• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

বিদআত হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদআতসমূহ - প্রথম পর্ব

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Top Active User
Threads
870
Comments
1,022
Reactions
9,745
Credits
4,389
ভূমিকা

হজ্জ একটি শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। হজ্জ সম্পাদনের জন্য আর্থিক সামর্থ্য আবশ্যক। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয নয়। দৈহিক কঠোর পরিশ্রমও এর সাথে জড়িত। কিন্তু এত সব কষ্টের মাঝেও রয়েছে ভাল লাগা, আছে চূড়ান্ত ও চিরস্থায়ী প্রতিদান প্রাপ্তির প্রত্যাশা। সেই কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা আর কিছুই নয়, তা হল সুনিশ্চিত জান্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক ওমরাহ থেকে আর এক ওমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর জন্য কাফ্ফারা। আর হজ্জে মাবরূর (কবুলযোগ্য হজ্জ)-এর একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত।[১]

কিন্তু হজ্জের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই মনগড়া নিয়মাবলী কিংবা হুযুরের তৈরি বিধানের অনুসরণ করে থাকে। অথচ এভাবে ইবাদত করলে জান্নাত পাওয়া অসম্ভব। কারণ আমল কবুল হওয়ার শর্ত দু’টি। (ক) ইখলাছ (খ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পদ্ধতি। যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পদ্ধতিতে কোন ইবাদত না হয়, তা যত সুন্দর ও দীর্ঘই হৌক না কেন তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন, ‘যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পথ ও মতের ব্যতিক্রম করবে, সেগুলোই বাতিল, ভ্রষ্ট ও প্রত্যাখ্যাত। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কেউ যদি এমন কাজ করে, আমি যার নির্দেশ দেইনি, তা বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত’।[২] মূলত এ জন্য দায়ী জ্ঞানহীন আলেমের ফাতওয়া এবং সাধারণ মানুষের দলীল-প্রমাণ ছাড়া তাক্বলীদী গুড়ামী।[৩] তাই নিম্নে হজ্জ ও ওমরাহ সংক্রান্ত বিদ‘আতগুলো আলোচনা করা হল।

হজ্জ ও ওমরাহ সংক্রান্ত প্রচলিত কিছু বিদ‘আত

(১) ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দেয়া

হজ্জে যাওয়ার পূর্বেই ছেলে মেয়েকে বিবাহ দিতে হবে। অধিকাংশ হাজীদের মধ্যে এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা লক্ষ্য করা যায়। এ জন্য বেশ ব্যস্তও হয়ে পড়েন হাজী ছাহেবরা। এ কারণে তারা হজ্জে যেতেও বিলম্ব করে থাকেন। মেয়ে এখন ছোট, সে বড় হবে। অতঃপর বিবাহ দিয়ে হজ্জে যাবে। অথবা বড় হয়েছে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যেতে হবে। এগুলো সবই ভুল ধারণা, শরী‘আতের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই।

(২) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা। ছালাত একটি ভাল কাজ, তাই বলে হজ্জের সফরে বের হওয়ার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার কোন বিধান নেই।

(৩) উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ করা

তালবিয়ার ন্যায় শব্দ করে উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ-দরূদ পাঠ করা। এটিও একটি বিদ‘আত। শব্দ করে পড়া যায় কেবল তালবিয়া। কিন্তু সেটাও আবার ইহরামের নিয়ত করার পর। আবার ফেরার পথে হাজী ছাহেবদের নিয়ে আসার সময় তাকবীর দিতে দিতে নিয়ে আসা হয়, এসব শরী‘আত বিরোধী।

(৪) খাওয়ার আয়োজন করা

যাওয়ার পূর্বে বড় ধরনের খাওয়ার আয়োজন করা। হজ্জ একটি শারীরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত ইবাদত। আবার যাওয়ার পূর্বে হাজী ছাহেবরা আত্মীয়-স্বজন সহ পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত করে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলাম পরিপন্থী একটি বিধান।

(৫) রওযা যিয়ারত করা উদ্দেশ্য

দীর্ঘ হজ্জ সফরের উদ্দেশ্য যদি হয় শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওযা শরীফ যিয়ারত করা, সোনার মদীনা থেকে একটু ঘুরে আসা, নবীর শানে সালাম দিয়ে আসা, তাহলে হজ্জ সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে না, বরং শুধু সফরের কষ্টটাই হবে। কেননা মদীনা সফর হজ্জের কোন রুকন বা ওয়াজিব নয়। মদীনায় সফর হবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে, কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে নয়। কারণ নেকীর উদ্দেশ্যে তিনটি স্থান ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফর করতে নিষেধ করেছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُوْلِ ﷺ وَمَسْجِدِ الأَقْصَى

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মসজিদুল হারাম, মসজিদুর রাসূল (মসজিদে নববী) এবং মসজিদুল আক্বছা (বায়তুল মুক্বাদ্দাস) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে ছালাতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না।[৪]

(৬) চুক্তিভিত্তিক বিবাহ করা

চুক্তিভিত্তিক বিবাহ করা। শায়খ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আব্দুস সালাম হাওয়ামেদী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘আস-সুনান ওয়াল মুবতাদি‘আত আল-মুতা‘আল্লিক্বাহ বিল আযকার’ নামক গ্রন্থে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এভাবে,

أَن الْمَرْأَة المتزوجة إِذا عزمت على الْحَج وَلَيْسَ مَعهَا محرم، يعْقد عَلَيْهَا رجل آخر ليَكُون مَعهَا كمحرم لَهَا، ثمَّ يطلقهَا بعد العودة، وَهَذِه بِلَا شكّ هِيَ سنة أهل الْجَاهِلِيَّة الأولى

‘আরো একটি জাহেলিয়াত হল, যখন কোন মহিলা হজ্জের নিয়ত করে, অথচ তার সাথে কোন মাহরাম নেই। তখন সে একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, যে হজ্জের সফরের জন্য প্রস্তুত। যাতে সে তার মাহরাম হতে পারে। আবার যখন ফিরে আসবে তখন সে ত্বালাক্ব দিবে অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক বিবাহ করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি একটি জাহেলী নীতি’। তিনি আরো বলেন, ‘এটা যেন তেমনি হত, যেমন জাহেলী যুগে যখন কোন নারীর সন্তান হত, ১০ জন পুরুষ মানুষের মধ্যে তখন যার চেহারার সাথে মিল রয়েছে, তার দিকেই সম্বন্ধ করা হত। যা সর্বাধিক নিকৃষ্ট কাজ এবং কাবীরা গুনাহ’।[৫] আমাদের দেশের হাজীদের ক্ষেত্রে এমন হয় কি না আমাদের জানা নেই, তবে আমাদের জানা মতে এদেশের অনেক মহিলাই মাহরাম ছাড়ায় হজ্জে যায়। অথবা কারো মাহরাম তার বোনের স্বামী অথবা তার দেবর/ভাসুর ইত্যাদি। যা শরী‘আত সম্মত নয়। তাই হজ্জের ফরযিয়াত শুধুমাত্র টাকা দিয়েই হয় না; বরং যে শর্তগুলো আছে তা অবশ্যই পূরণীয়।

(৭) নির্দিষ্ট স্থান থেকে ইহরাম না বাঁধা

হজ্জ ও ওমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান হল মীক্বাত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, হাজীরা নির্দিষ্ট স্থান থেকে ইহরাম বাঁধে না, বরং বিমানে উঠার পূর্বে ইহরাম বাঁধে এবং নিয়ত করে থাকে। যা অন্যায় ও বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইহরাম বাঁধার স্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।[৬]

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর মদীনা যাওয়ার পথে আমার জীবনের প্রথম ফ্লাইটে উঠার অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। আমাদের ফ্লাইটটি ঢাকা-রিয়াদ-মদীনা যাবে। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আগেই বেশ শোরগোলের সাথে হজ্জের তালবিয়া পাঠ করার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। যেন আরাফার ময়দান। কারণ সেদিন ঐ বছরে প্রথম হজ্জ ফ্লাইট ছিল। অর্থাৎ হাজী ছাহেবরা ঢাকা বিমান বন্দরেই হজ্জের ইহরাম বেঁধে নিয়েছেন। আর ইহরাম বাঁধলেই যেহেতু তালবিয়া পাঠ করতে হয়, তাই উনারা তালবিয়াও পড়ছেন একাগ্রতার সাথে।

শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন, ‘যদি কেউ মীক্বাত অতিক্রম করে ইহরাম ছাড়াই, তাহলে সে যেন আল্লাহর বিধানের সাথে সীমলঙ্ঘন করল। কারণ আল্লাহ বলেছেন ‘যারা আল্লাহর সীমাকে অতিক্রম করে, তারা যালিম’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৯)।[৭]

(৮) জেদ্দায় ইহরাম বাঁধা

জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা আরেকটি বিদ‘আত। অনেকেই এমন আছেন যারা নির্দিষ্ট স্থান থেকে ইহরাম বাঁধেননি, তারা জেদ্দায় বিমান বন্দরে নেমে ইহরাম বাঁধেন। এটা মারাত্মক ভুল। জেনে-শুনে এটা করাই যাবে না। আর অজ্ঞতাবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে করলে তাকে দম দিতে হবে।[৮]

(৯) মসজিদে আয়েশায় ওমরাহ পালন করা

মসজিদে আয়েশায় গিয়ে ওমরাহ করা। বাঙ্গালী হাজীরা মসজিদে তানঈম বা আয়েশা মসজিদে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসেন। আর বাবা, মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন জনের নামে স্বস্তা ওমরাহ করে থাকেন। এটি একটি জঘন্য বিদ‘আত। এ কাজ পরিত্যাজ্য।

(১০) যমযমের পানি দ্বারা ইহরামের পোশাক ধৌত করা

যমযমের পানি দ্বারা ইহরামের পোশাক ধৌত করা। হজ্জ থেকে ফেরার পূর্ব মুহূর্তে বরকতের আশায় ইহরামের পোশাক ধৌত করেন অনেক হাজী। যমযমের পানি পান করার জন্য; অন্য কোন কাজের জন্য নয়। সঊদীরা এমনটিই করে থাকেন, সাথে সাথে যারা সঊদী আরব থাকেন তারাও যমযমের পানি দ্বারা কিছুই করেন না। কিন্তু কিছু দেশের হাজীরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজগুলো করে বসেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হেফাযত করুন!

(১১) ত্বাওয়াফের সময় উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ পড়া

ত্বাওয়াফের সময় উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ পড়া বিদ‘আত। ত্বাওয়াফের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মানুষ যে দু‘আ করে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য হাজীগণ বেশি বেশি দু‘আ করেন। তাই কারো অসুবিধা করে দু‘আ পড়তে হবে এমনটি ঠিক নয়। এটি একটি জঘন্য বিদ‘আত।

মূলত ত্বাওয়াফ, সাঈ ও মীনায় অবস্থান করা হয় আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। উচ্চৈঃস্বরে দু‘আ পাঠের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে তালবিয়ার বিষয়টি ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ تَضَرُّعًا وَّ خُفۡیَۃً ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাক কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পসন্দ করেন না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৫৫)। এছাড়াও দেখা যায় যে, হাজীদের মধ্যে একজন দু‘আ পড়েন, সাথে সাথে তার দলের অন্য হাজীগণ বলে থাকেন। কিন্তু এটা দ্বারা বিশৃঙ্খলার পরিমাণ বেড়ে যায়।

(১২) মনগড়া দু‘আ পড়া

নিজেদের তৈরী করা দু‘আ পাঠ করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ শরী‘আত রেখে গেছেন। তিনি হজ্জ ও ওমরাহতে যে দু‘আ পড়েছেন এবং শরী‘আতে যে দু‘আ পড়ার অনুমতি রয়েছে সেই দু‘আ পড়তে হবে। তৈরি মনগড়া কোন দু‘আ পড়ার সুযোগ নেই। যদি এমনটি করা হয় তাহলে, সেটা হবে স্পষ্ট বিদ‘আত।

(১৩) কা‘বার কাপড় বা গেলাফ ধরে টানা

মানুষ যখন কা‘বাতে যায়, তখন বেশ আবেগী হয়। আর আবেগের বশবর্তী হয়ে হাজীগণ অনেক কিছুই করে বসেন, যা লাভ নয়, বরং চরম ক্ষতির কারণ। তার মধ্যে একটি হল, কা‘বার কালো গেলাফ ধরে থাকা। বরকতের আশায় টুপি, রুমাল বা বিশেষ কাপড় নিয়ে এসে সেটা কা‘বার গেলাফের সাথে ঘর্ষণ দেয়া। আর ত্বাওয়াফের সময় পুরো সময়টাই কা‘বার গেলাফ ধরে ত্বাওয়াফ করা। ইবাদত হতে হবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পদ্ধতিতে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছাহাবীরা এমনটা করেননি। তাই কেউ যদি ছওয়াবের আসায় এমন করে, তাহলে তা হবে বিদ‘আত।

(১৪) হাজারে আসওয়াদে চুম্বনে বাড়াবাড়ি

হাজারে আসওয়াদে চুম্বনে বাড়াবাড়ি করা। জান্নাত থেকে আসা হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথরে চুম্বন করা হজ্জের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি সামর্থ্য থাকে এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে চুম্বন করা সুন্নাত। তবে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করা আবশ্যক। (ক) অস্বাভাবিক ভিড়ের ভিতর চুম্বন করা (খ) মানুষকে কষ্ট দেয়া (গ) চুম্বন করাকে আবশ্যক মনে করা। এগুলোর কোনটিই করা যাবে না। কারণ চুম্বন করা সুন্নাত আর মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম। তাই সুন্নাত পালন করতে গিয়ে হারাম কাজ করা যাবে না। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করা, হাত স্পর্শ করা বা ইশারা করা অথবা সম্ভব হলে লাঠি দ্বারা পাথরে স্পর্শ করে লাঠিকে চুম্বন করা সবটাই একই হুকুম। কোনটার মর্যাদা একটির চেয়ে অপরটির বেশী এমন না। যদিও চুম্বন করাটা আত্মিক প্রশান্তির ব্যাপার। তাই শুধুমাত্র চুম্বন করার জন্য হুড়োহুড়ি করা একেবারেই ঠিক নয়। অনেকে আবার চুম্বন করাকে গর্বের কাজ মনে করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সবাইকে অবগত করেন। শায়খ আলবানী (মৃত ১৪২০ হি.) এ অবস্থায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলাকে স্পষ্ট বিদ‘আত বলেছেন।[৯]

(১৫) রুকনে ইয়ামানীকে চুম্বন করা

রুকনে ইয়ামানীকে চুম্বন করা বিদ‘আত। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে চুম্বন করেননি। কেউ যদি ছওয়াবের আশায় বা অতি ভক্তি করে তাকে চুম্বন করে, তাহলে সে স্পষ্ট বিদ‘আতকারী।

(১৬) ত্বাওয়াফে ভিন্ন ভিন্ন দু‘আ পড়া

প্রত্যেক ত্বাওয়াফের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দু‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার হজ্জ করেছেন এবং চারবার ওমরাহ করেছেন। হজ্জ ও ওমরাহ পালনে তিনি অসংখ্যবার ত্বাওয়াফ করেছেন। কিন্তু ত্বাওয়াফের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দু‘আ করেছেন মর্মে কোন দলীল হাদীছে পাওয়া যায় না। তবে শুধুমাত্র একটি দু‘আ নির্দিষ্ট করে পড়েছিলেন রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজারে আসওয়াদ এর মাঝে। তা হল- ‘রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া’। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু সায়েব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উপরের দু’রুকনের মাঝে বলতে শুনেছি, رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান’।[১০]

শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন, ‘কিছু ত্বাওয়াফকারীকে দেখা যায়, তারা প্রত্যেক
ত্বাওয়াফের সাথে নির্দিষ্ট দু‘আ পড়ে। ঐ ত্বাওয়াফে নির্দিষ্ট ঐ দু‘আটিই পড়বে, অন্য কোন দু‘আ পড়বে না। এমনকি দেখা যায়, যদি ত্বাওয়াফের সীমানা শেষ হয়ে যায় আর দু‘আ শেষ না হয়, তৎক্ষণাত দু‘আ বন্ধ করে দেয়, যদিও একটি শব্দও বাকী থাকে। আবার নতুনভাবে ঐ দু‘আ শুরু করে, যে দু‘আটি ঐ ত্বাওয়াফের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে। আবার ত্বাওয়াফের আগে যদি দু‘আ শেষ হয়ে যায় তখন তারা চুপ করে থাকে কোন দু‘আই পড়ে না। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এমন কোন নির্দিষ্ট দু‘আ বর্ণিত হয়নি’।[১১] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (মৃত ৭২৮ হি.)ও এমনটিই মন্তব্য করেছেন।[১২]

(১৭) দূর থেকে ইশারা করে হাতে চুমু দেয়া

অনেকেই দূর থেকে হাত ইশারা করে হাতেই চুম্বন করে, যা, স্পষ্ট বিদ‘আত। ত্বাওয়াফের সময় যদি পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করবে। অথবা হাত স্পর্শ করবে বা হাত দ্বারা ইশারা করবে।

(১৮) মাক্বামে ইবরাহীমে ছালাত আদায়ে বাড়াবাড়ি করা

মাক্বামে ইবরাহীমে ছালাতের জন্য পিড়াপিড়ি করা। ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে দু’রাক‘আত ছালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে । এর অর্থ এই নয় যে, ওখানেই পড়তে হবে অন্য কোথাও পড়লে হবে না। সেখানে ছালাতের জন্য হাজী ছাহেবরা পিড়াপিড়ি করেন। যদিও দায়িত্বরত পুলিশরা বার বার দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্ট করেন। তারপরও ঐ যে ধারণা, ওখানেই পড়তে হবে মনে করে ভিড় করা ও ত্বাওয়াফরত মানুষদের কষ্ট দেয়া। এ ধারণা দূর করতে হবে। মসজিদে হারামের যে কোন স্থানে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেই হবে। আবার কেউ কেউ দু’য়ের অধিক ছালাত আদায় করেন। সেটাও ঠিক না। আবার কেউ সুন্নাতী সূরা ছেড়ে বড় সূরা পাঠ করে ছালাত লম্বা করেন। এগুলো শুধু সুন্নাতবিরোধীই না; বরং বড় অন্যায়ও। কারণ এর দ্বারা অন্যের সুযোগ নষ্ট করা হয় ও কষ্ট দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাছ দ্বারা ও স্বাভাবিক সময় নিয়ে ছালাত আদায় করেছেন।

(১৯) ইযতেবায় ভুল করা

ইযতেবা অর্থ ত্বাওয়াফ করা অবস্থায় ইহরামের পোশাক ডান পার্শ্বের অংশ ডান বগলের নীচ দিয়ে উপরে উঠানো। কিন্তু দেখা যায় ইহরাম অবস্থায় সারাক্ষণ ঐ অবস্থায় থাকে। এমনকি ছালাতের সময়ও এভাবে থাকে। অথচ ছালাতের সময় এটা করাই যাবে না। সুতরাং খেয়াল রাখা উচিত। আবার এর বিপরীতও আছে। অর্থাৎ কেউ কেউ পুরো ত্বাওয়াফেই কোন ইযতেবা করে না। পোশাক সুন্দর করে শরীরে জড়িয়ে সাত ত্বাওয়াফই করে।

(২০) ওয়াজিফা পাঠ করা

ওয়াজিফা শরীফ পাঠ করা। এ এক আশ্চর্যজনক বিষয় যে, মুসলিম হজ্জ করতে গিয়ে আল্লাহর কালাম কুরআন পড়া বাদ দিয়ে বসে বসে ওয়াজিফা শরীফ পাঠ করে। আবার তা কুরআনের মত ওযূ করে ও আদবের সাথে পড়তে হয়। হারামের মেঝেতে রাখা যায় না। কত ক্বদর ও সম্মান না দেখলে বুঝানো যাবে না। আর তাতে কি লিখা আছে, সাধারণ পাঠক মনে হয় ভালই জানেন। কুরআনের আয়াতের অংশ, হাদীছের অংশ, মানুষের বলা কথা, আরবী বক্তৃতার কিছু অংশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি একটি কিতাব ‘ওয়াজিফা শরীফ’। সেগুলো কত মনোযোগ সহকারে হাজিরা পড়ে, দেখে আশ্চর্য হয়! হাজী ছাহেবেরা এগুলো ছওয়াবের উদ্দেশ্যেই পড়ে থাকে। অথচ কুরআন ছাড়া দুনিয়াতে আর কোন কিতাব এমনকি হাদীছ পড়লেও কেউ যদি ছওয়াব মনে করে, তাহলে সে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শরী‘আতের সাথে নাফারমানী করবে। কারণ কুরআনের পরে কোন কিছু পাঠ করা যদি ছওয়াবের কাজ হত, তাহলে সেটা হত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী তথা হাদীছ। সুতরাং এগুলো শুধুমাত্র হজ্জেই না; কোন সময়ই পড়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হেফাযত করুন!

(২১) পাহাড়ে উঠে ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা

ছাফা পাহাড়ে উঠে ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা। সাঈ শুরু করতে হয় ছাফা পাহাড় থেকে। শুরুতে বিশেষ দু‘আ আছে, তা পড়ে ও একাকী দু‘আ-মুনাজাত করে সাঈ শুরু হয়। কিন্তু কিছু হাজীদের দেখা যায়, তারা কা‘বামুখী ত্বাওয়াফের ন্যায় হাত উঠিয়ে ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে থাকে। এটা বলা যাবে না বা এটা নিয়মও না।

(২২) বেশি করে সাঈ করা

চৌদ্দ বার সাঈ করা। মূলত ছাফা পাহাড় থেকে শুরু হয়ে মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে শেষ হয়। কিন্তু কেউ কেউ ত্বাওয়াফের ন্যায় যেখান থেকে সাঈ শুরু করে, ঠিক সেখানে এসে আবার শেষ করে। অর্থাৎ ছাফা থেকে ছাফা পর্যন্ত একটি ধরে। কিন্তু না, সেটা হবে ২টি। ছাফা থেকে মারওয়া এক অনুরূপ মারওয়া থেকে ছাফা আসা এক। তাই বিষয়টি খেয়াল রেখে ও সতর্কতার সাথে আদায় করাই উচিত।

তথ্যসূত্র :

[১]. ছহীহ বুখারী হা/১৭৭৩; ছহীহ মুসলিম হা/১৩৪৯; নাসাঈ হা/২৬২৯; মিশকাত হা/২৫০৮।
[২]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৫০।
[৩]. শায়খ উছায়মীন, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ওয়াল মাশরূ‘ ফিয যিয়ারাহ, পৃঃ ৯১।
[৪]. ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯; ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৬১৭; মুসনাদে আহমাদ হা/১১৭৫৫।
[৫]. শায়খ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আব্দুস সালাম হাওয়ামেদী, আস-সুনান ওয়াল মুবতাদি‘আত আল-মুতা‘আল্লিক্বাহ বিল আযকার, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৫-১৬৬।
[৬]. ছহীহ বুখারী হা/১৫২৫।
[৭]. মানাসিকুল হজ্জ ওয়াল ওমরাহ ওয়াল মাশরু‘ ফিয যিয়ারাহ, পৃঃ ৯২।
[৮]. মাজমূঊ ফাতাওয়া বিন বায, ১৭তম খণ্ড, পৃঃ ১০; মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ২১তম খণ্ড, পৃঃ ৩৬১।
[৯]. শায়খ আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪২।
[১০]. আবুদাঊদ হা/১৮৯২; মিশকাত হা/২৫৮১, সনদ ছহীহ।
[১১]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ও রাসায়েল, ২৪তম খণ্ড, পৃঃ ৩২৭।
[১২]. ইবনু তায়মিয়া, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃঃ ১২২।

- মাসিক আল ইখলাস
লেখক: মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
 

Share this page