নূর।
কাফির বা মুনাফিক বা বিরোধকারী বা বিরোধকারী গাফিল সকলেই অন্ধকারে হাবুডুবু খায়, তাদের কাছে অন্ধকারের যত উপকরণ থাকবে তাতে তত হাবুডুবু খাবে। একমাত্র আল্লাহই তাওফিকদাতা।[6]
[1] এ নামের দলিল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,
﴿ٱللَّهُ نُورُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ٣٥﴾ [النور : ٣٥]
“আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নূর।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৫]
[2] তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৫।
[3] আত-তাফসীর, ৫/৬২৮।
[4] সহীহ মুসলিম, ১/৫২৯, কিতাব, মুসাফিরদের সালাত ও কসর, বাব, সালাতে দো‘আ, হাদীস নং ৭৬৩, হাদীসটি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[5] তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৯-১৩০।
[6] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৯৪-৯৫।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে আরেকটি নাম হলো আন-নূর। এ নামটি আল্লাহর বড় গুণ, সুন্দরতম নাম ও পরিপূর্ণ সিফাত। আল্লাহর রহমত, হামদ ও হিকমতের পূর্ণ গুণ রয়েছে। তিনি আসমান ও জমিনের নূর[2], যিনি আরেফীনদের (তাঁর পরিচয় লাভকারী) অন্তর তাঁর পরিচয় ও ঈমানের দ্বারা আলোকিত করেন। তিনি তাদের অন্তরসমূহকে হিদায়েতের দ্বারা আলোকিত করেন। তিনি আসমান ও জমিনকে স্থাপিত আলোর দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর হিজাব তথা পর্দা নূর, যদি তা প্রকাশ পায় তাহলে দৃষ্টি সীমার যতদূর তাঁর দৃষ্টি যায় ততদূর তাঁর নূরে জ্বলে-পুড়ে যাবে।[3] তাঁর নূরের দ্বারাই জান্নাতুন না‘ঈম আলোকিত হয়েছে। তাঁর সিফাতের নূর হলো তাঁর অনেক বড় গুণ। অন্যদিকে সৃষ্টিকুলের মধ্যকার নূর দু প্রকার:
প্রথমত: বাহ্যিক নূর, যেমন সূর্য, চাঁদ, তারকারাজি ও অন্যান্য সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির অনুভূত নূর।
দ্বিতীয়ত: অপ্রকাশ্য বা উহ্য নূর। আর তা হলো জ্ঞান, ঈমান ও আনুগত্যের নূর। আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় লাভ, ঈমানের বিশুদ্ধতা, আনুগত্যের স্বাদ ও ভালোবাসার আনন্দের মাত্রা অনুযায়ী মুমিনের অন্তরে রয়েছে নূর। এ ধরণের নূর ব্যক্তিকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে, কল্যাণের কাজে আকর্ষিত করে এবং আল্লাহর পূর্ণ ইখলাসের দিকে আহ্বান করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ ছিল:
«اللهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفِي سَمْعِي نُورًا، وَفِي بَصَرِي نُورًا، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا، وَعَنْ شِمَالِي نُورًا، وَأَمَامِي نُورًا، وَخَلْفِي نُورًا، وَفَوْقِي نُورًا، وَتَحْتِي نُورًا، وَاجْعَلْ لِي نُورًا» ، أَوْ قَالَ: «وَاجْعَلْنِي نُورًا».
“হে আল্লাহ, আমার ক্বলবে (অন্তরে) নূর দান করুন, আমার আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর দান করুন। আমাকে নূর দান করুন। অথবা তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ, আমাকে নূর দিয়ে দিন।”[4]
আল্লাহ প্রদত্ত বান্দাকে দেওয়া এ নূর তাঁর পক্ষ থেকে অনেক বড় অনুগ্রহ ও কল্যাণ। এ নূর যতোই শক্তিশালী হোক তা আল্লাহর সৃষ্টি। অত:এব, সাবধান! আপনার দূরদৃষ্টি যেন দুর্বল না হয়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ও ইলমের স্বল্পতা যেন আপনাকে দুর্বল না করে যে, এ নূর স্বয়ং নূর ও অন্তরে আল্লাহর যাতের নূরের মুশাহাদা; বরং এ নূর হলো জ্ঞানের নূর, ঈমানের নূর। কিছু সুফী এখানে পরীক্ষায় পতিত হয়ে যায়, নূরের ব্যাপারে তাদের মধ্যে এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেয় যা ইলম ও ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক, বিপরীত। যেমন শুষ্ক স্বভাবের লোকদের গোমরাহীর অন্ধকার ও অসচেতনতা এতোই বেশি যে, তারা এ নূর থেকে কিছুই পায় না; বরং কখনো কখনো তাদের বোকামী ও অজ্ঞতার কারণে তাদের এ ধরণের অবস্থা ও যুহুদ আরো বৃদ্ধি পায়। অত:এব, কুরআন, সুন্নাহ ও আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর সিফাতসমূহের সঠিক জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে দয়া ও অনুগ্রহ করেন, এর দ্বারা সে আল্লাহর ইবাদত করে, ইহসানের দরজার পৌঁছতে সে প্রচেষ্টা করে, তখন সে আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করে যে, সে যেন তাঁকে দেখছে, আর যদি সে তাঁকে (আল্লাহ) নাও দেখতে পায় তাহলে তিনি তাকে (বান্দাকে) দেখছেন। সে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে জিহ্বা ভিজে রাখে, তার অন্তর আলোকিত হয়, জ্ঞানের স্বাদ অর্জিত হয়, ঈমানের স্বাদ সবচেয়ে উত্তম স্বাদ যা সে পেয়ে থাকে। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। তিনি অনুগ্রহশীল ও মহান।[5]
মুমিন যখন ঈমানে পরিপূর্ণ হয় তখন আল্লাহ তার অন্তরকে আলোকিত করে দেন, তখন তার কাছে সব কিছুর হাকীকত স্পষ্ট হয়ে যায়, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, এ নূর তখন তার জীবনের উপাদান হয়ে, ইলম ও আমলের সমন্বয়ে কল্যাণের উপর তাকে শক্তিশালী করে তোলে। ইলম ও ইয়াকীন এবং গাফেলাতি ও অন্ধকারের দ্বিধা-সংশয় তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তখন তার অন্তরে থাকে নূর, তার কথায় নূর, তার ইলমে নূর, তার চারিদিকে শুধু নূর আর নূর।
কাফির বা মুনাফিক বা বিরোধকারী বা বিরোধকারী গাফিল সকলেই অন্ধকারে হাবুডুবু খায়, তাদের কাছে অন্ধকারের যত উপকরণ থাকবে তাতে তত হাবুডুবু খাবে। একমাত্র আল্লাহই তাওফিকদাতা।[6]
[1] এ নামের দলিল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,
﴿ٱللَّهُ نُورُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ٣٥﴾ [النور : ٣٥]
“আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নূর।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৫]
[2] তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৫।
[3] আত-তাফসীর, ৫/৬২৮।
[4] সহীহ মুসলিম, ১/৫২৯, কিতাব, মুসাফিরদের সালাত ও কসর, বাব, সালাতে দো‘আ, হাদীস নং ৭৬৩, হাদীসটি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[5] তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৯-১৩০।
[6] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৯৪-৯৫।