পবিত্র কুরআনুল কারীমকে আমরা যেমন আল্লাহর কালাম বলে বিশ্বাস করি,অনুরূপভাবে হাদীসের ক্ষেত্রে আমাদের আক্বীদা কেমন হতে হবে?
- হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা,বাণী,সংবাদ,বিষয়,অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি।
শারঈ পরিভাষায় নাবী কারীম(ﷺ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। অনুরূপভাবে সাহাবী, তাবিঈ ও তাবে-তাবিঈদের আছার ও ফৎওয়াসমূহ অর্থাৎ তাদের ইজতেহাদ ও যেসব বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তাকেও হাদীস বা সুন্নাহ বলে অভিহিত করা হয়।
যেমন, রাসূল(ﷺ)বলেন,
তোমাদের উপরে অবশ্য পালনীয় হ’ল আমার সুন্নাত ও সুপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত’। [শাইখ যাকারিয়া আল-আনসারী, ফাতহুল বাকী আলা আলফাযিল ইরাকী পৃঃ ১২ তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪৩; মিশকাত হা/১৬৫]
ইসলামী শরী‘আতের উৎস দু’টি
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস।পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহর প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি হাদীসও রাসূল(ﷺ)-এর অন্তরে প্রক্ষিপ্ত অহী।কুরআন পঠিত অহী, আর হাদীস অপঠিত অহী। পবিত্র কুরআনের পরই হাদীসের স্থান। হাদীস প্রকৃতপক্ষে আল-কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
রাসূল (ﷺ) যে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন, হাদীস মূলত: এরই বহিঃপ্রকাশ। তাই বলা হয়, পবিত্র কুরআন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের হৃদপিন্ড স্বরূপ। আর হাদীস এ হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী। হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী যেমন দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শোণিত ধারা সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল করে রাখে,হাদীস বা সুন্নাহও অনুরূপ দ্বীন ইসলামকে সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল রাখে। এজন্যই ইসলামে সহীহ হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম।হাদীস উন্নত ও মহামূল্যবান জ্ঞান সম্পদ হিসাবে সমাদৃত।
দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ। এই পূর্ণতা ধরে রাখতে হাদীসের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ যারা হাদীসের জ্ঞান থেকে বিমুখ তারা বিদ‘আতী পথ অন্বেষণে সর্বদা ব্যস্ত।হাদীস ব্যতীত দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না।
পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস,উভয়টি মুসলিম মিল্লাতের মূল সম্পদ। প্রত্যেক মুসলিমের জানা আবশ্যক যে, কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীস দু’টিই আল্লাহ তা‘আলার ওহী। উভয়ের উপর সমানভাবে ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। কুরআনকে বলা হয় অহিয়ে মাতলূ, যা পাঠ করা হয়। আর হাদীসকে বলা হয় অহিয়ে গায়রে মাতলূ। দু’টিই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া বিধান। (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)।
তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম হাদীসকে আল্লাহ প্রেরিত ‘ওহী’ হিসাবেই বিশ্বাস করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; মিশকাত, হা/১৭৫৩)।
তাই হাদীসের প্রতি আমল না করে কেউ মুমিন হতে পারে না। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমকে হাদীস ও তার সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া অপরিহার্য। (সূরা আলে- ইমরান: ৩১; সূরা আন-নিসা: ৬৫, ৮০;সূরা আল-হাশর: ৭)
এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআনের মত হাদীসও অহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, হাদীসকে কুরআনের মত তেলাওয়াত করা হয় না।’(মাজমূঊল ফাতাওয়া লিইবনি তাইমিয়্যাহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৩)
খাত্বীব আল-বাগদাদী(রাহিমাহুল্লাহ), হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী(রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
‘আল্লাহর আদেশে যেভাবে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) নবী(ﷺ)-এর নিকট কুরআন নিয়ে অবতরণ করতেন, ঠিক একই রকম ভাবে তাঁর উপর সুন্নাত নিয়েও অবতরণ করতেন।’(আল-কিফায়াহ, পৃ. ১২; ফাৎহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৯১; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৭২৪৩)
পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহ প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি রাসূলের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি তথা সুন্নাহও আল্লাহর অহী, যা রাসূল(ﷺ)-কে জানিয়ে দেয়া হ’ত। কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টি জিব্রাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীলগুলো নিম্নরূপ:
(১). মহান আল্লাহ বলেন,
‘আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব (কুরআন) ও হিকমাত (সুন্নাহ) নাযিল করেছেন’ (সূরা নিসা ৪/১১৩)।
অপর আয়াতে বলেছেন,‘আর তিনি শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত’ (জুমু‘আ ৬২/২)
রাসূল(ﷺ) নিজের খেয়াল-খুশিমত কোন ফায়সালা দিতেন না এবং ইচ্ছামত কোন কথা বলতেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
‘তিনি (রাসূল) তাঁর প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কেবলমাত্র অতটুকু বলেন, যা তাঁর নিকটে অহী হিসাবে নাযিল করা হয়। আর তাকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা’ (নাজম ৫৩/৩-৫)।
হাদীসে এসেছে, একদা জনৈক ইহুদী আলেম রাসূল(ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করল,পৃথিবীর কোন ভূখন্ড সর্বাপেক্ষা উত্তম? রাসূল(ﷺ) বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর জিব্রাঈল (আঃ) এসে তা জানিয়ে দেয়ার পর বললেন,
‘সর্বনিকৃষ্ট স্থান হ’ল বাজার ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হ’ল মসজিদ’।(সহীহ ইবনু হিববান,মিশকাত হা/৭৪১, সনদ হাসান)
হাসান বিনতে আতিয়া বলেন, জিব্রাঈল(আঃ) রাসূল(সাঃ)-এর নিকটে সুন্নাহ নাযিল করতেন, যেভাবে কুরআন নাযিল করতেন।
(২) রাসূলুল্লাহ(ﷺ)বলেছেন,
‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে সমকক্ষ বা সমতুল্য কিছু দেয়া হয়েছে।'(আবু দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা ২৬৬৩-২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৭৪, ১৭১৯৪, সনদ হাসান)।
ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বলেন, ‘সমতুল্য জিনিস’ বলতে হাদীসকেই বুঝানো হয়েছে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)
(৩). আনাস ইবনু মালিক(রাযিয়াল্লাহু আনহু)সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ওযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। অতঃপর ঐ পানি থুতনির নিচে প্রবেশ করাতেন এবং তার দ্বারা নিজের দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেন,
‘আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন’। (আবু দাঊদ, হা/১৪৫; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪; হাকিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৯; ইরওয়াউল গালীল, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩০)
রাসূল(ﷺ) বলেন,
‘আল্লাহ যা পসন্দ করেন, তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করেন(সহীহ বুখারী হা/৬০২৭)
(৪). আবু মাসঊদ আনসারী(রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন।
রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ‘আমি এভাবে সালাত শিখাতে আদিষ্ট হয়েছি।’(সহীহ বুখারী, হা/৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০)
উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জিব্রীল(আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে সুন্নাত শিখানোর জন্যই অবতরণ করেছিলেন। অতএব বুঝা গেল যে, সুন্নাত বা হাদীসও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী।
(৫)আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন,
আমি আমার ইচ্ছা মত তোমাদেরকে কোন জিনিস দিই না এবং আমার ইচ্ছা মত তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে বঞ্চিতও করি না। আমি তো কেবল কোষাধ্যক্ষ বা বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে ব্যয়ের নির্দেশ দেয়া হয় সেখানেই ব্যয় করি।’(আবু দাঊদ, হা/২৯৪৯)।
উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ মুতাবিক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোনরূপ কমবেশি ছাড়াই বণ্টন করতেন।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, হাদীসও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী। (আল-মাদখাল ইলাস-সুন্নাতিল নাবাবিয়্যাহ, পৃ. ৬১)
(৬).আল্লাহ তা‘আলা বলেন,আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না, তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।’(সূরা আন-নিসা: ১১৩)
অন্যত্র তিনি বলেছেন,আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।’(সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম ত্বাবারী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমি কুরআনুল কারীমের অগণিত বিশেষজ্ঞের নিকটে শুনেছি, তাঁরা বলেছেন, ‘এখানে ‘কিতাব’ বলতে কুরআনুল কারীমকে বুঝানো হয়েছে আর ‘হিকমাত’ বলতে রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতকে বুঝানো হয়েছে। (আহকামুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮; আর-রিসালাহ, পৃ. ৪৫; তাফসীরে ত্বাবারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫৭-৫৫৮)
পরিশেষে আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের বিদ্বানদের ঐক্যমতে হাদীস হ’ল কুরআনের বিশ্বস্ততম ব্যাখ্যা। হাদীস কুরআনের অস্পষ্টতা দূর করে,দুর্বোধ্য বিষয়কে বোধগম্য করে, সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত করে, শর্তহীন বিষয়ে শর্তাধীন করে, সাধারণ বিষয়কে বিশেষায়িত করে, কুরআনের হুকুম-আহকাম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে। এছাড়া কুরআনে বর্ণিত হয়নি এমন আহকামও হাদীসে বর্ণিত হয়ে থাকে,যা মূলতঃ কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাই প্রকৃতপক্ষে হাদীস ব্যতীত কুরআনকে অনুধাবন করা অসম্ভব। সম্ভবত হাদীসের এই ভূমিকার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইমাম আল-আওযাঈ (৮৮-১৫৭হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,‘ হাদীস কুরআনের উপর যতটা নির্ভরশীল, কুরআন হাদীসের উপর ততোধিক নির্ভরশীল’। (ইবনু কাসীর,তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৪/৪০৮ পৃ.)
অনুরূপভাবে বছরী তাবেঈ মুতাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আশশিখখীর(৯৫হি.)(রাহিমাহুল্লাহ)-কে যখন বলা হ’ল, আপনি কেবল কুরআন দিয়েই আলোচনা করুন’।
তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি কুরআনের বিকল্প কিছুর প্রত্যাশী নয়,আমি কেবল এ ব্যাপারে তাঁর রাসূল( ﷺ.) ব্যাখ্যাই কামনা করি যিনি কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী’।
সুতরাং কুরআন ও তার ব্যাখ্যাকারী হিসাবে হাদীস ইসলামী শরী‘আতের সম মর্যাদাসম্পন্ন দু’টি মৌলিক উৎস।
এজন্যই রাসূল(ﷺ) বর্ণনা করেছেন,আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে গেলাম, তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ তোমরা তা আকড়ে ধরে থাক- আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ।(মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৩৩৩ সংকলিত। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
হাদিস অস্বীকারকারী কাফের ধারাবাহিক ১০ পর্বের আজ তৃতীয় পর্ব। পূর্বের পর্বগুলো দেখুন।
- হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা,বাণী,সংবাদ,বিষয়,অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি।
শারঈ পরিভাষায় নাবী কারীম(ﷺ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। অনুরূপভাবে সাহাবী, তাবিঈ ও তাবে-তাবিঈদের আছার ও ফৎওয়াসমূহ অর্থাৎ তাদের ইজতেহাদ ও যেসব বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তাকেও হাদীস বা সুন্নাহ বলে অভিহিত করা হয়।
যেমন, রাসূল(ﷺ)বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ
তোমাদের উপরে অবশ্য পালনীয় হ’ল আমার সুন্নাত ও সুপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত’। [শাইখ যাকারিয়া আল-আনসারী, ফাতহুল বাকী আলা আলফাযিল ইরাকী পৃঃ ১২ তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪৩; মিশকাত হা/১৬৫]
ইসলামী শরী‘আতের উৎস দু’টি
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস।পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহর প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি হাদীসও রাসূল(ﷺ)-এর অন্তরে প্রক্ষিপ্ত অহী।কুরআন পঠিত অহী, আর হাদীস অপঠিত অহী। পবিত্র কুরআনের পরই হাদীসের স্থান। হাদীস প্রকৃতপক্ষে আল-কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
রাসূল (ﷺ) যে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন, হাদীস মূলত: এরই বহিঃপ্রকাশ। তাই বলা হয়, পবিত্র কুরআন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের হৃদপিন্ড স্বরূপ। আর হাদীস এ হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী। হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী যেমন দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শোণিত ধারা সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল করে রাখে,হাদীস বা সুন্নাহও অনুরূপ দ্বীন ইসলামকে সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল রাখে। এজন্যই ইসলামে সহীহ হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম।হাদীস উন্নত ও মহামূল্যবান জ্ঞান সম্পদ হিসাবে সমাদৃত।
দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ। এই পূর্ণতা ধরে রাখতে হাদীসের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ যারা হাদীসের জ্ঞান থেকে বিমুখ তারা বিদ‘আতী পথ অন্বেষণে সর্বদা ব্যস্ত।হাদীস ব্যতীত দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না।
পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস,উভয়টি মুসলিম মিল্লাতের মূল সম্পদ। প্রত্যেক মুসলিমের জানা আবশ্যক যে, কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীস দু’টিই আল্লাহ তা‘আলার ওহী। উভয়ের উপর সমানভাবে ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। কুরআনকে বলা হয় অহিয়ে মাতলূ, যা পাঠ করা হয়। আর হাদীসকে বলা হয় অহিয়ে গায়রে মাতলূ। দু’টিই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া বিধান। (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)।
তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম হাদীসকে আল্লাহ প্রেরিত ‘ওহী’ হিসাবেই বিশ্বাস করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; মিশকাত, হা/১৭৫৩)।
তাই হাদীসের প্রতি আমল না করে কেউ মুমিন হতে পারে না। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমকে হাদীস ও তার সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া অপরিহার্য। (সূরা আলে- ইমরান: ৩১; সূরা আন-নিসা: ৬৫, ৮০;সূরা আল-হাশর: ৭)
এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআনের মত হাদীসও অহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, হাদীসকে কুরআনের মত তেলাওয়াত করা হয় না।’(মাজমূঊল ফাতাওয়া লিইবনি তাইমিয়্যাহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৩)
খাত্বীব আল-বাগদাদী(রাহিমাহুল্লাহ), হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী(রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
‘আল্লাহর আদেশে যেভাবে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) নবী(ﷺ)-এর নিকট কুরআন নিয়ে অবতরণ করতেন, ঠিক একই রকম ভাবে তাঁর উপর সুন্নাত নিয়েও অবতরণ করতেন।’(আল-কিফায়াহ, পৃ. ১২; ফাৎহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৯১; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৭২৪৩)
পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহ প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি রাসূলের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি তথা সুন্নাহও আল্লাহর অহী, যা রাসূল(ﷺ)-কে জানিয়ে দেয়া হ’ত। কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টি জিব্রাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীলগুলো নিম্নরূপ:
(১). মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
‘আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব (কুরআন) ও হিকমাত (সুন্নাহ) নাযিল করেছেন’ (সূরা নিসা ৪/১১৩)।
অপর আয়াতে বলেছেন,‘আর তিনি শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত’ (জুমু‘আ ৬২/২)
রাসূল(ﷺ) নিজের খেয়াল-খুশিমত কোন ফায়সালা দিতেন না এবং ইচ্ছামত কোন কথা বলতেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى، إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُوحَى، عَلَّمَهُ شَدِيْدُ الْقُوَى
‘তিনি (রাসূল) তাঁর প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কেবলমাত্র অতটুকু বলেন, যা তাঁর নিকটে অহী হিসাবে নাযিল করা হয়। আর তাকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা’ (নাজম ৫৩/৩-৫)।
হাদীসে এসেছে, একদা জনৈক ইহুদী আলেম রাসূল(ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করল,পৃথিবীর কোন ভূখন্ড সর্বাপেক্ষা উত্তম? রাসূল(ﷺ) বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর জিব্রাঈল (আঃ) এসে তা জানিয়ে দেয়ার পর বললেন,
شَرُّ الْبِقَاعِ أَسْوَاقُهَا وَخَيْرُ الْبِقَاعِ مَسَاجِدُهَا
‘সর্বনিকৃষ্ট স্থান হ’ল বাজার ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হ’ল মসজিদ’।(সহীহ ইবনু হিববান,মিশকাত হা/৭৪১, সনদ হাসান)
হাসান বিনতে আতিয়া বলেন, জিব্রাঈল(আঃ) রাসূল(সাঃ)-এর নিকটে সুন্নাহ নাযিল করতেন, যেভাবে কুরআন নাযিল করতেন।
(২) রাসূলুল্লাহ(ﷺ)বলেছেন,
أَلَا إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ
‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে সমকক্ষ বা সমতুল্য কিছু দেয়া হয়েছে।'(আবু দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা ২৬৬৩-২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৭৪, ১৭১৯৪, সনদ হাসান)।
ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বলেন, ‘সমতুল্য জিনিস’ বলতে হাদীসকেই বুঝানো হয়েছে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)
(৩). আনাস ইবনু মালিক(রাযিয়াল্লাহু আনহু)সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ওযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। অতঃপর ঐ পানি থুতনির নিচে প্রবেশ করাতেন এবং তার দ্বারা নিজের দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেন,
هَكَذَا أَمَرَنِيْ رَبِّيْ عَزَّ وَجَلَّ
‘আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন’। (আবু দাঊদ, হা/১৪৫; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪; হাকিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৯; ইরওয়াউল গালীল, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩০)
রাসূল(ﷺ) বলেন,
وَلْيَقْضِ اللهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا شَاءَ
‘আল্লাহ যা পসন্দ করেন, তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করেন(সহীহ বুখারী হা/৬০২৭)
(৪). আবু মাসঊদ আনসারী(রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন।
রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূল(ﷺ) ও সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ‘আমি এভাবে সালাত শিখাতে আদিষ্ট হয়েছি।’(সহীহ বুখারী, হা/৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০)
উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জিব্রীল(আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে সুন্নাত শিখানোর জন্যই অবতরণ করেছিলেন। অতএব বুঝা গেল যে, সুন্নাত বা হাদীসও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী।
(৫)আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন,
مَا أُوْتِيْكُمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا أَمْنَعُكُمُوْهُ إِنْ أَنَا إِلَّا خَازِنٌ أَضَعُ حَيْثُ أُمِرْتُ
আমি আমার ইচ্ছা মত তোমাদেরকে কোন জিনিস দিই না এবং আমার ইচ্ছা মত তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে বঞ্চিতও করি না। আমি তো কেবল কোষাধ্যক্ষ বা বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে ব্যয়ের নির্দেশ দেয়া হয় সেখানেই ব্যয় করি।’(আবু দাঊদ, হা/২৯৪৯)।
উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ মুতাবিক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোনরূপ কমবেশি ছাড়াই বণ্টন করতেন।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, হাদীসও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী। (আল-মাদখাল ইলাস-সুন্নাতিল নাবাবিয়্যাহ, পৃ. ৬১)
(৬).আল্লাহ তা‘আলা বলেন,আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না, তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।’(সূরা আন-নিসা: ১১৩)
অন্যত্র তিনি বলেছেন,আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।’(সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম ত্বাবারী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমি কুরআনুল কারীমের অগণিত বিশেষজ্ঞের নিকটে শুনেছি, তাঁরা বলেছেন, ‘এখানে ‘কিতাব’ বলতে কুরআনুল কারীমকে বুঝানো হয়েছে আর ‘হিকমাত’ বলতে রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতকে বুঝানো হয়েছে। (আহকামুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮; আর-রিসালাহ, পৃ. ৪৫; তাফসীরে ত্বাবারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫৭-৫৫৮)
পরিশেষে আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের বিদ্বানদের ঐক্যমতে হাদীস হ’ল কুরআনের বিশ্বস্ততম ব্যাখ্যা। হাদীস কুরআনের অস্পষ্টতা দূর করে,দুর্বোধ্য বিষয়কে বোধগম্য করে, সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত করে, শর্তহীন বিষয়ে শর্তাধীন করে, সাধারণ বিষয়কে বিশেষায়িত করে, কুরআনের হুকুম-আহকাম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে। এছাড়া কুরআনে বর্ণিত হয়নি এমন আহকামও হাদীসে বর্ণিত হয়ে থাকে,যা মূলতঃ কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাই প্রকৃতপক্ষে হাদীস ব্যতীত কুরআনকে অনুধাবন করা অসম্ভব। সম্ভবত হাদীসের এই ভূমিকার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইমাম আল-আওযাঈ (৮৮-১৫৭হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,‘ হাদীস কুরআনের উপর যতটা নির্ভরশীল, কুরআন হাদীসের উপর ততোধিক নির্ভরশীল’। (ইবনু কাসীর,তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৪/৪০৮ পৃ.)
অনুরূপভাবে বছরী তাবেঈ মুতাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আশশিখখীর(৯৫হি.)(রাহিমাহুল্লাহ)-কে যখন বলা হ’ল, আপনি কেবল কুরআন দিয়েই আলোচনা করুন’।
তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি কুরআনের বিকল্প কিছুর প্রত্যাশী নয়,আমি কেবল এ ব্যাপারে তাঁর রাসূল( ﷺ.) ব্যাখ্যাই কামনা করি যিনি কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী’।
সুতরাং কুরআন ও তার ব্যাখ্যাকারী হিসাবে হাদীস ইসলামী শরী‘আতের সম মর্যাদাসম্পন্ন দু’টি মৌলিক উৎস।
এজন্যই রাসূল(ﷺ) বর্ণনা করেছেন,আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে গেলাম, তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ তোমরা তা আকড়ে ধরে থাক- আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ।(মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৩৩৩ সংকলিত। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
হাদিস অস্বীকারকারী কাফের ধারাবাহিক ১০ পর্বের আজ তৃতীয় পর্ব। পূর্বের পর্বগুলো দেখুন।