সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

বদনজরের প্রতিকার

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Threads
344
Comments
479
Reactions
5,067
Credits
3,446

বদনজর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই একে বাতিল করা

এটা করা হয় আল্লাহর অনুগ্রহ কামনার মাধ্যমে। যদি কোনো ব্যক্তি আরেকজনের উপর বদনজর দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে তাহলে আল্লাহর রহমতে ওই বদনজরের প্রভাব বাতিল হয়ে যায় এবং সেটা আর কাজ করে না। আল্লাহ তাঁর নিজের আদেশের মাধ্যমে ওই লোকের আদেশ বাতিল করে দেন। সুতরাং বোঝা গেল, পুরো ব্যাপারটিই আল্লাহ তা'আলার নিয়ন্ত্রণে, সকল মহিমা ও গৌরব তাঁরই। এজন্যই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে আমাদের পছন্দনীয় সব অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:

“যদি তোমাদের মধ্যে কেউ দেখে যে, তার ভাইয়ের কিছু অনুগ্রহ রয়েছে, তাহলে তাকে তার জন্য প্রার্থনা করতে দাও।”

এবং তিনি আমীর বিন রাবিয়াহকে বললেনঃ

“তুমি বরকত লাভের জন্য কেন প্রার্থনা করছ না?”

সাহল বিন হানীফ (রঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন:

“যদি তোমাদের কেউ তার নিজের জন্য কোনো অনুগ্রহ পছন্দ করে, তাহলে তাকে এর জন্য প্রার্থনা করতে দাও, কারণ বদনজরের প্রভাব সত্য।” [ইবনে আল সুন্নি, ইমাম আহমাদ ও আল হাকিম কর্তৃক বর্ণিত]

উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, বদনজর কোনো ক্ষতি করতে পারে না, যদি ওই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের প্রার্থনা করে; বরং এ বদনজর তখনই তার ক্ষতি করবে যখন তিনি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করবেন না।

বিষয়টি কুরতুবিসহ অন্যান্যরা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন: প্রত্যেক মুসলিমকেই তার পছন্দনীয় অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর কাছে। প্রার্থনা করতে হবে, কারণ অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করা হলে এর কল্যাণে নিঃসন্দেহে সকল সম্ভাব্য ক্ষতির সম্ভাবনা দূরীভূত হয়ে যাবে।

ইবনে হাজার (রহ) বলেন: যদি কেউ তার নিজের জন্য কোনো কিছু পছন্দ করেন, তাহলে তিনি যেন তার জন্য অতি দ্রুত আল্লাহ তাআলার কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করেন এবং তার এ প্রার্থনা তার জন্য রুকিয়া হয়ে যাবে।

আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ ও বারাকাতের জন্য এভাবে প্রার্থনা করতে হবে: “বারিকাল্লাহু ফিহ্ (আল্লাহ এতে রহমত দিক) অথবা “আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি” (হে আল্লাহ আপনি বারকাত দান করুন)

অথবা বলা যেতে পারে, মা শা আল্লাহ (আল্লাহ যা চান) যেভাবে নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا ﴿٣٩﴾
অর্থঃ ‘আর যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন তুমি বললে না, ‘মাশাআল্লাহ’! আল্লাহর তৌফিক ছাড়া কোন শক্তি নেই। তুমি যদি দেখ যে, আমি সম্পদে ও সন্তানে তোমার চেয়ে কম। (সূরা কাহফ ১৮: ৩৯)[

বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার পরে এর প্রতিকার

যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো উপর বদনজর দেয় এবং বদনজর দেয়া ব্যক্তি যদি পরিচিত হয়, তাহলে তার গোসল অথবা অযুতে ব্যবহৃত পানি সংগ্রহ করে নিয়ে বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে ঢালতে হবে, এতে করে তার উপর থেকে বদনজরের সকল প্রভাব কেটে যাবে, অর্থাৎ ওই বদনজর বাতিল হয়ে যাবে।

সাহল বিন হানিফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

“কেন তোমরা তোমাদের একজন ভাইকে হত্যা করছ? কেন তোমরা তার জন্য বারকাতের প্রার্থনা করছ না? তার জন্য তোমার নিজেকে ধৌত কর।”

রাসূলের (ﷺ) একথা শুনে আমীর তার মুখমণ্ডল, উভয় হাত কনুই পর্যন্ত, উভয় হাঁটু, দুই পায়ের পাশ এবং তার ইযারের ভেতর ধৌত করলেন এবং এ পানি সাহলের পেছন থেকে তার শরীরের উপর ঢেলে দেয়া হল এবং তিনি এতে সুস্থ হয়ে গেলেন। [মুয়াত্তা মালিক, ২/৯৩৮]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তুমি তার জন্য অযু কর।” অতঃপর আমীর অযু করলেন এবং সেই পানি পেছন দিক থেকে সাহলের গায়ে ঢেলে দেয়া হল। এরপরই সাহল আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) কাছে গেলেন এবং তখন তার শরীরের আর কোনো সমস্যা রইল না।

ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেনঃ

“বদনজর ব্যাপারটি সত্য এবং আল্লাহর আদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো যদি কিছু থাকত তাহলে তা হত বদনজর। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কাউকে যদি অযু বা শরীর ধৌত করতে বলা হয়, তাহলে তাকে তা করতে দাও।” [ইমাম মুসলিম, কিতাবুস সালাম, বাবুত তিব্ব ওয়াল মারাদ ওয়ার রুকা, ৫/৩২]

সুনানে আবু দাউদে আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:

“যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো উপর বদনজর দেয় তাহলে বদনজর দেয়া ব্যক্তিকে অযু করার নির্দেশ দিতে হবে এবং তার অযুর সেই পানি দিয়ে আবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে অযু করতে হবে। [সুনান বায়হাকী ৯/২৫২]
 
Top