১। বৃদ্ধ ও স্থবির বা অথর্ব ব্যক্তি, যার শারীরিক ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং দিনের দিন আরো খারাপের দিকে যেতে যেতে মরণের দিকে অগ্রসর হতে চলেছে, সে ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কষ্ট হলে সে রোযা রাখবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলতেন, এই আয়াত মনসূখ নয়। তারা হল অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা রোযা রাখতে সক্ষম নয়। তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।[1]
অবশ্য এমন বৃদ্ধ, যার কোন জ্ঞানই নেই, তার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য কোন কিছু ফরয নয়। তার তরফ থেকে রোযা রাখতে বা কাযা করতেও হবে না এবং মিসকীনও খাওয়াতে হবে না। কারণ, শরীয়তের সকল ভার তার পক্ষে মাফ হয়ে গেছে। কিন্তু সে যদি এমন বৃদ্ধ হয়, যে কখনো কখনো ভালো-মন্দের তমীয করতে পারে, আবার কখনো কখনো আবোল-তাবোল বকে, তাহলে যে সময় সে ভালো থাকে সেই সময় তার জন্য রোযা বা খাদ্যদান ফরয এবং যে সময় তমীয-জ্ঞান থাকে না সে সময় ফরয নয়।[2]
২। এমন চিররোগা, যার রোগ ভালো হওয়ার কোন আশা নেই; যেমন ক্যা¦সারের রোগী (পেট খালি রাখলে পেটে যন্ত্রণা হয়) এমন রোগা ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কারণ, তার এমন কোন সময় নেই, যে সময়ে সে তা রাখতে পারে। অতএব তার তরফ থেকে একটি রোযার পরিবর্তে একটি করে মিসকীন খাওয়াতে হবে।[3]
মিসকীনকে খাদ্যদানের ২টি নিয়ম আছেঃ-
প্রথম এই যে, এক দিন খাবার তৈরী করে রোযার সংখ্যা হিসাবে মিসকীন ডেকে খাইয়ে দেবে। (অথবা এক জন মিসকীনকেই ঐ পরিমাণ দিন খাইয়ে দেবে।) আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাই করতেন। তিনি এক অথবা দুই বছর রোযা রাখতে না পারলে প্রত্যহ মিসকীনকে মাংস-রুটী খাইয়েছেন।[4]
দ্বিতীয় নিয়ম এই যে, অপক্ক খাদ্য দান করবে। অর্থাৎ, দেশের প্রধান খাদ্য থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকীনকে মোটামুটি সওয়া এক কিলো করে খাদ্য (চাল অথবা গম) দান করবে। যেহেতু কা’ব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বলেন, ‘‘তোমার মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া এক কিলো) করে ছয়টি মিসকীনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগ কুরবানী কর।’’[5]
অবশ্য সেই সাথে কিছু মাংস বা কোন তরকারীও মিসকীনকে দান করা উচিৎ। যাতে মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপূর্ণ আনুগত্য সম্ভব হয়;
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
খাদ্য দান কখন করবে -সে ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। যদি প্রত্যেক দিন একটা করে রোযার ফিদ্য়া দান করে, তাও চলবে। যদি মাসের শেষে সব দিনগুলি হিসাব করে একই দিনে তা দান করে, তাও চলবে। এ ব্যাপারে বাধ্য-বাধকতা কিছু নেই। তবে রোযার আগেই দেওয়া চলবে না। কারণ, তা আগে রোযা রাখার মত হয়ে যাবে। আর রমাযানের আগে শা’বানে কি ফরয রোযা রাখা চলবে?[6]
সমস্ত খাদ্যকে রোযার সংখ্যা পরিমাণ মিসকীনের মাঝে ব¦টন করা যাবে। যেমন সমস্ত খাদ্য কেবল উপযুক্ত একজন মিসকীন অথবা একটি মাত্র মিসকীন পরিবারকেও দেওয়া যাবে।[7]
৩। যে ব্যক্তির রোগ সাময়িক, যা সেরে যাওয়ার আশা আছে; যেমন জ্বর ইত্যাদি, এমন ব্যক্তির ৩ অবস্থা হতে পারেঃ
(ক) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে না বা রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কারণ, তার কোন ওজর নেই।
(খ) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে, কিন্তু রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা মকরূহ। কারণ, তাতে আল্লাহর দেওয়া অনুমতি ও তার আত্মার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে ভিন্ন আচরণ হয়ে যায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر)
অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
(গ) রোযা রাখলে রোযা তার ক্ষতি করবে। (রোগ বৃদ্ধি করবে, অথবা কোন বড় রোগ আনয়ন করবে, অথবা তার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে যাবে।) এমতাবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা হারাম। কেননা, নিজের উপর ক্ষতি ডেকে আনা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً)
অর্থাৎ, তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)
তিনি আরো বলেন,
(وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَة)
অর্থাৎ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)
হাদীসে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘কেউ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরেরও ক্ষতি করবে না।’’[8]
রোযা রোযাদারকে ক্ষতি করছে কি না তা জানা যাবে, রোযাদারের নিজে নিজে ক্ষতি অনুভব করার মাধ্যমে অথবা বিশ্বস্ত কোন ডাক্তারের ফায়সালা অনুযায়ী।
এই শ্রেণীর রোগী যে দিনের রোযা ত্যাগ করবে, সেই দিনের রোযা পরবর্তীতে সুস্থ হলে অবশ্যই কাযা করবে। আর এমন রোগীর তরফ থেকে মিসকীনকে খাদ্যদান যথেষ্ট নয়।[9]
শেষোক্ত প্রকার কোন রোগী যদি কষ্ট ও ক্ষতি স্বীকার করেও রোযা রাখে, তাহলেও তার রোযা শুদ্ধ ও যথেষ্ট হবে না। বরং তাকে সুস্থ অবস্থায় কাযা করতে হবে।[10] কারণ, ঐ সময় তার জন্য রোযা রাখা নিষিদ্ধ। যেমন তাশরীক ও ঈদের দিনগুলিতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ; যা রাখা বৈধ নয় এবং রাখলে শুদ্ধও নয়।
এখান থেকে কিছু মুজতাহিদ রোগীদের ভ্রান্ত ফায়সালার কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যারা রোযা তাদের জন্য কষ্টকর ও ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও তা কাযা করতে চায় না। আমরা বলি যে, তারা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। তারা মহান আল্লাহর দান গ্রহণ করে না, তাঁর দেওয়া অনুমতি কবুল করে না এবং নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ তিনি বলেন, ‘‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’’[11]
পক্ষান্তরে রোগ হাল্কা হলে; যেমন সর্দি-কাশি, মাথা ধরা, গা ব্যথা ইত্যাদি হলে তার ফলে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। অবশ্য যদি কোন ডাক্তারের মাধ্যমে, অথবা নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা প্রবল ধারণা মতে জানতে পারে যে, রোযা রাখলে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে, অথবা ভালো হতে দেরী হবে, অথবা অন্য রোগ আনয়ন করবে, তাহলে তার জন্য রোযা না রাখা এবং পরে কাযা করে নেওয়া বৈধ। বরং এ ক্ষেত্রে রোযা রাখা মকরূহ।
আর দিবারাত্র লাগাতার রোগ থাকলে রোগীর জন্য রাতে রোযার নিয়ত করা ওয়াজেব নয়; যদিও সকালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু সে ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিই বিচার্য।
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলতেন, এই আয়াত মনসূখ নয়। তারা হল অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা রোযা রাখতে সক্ষম নয়। তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।[1]
অবশ্য এমন বৃদ্ধ, যার কোন জ্ঞানই নেই, তার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য কোন কিছু ফরয নয়। তার তরফ থেকে রোযা রাখতে বা কাযা করতেও হবে না এবং মিসকীনও খাওয়াতে হবে না। কারণ, শরীয়তের সকল ভার তার পক্ষে মাফ হয়ে গেছে। কিন্তু সে যদি এমন বৃদ্ধ হয়, যে কখনো কখনো ভালো-মন্দের তমীয করতে পারে, আবার কখনো কখনো আবোল-তাবোল বকে, তাহলে যে সময় সে ভালো থাকে সেই সময় তার জন্য রোযা বা খাদ্যদান ফরয এবং যে সময় তমীয-জ্ঞান থাকে না সে সময় ফরয নয়।[2]
২। এমন চিররোগা, যার রোগ ভালো হওয়ার কোন আশা নেই; যেমন ক্যা¦সারের রোগী (পেট খালি রাখলে পেটে যন্ত্রণা হয়) এমন রোগা ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কারণ, তার এমন কোন সময় নেই, যে সময়ে সে তা রাখতে পারে। অতএব তার তরফ থেকে একটি রোযার পরিবর্তে একটি করে মিসকীন খাওয়াতে হবে।[3]
- খাদ্যদানের নিয়মঃ
মিসকীনকে খাদ্যদানের ২টি নিয়ম আছেঃ-
প্রথম এই যে, এক দিন খাবার তৈরী করে রোযার সংখ্যা হিসাবে মিসকীন ডেকে খাইয়ে দেবে। (অথবা এক জন মিসকীনকেই ঐ পরিমাণ দিন খাইয়ে দেবে।) আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাই করতেন। তিনি এক অথবা দুই বছর রোযা রাখতে না পারলে প্রত্যহ মিসকীনকে মাংস-রুটী খাইয়েছেন।[4]
দ্বিতীয় নিয়ম এই যে, অপক্ক খাদ্য দান করবে। অর্থাৎ, দেশের প্রধান খাদ্য থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকীনকে মোটামুটি সওয়া এক কিলো করে খাদ্য (চাল অথবা গম) দান করবে। যেহেতু কা’ব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বলেন, ‘‘তোমার মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া এক কিলো) করে ছয়টি মিসকীনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগ কুরবানী কর।’’[5]
অবশ্য সেই সাথে কিছু মাংস বা কোন তরকারীও মিসকীনকে দান করা উচিৎ। যাতে মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপূর্ণ আনুগত্য সম্ভব হয়;
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
খাদ্য দান কখন করবে -সে ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। যদি প্রত্যেক দিন একটা করে রোযার ফিদ্য়া দান করে, তাও চলবে। যদি মাসের শেষে সব দিনগুলি হিসাব করে একই দিনে তা দান করে, তাও চলবে। এ ব্যাপারে বাধ্য-বাধকতা কিছু নেই। তবে রোযার আগেই দেওয়া চলবে না। কারণ, তা আগে রোযা রাখার মত হয়ে যাবে। আর রমাযানের আগে শা’বানে কি ফরয রোযা রাখা চলবে?[6]
সমস্ত খাদ্যকে রোযার সংখ্যা পরিমাণ মিসকীনের মাঝে ব¦টন করা যাবে। যেমন সমস্ত খাদ্য কেবল উপযুক্ত একজন মিসকীন অথবা একটি মাত্র মিসকীন পরিবারকেও দেওয়া যাবে।[7]
৩। যে ব্যক্তির রোগ সাময়িক, যা সেরে যাওয়ার আশা আছে; যেমন জ্বর ইত্যাদি, এমন ব্যক্তির ৩ অবস্থা হতে পারেঃ
(ক) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে না বা রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কারণ, তার কোন ওজর নেই।
(খ) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে, কিন্তু রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা মকরূহ। কারণ, তাতে আল্লাহর দেওয়া অনুমতি ও তার আত্মার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে ভিন্ন আচরণ হয়ে যায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر)
অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
(গ) রোযা রাখলে রোযা তার ক্ষতি করবে। (রোগ বৃদ্ধি করবে, অথবা কোন বড় রোগ আনয়ন করবে, অথবা তার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে যাবে।) এমতাবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা হারাম। কেননা, নিজের উপর ক্ষতি ডেকে আনা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً)
অর্থাৎ, তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)
তিনি আরো বলেন,
(وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَة)
অর্থাৎ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)
হাদীসে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘কেউ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরেরও ক্ষতি করবে না।’’[8]
রোযা রোযাদারকে ক্ষতি করছে কি না তা জানা যাবে, রোযাদারের নিজে নিজে ক্ষতি অনুভব করার মাধ্যমে অথবা বিশ্বস্ত কোন ডাক্তারের ফায়সালা অনুযায়ী।
এই শ্রেণীর রোগী যে দিনের রোযা ত্যাগ করবে, সেই দিনের রোযা পরবর্তীতে সুস্থ হলে অবশ্যই কাযা করবে। আর এমন রোগীর তরফ থেকে মিসকীনকে খাদ্যদান যথেষ্ট নয়।[9]
শেষোক্ত প্রকার কোন রোগী যদি কষ্ট ও ক্ষতি স্বীকার করেও রোযা রাখে, তাহলেও তার রোযা শুদ্ধ ও যথেষ্ট হবে না। বরং তাকে সুস্থ অবস্থায় কাযা করতে হবে।[10] কারণ, ঐ সময় তার জন্য রোযা রাখা নিষিদ্ধ। যেমন তাশরীক ও ঈদের দিনগুলিতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ; যা রাখা বৈধ নয় এবং রাখলে শুদ্ধও নয়।
এখান থেকে কিছু মুজতাহিদ রোগীদের ভ্রান্ত ফায়সালার কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যারা রোযা তাদের জন্য কষ্টকর ও ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও তা কাযা করতে চায় না। আমরা বলি যে, তারা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। তারা মহান আল্লাহর দান গ্রহণ করে না, তাঁর দেওয়া অনুমতি কবুল করে না এবং নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ তিনি বলেন, ‘‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’’[11]
পক্ষান্তরে রোগ হাল্কা হলে; যেমন সর্দি-কাশি, মাথা ধরা, গা ব্যথা ইত্যাদি হলে তার ফলে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। অবশ্য যদি কোন ডাক্তারের মাধ্যমে, অথবা নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা প্রবল ধারণা মতে জানতে পারে যে, রোযা রাখলে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে, অথবা ভালো হতে দেরী হবে, অথবা অন্য রোগ আনয়ন করবে, তাহলে তার জন্য রোযা না রাখা এবং পরে কাযা করে নেওয়া বৈধ। বরং এ ক্ষেত্রে রোযা রাখা মকরূহ।
আর দিবারাত্র লাগাতার রোগ থাকলে রোগীর জন্য রাতে রোযার নিয়ত করা ওয়াজেব নয়; যদিও সকালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু সে ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিই বিচার্য।
[1] (বুখারী ৪৫০৫নং)
[2] (মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ৭০ঃ ৩০নং)
[3] (ইবনে উষাইমীন, ফুসিতাযাঃ ৯পৃঃ)
[4] (বুখারী ৯২৮-৯২৯নং)
[5] (বুখারী ১৮১৬, মুসলিম ১২০১নং)
[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৩৫)
[7] (ইবনে জিবরীন, ফাসিঃ জিরাইসী ৩২পৃঃ)
[8] (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, বাইহাকী, দারাকুত্বনী, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫০নং)
[9] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৩৬-৩৩৮, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ৯-১০পৃঃ)
[10] (মুহাল্লা ইবনে হাযম ৬/২৫৮)
[11] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৩)
রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী