সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Md Atiar Rahaman Halder

আকিদা অনেক অন্ধ ভক্তের বিশ্বাস

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
59
Comments
80
Reactions
735
Credit
408
অনেক অন্ধ ভক্তের বিশ্বাস, তিনবার আজমীরে তীর্থ করতে গেলে এক হাজ্জ হয়ে যায়। শুধু আজমীর বলে নয়। দেশের বহু মাজার সম্পর্কে পীরভক্তরাও এ ধারণা পোষণ করে থাকে ।

বছর পনের আগের কথা বলছি। তখন বর্ধমানে থাকতাম । এক সময় এক সভা উপলক্ষে মালদহের পথে ট্রেনে চেপে কাটিহার রওয়ানা হয়েছি। ট্রেন ওল্ড মালদহে থামতেই দেখি, দু'জন লোক ছেলে মেয়ে নিয়ে ট্রেনে উঠল। তাদের কাছে লোটা, কম্বল ও হাঁড়ি-বাসন দেখে মনে হল, এরা ঠিক তীর্থযাত্রী। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাওয়া হয়েছিল। একজন বলল, আমরা পাঁড়ুয়া (পাণ্ডুয়া) শরীফ গিয়েছিলাম। বলেই আমার হাত চেপে ধরে বলল হুজুর, একটু দু'আ করবেন যেন, আমার হজ্জটা পুরা হয়ে যায়। আমি বললাম, টাকা কি দাখিল করেছেন নাকি? বলল হুজুর, চারবার যাওয়া হল আর তিনবার গেলেই হজ্জটা হয়ে যাবে- একটু দোওয়া করবেন। বললাম কোথায়? বলল ঐ পাড়ুয়া শরীফ। বললাম সেখানে কি আছে? বলল জানেন না? সেখানে দরগাহ শরীফ আছে। যে- যে নিয়তে যায়— সে নিয়ত তার পুরা হয়। যে যা চায়- সে তা পায়। যে লোকটি আমার সাথে কথা বলছিল, দুর্ভাগ্যবশতঃ একটা চোখ তার কানা ছিল। আমি বললাম, যে যা চায়— সে তা পায় সেখানে, সেখানে চার চারবার গেলে আর তোমার চোখটা চেয়ে আনতে পারলে না? কানা তখন ভীষণ রেগে যেয়ে বলল, সেখানে লম্বা পিরাহান গায়ে দিয়ে, মাথায় পাগড়ী বেঁধে, এত বড় বড় পীরে কামেল ও হাদীয়ে জামান বসে আছেন যে, তোমার মত মৌলবীকে প্রস্রাবের পানি দিতে নেয় না। আমি বললাম, যে দলিল পেশ করলে বাবা, এর উপর কোন দলিলই খাটবে না। তবে এই দু'আই করব, যেন আল্লাহ তোমাদেরকে ও তোমাদের ঐ আলখাল্লাধারী পীরে কামেলদেরকে হিদায়াত করেন ।

মাজারে গেলে হাজ্জ হয়, মানুষের মনে এ ধারণার সৃষ্টি হল কেমন করে ? আমি বলব- ঐ পীরি মুরীদির কল্যাণে। অথচ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :​
لا تشدر رحال الا الى ثلاثة مساجد المسجد الحرام والمسجدالاقصى ومسجدي هذا
“লা তুশাদ্দুর রিহালো ইল্লা ইলা সালাসাতে মাসাজিদ, আল মাজিদিল হারামি, ওয়াল মাজিদিল আকসা, ওয়া মাজিদি হা-যা ।'

তোমরা পাথেয় বেঁধে নিয়ে নেকীর উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর কর না। একটি কাবা মসজিদ, আর একটি হচ্ছে আল আক্সা মসজিদ, আর অন্যটি হচ্ছে আমার এই মসজিদ মসজিদে-নববী। (বুখারী, মুসলিম)

এ হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, ঐ তিন জায়গা ছাড়া পাথেয় বেঁধে নিয়ে নেকীর উদ্দেশে অন্য কোথাও সফর করা চলবে না। এটা কোন ব্যবসাদারী কথা নয় বা অবান্তর কথা নয়। এটা হচ্ছে আল্লাহর নবীর (সঃ) কথা ।

অনেকে হয়তো বলবেন, কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া কি নিষেধ আমি বলব, না। কবর যিয়ারত মোটেই নিষেধ নয়। কেননা আল্লাহর নবী (সঃ) বলেছেন, কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত ‘তুযাহিদু ফিদ্দুনিয়া ওয়া তুযাক্ কিরুল আখিরাহ।' দুনিয়ার প্রতি মানুষকে উদাসীন করে দেয় আর পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ)

কিন্তু ঐ যে মাজার, যার উপর মনোরম ইমারত বানানো হয়েছে, মূল্যবান চাঁদোয়া যার শোভা বর্ধন করছে; দামী চাদর দিয়ে যাকে ঢেকে দেয়া হয়েছে; ছঙ্গে মর্মরের ফরাস যেখানে চোখ ঝলসে দিচ্ছে, যেখানে শত শত মণ পোলাও খিচড়ী পাকানো হচ্ছে, ভুরি ভোজনের আয়োজন, যেখানে সরগরম হয় উঠছে, আতর গোলাপ ও সুগন্ধির যেখানে ছড়াছড়ি চলছে- সেখানে গেলে কি পরকালের কথা স্মরণ হবে? কখনই না। বরং পোলাও খিচড়ী খেয়ে এসে বলবে, বাপরে বাপ্- কি ধুমধামই না দেখলাম হুজুরের মাজারে। তা থেকে এক কাজ করুন । ঐ যে আপনার বাড়ীর পাশে, পুকুরের পারে, জঙ্গলের মাঝে, বাঁশ ঝাড়ের ফাঁকে, আম গাছের তলা, ডালিম গাছের নীচে, বাপ-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাই-বোনদের ও পাড়া-প্রতিবেশীর অনেকেই পুঁতে রেখেছেন ওখানে যান, কবরবাসীদের জন্য দু'আ করে পরকালকে স্মরণ করে দু'ফোটা চোখের পানি ফেলে চলে আসুন— ফায়দা হবে। কিন্তু বাড়ীর পাশে বাপ-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর কবরটা যিয়ারত করার আগ্রহ আপনার অন্তরে একটা মুহূর্তের তরেও জাগলো না, আর টাকা পয়সা, মোরগ খাসী, চাল ডাল নিয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মাজারে যাওয়ার আগ্রহটা ষোল আনার উপর বিশ আনা। জেনে রাখবেন, এতে নেকী বরবাদ গোনাহ লাযেম হয়ে যাচ্ছে ।​

পীরতন্ত্রের আজব লীলা
মাওলানা আবূ তাহের বর্ধমানী (রহ.)​
 
Last edited:
Top