২৫টি পয়েন্টে আল ফাতাওয়া আল হামাউইয়্যাহ আল কুবরা সংক্ষেপণ

    Nobody is reading this thread right now.
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের অধ্যায়টি যথাযথ ও সুদৃঢ় করার পরেই কেবল দুনিয়া থেকে প্রস্থান করেছেন। আর আল্লাহর নাম ও গুণের বিষয়টি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। বরং তা দীনের মূল, অন্তর যা অর্জন না করে কখনো প্রশান্ত হতে পারে না।


২- সাহাবায়ে কিরামের মতো বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ আকীদার বিষয়াবলি, বিশেষ করে আল্লাহর সত্তা, নাম, গুণ ও কর্ম সম্পর্কে না জেনেই ঈমানদার হয়েছেন এমনটি অসম্ভব বিষয়।


৩- যারা বলে 'সালাফদের পদ্ধতি নিরাপদ, খালাফদের পদ্ধতি বিজ্ঞতা ও সুদৃঢ়' তাদের এ বক্তব্যের খণ্ডন। যাতে শাইখুল ইসলাম এটি স্পষ্ট করেছেন যে, যারা এ উপরোক্ত বক্তব্যটি দিয়েছে তারা সম্পূর্ণ ভুলের ওপর রয়েছে। কারণ, তারা সালাফদের ইলমের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেনি, সালাফগণকে অজ্ঞ বানিয়েছে, সালাফদের ওপর আল্লাহর নাম ও গুণ না বুঝার অপবাদ চাপিয়ছে, এর বিপরীতে তারা খালাফ তথা কালামশাস্ত্রবিদদেরকে আলেম বানিয়েছে, তাদের মতামতকে অকাট্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর এখানেই রয়েছে যত পথভ্রষ্টতা।


৪- খালাফ তথা কালামশাস্ত্রবিদরা যে সারা জীবন বিভ্রান্তির পথে চলেছে সেটার প্রমাণ হিসেবে শেষ জীবনে এসে বড় বড় কালামশাস্ত্রবিদদের দ্বারা সেটার স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন।


৫- উপরোক্ত ভূমিকার পরে আল্লাহর গুণাবলির আলোচনা করেন। প্রথমেই আল্লাহর 'উলু' বা ঊর্ধ্বে থাকার গুণটি কুরআন, সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত করেন, তারপর তা সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্য, তাবে'য়ীদের আছার, সকল গ্রহণযোগ্য ইমামগণের কথা থেকে তুলে ধরেন।


৬- তারপর আল্লাহর 'উলু' বা ঊর্ধ্বে হওয়ার বিষয়টি মুতাওয়াতির হওয়ার প্রমাণ পেশ করেন। বরং এটাও সাব্যস্ত করেন যে, আল্লাহর ঊর্ধ্বে থাকা অত্যাবশ্যক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত, যা ফিত্বরাত বা মানব মনের স্বাভাবিক প্রকৃতি সর্বদা স্বীকৃতি প্রদান করে।


৭- তারপর তিনি বলেন, কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীন থেকে একটি বাণীও পাওয়া যাবে না, যা আল্লাহর ঊর্ধ্বে না থাকার ওপর প্রমাণবহ।


৮- তারপর তিনি যারা সিফাত বা আল্লাহর গুণাবলি অস্বীকার করে তাদের বক্তব্যে খণ্ডন করার দিকে দৃষ্টি প্রদান করেন। তাদের বক্তব্যের কী অর্থ দাঁড়ায় সেটা তুলে ধরার মাধ্যমে সেসব বক্তব্যের অসারতা প্রকাশ করে দেন। কারণ, যারা সিফাত অস্বীকার করে তাদের বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, 'হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা আল্লাহর মারেফাত লাভ, তাঁর জন্য কী গুণ থাকা আবশ্যক আর কী গুণ তাঁর থেকে না করতে হবে তার জন্য কুরআন, হাদীস ও সালাফে সালেহীনের বক্তব্যের দ্বারস্ত হয়ো না, বরং সেটার জন্য তোমাদের বিবেকের দাবির দিকে প্রত্যাবর্তন কর'। নাউযুবিল্লাহ, তাদের এ বক্তব্য যে সম্পূর্ণরূপে বাতিল তার প্রমাণ হচ্ছে,


এর মাধ্যমে এটা আবশ্যক হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্তার গুণাবলি বর্ণনা থেকে পিছপা হয়েছিলেন যিনি তাকে পাঠিয়েছেন।


আরও আবশ্যক হয় যে, আল্লাহর কিতাব মানুষের জন্য হিদায়াতের আধার নয়, তাতে হিদায়াত নেই, তাতে অন্তরের আরোগ্য নেই, তাতে নূর নেই, বিবাদের সময়কার সমাধানও তাতে নেই।


আরও আবশ্যক হয় যে, মানুষদেরকে নবুওয়াত ও রিসালাত ব্যতীত ছেড়ে দেয়াই উত্তম কাজ হতো; কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নবুওয়াত ও রিসালাতের আগে ও পরের অবস্থা একই পর্যায়ের।


এসব কারণে যারা কুরআন ও সুন্নায় আসা সিফাতসমূহ অস্বীকার করে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে বাতিল।


১- তারপর শাইখুল ইসলাম সিফাত নিষ্ক্রীয়কারীদের মূল উৎস ও সূত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান দেন যে, সিফাত অস্বীকার করার পটভূমি ছিল অমুসলিম এলাকায়। প্রথম তা শুরু করেছিল জা'দ ইবন দিরহাম, তার থেকে তা গ্রহণ করেছিল জাহম ইবন সাফওয়ান, ফলে তার দিকেই তা সম্পৃক্ত হয়; কারণ সে এটার প্রচার-প্রসার করেছিল। বলা হয়ে থাকে যে, জা'দ ইবন দিরহাম সেটা গ্রহণ করেছিল বায়ান ইবন সাম'আন থেকে, সে তা নিয়েছিল লাবীদ ইবন আ'সাম এর বোনের ছেলে ত্বালুত থেকে, আর ত্বালুত তা নিয়েছিল লাবীদ ইবন আ'সাম ইয়াহুদী থেকে, যে ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করেছিল। আরও বলা হয়ে থাকে যে, জা'দ ছিল হাররানের অধিবাসী, যা ছিল সাবেয়ী ধর্মমত ও তথাকথিত দার্শনিক লোকদের চারণভূমি। তাই হতে পারে জা'দ ইবন দিরহাম সেখান থেকেই তা গ্রহণ করে থাকবে।


১০-তারপর শাইখুল ইসলাম বর্ণনা করেন যে, আজ আশ'আরী, মাতুরিদী ও অন্যান্য ফির্কার মাঝে যেসব তা'ওয়ীল নামীয় অপব্যাখ্যা পাওয়া যায়, আর যা ইবন ফুওরাক এর 'তাওয়ীলাত' গ্রন্থে ও রাযীর 'আসাসুত তাক্বদীস' গ্রন্থে দেখা যায়, তা হুবহু সেসব তা'ওয়ীল তথা অপব্যাখ্যা যা ইতোপূর্বে বিশর আল-মিররীসী প্রচার-প্রসার করেছিল। আর তৎকালীন আলেমগণ 'বিশর আল-মিররিসী' এর মতামত খণ্ডন করে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।


১১- তারপর শাইখুল ইসলাম সেসব গ্রন্থের নাম বর্ণনা করেন, যাতে আল্লাহর নাম ও গুণের ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।


১২- তারপর শাইখুল ইসলাম আল্লাহর নাম ও গুণের ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের বক্তব্যের সারকথা তুলে ধরে বলেন, 'আল্লাহকে সেসব গুণ দিয়ে গুণান্বিত করা হবে, যা দিয়ে তিনি নিজেকে গুণান্বিত করেছেন আর যা দিয়ে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে গুণান্বিত করেছেন এবং যা দিয়ে সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহকে গুণান্বিত করেছেন। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য অতিক্রম করা যাবে না।'


তারপর শাইখুল ইসলাম উপরোক্ত মূলনীতিটির ব্যাখ্যা করেন এবং সেসব নীতির বর্ণনা করেন যার ওপর সালাফে সালেহীনের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর তা হচ্ছে,


আল্লাহর গুণাবলি 'তাওক্বীফী' বা কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হতে হবে।


আল্লাহ তা'আলা যেসব গুণাবলি দিয়ে তাঁর নিজেকে গুণান্বিত করেছেন তা হক্ক ও যথাযথ, তার প্রকৃত অর্থেই নিতে হবে, সেখানে কোনো ধাঁধা কিংবা অস্পষ্টতা নেই। যেভাবে বক্তার বক্তব্যের উদ্দেশ্য বুঝা যায় সেভাবেই এগুলোর অর্থ বুঝা যায়।


এসব গুণাবলি সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে চারটি নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে।

সুতরাং আল্লাহর জন্য গুণ সাব্যস্ত করার সময় দুটি অবস্থান থেকে দূরে থাকতে হবে:


এক. তামসীল, সৃষ্টির কারও গুণের মত করে সাব্যস্ত করা যাবে না।


দুই, তাকয়ীফ, ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না।


আর আল্লাহকে সৃষ্টির কারও গুণ থেকে মুক্ত করার সময়েও দুটি অবস্থান থেকে দূরে থাকতে হবে:


এক. তাহরীফ, বিকৃতি সাধন করা যাবে না। অর্থ কিংবা শব্দ, কিংবা উভয়টি।


দুই. তা'ত্বীল, অর্থশূন্য কিংবা নিষ্ক্রীয়করণ করা যাবে না।


সালাফগণের মতাদর্শ নিষ্ক্রীয়করণ কিংবা সাদৃশ্যতা প্রদান এ দুটি নীতির মাঝে সম্পূর্ণ আলাদা বিশুদ্ধ এক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।


১৩-তারপর শাইখুল ইসলাম এটা সাব্যস্ত করে দেখিয়েছেন যে, নিষ্ক্রীয়কারী ও সাদৃশ্য প্রদানকারী উভয় সম্প্রদায়ই নিষ্ক্রীয়করণ ও সাদৃশ্য প্রদানকে একসাথ করেছে।


• তন্মধ্যে যারা নিষ্ক্রীয়করণ করেছে, তারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রকৃত অর্থ না বুঝে সেটাকে সৃষ্টির নাম ও গুণাবলির মত বুঝেছে, তারপর তারা অস্বীকার ও নিষ্ক্রীয়করণ করতে শুরু করে দিয়েছে।


আর যারা সাদৃশ্য প্রদান করেছে, তারা স্রষ্টাকে সৃষ্টির মতো মনে করে বসেছে, এভাবে তারা আল্লাহ তা'আলা যে প্রকৃত গুণাবলির হক্কদার ছিল তা থেকে তাঁকে নিষ্ক্রীয় করেছে।


১৪- তারপর শাইখুল ইসলাম বর্ণনা করেন যে, কুরআন, সুন্নাহ বিরোধী ফির্কাসমূহ যেমন, দার্শনিক, জাহমিয়া, মু'তাযিলা, আশায়েরা ও মাতুরিদিয়া ফির্কাসমূহ, তারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলির যাই অস্বীকার করেছে, এ ব্যাপারে তাদের কমন বক্তব্য হচ্ছে, 'এগুলো বিবেক বিরোধী'। অথচ তারাই আবার এ বিবেক বিরোধী হওয়ার নীতি নির্ধারণে নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড মতবিরোধে লিপ্ত, একদল যা বিবেক বিরোধী মনে করে অপরদল তা বিবেক বিরোধী মনে করে না। তাই শাইখুল ইসলাম বলেন, 'তাহলে কোন বিবেক দিয়ে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যকে মূল্যায়ণ করা হবে?'


১৫-তারপর শাইখুল ইসলাম বর্ণনা করেন যে, এ ব্যাপারে আবশ্যক হচ্ছে নবুওয়াতী নীতির অনুসরণ। অর্থাৎ কুরআন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। আল্লাহ যা বর্ণনা করেছেন তা বলা, রাসূল যা বলেছেন তা গ্রহণ করা।


১৬-তারপর শাইখুল ইসলাম বর্ণনা করেন যে, যারা কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী তারা তিনটি উপদলে বিভক্ত:


এক. 'আহলুত তাখয়ীল' বা ধারণাবাদী গোষ্ঠী, তারা হচ্ছে তথাকথিত দার্শনিক ও তাদের অনুসারী কিছু কালামশাস্ত্রবিদ ও সূফী সম্প্রদায়। তাদের মত হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওপর ঈমান ও আখেরাতের ওপর ঈমানের ব্যাপারে যা যা বলেছেন সবই খেয়াল বা প্রশস্ত ধারণা প্রদান করেছেন, যাতে জনগণ তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে, তিনি হক্ক বর্ণনা করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)।


দুই, 'আহলুত তাওয়ীল' বা অপব্যাখ্যাকারী গোষ্ঠী। এরা হচ্ছে কালামশাস্ত্রবিদ সম্প্রদায়। তাদের মত হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর গুণাবলি সংক্রান্ত ভাষ্যসমূহের অর্থ বর্ণনা করেননি, সৃষ্টির কাউকেও সেগুলোর অর্থ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেননি, বরং 'তিনি চেয়েছেন, তারা যেন গবেষণা করে তা থেকে হক্ক অর্থ বিবেক দিয়ে বের করে নেয়, তারপর সিফাত সংক্রান্ত সেসব ভাষ্যকে তাদের সাধ্যমত অন্য দিকে ফিরিয়ে দেয়'। (নাউযুবিল্লাহ)।


তারপর শাইখুল ইসলাম বলেন, এ ফাতাওয়া (আল-হামাওয়িয়‍্যাহ) দ্বারা কেবল এ সম্প্রদায়ের মতামত খণ্ডন করাকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।


তিন. 'আহলুত তাজহীল' বা আজ্ঞেয়বাদী গোষ্ঠী। যারা বলে থাকে যে, আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত এসব ভাষ্যের অর্থ আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। তিনিই কেবল তা জানেন। তাদের মতের অর্থ দাঁড়ায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামও এগুলোর অর্থ জানতেন না, অনুরূপভাবে জিবরীলও তা বুঝতেন না।


১৭- তারপর শাইখুল ইসলাম প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে 'তাওয়ীল' শব্দের তিন অর্থের বিস্তারিত দালিলিক বর্ণনা তুলে ধরেন। আরও বর্ণনা করেন যে, কালামশাস্ত্রবিদরা 'তা'ওয়ীল' দ্বারা যা বুঝে থাকে ও বুঝিয়ে থাকে তা হচ্ছে, 'শব্দকে তার প্রাধান্যপ্রাপ্ত অর্থ থেকে ফিরিয়ে অপ্রাধান্যপ্রাপ্ত অর্থের দিকে ধাবিত করা'। অথচ এটি কোনোভাবেই কুরআন ও সুন্নায় আসা তা'ওয়ীল শব্দের অর্থ নয়।


১৮-তারপর শাইখুল ইসলাম পূর্বের ও পরের ইমামগণ থেকে আল্লাহর সিফাতসংক্রান্ত অনেকগুলো উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন। আর সেগুলোতে নিজের টীকা সংযোজন করেন। তিনি প্রখ্যাত চার মাযহাবের ইমামগণের বক্তব্য আনয়ন করেন। আশ'আরী মতবাদের প্রাথমিক যুগের লোকদের বক্তব্যও উল্লেখ করেন। এমনকি তাসাওউফ এর বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যও নিয়ে আসেন।


১৯- এসব বক্তব্য আনয়ন করার পর শাইখুল ইসলাম আল্লাহর 'ঊর্ধ্বে থাকা' ও 'আরশের উপর উঠা' এ গুণ দুটোর ওপর দলীল আনয়ন করেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক বান্দার 'সাথে থাকা' গুণটির ওপর দলীল-প্রমাণাদি তুলে ধরেন। তারপর এ 'সাথে থাকা' গুণের সাথে ঊর্ধ্বে থাকা ও আরশের উপর থাকা' গুণের সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি স্পষ্ট করতে সক্ষম হন যে, এগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই; কারণ 'সাথে থাকা' কোনো ভাষাতেই সর্বদা স্পর্শ করা, কিংবা পাশাপাশি অবস্থান করা আবশ্যক করে না। বরং সেটির অর্থ অবস্থা ও অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।


২০-তারপর শাইখুল ইসলাম স্পষ্ট করেন যে, 'ফিস সামায়ি' বা 'আসমানে থাকা' এর অর্থ আসমান তাকে ঘিরে থাকা বুঝায় না। যে কেউ তা ধারণা করবে সে যদি তা অন্য কারো থেকে বর্ণনা করে তবে মিথ্যা বলেছে, আর যদি নিজে তার রব্ব সম্পর্কে এমন বিশ্বাস করে তবে পথভ্রষ্ট হয়েছে।


২১-এরপর শাইখুল ইসলাম একটি বিখ্যাত মাসআলার সমাধান করেছেন, তা হচ্ছে: কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য অর্থ উদ্দেশ্য কি না? তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, 'প্রকাশ্য অর্থ' কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ্য শব্দ; যাতে হক্ক অর্থ ও বাতিল অর্থ উভয়টি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ প্রকাশ্য অর্থ বলতে কী বুঝানো হচ্ছে তা স্পষ্ট না করা হবে তখন এককথায় সেটার উত্তর দেয়া যাবে না।


২২-তারপর শাইখুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহ সিফাত সংক্রান্ত কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্যসমূহের 'প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করা বা না করা'র ব্যাপারে তাবৎ মানুষের ছয়টি অবস্থান তুলে ধরেন:


দুটি গোষ্ঠী বলে, তারা প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করে থাকে, যদিও তাদের বক্তব্য এক নয়। এরা দু' ভাগে বিভক্ত:


এক. আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা'আহ, যারা সে প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করে যা আল্লাহর জন্য উপযোগী এবং যা কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট।


দুই. মুশাব্বিহা বা সাদৃশ্য প্রদানকারী গোষ্ঠী, যারা এগুলোকে সৃষ্টির মতো করে প্রকাশ্য অর্থ নির্ধারণ করে থাকে।


আরও দুটি গোষ্ঠী বলে, তারা প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণের বিরোধী, যদিও তাদের বক্তব্য এক নয়। এরা দু' ভাগে বিভক্ত:


এক. সেসব মু'তাত্তিলা বা নিষ্ক্রীয়কারী সম্প্রদায়, যারা কোনো না কোনোভাবে এগুলোকে সিফাত বা গুণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, নিজেরা তা'ওয়ীল করে অপ্রকাশ্য অর্থ দাঁড় করায়। যেমন, জাহমিয়্যাহ ও মু'তাযিলা সম্প্রদায়। আর আশ'আরী ও মাতুরিদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক। এদেরকে বলা হয় আহলুত তা'ওয়ীল।


দুই. সেসব গোষ্ঠী, যারা এসব ভাষ্যের প্রকাশ্য অর্থ করাকে অস্বীকার করে বলে এর অর্থ, তবে তারা এ ব্যাপারে একমত যে, এগুলো দ্বারা সিফাত সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। তারা এগুলোর কোনো অর্থই সাব্যস্ত করে না। যেমন, আশ'আরী ও মাতুরিদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক। এদেরকে বলা হয় আহলুত তাফওয়ীদ্ব।


আরও দুটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এ ব্যাপারে মৌনতা বা চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করেছে। যদিও তাদের উভয়ের বক্তব্য এক নয়। এরা দু' ভাবে বিভক্ত:


এক. যারা বলে, এগুলো দ্বারা আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদার সাথে উপযোগী অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া যেতে পারে আবার এগুলো দ্বারা আল্লাহর গুণাবলি উদ্দেশ্য নাও হতে পারে।

দুই. যারা বলে, এ ব্যাপারে হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলতে চায় না। তারা কেবল


এসব আয়াতের তেলাওয়াত ও এসব হাদীসের পাঠ ও খতম করার মাধ্যমেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।


বস্তুত এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা'আত ব্যতীত প্রতিটি গোষ্ঠীই বাতিল ও পথভ্রষ্ট। এরা আল্লাহর তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতের অধ্যায়ে বিভ্রান্ত, দিকভ্রষ্ট ও কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে।


২৩-কিতাবের শেষে এসে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ কালামশাস্ত্র ও ও যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদেরকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন:


এক. যারা কালামশাস্ত্রে নিজেদেরকে প্রবিষ্ট করায়নি। এরা নিরাপত্তা ও প্রশান্তিতে রয়েছে।


দুই. যারা কালামশাস্ত্রে নিজেদেরকে প্রবিষ্ট করিয়েছে, তার শেষে পৌঁছেছে। এরা কালামশাস্ত্রের অসারতা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য শেষ জীবনে সেটা থেকে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ও আফসোস করেছে।


তিন. যারা কালামশাস্ত্রের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। এরা সবচেয়ে বিপদে রয়েছে। আগের দু' শ্রেণি যতটুকু নিরাপত্তা প্রাপ্ত তারা ততটুকু নিরাপদ হতে পারেনি। তারা নিজেরা কালামশাস্ত্র বুঝতে সক্ষম হয়নি, কেবল তাদের বড় বড় উস্তাদদের বুঝকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্তি বাড়াবাড়ি ও মতকে নিয়ে অতি ধারণার বশবর্তী হয়ে পথভ্রষ্টতায় অবস্থান করে নিয়েছে।


২৪-অতঃপর শাইখুল ইসলাম এরপর দুনিয়া নষ্ট করা চার শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করেছেন: অর্ধ কালামশাস্ত্রবিদ, যার দ্বারা দীন ও আকীদা নষ্ট হয়। অর্ধ ভাষাবিদ, যার দ্বারা ভাষা নষ্ট হয়। অর্ধ ফকীহ, যার দ্বারা দেশ ও শরী'আত বিনষ্ট হয়। অর্ধ ডাক্তার, যার দ্বারা মানুষের শরীর বিনষ্ট হয়।


২৫-তারপর শাইখুল ইসলাম আল্লাহর গুণাবলির ক্ষেত্রে পথভ্রষ্টতার আসল কারণসমূহ বর্ণনা করেন। আর সবশেষে পথভ্রষ্টদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে প্রত্যাবর্তন করার জন্য কায়োমনেবাক্যে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তাঁর গ্রন্থটির সমাপ্তি টানেন।

উক্ত অংশটি ড. আবু বক্র মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদকৃত বই পয়েন্টে আল ফাতাওয়া আল হামাউইয়্যাহ আল কুবরা[ এর অনুবাদক ও সম্পাদকের ভুমিকা হতে নেওয়া হয়েছে। এই ২৫টি পয়েন্ট একক ভাবে কোন বই নয়।


ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 
Last edited:
Back
Top