বিদআত হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদআতসমূহ - শেষ পর্ব

Golam RabbyVerified member

Knowledge Sharer
ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
647
Comments
790
Reactions
6,877
(২৩) সাঈ শেষে ছালাত আদায় করা

সাঈ শেষে ছালাত আদায় করা। এটি একটি জঘন্য বিদ‘আত। অনেক হাজীদের দেখা যায়, ত্বাওয়াফের মত সাঈ শেষেও মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে ছালাতে মগ্ন হন। এটা অন্যায় ও জঘন্য বিদ‘আত। বিশেষ করে মহিলাদের কথা বলতেই হয়; তারা মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে বসে থাকেন। অনেক মহিলাকে দেখা যায় তারা এমনিতেই বসে আছে। কারণ এ পাহাড়ে বিবি হাজেরা (আলাইহিস সালাম) উঠেছিলেন বা বসেছিলেন। এ ধারণা করে তারাও এভাবে বসে থাকে আর জায়গার সংকট তৈরি করে।

(২৪) মাথার চুল না কাটা

মাথার চুল অসম্পূর্ণ কাটা। মাথার চুল কামানো বা ছোট করা হজ্জ বা ওমরাহর একটি ওয়াজিব। মর্যাদাগত দিক থেকে মাথা কামানো (ন্যাড়া করা) উত্তম। যদি না হয়, তবে পুরো মাথা থেকে চুল ছোট করবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল, অনেক হাজী ছাহেব মাথার সামনে বা পিছনের কিছু চুল ছেটে ফেলে কাজ সমাপ্ত করার অপচেষ্টা করে, যা অন্যায়। এটা চলবে না।

(২৫) সূর্য ডুবার পূর্বে আরাফা ত্যাগ করা

সূর্য ডুবার আগেই আরাফা ত্যাগ করা। আরাফায় অবস্থান করার পর সেই রাতেই অবস্থানের জায়গা হল মুযদালিফা। সেখানে অবস্থান সত্যিই এক আশ্চর্যজনক ব্যবস্থা। ধনী-গরীব বাদশা-ফক্বীর তাদের সবার অবস্থান করতে হয় খোলা আকাশের নীচে। আর যতদূর জানা যায়, সেদিন নাকি বৃষ্টিও হয় না। সেখানে ভাল জায়গায় অবস্থানের জন্য মানুষ দুপুর পরপরই আরাফার ময়দান ছাড়া শুরু করে। আরাফার ময়দান হল দু‘আ কবুলের দিন। যে বিষয়ে অনেক হাদীছ এসেছে। আর শুধুমাত্র ফর্মালিটি পালনের জন্য আরাফায় গিয়েই আবার মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যা একেবারেই ঠিক না। আরো জানার বিষয় হল, আরাফায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানও ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

(২৬) ছালাত জমা‘ ও ক্বছর না করা

আরাফায় যোহর-আছর জমা‘ ও ক্বছর না করা। যুক্তি দিয়ে যে ইসলাম চলে না তার প্রমাণ আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কথা। অনেক হাজী ছাহেব আছেন যারা কোনভাবেই যোহর-আছর জমা‘ করে না; বরং যোহরের সময় যোহর ও আছরের সময় আছর ছালাত আদায় করে। যা অন্যায় ও সুন্নাতবিরোধী। ছালাতের ব্যাপারে বেশি একাগ্রতা দেখিয়ে হাজী ছাহেবরা এমনটি করে থাকে। এটা কখনোই করা যাবে না। আর ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে ততই যেন ভাল। তাই তারা ক্বছরও আদায় করেন না; বরং যোহর-আছর পূর্ণাঙ্গ চার রাক‘আতই আদায় করে। উল্লেখ্য যে, আমি প্রায় ৩৫ জন আমেরিকানদের সাথে হজ্জ করার সময় ৩৩ জনই বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হল কিন্তু বলতেও ইতস্তবোধ করি যে, যিনি তাদের মু‘আল্লিম, তিনি অনেক বড় আলেম, তিনি জ্যামাইকা মসজিদের ইমাম, তবুও তিনি বুঝতে সক্ষম হল না ও আমাদের সঙ্গও দিল না।

(২৭) পাহাড়ে উঠার জন্য পিড়াপিড়ি করা

জাবালে রহমায় উঠার জন্য পিড়াপিড়ি করা। বিদায় হজ্জের ময়দানে যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভাষণ বা খুতবা দিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে দু‘আ করা, সেখানে উঠার ব্যাপারে হুড়োহুড়ি করা ইত্যাদি হজ্জের সুন্নাতী কর্মের অন্তর্ভুক্ত নয়। সাথে অনেক হাজী ছাহেব ক্বিবলামুখী হয়ে দু‘আ না করে সেই পাহাড়মুখী হয়ে দু‘আ করে। এটাও করা যাবে না।

(২৮) পাথর সংগ্রহ করা

মুযদালিফায় পাথর সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়া। পাথর পরের দিন সূর্যোদয়ের পরে লাগবে। তাই অনেক হাজী ছাহেবরা মুযদালিফায় গিয়ে পাথর সংগ্রহে মশগূল হয়ে যায়। ভাবেন যদি পাথর ফুরিয়ে যায় তাহলে আর পাথর পাওয়া যাবে না। সেখানে আযান সহ মাগরিব ৩ ও এশা ২ রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে প্রথমে। তারপর অন্য কাজ। আবার অনেকেই এ দু’ওয়াক্তের ছালাতকে এক সাথে বা ক্বছরের সাথে আদায় করে না। যা অন্যায় ও সুন্নাতবিরোধী। সুতরাং সাবধান! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে সকল জায়গায় দীর্ঘ সময় নিয়ে দু‘আ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল মুযদালিফা। আর তা ফজরের ছালাতের পর। এখানে দু‘আ কবুলের ব্যাপারে হাদীছও এসেছে অনেক। অনেক দেশের হাজী ছাহেবরা ফজরের অনেক পূর্বেই রওনা দেন পাথর মারার জন্য।

(২৯) সূর্যোদয়ের পূর্বেই পাথর মারা

সূর্যোদয়ের পূর্বেই পাথর মারা। এটিও একটি অন্যতম বিদ‘আত। যা একেবারেই অচল। অবশ্যই পরিত্যাজ্য। খেয়াল করে দেখবেন। আপনি যখন পাথর মারতে যাচ্ছেন, তখন অনেক হাজী ছাহেব ফিরছেন। অথচ জামরা থেকে পাথর মেরে ফিরতে প্রায় এক ঘণ্টার প্রয়োজন। তার মানে তারা সুবহে ছাদিকের পূর্বেই পাথর মেরেছেন। এটিও জঘন্য বিদ‘আত।

فَقَالَ مَالِكٌ لَمْ يَبْلُغْنَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ رَخَّصَ لِأَحَدٍ أَنْ يَرْمِيَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ وَلَا يَجُوزُ ذَلِكَ فَإِنْ رَمَاهَا قَبْلَ الْفَجْرِ أَعَادَهَا وَبِهِ. قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ وَسُفْيَانُ وَأَحْمَدُ وَقَالَ الشَّافِعِيُّ لَا بَأْسَ بِهِ وَإِنْ كَانَ الْمُسْتَحَبُّ هُوَ بَعْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِ

‘ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.) বলেন, ‘ফজরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাউকে পাথর মারার অনুমতি দিয়েছেন, এমন কোন কথা আমাদের কাছে পৌঁছেনি। আর এটা জায়েয নেই। যদি কেউ ফজরের পূর্বে পাথর মারে, তাহলে সে আবারও পাথর মারবে সূর্যোদয়ের পরে’। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি.), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৮-২৪১ হি.) ও সুফিয়ান সাওরী (রাহিমাহুমুল্লাহ) সহ অনেকেই এমনটিই বলেছেন। ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) বলেন, এতে সমস্যা নেই। তবে তিনি বলেছেন ‘উত্তম ও মূল সময় সূর্যোদয়ের পর’।[১] হাদীছে এসেছে, لَا تَرْمُوا الْجَمْرَةَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ‘তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে পাথর মেরো না’।[২]

(৩০) পাথর নিক্ষেপে ভুল ধারণা পোষণ করা

জামরায় পাথর মারাতে ভুল ধারণা পোষণ করা। ১০ তারিখ সকালে ফজরের পরে মুযদালিফা থেকে সরাসরি মীনায় এসে শুধুমাত্র বড় জামরায় পাথর মারা ওয়াজিব। পাথর মারার সময় হাজীরা মনে করেন আমি শয়তানকেই পাথর মারছি। তাই পাথরের সাইজ একটু বড়ই নিয়ে আসেন এবং খুব শক্তি দিয়ে মারেন আর ভাবেন আমি শয়তানকেই আঘাত করছি। আবার হাজীরা জুতা/সেন্ডেলও নিয়ে আসেন শয়তানকে মারার জন্য। না, এমনটি কোন সময়ই মনে করা যাবে না।

(৩১) ঈদের ছালাত আদায় করা

মীনায় ঈদের ছালাত আদায় করা। আরাফার পরের দিন তথা জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ মূল হজ্জের বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে, যা অন্য দিন থাকে না। সেদিন সঊদী আরবের অন্যান্য স্থানে ঈদের ছালাত আদায় হয়। কিন্তু যারা হজ্জ করে থাকেন, তাদের কোন ঈদের ছালাতই পড়া হয় না। তবে অনেক বাঙ্গালী হাজী ছাহেবরা নিজ তাঁবুতে এসে বা মসজিদে খায়ফে অথবা মক্কা ফিরে গিয়ে ঈদের ক্বাযা ছালাত আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেদিন ঈদের ছালাত আদায় করেননি। সুতরাং কেউ যদি তা আদায় করে ছওয়াবের আশায় তাহলে তা হবে জঘন্য বিদ‘আত। আলবানী (মৃত ১৪২০ হি.)ও অনুরূপ বলেছেন।

(৩২) মিনায় অবস্থান না করা

মিনায় অবস্থান না করা। এটি হজ্জের মধ্যে একটি মারাত্মক রোগ। ১০ তারিখে পাথর মারার পর হাজী ছাহেবরা ক্লান হয়ে হোটেলে বা বিশ্রামের জন্য অন্য কোথাও অবস্থান করে। অথচ ১০ ও ১১ তারিখ মিনাতে রাত যাপন করা ওয়াজিব। আর হরহামেশায় হাজী ছাহেবরা এ ওয়াজিব তরক করছে।

(৩৩) ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা

১১ ও ১২ তারিখে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা। কিছু হাজী ১১ তারিখ ঠিকভাবে করলেও ১২ তারিখে আগে আগে পাথর মেরে মক্কায় চলে যায়। কিন্তু পাথর মারার নিয়ম হল সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর বা যোহরের আযানের পর। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যোহরের সময় সেখানেও আযান হয়। আর ওখানে আযানের একটিই কারণ তা হচ্ছে মানুষকে জানানো যে এখন পাথর মারা যাবে। কারণ ওখানে আযান হলেও ছালতের কোন ব্যবস্থা নেই। আর অনেক সময় সঊদী পুলিশ ঠেকানোরও চেষ্টা করে যেন আযানের পরে পাথর মারা হয়। তারপরও কিছু মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে আগেই পাথর মারে যা ‘গুলূ’ তথা বাড়াবাড়ির অন্তর্ভুক্ত, যা প্রত্যাখ্যাত।

(৩৪) অতিরিক্ত দম বা কুরবানী করা

কারণ ছাড়াই দম দেয়া। হজ্জ ব্যবসায়ীরা হাজীদের সাথে যা করে তার সবই বর্ণনা দেয়ার মত না। তার একটি হল, ‘হাজীগণ অনেক সময় অজান্তেই বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি করে। তাই ব্যবসায়ীগণ তাদেরকে একটি করে দমের কথা বলে। তারা এটাও বলে যে, আপনারা শুধু খরচটাই প্রদান করবেন আর আমি খাসি/দুম্বা যবেহ করে দেব। ৫৫০ রিয়াল দিলেই চলবে। সত্য কথা বলতে কি আমি এ অধ্যায়গুলো দেখেছি নিজেই তাই বলছি। আর হাজীরাও বেশ উৎসাহের সাথে তা দিয়ে থাকে। কারণ মাত্র ৫৫০ রিয়াল বা ১১/১২ হাযার বাংলা টাকার অভাবে হজ্জটা অসম্পূর্ণ হবে তাই কি হয়? অতিরিক্ত কথায় না গিয়ে সহজেই পকেট থেকে বের করে দেয়, যা অন্যায় ও শরী‘আত বিরোধী।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর জীবদ্দশায় কোনদিনই কোন ছাহাবী অথবা কোন খলীফা তার সঙ্গী সাথীদের এমন কথা বলেননি। তাই এ নিয়ম চলবে না। আর এ সকল মু‘আল্লিমদের ত্যাগ করতে হবে। যদিও এ সকল কারণে হাজীদের সাথে মু‘আল্লিমদের যা হয়, তাও আশ্চর্যজনক। কোন কোন মু‘আল্লিম হাজীদের হাতে মারও খান অনায়াশেই। হাজীরা যখন কুরবানী করতে জান মিনায়, তখন বেশিরভাগ সময় তারা মিলিয়ে দিতে পারে না। যেমন ২৫০টি কুরবানীর ২০০টিও মিলিয়ে দিতে পারে না। তখন হয় তাকে মিথ্যা বুঝ বুঝিয়ে দিতে হয় অথবা ইহরাম অবস্থায় হাজীদের যেমন গালি শুনতে হয় সাথে অনেক সময় অন্য কিছুও মিলে যায়। কিন্তু অধিকাংশ হাজীরাই মিনায় যান না। হয়তোবা ৩০ লাখ হাজীদের ৩ হাযার জনও যান না। তাই মু‘আল্লিমরাও থাকে খুব মজায় এবং আনন্দে।

(৩৫) দলবদ্ধ মুনাজাত করা

যেখানে সেখানে দলবদ্ধ মুনাজাত করা। দলবদ্ধ মুনাজাত করার অভ্যাস দেশ থেকেই। সেখানে গিয়ে ছালাতেও মুনাজাত হয় না। মনটা যেন খালি থাকে মুনাজাতের জন্য। তাই হুজুররা যারা আছে, তারা আরাফার ময়দানে সবাইকে নিয়ে দু’হাত উঠিয়ে বসে মুনাজাতের জন্য। দলবদ্ধ মুনাজাত করা সব জায়গায়ই যদি বিদ‘আত হয়, তাহলে হাজী ছাহেবদের জন্য আবার কে জায়েয করল? হুজুর কান্নার অভিনয় করে সেইরকম মযমা বসিয়ে দেয়। আরাফা, মিনা, মুযদালিফা সব জায়গায় এমনটি খেয়াল করলে দেখা যায়। এগুলো বিদ‘আত বিদ‘আতই। স্থান বা কালের সাথে সম্পৃক্ত না বা স্থানের কারণে এগুলো জায়েযও হয়ে যায় না।

উল্লেখ্য যে, আমার প্রথম হজ্জের সময় মিনায় মসজিদে খায়েফে ছিলাম। কিছু ভাইয়ের আমন্ত্রণে গেলাম তাঁবুতে। গিয়েই আমি চমকে গেলাম। কারণ তাঁবুতে ঢুকতেই পাশের তাঁবু থেকে স্বশব্দে সবাই গেয়ে উঠছে ‘ছাল্লে আলা’। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এমন কেন? আমার সাথী ভাইয়েরা উত্তর দিলেন, ভাই দু’দিন থেকে তাদের যন্ত্রণায় কোন ইবাদতই করতে পারছি না। আর সঊদী সরকার তাদের হজ্জে আসার জন্য অনুমতি দেয় কেন? কোন সময় সবাই মিলে ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলে যিকির করছে আবার ‘ছাল্লেওয়ালা’ বলছে। সুতরাং হাজী ছাহেবরা যে কোন কাফেলাতে গিয়ে হজ্জ করলেই হবে তা ঠিক আছে, কিন্তু আত্মিক প্রশান্তি পাবে না, তাও ঠিক আছে। তাই ভবিষ্যতে সাবধান।

(৩৬) চল্লিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা

চল্লিশ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী অনুযায়ী যদি কেউ মদীনা মসজিদে ছালাত আদায় করে, তাহলে তা হাযারগুণের মত। তাই এ মসজিদ যিয়ারতে হাজী ছাহেবরা আসে মদীনায়। এটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু বিদ‘আতী মানসিকতা নিয়ে আসে। তা হচ্ছে এখানে ৪০ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে হয় এ ভুল ধারণা নিয়ে আসে। আর মনে করে, যদি ৪০ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে পারি, তাহলে আমার গুনাহগুলো ক্ষমা হবে, সাথে জান্নাতী হব এবং মুনাফিকের খাতা থেকে নাম কাটা যাবে। অথচ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। না জেনে যেকোন মূল্যে তারা ৪০ ওয়াক্ত পূরণ করে। কোন কোন সময় তারা মু‘আল্লিমদের সাথে ঝগড়াও করে। আবার আমি এমনও দেখেছি, যাদের ৪০ পূরণ না হওয়ার কারণে কাফেলাকে ছেড়ে দিয়ে তারা মদীনায় থেকে গেছে। অথচ সেই ব্যক্তি যদি মক্কায় ২ দিন বেশি থাকতে পারত, তাহলে তার জন্য কতই না ভাল হত। কারণ কোথায় ১ লক্ষ গুণ আর কোথায় ১ হাযার গুণ। তাই বিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত।

(৩৭) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর অধিকবার যিয়ারত করা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবরে অধিকবার যাওয়া। যারা মদীনায় আসে তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর যিয়ারত করবে এটা খুবই সত্য। আর করবে না কেন? কিন্তু কোন কোন হাজী ছাহেবকে দেখা যায় পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে পাঁচবারই সেখানে যায়। ছালাতের আগে একবার ও পরে একবার। মনে রাখতে হবে এটি আপনার হজ্জের কোন অংশ না এবং তেমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও না। অথচ সেখানে দীর্ঘ সময় ব্যয় করছে বারবার যিয়ারতের মাধ্যমে। সেখানে একবার যাওয়াই যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا وَلَا تَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ

‘তোমরা তোমাদের গৃহকে কবর বানিও না এবং আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত কর না। তোমরা আমার উপর স্ব স্ব স্থান থেকে দরূদ পেশ কর, তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়, তোমরা যেখানেই থাক না কেন’।[৩] এখানে ‘ঈদ’ বলতে বারংবার যাওয়াকেও বুঝানো হয়। অর্থাৎ সেখানে বারংবার যাওয়ার কোন জায়গা নয়। অতএব শরী‘আতের বাইরে অতি ভক্তি দেখানো যাবে না।

(৩৮) কবরমুখী হয়ে দু‘আ করা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট চাওয়া

কবরমুখী হয়ে বা ক্বিবলামুখী হয়ে দু‘আ করলে তা কবুল হয়। কিন্তু হাজী ছাহেবরা কবরমুখী হয়ে দু‘আয় লিপ্ত হন দীর্ঘ সময় ধরে। সঊদী পুলিশ যতই দূরে সরিয়ে দিক না কেন, তারা জায়গা ছাড়তে চায় না। ওখানে গেলে দেখা যাবে, হাজী ছাহেবরা যেন সেখানে দাঁড়াতে না পারেন, এর জন্য কিছু কিছু জায়গা এমনিতেই ঘিরে দেয়া আছে। তারপরও মানুষ সেটাই করতে চায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে কিছু চায়। কবর যিয়ারত করতে গিয়ে মানুষ কবরের কাছাকাছি হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে অনেক কথায় বলে ফেলে। আজব কথা হল কেউ কেউ তো আবার কথাও বলে (ইন্নালিল্লাহ)। এগুলো কিভাবে মানুষ প্রচার করে আশ্চর্য হতে হয়। কিছু কিছু হজ্জের পকেট বইয়ে দেখা যায়, সেখানে লিখা আছে ‘কিভাবে কবরের পাশে গিয়ে দু‘আ করতে হয়’। সেখানে লিখা আছে, ‘হে রাসূল তুমি আমাকে শাফা‘আত করিও, আমাকে হাশরের ময়দানে দর্শন দিও ইত্যাদি’। শিরকী কিছু দু‘আ শিক্ষা গ্রহণ করে এবং মানুষ কবরের পাশে গিয়ে এ ধরনের দু‘আ করে।

(৩৯) ওমরাহর জন্য মক্কার বাহিরে যাওয়া

ওমরাহর জন্য মক্কার বাহিরে যাওয়া। হজ্জের সফরে গিয়ে কেউ দু’টি ওমরাহ করতে পারে না। কিন্তু কেউ যদি কোন গ্রহণযোগ্য কারণে মক্কার বাহিরে আসে, তবে মক্কায় আবার প্রবেশের সময় সে চাইলে ওমরাহ্র নিয়ত করতে পারে। আবার সাধারণ পোশাকেও যেতে পারে। শুধু মসজিদে আয়েশাতেই না; বরং মক্কার বাহিরেও অনেকেই চলে যায় যেন ফেরার সময় ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করতে পারে। মনে রাখা উচিত যে, প্রত্যেক কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।

(৪০) অঙ্গীকার নামা নেয়া

তাবলীগ জামাতের লোকেরা এগিয়ে আছেন এ সকল নোংরা কাজে। মক্কা-মদীনায় গেলে হাজীদের মন এমনিতেই নরম থাকে, এটা সত্য। কোন বিষয় বললে যেন সহজেই বুঝে যান। আর এরই সুযোগ সন্ধানী তাবলীগরা হাজীদের থেকে ওয়াদা করিয়ে নেন বাড়ি গিয়েই তারা এক চিল্লা বা ৪ চিল্লা বা বছর চিল্লা আবার কেউ জীবন চিল্লা দেয়ার সহজ অঙ্গীকার নিয়ে থাকে। যা একজন হাজীর উপর চরম যুলুম করা হয়।

সেখানে দাওয়াতের নামে তাদের ‘ফাযায়েলে আমল’-এর উদ্ভট ও মিথ্যা কাহিনী শুনিয়ে মানুষকে সহজেই জান্নাতের পথ দেখিয়ে দেয়। আর শেষে বলে দেয়া হয় যে, হাজী ছাহেব! খেয়াল রাখবেন, হজ্জে এসে যদি ওয়াদা ভঙ্গ করেন তাহলে কিন্তু হজ্জের সমস্যা হবে ইত্যাদি সব কথা-বার্তা বলে হাজীদের মহা বিপদে ফেলে দেয়। আর তাদের অন্যতম কিছু খারাপ আচরণ হল- মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে তারা কখনো বসবে না ও অন্যকেও বসতে দেবে না বা কোন আলোচনা শুনতে দেবে না। সঊদীতে প্রিন্ট করা কোন বই বা ক্যাসেট তারা নেবে না। আবার কোন কোন বইয়ে লেখা আছে- ‘সঊদী সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া কোন বই বা লিফলেট ও ক্যাসেট দিলে আপনারা হাতে ধরবেন না। কারণ এগুলোর সাথে আমাদের মাযহাবের যথেষ্ট অমিল রয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর’। সুতরাং হাজী ছাহেবরা একটু সাবধান থাকা উচিত এ সকল কুচক্রীদের থেকে।

সব শেষে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (মৃত ১৪২০ হি.)-এর কথা দিয়েই শেষ করছি। ‘আমার সাধ্যানুযায়ী মক্কা-মদীনায় হজ্জ ও যিয়ারতের মাঝে সংঘটিত বিদ‘আতগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাচ্ছি এটা যেন মুসলিম উম্মাহ্র হজ্জ ইবাদত সম্পাদনে সহযোগী হয় এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পন্থায় হজ্জ করতে ও তাঁর উত্তম আদর্শ ধারণ করতে সক্ষম হয়’। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

তথ্যসূত্র :

[১]. আবুল ওয়ালীদ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু রুশদ আল-কুরতুবী আল-আন্দালুসী, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুক্বতাছিদ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯০।
[২]. আবুদাঊদ হা/১৯৪০; তিরমিযী হা/৮৯৩; ইবনু মাজাহ হা/৩০২৫; মিশকাত হা/২৬১৩, সনদ ছহীহ।
[৩]. আবুদাঊদ হা/২০৪২, সনদ ছহীহ।

- মাসিক আল ইখলাস
লেখক: মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
 
Similar threads Most view View more
Back
Top