Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
আধুনিক যুগে হাদীস অস্বীকার মূলতঃ প্রাচ্যবিদদের ( Orientalist) দ্বারা প্রভাবিত একদল মুসলিম স্কলারের হাতে হয়। যার কেন্দ্র বলা যায় ভারত ও মিসর। মিশরের মুফতী আবদুহু, সৈয়দ রশীদ রিযা, ড. আহমাদ আমীন ও মাহমূদ আবু রাইয়ার হাতে এ ফিতনা অঙ্কুরিত হয়। এদের মধ্যে মাহমুদ আবু রাইয়ার আক্রমণ সবচেয়ে নিকৃষ্ট ছিল। সে তার ‘আযওয়া আলাস-সুন্নাহ' cla (diwall pa বইয়ে সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) ও হাদীসে রাসূল বিষয়ে বিষোদগার করেছে। সৈয়দ রশীদ রিযা আল্লাহর অশেষ রহমতে তার পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে আসেন এবং তার হাদীস বিরোধী ‘আল-মানার' পত্রিকা হাদীসের পক্ষে বিরাট ভূমিকা পালন করে ।
ড. আহমাদ আমীন ‘ফাজরুল ইসলাম' 'যুহাল ইসলাম' ও যুহরুল ইসলাম এই তিনটি বইয়ে হাদীসে সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। আরব বিশ্বের নামকরা সাহিত্যিকদের মধ্যে ইসলামের ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে যে সবচাইতে নগ্ন হামলা চালিয়েছে, তিনি হলেন মিসরের অন্ধ সাহিত্যিক ও সমালোচক ড. ত্বহা হুসাইন। রাসূল (ﷺ) ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ উম্মাহাতুল মুমিনীনের উপর নির্লজ্জের মত হামলা চালিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে ভারতে ‘আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইংরেজ কর্তৃক 'স্যার' উপাধিপ্রাপ্ত সৈয়দ আহমাদ খান এই ফিত্নার উত্থান ঘটান। তিনি কুরআন-হাদীসের চাইতে মানতিক ও যুক্তিবাদের উপরে অধিক নির্ভর করেছেন। তার লিখিত তাফসীর গ্রন্থে তিনি মুজিযা সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করতঃ সেগুলোর তা'বীল করেছেন। তারই পদাংক অনুসরণ করে মৌলবী চেরাগ আলী, আব্দুল্লাহ চকড়ালবীসহ আরো অনেকে। সাথে সাথে সৈয়দ রশীদ রিযার মত ইসলামের হিতাকাংখী একদল স্কলার রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস নিয়ে সংশয়ে ভুগতে থাকেন। তাদের কিতাবে হাদীস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। বর্তমানে হাদীস অস্বীকার নামক ভয়ানক ফিতনার অন্যতম একটা অংশ হল নাস্তিকতা। তথাকথিত যুক্তি ও বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে হাদীসকে পরীক্ষা করতে গিয়ে মুহাদ্দিছগণ ও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বিশেষতঃ আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে ঠাট্টা করার মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হয়; এক পর্যায়ে সেই ঠাট্টা সরাসরি হাদীস ও রাসূলকে নিয়ে শুরু হয়ে যায়। ওয়াল ইয়াযু বিল্লাহ।
হাদীসকে ইসলামের শত্রুরা যেমন সরাসরি অস্বীকার করেছে, তেমনি ইসলামের নামে বিপ্লব সৃষ্টিকারীদের যবান ও কলম থেকেও হাদীসের পবিত্র আঁচল রক্ষা পায়নি। নামধারী কিছু মুসলিম ছলেবলে-কৌশলে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করেছে। তাদের কিছু অপকৌশল নিম্নে পেশ করা হল:
(ক) মুতাওয়াতির হাদীস ব্যতিত সব হাদীস বিশেষ করে ‘খবারে ওয়াহিদ কে দলীলযোগ্য মনে না করা।
(খ) হাদীস তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণ যেসব উচ্ছ্বল বা মূলনীতি অবলম্বন করেছেন, সেগুলিকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করা।
(গ) নিজের খোঁড়া যুক্তি, বুদ্ধি-বিবেক ও ক্বিয়াসকে হাদীসের উপর প্রাধান্য দেওয়া ।
(ঘ) হাদীস এবং সুন্নাতের মাঝে পার্থক্য করা।
(ঙ) সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যা থেকে সরে গিয়ে হাদীসের এমনভাবে তা'বীল বা দূরতম ব্যাখ্যা করা, যাতে হাদীসের আসল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যায়।
(চ) বিভিন্ন মূলনীতির বেড়াজালে ফেলে হাদীসকে অচল ও অকেজো করে দেয়া।
এছাড়া আরো অনেক অপকৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন সময় নামধারী অনেক মুসলিম আমাদের প্রাণপ্রিয় মহান রাসুল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মুখনিঃসৃত বাণীকে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ।
হাদীস অস্বীকারকারীদের দলীল
পবিত্র কুরআনেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে, এই কথার দ্বারা দলীল সব্যস্ত করে একদল নামধারী মুসলিম হাদীস অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে পবিত্র কুরআন থাকতে হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই। তাদের দলীল হল-
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
এ আয়াত দু'টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কুরআনেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। অতএব, হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই। নিম্নে আমরা এ অভিযোগের জবাব কয়েকটি পয়েন্টের অধীনে প্রদান করব ইনশাআল্লাহ ।
আয়াতের তাফসীরে বিকৃতি :
প্রথম আয়াতটির পূর্ণরূপ, হচ্ছে,
আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, পবিত্র কুরআনে সবকিছুর খুঁটিনাটি বিবরণ নেই। সুতরাং এখানে কিতাব দ্বারা অবশ্যই অন্য কিছু উদ্দেশ্য। কুরআনের মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে উত্তম সানাদে ইবনু আবি হাতিম ও ইমাম তাবারী নকল করেন, তিনি বলেন, এই আয়াতে কিতাব দ্বারা লাওহে মাহফুয উদ্দেশ্য। [ তাফসীরে তাবারী ১১/৩৪৬; তাফসীরে ইবনু আবি হাতিম হা/৭২৫৯। ]
আর সত্যি বলতে কি! কুরআন তো সবকিছুর জন্য অবতীর্ণ হয়নি। কুরআন ইতিহাস গ্রন্থ নয় যে, তাতে সকল জাতি ইতিহাস থাকবে। কুরআন ভূগোলের কোন কিতাব নয় যে, সেখানে ভৌগলিক সব তথ্য থাকবে। কুরআন বিজ্ঞানের কোন কিতাব নয় যে, সেখানে বিজ্ঞানের সব থিউরী থাকবে। কুরআন গল্পের কোন গ্রন্থ নয়, আবার কোন কবিতার গ্রন্থও নয়। কুরআন এমন এক গ্ৰন্থ, যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। একজন ব্যক্তিকে তার সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচয় করানো এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াই কুরআনের দায়িত্ব। এজন্য কুরআন সর্বকালের সর্বোন্নত মানের সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহার করে কখনো ইতিহাসের তথ্য পেশ করেছে, কখনো ভূগোলের আবার কখনো বায়োলজির, আবার কখনও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার। কুরআনে যা পেশ করা হয়েছে, তার সবকিছুর মধ্যেই মানুষের জন্য শিক্ষার আলো ও পথের দিশা রয়েছে।
অন্যদিকে লাওহে মাহফুয এমন একটি কিতাব, যেখানে মহান আল্লাহ সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এরশাদ হচ্ছে,
দ্বিতীয় আয়াতটির পূর্ণরূপ হচ্ছে:
এ আয়াতে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়
১ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আমাদের ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে উত্থাপন করা হবে। এই আয়াতে কুরআনকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করার কথা বলা হয়নি। কেন স্বয়ং মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হবে? কেননা তাঁকে আমাদের মাঝে অনুসরণীয় করে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আমাদেরকে তাঁর ২৩ বছরের জীবনে তাঁর কথা ও কর্ম দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে শরী'আত বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি বিষয় আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর সেই ২৩ বছরের কথা ও কাজ আজও হাদীস হিসেবে আমাদের সামনে সংরক্ষিত। তারপরেও কেন আমরা তাকে অনুসরণ করিনি? সুতরাং এ আয়াত হাদীস অস্বীকারের দলীল নয়; বরং হাদীস অনুসরণের দলীল।
২ এই আয়াতে মহান আল্লাহ কুরআনকে সবকিছুর বিবরণ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি হেদায়াতস্বরূপ বলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবকিছুই কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে।
মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান কুরআনে আছে
বাস্তবেই কুরআনে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে। কুরআনেই মহান আল্লাহ মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণকে আমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের অগণিত জায়গায় এ নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর জীবনকে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ বলেছেন। সুতরাং কুরআন মানব জাতির যে সকল সমস্যার সমাধানগুলো দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি সমাধান হচ্ছে রাসূলকে অনুসরণ করা। অতএব, কুরআন তার দাবীতে মিথ্যা নয়।
হাদীসের অস্তিত্বহীনতাই কুরআনের অস্তিত্বহীনতা
সাহাবায়ে কেরাম হাদীস এবং কুরআন উভয়টিই রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে পেয়েছেন। তাঁদের নিকট কুরআন ও হাদীসের জন্য আলাদা দু'জন রাসূল প্রেরণ করা হয়নি যে, একজন কুরআন শুনাবেন আর অন্যজন হাদীস শুনাবেন। কুরআন এবং হাদীস উভয়টিই একজনের মুখ থেকে নির্গত। স্বভাবতই প্রশ্ন
উত্থিত হয় সাহাবায়ে কেরাম কিভাবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতেন? রাসূল (ﷺ)-এর মুখ থেকে নির্গত কোন্ বাক্যটি কুরআন আর কোন্ বাক্যটি হাদীস এটা তারা কিভাবে বুঝতেন?
সত্যি বলতে কি, হাদীস ও কুরআনের মধ্যে স্বয়ং রাসূল (ﷺ) পার্থক্য করে দিতেন এবং এটাই স্বাভাবিক। রাসূল যখন সাহাবীগণকে ডেকে বলতেন, কুরআনের উমুক উমুক আয়াত নাযিল হলো এবং অহী লেখকদের বলতেন, এটা উমুক সূরার অধীনে উমুক নাম্বার আয়াত হিসেবে সংযোজন কর, তখন সাহাবীগণ বুঝতেন এটা কুরআন ।
আমরা জানি, কুরআন ব্যতীত রাসূল (ﷺ)-এর মুখনিঃসৃত সবকিছুই হাদীস। সুতরাং কুরআন এবং হাদীসের মাঝে পার্থক্য করার জন্য রাসূল যে বাক্য ব্যবহার করেছেন, তাও হাদীস। অতএব, কেউ যদি হাদীস অস্বীকার করে, তাহলে তাকে কুরআনও অস্বীকার করতে হবে। শুধু তাই নয়, যারা শুধু কুরআন মানতে চায়, তারা কিভাবে জানল যে, কুরআন আল্লাহর কালাম?! একমাত্র জবাব, রাসূল (ﷺ) বলেছেন তাই। তিনি কুরআনকে আল্লাহর অহী বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করেছি। তার এই বলাটা অবশ্যই হাদীস। সুতরাং কুরআনকে আল্লাহর কালাম প্রমাণিত করা অসম্ভব হাদীসের সহযোগিতা ছাড়া। কুরআনের উপর বিশ্বাস স্থাপনের পূর্বে বাধ্যগতভাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথা তথা হাদীসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় কুরআনকেও কুরআন হিসাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
সুতরাং, এ কথা স্পষ্ট যে, হাদীসের অস্তিত্বহীনতাই কুরআনের অস্তিত্বহীনতা। তাই, যে হাদীস অস্বীকার করল সে কুরআনও অস্বীকার করল।
ড. আহমাদ আমীন ‘ফাজরুল ইসলাম' 'যুহাল ইসলাম' ও যুহরুল ইসলাম এই তিনটি বইয়ে হাদীসে সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। আরব বিশ্বের নামকরা সাহিত্যিকদের মধ্যে ইসলামের ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে যে সবচাইতে নগ্ন হামলা চালিয়েছে, তিনি হলেন মিসরের অন্ধ সাহিত্যিক ও সমালোচক ড. ত্বহা হুসাইন। রাসূল (ﷺ) ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ উম্মাহাতুল মুমিনীনের উপর নির্লজ্জের মত হামলা চালিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে ভারতে ‘আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইংরেজ কর্তৃক 'স্যার' উপাধিপ্রাপ্ত সৈয়দ আহমাদ খান এই ফিত্নার উত্থান ঘটান। তিনি কুরআন-হাদীসের চাইতে মানতিক ও যুক্তিবাদের উপরে অধিক নির্ভর করেছেন। তার লিখিত তাফসীর গ্রন্থে তিনি মুজিযা সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করতঃ সেগুলোর তা'বীল করেছেন। তারই পদাংক অনুসরণ করে মৌলবী চেরাগ আলী, আব্দুল্লাহ চকড়ালবীসহ আরো অনেকে। সাথে সাথে সৈয়দ রশীদ রিযার মত ইসলামের হিতাকাংখী একদল স্কলার রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস নিয়ে সংশয়ে ভুগতে থাকেন। তাদের কিতাবে হাদীস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। বর্তমানে হাদীস অস্বীকার নামক ভয়ানক ফিতনার অন্যতম একটা অংশ হল নাস্তিকতা। তথাকথিত যুক্তি ও বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে হাদীসকে পরীক্ষা করতে গিয়ে মুহাদ্দিছগণ ও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বিশেষতঃ আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে ঠাট্টা করার মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হয়; এক পর্যায়ে সেই ঠাট্টা সরাসরি হাদীস ও রাসূলকে নিয়ে শুরু হয়ে যায়। ওয়াল ইয়াযু বিল্লাহ।
হাদীস অস্বীকারের স্বরূপ
হাদীসকে ইসলামের শত্রুরা যেমন সরাসরি অস্বীকার করেছে, তেমনি ইসলামের নামে বিপ্লব সৃষ্টিকারীদের যবান ও কলম থেকেও হাদীসের পবিত্র আঁচল রক্ষা পায়নি। নামধারী কিছু মুসলিম ছলেবলে-কৌশলে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করেছে। তাদের কিছু অপকৌশল নিম্নে পেশ করা হল:
(ক) মুতাওয়াতির হাদীস ব্যতিত সব হাদীস বিশেষ করে ‘খবারে ওয়াহিদ কে দলীলযোগ্য মনে না করা।
(খ) হাদীস তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণ যেসব উচ্ছ্বল বা মূলনীতি অবলম্বন করেছেন, সেগুলিকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করা।
(গ) নিজের খোঁড়া যুক্তি, বুদ্ধি-বিবেক ও ক্বিয়াসকে হাদীসের উপর প্রাধান্য দেওয়া ।
(ঘ) হাদীস এবং সুন্নাতের মাঝে পার্থক্য করা।
(ঙ) সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যা থেকে সরে গিয়ে হাদীসের এমনভাবে তা'বীল বা দূরতম ব্যাখ্যা করা, যাতে হাদীসের আসল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যায়।
(চ) বিভিন্ন মূলনীতির বেড়াজালে ফেলে হাদীসকে অচল ও অকেজো করে দেয়া।
এছাড়া আরো অনেক অপকৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন সময় নামধারী অনেক মুসলিম আমাদের প্রাণপ্রিয় মহান রাসুল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মুখনিঃসৃত বাণীকে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ।
হাদীস অস্বীকারকারীদের দলীল
পবিত্র কুরআনেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে, এই কথার দ্বারা দলীল সব্যস্ত করে একদল নামধারী মুসলিম হাদীস অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে পবিত্র কুরআন থাকতে হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই। তাদের দলীল হল-
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ
‘আমরা এ গ্রন্থে কোন অসম্পূর্ণতা রাখিনি' (আল-আন'আম ৩৮)। তিনি আরো বলেন,وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلّ شَيْء
‘আমরা এ গ্রন্থ আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি সকল কিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা স্বরূপ (আন-নাহল ৮৯)।এ আয়াত দু'টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কুরআনেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। অতএব, হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই। নিম্নে আমরা এ অভিযোগের জবাব কয়েকটি পয়েন্টের অধীনে প্রদান করব ইনশাআল্লাহ ।
আয়াতের তাফসীরে বিকৃতি :
প্রথম আয়াতটির পূর্ণরূপ, হচ্ছে,
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِى الْأَرْضِ وَلَا طٰٓئِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمْثَالُكُم ۚ مَّا فَرَّطْنَا فِى الْكِتٰبِ مِن شَىْءٍ ۚ ثُمَّ إِلٰى رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
অর্থাৎ ‘যমীনে বিচরণকারী সকল প্রাণী, দুই ডানা দিয়ে আসমানে উড়ন্ত পাখ- পাখালী তোমাদের মতই উম্মত। আমরা কিতাবে কোন অসম্পূর্ণতা রাখিনি। অতঃপর তাদের সকলকে তাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত করা হবে' (আন'আম ৩৮)।আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, পবিত্র কুরআনে সবকিছুর খুঁটিনাটি বিবরণ নেই। সুতরাং এখানে কিতাব দ্বারা অবশ্যই অন্য কিছু উদ্দেশ্য। কুরআনের মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে উত্তম সানাদে ইবনু আবি হাতিম ও ইমাম তাবারী নকল করেন, তিনি বলেন, এই আয়াতে কিতাব দ্বারা লাওহে মাহফুয উদ্দেশ্য। [ তাফসীরে তাবারী ১১/৩৪৬; তাফসীরে ইবনু আবি হাতিম হা/৭২৫৯। ]
আর সত্যি বলতে কি! কুরআন তো সবকিছুর জন্য অবতীর্ণ হয়নি। কুরআন ইতিহাস গ্রন্থ নয় যে, তাতে সকল জাতি ইতিহাস থাকবে। কুরআন ভূগোলের কোন কিতাব নয় যে, সেখানে ভৌগলিক সব তথ্য থাকবে। কুরআন বিজ্ঞানের কোন কিতাব নয় যে, সেখানে বিজ্ঞানের সব থিউরী থাকবে। কুরআন গল্পের কোন গ্রন্থ নয়, আবার কোন কবিতার গ্রন্থও নয়। কুরআন এমন এক গ্ৰন্থ, যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। একজন ব্যক্তিকে তার সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচয় করানো এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াই কুরআনের দায়িত্ব। এজন্য কুরআন সর্বকালের সর্বোন্নত মানের সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহার করে কখনো ইতিহাসের তথ্য পেশ করেছে, কখনো ভূগোলের আবার কখনো বায়োলজির, আবার কখনও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার। কুরআনে যা পেশ করা হয়েছে, তার সবকিছুর মধ্যেই মানুষের জন্য শিক্ষার আলো ও পথের দিশা রয়েছে।
অন্যদিকে লাওহে মাহফুয এমন একটি কিতাব, যেখানে মহান আল্লাহ সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এরশাদ হচ্ছে,
وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلا يَعْلَمُهَا وَلا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ
“আর প্রতিটি পাতা ঝরে পড়ার ইলম মহান আল্লাহর নিকটে রয়েছে। এমনকি দুনিয়ার অন্ধকারে পতিত ক্ষুদ্র শস্যদানার ইলমও তাঁর কাছে রয়েছে অনুরূপভাবে কোন আর্দ্র বা শুষ্ক দ্রব্য পতিত হলে তাও কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে' (আল-আন'আম ৫৯)।দ্বিতীয় আয়াতটির পূর্ণরূপ হচ্ছে:
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلُّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِمْ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَؤُلَاءِ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ.
করব এবং আপনাকে এদের ব্যাপারে সাক্ষী হিসাবে পেশ করব। আর আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি এমন কিতাব, যা সকল কিছুর বর্ণনা, মুসলিমদের জন্য পথ-প্রদর্শক, রহমত ও সুসংবাদ স্বরূপ' (আন-নাহল ৮৯)।এ আয়াতে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়
১ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আমাদের ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে উত্থাপন করা হবে। এই আয়াতে কুরআনকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করার কথা বলা হয়নি। কেন স্বয়ং মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হবে? কেননা তাঁকে আমাদের মাঝে অনুসরণীয় করে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আমাদেরকে তাঁর ২৩ বছরের জীবনে তাঁর কথা ও কর্ম দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে শরী'আত বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি বিষয় আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর সেই ২৩ বছরের কথা ও কাজ আজও হাদীস হিসেবে আমাদের সামনে সংরক্ষিত। তারপরেও কেন আমরা তাকে অনুসরণ করিনি? সুতরাং এ আয়াত হাদীস অস্বীকারের দলীল নয়; বরং হাদীস অনুসরণের দলীল।
২ এই আয়াতে মহান আল্লাহ কুরআনকে সবকিছুর বিবরণ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি হেদায়াতস্বরূপ বলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবকিছুই কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে।
মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান কুরআনে আছে
বাস্তবেই কুরআনে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে। কুরআনেই মহান আল্লাহ মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণকে আমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের অগণিত জায়গায় এ নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর জীবনকে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ বলেছেন। সুতরাং কুরআন মানব জাতির যে সকল সমস্যার সমাধানগুলো দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি সমাধান হচ্ছে রাসূলকে অনুসরণ করা। অতএব, কুরআন তার দাবীতে মিথ্যা নয়।
হাদীসের অস্তিত্বহীনতাই কুরআনের অস্তিত্বহীনতা
সাহাবায়ে কেরাম হাদীস এবং কুরআন উভয়টিই রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে পেয়েছেন। তাঁদের নিকট কুরআন ও হাদীসের জন্য আলাদা দু'জন রাসূল প্রেরণ করা হয়নি যে, একজন কুরআন শুনাবেন আর অন্যজন হাদীস শুনাবেন। কুরআন এবং হাদীস উভয়টিই একজনের মুখ থেকে নির্গত। স্বভাবতই প্রশ্ন
উত্থিত হয় সাহাবায়ে কেরাম কিভাবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতেন? রাসূল (ﷺ)-এর মুখ থেকে নির্গত কোন্ বাক্যটি কুরআন আর কোন্ বাক্যটি হাদীস এটা তারা কিভাবে বুঝতেন?
সত্যি বলতে কি, হাদীস ও কুরআনের মধ্যে স্বয়ং রাসূল (ﷺ) পার্থক্য করে দিতেন এবং এটাই স্বাভাবিক। রাসূল যখন সাহাবীগণকে ডেকে বলতেন, কুরআনের উমুক উমুক আয়াত নাযিল হলো এবং অহী লেখকদের বলতেন, এটা উমুক সূরার অধীনে উমুক নাম্বার আয়াত হিসেবে সংযোজন কর, তখন সাহাবীগণ বুঝতেন এটা কুরআন ।
আমরা জানি, কুরআন ব্যতীত রাসূল (ﷺ)-এর মুখনিঃসৃত সবকিছুই হাদীস। সুতরাং কুরআন এবং হাদীসের মাঝে পার্থক্য করার জন্য রাসূল যে বাক্য ব্যবহার করেছেন, তাও হাদীস। অতএব, কেউ যদি হাদীস অস্বীকার করে, তাহলে তাকে কুরআনও অস্বীকার করতে হবে। শুধু তাই নয়, যারা শুধু কুরআন মানতে চায়, তারা কিভাবে জানল যে, কুরআন আল্লাহর কালাম?! একমাত্র জবাব, রাসূল (ﷺ) বলেছেন তাই। তিনি কুরআনকে আল্লাহর অহী বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করেছি। তার এই বলাটা অবশ্যই হাদীস। সুতরাং কুরআনকে আল্লাহর কালাম প্রমাণিত করা অসম্ভব হাদীসের সহযোগিতা ছাড়া। কুরআনের উপর বিশ্বাস স্থাপনের পূর্বে বাধ্যগতভাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথা তথা হাদীসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় কুরআনকেও কুরআন হিসাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
সুতরাং, এ কথা স্পষ্ট যে, হাদীসের অস্তিত্বহীনতাই কুরআনের অস্তিত্বহীনতা। তাই, যে হাদীস অস্বীকার করল সে কুরআনও অস্বীকার করল।
Last edited: