আহলে কুরআন শব্দের অর্থ কি? আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আহলে কুরআনদের অবস্থান কি?
- আহল অর্থ অনুসারী, পরিবার ইত্যাদি। কুরআন শব্দটি আরবী ‘কারাআ’ ক্রিয়াপদের উৎস থেকে উৎসারিত। যার অর্থ পড়, শেখ, অনুধাবন কর, বুঝ, মুখস্থ রাখ, বহন কর, ইবাদতে মশগুল থাক ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘কুরআন সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৭-১৯)।
কেউ কেউ قرء এবং قرن মূল শব্দ থেকেও কুরআন শব্দ গঠিত বলে অভিমত পেশ করেছেন। শরীয়তের পরিভাষায়, যারা পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে ও অর্থ অনুধাবন করে এবং তদনুযায়ী আমল করে তাদেরকেই আহলে কুরআন বলে। 'আহলে কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কতক লোক আল্লাহ্র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেনঃ কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় মানাভী বলেন, ‘অর্থাৎ কুরআনের হাফেযগণ এবং তদনুযায়ী আমলকারী আল্লাহর ওলীগণ।’(ফায়যুল কাদীর হা/২৭৬৮, ৩/৬৭)।
কিন্তু বর্তমান যুগে ইসলাম ধর্মের নামে নব্য আবিষ্কৃত দলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তিকর একটি হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা, যারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে।
এরা মূলত খ্রিস্টান মিশনারী চক্র। এদের পাল্লায় পড়ে বর্তমানে কিছু নাম ধারি মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এদের ‘আহলে কুরআন’ না বলে "মুনকিরুল হাদীস বা হাদীস অস্বীকারকারী" বলা উচিত। কেননা কুরআন মান্যকারীদের উপর হাদীস মানা অপরিহার্য। বস্তুত আল-কুরআনের মধ্যেই হাদীসের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। হাদীসের সত্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ ‘আহলে কুরআন’ হতে পারে না। বরং তারা মুনকিরুল হাদীস।
আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আহলে কুরআনদের অবস্থান:
ইসলামী শরীআতের প্রধান দু’টি উৎস হলো কুরআন এবং সহীহ হাদীস, যা মুসলিম মিল্লাতের মূল সম্পদ। কুরআন ইসলামের আলোক স্তম্ভ আর হাদীস হলো তাঁর বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটা।
মূলত হাদীস হলো কুরআনের নির্ভুল ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং রাসূল(ﷺ)-এর আদর্শ, কর্মনীতি ও শরীআতের বিস্তৃত বিবরণ। এজন্য হাদীস ছাড়া কুরআনের মর্ম বুঝা অসম্ভব। তাই যারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ দাবী করে, তারা মিথ্যুক, পথভ্রষ্ট ও ধোঁকাবাজ এবং বাতিল-ফিরকা। এরাই প্রচার করছে যে, শুধু কুরআন মানতে হবে হাদীস মানা যাবে না।
কারণ হাদীসের মধ্যে সহীহ, যঈফ, জাল ইত্যাদি ভাগ রয়েছে। এই অজ্ঞতাপূর্ণ যুক্তির কুপ্রভাব এখন সর্বত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা হাদীস ও সুন্নাতের ব্যাপারে যুবকদের মধ্যে সন্দেহের তীর ছুড়ে মারছে। কূটকৌশলের মাধ্যমে তারা এই মিথ্যা দাবী প্রচার করছে।
অথচ তারা অধিকাংশই অশিক্ষিত ও কুরআন-সুন্নাহর ইলম সম্পর্কে নিম্নশ্রেণীর জাহেল। কেননা পবিত্র আল-কুরআনের মধ্যেই হাদীসের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। যেমন:-
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
মহান আল্লাহ বলেন,
‘আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পরও যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস!’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫)।
তিনি আরো বলেছেন,
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩১)।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘মুমিনদের মধ্যে কোন ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্যে যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের (কুরআন ও সুন্নাহর) দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। বস্ত্ততঃ তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা-নূর; ২৪/৫১)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘অতঃপর তারা যদি তোমার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবে, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়াতের (কুরআন ও সুন্নাহ) পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?’ (সূরা আল-কাসাস; ২৮/৫০)।
তিনি আরো বলেন,
‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। আপোষে ঝগড়া কর না। তাহলে তোমরা হীনবল হয়ে যাবে ও তোমাদের শক্তি উবে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন।’ (সূরা-আনফাল; ৮/৪৬)।
তিনি আরো বলেন,
- ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং (হারাম থেকে) সাবধান থাক। অতঃপর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রেখ আমাদের রাসূলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।’ (সূরা- মায়েদাহ; ৫/৯২)।
তিনি আরো বলেন,
- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও। যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন ঐ বিষয়ের দিকে যা তোমাদের (মৃত অন্তরে) জীবন দান করে। জেনে রেখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন (অর্থাৎ তাঁর অনুমতিক্রমেই মানুষ মুমিন ও কাফির হয়ে থাকে)। পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে।’ (সূরা-আনফাল; ৮/২৪)।
তিনি আরো বলেন,
- 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো মহা সফলতা।’ ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সূরা-নিসা; ৪/১৩-১৪)।
তিনি আরো বলেন,
‘আর আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা চিন্তা-গবেষণা করে।’ (সূরা- নাহল; ১৬/৪৪)।
তিনি আরো বলেন,
‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।’ (সূরা আল-হাশর: ৭)।
এই আয়াতের প্রেক্ষাপটে ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে প্রমাণিত বর্ণনাটি পেশ করা খুবই উপযুক্ত মনে হচ্ছে। বর্ণনাটি হচ্ছে, জনৈকা মহিলা ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, আপনি নাকি বলেন, যে সমস্ত নারীরা শরীরে উল্কি অঙ্কন করে এবং যারা উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, এদের সবাইকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন? ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন? অথচ তা আল্লাহর কিতাবে রয়েছে।
অতঃপর মহিলাটি বললেন, আমি কুরআন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো একথা পাইনি। তিনি বললেন, তুমি (ভালোভাবে) পড়লে অবশ্যই তা পেয়ে যেতে। তুমি কি এ আয়াতটি পড়োনি, ‘রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করো। আর যা থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তোমরা তা পরিত্যাগ করো।’(সহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা আপনার হাতে বাই‘আত করে, তারা তো আল্লাহরই হাতেই বাই‘আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতঃপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তারই, আর যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি (আল্লাহ) অবশ্যই তাকে মহা পুরস্কার দেন।’ (সূরা আল-ফাতহ: ১০)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বাই‘আত করা মানেই আল্লাহর কাছে বাই‘আত করা। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য আর আল্লাহর আনুগত্য একই বিষয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, আপনাকে আমরা তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পাঠাইনি।’ (সূরা আন-নিসা: ৮০)।
এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছেন যে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আনুগত্যকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
আয়াতটি এতই পরিষ্কার যে, একে অন্য কোনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। আল্লামা ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,‘তোমার কাজ তো শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। ভাগ্যবান ব্যক্তি মেনে নেবে এবং মুক্তি ও পুণ্য লাভ করবে।
তবে তাদের ভাল কাজের পুণ্য তুমিও লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি মানবে না সে হতভাগা। সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে। তাদের পাপ তোমার উপর হবে না।’(সহীহ মুসলিম, হা/৮৭০, মুহাম্মাদ আলী আছ-ছাবুনী, মুখতাছার তাফসীরে ইবনে কাছীর, বৈরূত: দারুল কুরআনিল কারীম, ৭ম সংস্করণ, ১৪০২ হি./১৯৮১ খ্রি., ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১৬)
হাদীসে এসেছে,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করল সে সঠিক পথ পেল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করল ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবাধ্যতা করল, সে পথভ্রষ্ট হল।’(সহীহ মুসলিম, হা/৮৭০)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
‘যে আমাকে মান্য করল, সে আল্লাহকে মান্য করল। আর যে আমাকে অমান্য করল, সে আল্লাহকে অমান্য করল।'(সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩; নাসাঈ, হা/৪১৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৮)।
অর্থাৎ নবীর আদেশ অথবা সুন্নাহ অনুসরণ না করা এবং আল্লাহর আদেশ মোতাবেক না চলা উভয় সমান কথা। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,এই আয়াত প্রমাণ করে যে, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য মানেই আল্লাহরই আনুগত্য।
আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নির্দেশ দেন না এবং আল্লাহ নিষেধ না করা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বিষয়ে নিষেধ করেন না।’(ফাতহুল ক্বাদীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৫।)
প্রিয় পাঠক! হাদীসের প্রামাণিকতায় এ রকম আরো সহস্র আয়াত বিদ্যমান। অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, ‘আহলে কুরআন’ নামক দলটি কুরআন-সুন্নাহ্ ও শরী‘আতের দলীলাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
নাম আহলে কুরআন হলেও কিন্তু আসলে তারা কুরআনের কিছুই বুঝে না। আর বুঝবেই বা কী করে! হাদীস ছাড়া কি কুরআন বুঝা সম্ভব? এদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেক পূর্বেই সতর্ক করে বলেছেন, ‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে।
জেনে রাখ! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই আঁকড়ে ধর, তাতে যা হালাল পাবে তাকে হালাল হিসাবে এবং যা হারাম পাবে তাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। নবী (ﷺ) বলেন, জেনে রাখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়।’ - (আবু দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা/২৬৬৩-২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৭৪, ১৭১৯৪, সনদ হাসান সংকলিত) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
- উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
- আহল অর্থ অনুসারী, পরিবার ইত্যাদি। কুরআন শব্দটি আরবী ‘কারাআ’ ক্রিয়াপদের উৎস থেকে উৎসারিত। যার অর্থ পড়, শেখ, অনুধাবন কর, বুঝ, মুখস্থ রাখ, বহন কর, ইবাদতে মশগুল থাক ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেন,
اِنَّ عَلَیۡنَا جَمۡعَہٗ وَ قُرۡاٰنَہٗ - فَاِذَا قَرَاۡنٰہُ فَاتَّبِعۡ قُرۡاٰنَہٗ
‘কুরআন সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৭-১৯)।
কেউ কেউ قرء এবং قرن মূল শব্দ থেকেও কুরআন শব্দ গঠিত বলে অভিমত পেশ করেছেন। শরীয়তের পরিভাষায়, যারা পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে ও অর্থ অনুধাবন করে এবং তদনুযায়ী আমল করে তাদেরকেই আহলে কুরআন বলে। 'আহলে কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কতক লোক আল্লাহ্র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেনঃ কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ১১৮৭০, ১৩১৩০; দারিমী ৩৩২৬।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: যঈফাহ ১৫৮২।
(ইবনু মাজাহ হা/২১৫; সহীহুল জামে হা/২১৬৫; সহীহ আত-তারগীব হা/১৪৩২)।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: যঈফাহ ১৫৮২।
(ইবনু মাজাহ হা/২১৫; সহীহুল জামে হা/২১৬৫; সহীহ আত-তারগীব হা/১৪৩২)।
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় মানাভী বলেন, ‘অর্থাৎ কুরআনের হাফেযগণ এবং তদনুযায়ী আমলকারী আল্লাহর ওলীগণ।’(ফায়যুল কাদীর হা/২৭৬৮, ৩/৬৭)।
কিন্তু বর্তমান যুগে ইসলাম ধর্মের নামে নব্য আবিষ্কৃত দলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তিকর একটি হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা, যারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে।
এরা মূলত খ্রিস্টান মিশনারী চক্র। এদের পাল্লায় পড়ে বর্তমানে কিছু নাম ধারি মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এদের ‘আহলে কুরআন’ না বলে "মুনকিরুল হাদীস বা হাদীস অস্বীকারকারী" বলা উচিত। কেননা কুরআন মান্যকারীদের উপর হাদীস মানা অপরিহার্য। বস্তুত আল-কুরআনের মধ্যেই হাদীসের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। হাদীসের সত্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ ‘আহলে কুরআন’ হতে পারে না। বরং তারা মুনকিরুল হাদীস।
আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আহলে কুরআনদের অবস্থান:
ইসলামী শরীআতের প্রধান দু’টি উৎস হলো কুরআন এবং সহীহ হাদীস, যা মুসলিম মিল্লাতের মূল সম্পদ। কুরআন ইসলামের আলোক স্তম্ভ আর হাদীস হলো তাঁর বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটা।
মূলত হাদীস হলো কুরআনের নির্ভুল ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং রাসূল(ﷺ)-এর আদর্শ, কর্মনীতি ও শরীআতের বিস্তৃত বিবরণ। এজন্য হাদীস ছাড়া কুরআনের মর্ম বুঝা অসম্ভব। তাই যারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ দাবী করে, তারা মিথ্যুক, পথভ্রষ্ট ও ধোঁকাবাজ এবং বাতিল-ফিরকা। এরাই প্রচার করছে যে, শুধু কুরআন মানতে হবে হাদীস মানা যাবে না।
কারণ হাদীসের মধ্যে সহীহ, যঈফ, জাল ইত্যাদি ভাগ রয়েছে। এই অজ্ঞতাপূর্ণ যুক্তির কুপ্রভাব এখন সর্বত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা হাদীস ও সুন্নাতের ব্যাপারে যুবকদের মধ্যে সন্দেহের তীর ছুড়ে মারছে। কূটকৌশলের মাধ্যমে তারা এই মিথ্যা দাবী প্রচার করছে।
অথচ তারা অধিকাংশই অশিক্ষিত ও কুরআন-সুন্নাহর ইলম সম্পর্কে নিম্নশ্রেণীর জাহেল। কেননা পবিত্র আল-কুরআনের মধ্যেই হাদীসের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। যেমন:-
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের অন্তরে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।’ (সূরা আন-নিসা: ৬৫)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی - اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی
‘আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا
‘আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পরও যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস!’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫)।
তিনি আরো বলেছেন,
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩১)।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
‘মুমিনদের মধ্যে কোন ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্যে যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের (কুরআন ও সুন্নাহর) দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। বস্ত্ততঃ তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা-নূর; ২৪/৫১)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُوْنَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللهِ
‘অতঃপর তারা যদি তোমার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবে, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়াতের (কুরআন ও সুন্নাহ) পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?’ (সূরা আল-কাসাস; ২৮/৫০)।
তিনি আরো বলেন,
وَأَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। আপোষে ঝগড়া কর না। তাহলে তোমরা হীনবল হয়ে যাবে ও তোমাদের শক্তি উবে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন।’ (সূরা-আনফাল; ৮/৪৬)।
তিনি আরো বলেন,
وَأَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلاغُ الْمُبِيْنُ
- ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং (হারাম থেকে) সাবধান থাক। অতঃপর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রেখ আমাদের রাসূলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।’ (সূরা- মায়েদাহ; ৫/৯২)।
তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيْكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও। যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন ঐ বিষয়ের দিকে যা তোমাদের (মৃত অন্তরে) জীবন দান করে। জেনে রেখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন (অর্থাৎ তাঁর অনুমতিক্রমেই মানুষ মুমিন ও কাফির হয়ে থাকে)। পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে।’ (সূরা-আনফাল; ৮/২৪)।
তিনি আরো বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ، وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَاراً خَالِداً فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ
- 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো মহা সফলতা।’ ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সূরা-নিসা; ৪/১৩-১৪)।
তিনি আরো বলেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
‘আর আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা চিন্তা-গবেষণা করে।’ (সূরা- নাহল; ১৬/৪৪)।
তিনি আরো বলেন,
وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡہُ ٭ وَ مَا نَہٰىکُمۡ عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।’ (সূরা আল-হাশর: ৭)।
এই আয়াতের প্রেক্ষাপটে ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে প্রমাণিত বর্ণনাটি পেশ করা খুবই উপযুক্ত মনে হচ্ছে। বর্ণনাটি হচ্ছে, জনৈকা মহিলা ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, আপনি নাকি বলেন, যে সমস্ত নারীরা শরীরে উল্কি অঙ্কন করে এবং যারা উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, এদের সবাইকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন? ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন? অথচ তা আল্লাহর কিতাবে রয়েছে।
অতঃপর মহিলাটি বললেন, আমি কুরআন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো একথা পাইনি। তিনি বললেন, তুমি (ভালোভাবে) পড়লে অবশ্যই তা পেয়ে যেতে। তুমি কি এ আয়াতটি পড়োনি, ‘রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করো। আর যা থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তোমরা তা পরিত্যাগ করো।’(সহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/২১২৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَکَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰہَ یَدُ اللّٰہِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡہِم فَمَنۡ نَّکَثَ فَاِنَّمَا یَنۡکُثُ عَلٰی نَفۡسِہٖ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰہَدَ عَلَیۡہُ اللّٰہَ فَسَیُؤۡتِیۡہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
যারা আপনার হাতে বাই‘আত করে, তারা তো আল্লাহরই হাতেই বাই‘আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতঃপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তারই, আর যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি (আল্লাহ) অবশ্যই তাকে মহা পুরস্কার দেন।’ (সূরা আল-ফাতহ: ১০)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বাই‘আত করা মানেই আল্লাহর কাছে বাই‘আত করা। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য আর আল্লাহর আনুগত্য একই বিষয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ وَ مَنۡ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا
‘কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, আপনাকে আমরা তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পাঠাইনি।’ (সূরা আন-নিসা: ৮০)।
এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছেন যে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আনুগত্যকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
আয়াতটি এতই পরিষ্কার যে, একে অন্য কোনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। আল্লামা ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,‘তোমার কাজ তো শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। ভাগ্যবান ব্যক্তি মেনে নেবে এবং মুক্তি ও পুণ্য লাভ করবে।
তবে তাদের ভাল কাজের পুণ্য তুমিও লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি মানবে না সে হতভাগা। সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে। তাদের পাপ তোমার উপর হবে না।’(সহীহ মুসলিম, হা/৮৭০, মুহাম্মাদ আলী আছ-ছাবুনী, মুখতাছার তাফসীরে ইবনে কাছীর, বৈরূত: দারুল কুরআনিল কারীম, ৭ম সংস্করণ, ১৪০২ হি./১৯৮১ খ্রি., ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১৬)
হাদীসে এসেছে,
مَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ رَشِدَ وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করল সে সঠিক পথ পেল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করল ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবাধ্যতা করল, সে পথভ্রষ্ট হল।’(সহীহ মুসলিম, হা/৮৭০)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
مَنْ أَطَاعَنِىْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللهَ
‘যে আমাকে মান্য করল, সে আল্লাহকে মান্য করল। আর যে আমাকে অমান্য করল, সে আল্লাহকে অমান্য করল।'(সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩; নাসাঈ, হা/৪১৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৮)।
অর্থাৎ নবীর আদেশ অথবা সুন্নাহ অনুসরণ না করা এবং আল্লাহর আদেশ মোতাবেক না চলা উভয় সমান কথা। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,এই আয়াত প্রমাণ করে যে, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য মানেই আল্লাহরই আনুগত্য।
আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নির্দেশ দেন না এবং আল্লাহ নিষেধ না করা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বিষয়ে নিষেধ করেন না।’(ফাতহুল ক্বাদীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৫।)
প্রিয় পাঠক! হাদীসের প্রামাণিকতায় এ রকম আরো সহস্র আয়াত বিদ্যমান। অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, ‘আহলে কুরআন’ নামক দলটি কুরআন-সুন্নাহ্ ও শরী‘আতের দলীলাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
নাম আহলে কুরআন হলেও কিন্তু আসলে তারা কুরআনের কিছুই বুঝে না। আর বুঝবেই বা কী করে! হাদীস ছাড়া কি কুরআন বুঝা সম্ভব? এদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেক পূর্বেই সতর্ক করে বলেছেন, ‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে।
জেনে রাখ! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই আঁকড়ে ধর, তাতে যা হালাল পাবে তাকে হালাল হিসাবে এবং যা হারাম পাবে তাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। নবী (ﷺ) বলেন, জেনে রাখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়।’ - (আবু দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা/২৬৬৩-২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৭৪, ১৭১৯৪, সনদ হাসান সংকলিত) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
- উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
Attachments
Last edited: