• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ অধৈর্য ও তার প্রকাশভঙ্গি

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Top Active User
Threads
870
Comments
1,022
Reactions
9,745
Credits
4,384
বস্তুত ধৈর্য হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কাছে অভিযোগ করা থেকে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখা, অন্তরকে ক্রোধ থেকে মুক্ত রাখা, শোকপ্রকাশের সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে মুখ চাপড়ানো, বুক চাপড়ানো ও কাপড় ছেঁড়া থেকে বিরত রাখা। আর এসবের বিপরীত কর্মই হলো অধৈর্য। মানুষ ভেদে বিভিন্নভাবে এই অধৈর্য প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন—

এক. সৃষ্টির কাছে স্রষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ।

মানুষ যখন বিপদাপদ ও দুঃখ-দুর্দশায় তারই মতো আরেক মানুষের কাছে মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তখন সে মূলত সৃষ্টির কাছে স্রষ্টার অভিযোগ করে।

অবশ্য কেউ যদি সংকট মুকাবেলার জন্য অন্যকারও পরামর্শ ও সাহায্য কামনা করে এবং তাকে নিজের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে, তবে সেটা অধৈর্য বা ধৈর্যের পরিপন্থী বলে পরিগণিত হবে না। যেমন—চিকিৎসককে রোগ সম্পর্কে জানানো, নিপীড়িত ব্যক্তির সাহায্যের আবেদন জানানো, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির উপযুক্ত কারও সাহায্যগ্রহণ। ইত্যাদি।

অধিকন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার খোঁজ-খবর নিতেন এবং বলতেন, ‘তোমার কেমন লাগছে?’


প্রশ্ন আসতে পারে, অস্ফুট আওয়াজে এপন করা কি ধৈর্য-পরিপন্থী?

বস্তুত মানুষের অস্ফুট রুদনের মধ্যে অভিযোগ ও কৃতজ্ঞতার দ্বৈত সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কেউ অভিযোগ প্রকাশের জন্য এভাবে ক্রন্দন করছে, তবে সেটা মাকরুহ ও অনভিপ্রেত। আর যদি বোঝা যায় যে, এই ক্রন্দনের মধ্যে কৃতজ্ঞতা ও কৃতার্থতা আছে, তবে সেটা প্রশংসিত ও অভিপ্রেত; অধিকন্তু প্রকৃত সত্য আল্লাহই ভালো জানেন।

শাকীক বলখী বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকারও নিকট বিপদাপদের অভিযোগ করবে সে কখনো তার অন্তরে আল্লাহর আনুগত্যের স্বাদ পাবে না।”

উল্লেখ্য যে, অভিযোগও মূলত দুই প্রকার। (ক) মৌখিক অভিযোগ। (খ) আচরণগত অভিযোগ।

মৌখিক অভিযোগ অপেক্ষা আচরণগত অভিযোগই অধিক ক্ষতিকর। একারণেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আদেশ করেছেন। আর নিয়মত পেয়েও যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, সে ভালো আছে, তবুও অভিযোগ করছে। এরাই মূলত মহান রবের কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট!

দুই. বিপদ ও দুঃখ-দুর্দশায় কাপড় ছেঁড়া, বুক ও কপাল চাপড়ানো, হাত থাপড়ানো, চুল কামানো, ধ্বংসের দুআ করা। ইত্যাদি। এসব কাজ অধৈর্যের বহিঃপ্রকাশ বিধায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ব্যাপারে দায়মুক্তি ঘোষণা করেছেন, যারা শোকসন্তপ্ত অবস্থায় বুক ও কপাল চাপড়ায়, মাথা কামায় এবং কাপড় ছিঁড়ে।

মৃদু কান্না বা শালীন দুঃখ প্রকাশ অধৈর্যের পরিচায়ক নয়। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন–

“শোকে তার চোখ দুটি সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ছিলেন সংবরণকারী। ” (সূত্র ইউসুফ, আয়াত ১৪)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'তিনি দুঃসংবরণ করতেন। তাই কেবল ভালো কথাই বলতেন।'

ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

“চোখ ও হৃদয়ের নীরব কান্না আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ বিশেষ। পক্ষান্তরে হাত ও জিহ্বার শোক শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।” (মুসনাদে আহমাদ: ২১২৭)

তিন. নিজের দুঃখ-দুর্দশা সর্বত্র প্রকাশ করা।

বিপদে আক্রান্ত হলে অস্থির হওয়া; অথবা কোনো নিয়ামত পেলে অন্যকে তা থেকে বঞ্চিত রাখাও অধৈর্যের একটি প্রকার। আল্লাহ তাআলা বলেন-

“নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্তরূপে। যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে, সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হয় অতি কৃপণ।” (সূরা মআরিজ, আয়াত: ১৯-২১)

হাদীসে এসেছে—

“মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট দোষ হলো অস্থিরতা সৃষ্টিকারী লোভ, আর শূন্যতা সৃষ্টিকারী ভীরুতা।" (সুনানু আবি দাউদ : ২৫১১)

– সবর, সমকালীন প্রকাশন; মূল: উদ্দাতুস সাবীরিন ওয়া যাখীরাতুশ শাকিরীন, লেখক: ইমাম ইবনুল কায়্যিম
 
Last edited:
Top