ভূমিকা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ইসলাম প্রদান করেনি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লসহ সকল ক্ষেত্রেই মেনে চলার জন্য ইসলাম দিয়েছে বিস্তারিত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তাই মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহান আল্লাহ একে অপরের প্রতি সম্ভাষণ করার পদ্ধতি নবী-রাসূলদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সর্বপ্রথম তিনি আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সালামের শিক্ষা দেন। আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও সালামের উত্তর দেন।
প্রাক-ইসলামী যুগে আরব সমাজে ‘আন‘আমাল্লাহু বিকা আইনান’ (أنعم الله بك عينا) অর্থাৎ আপনার দ্বারা আল্লাহ আপনার প্রিয়জনের চক্ষু শীতল করুন এবং ‘আন‘আমা ছাবাহান’ (أنعم صباحا) অর্থাৎ আপনার সকাল সুন্দর-সমৃদ্ধ হোক বা সুপ্রভাত ইত্যাদি শব্দের প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাক-ইসলামী যুগে ব্যবহৃত শব্দগুলো পরিহার করে পরস্পরকে ’আসসালামু আলাইকুম’ (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ প্রদান করেন।
একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা পারস্পরিক ভালবাসা, বন্ধুত্ব, শান্তি-নিরাপত্তা, কল্যাণ ও দু‘আ কামনা করে, তারই নাম ‘সালাম’। সালাম ইসলামের চিরন্তন অভিবাদন, মুসলিম উম্মাহর সম্ভাষণ, সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে চিনি বা না চিনি প্রথমে সালাম দেয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। আর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব।
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা
‘সালাম’ আরবী শব্দ। অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, অভিবাদন ইত্যাদি। ‘সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে সালাম প্রদানের গুরুত্ব, নিয়ম-নীতি ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ মুসলিমদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার ইসলামের একটি মহান ঐতিহ্য ও বিশেষ সৌন্দর্য। আর পরস্পর সালাম বিনিময় করা একজন মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অধিকার ও দায়িত্ব।
আল্লাহ তা‘আলার অভিবাদন
সালামের গুরুত্ব ও মর্যাদা এতটাই অধিক যে, জান্নাতে জান্নাতীদের সাথে আল্লাহর তা‘আলার অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদেরকে সালাম প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে সালাম’ (সূরা ইয়াসিন : ৫৮)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান’ (সুরা আল-আহযাব : ৪৪)।
ফেরেশতাদের অভিবাদন
জান্নাতে জান্নাতীদের সাথে ফেরেশতাদের অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সেখানে তাদের আহ্বান হবে, হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র! এবং পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘আসসালামু আলাইকুম’ দ্বারা। আর তাদের শেষ কথা হবে, আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন’ (সূরা ইউনুস : ১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতাগণ তাদের কাছে হাজির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (এবং বলবেন) তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম’ (সূরা আর-রা‘দ : ২৩-২৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদেরকে প্রতিদান স্বরূপ দেয়া হবে (জান্নাতে) বালাখানা, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা দেয়া হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৭৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও এর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য’ (সূরা আয-যুমার : ৭৩)।
জান্নাতীদের অভিবাদন
জান্নাতে জান্নাতীর সাথে আরেক জান্নাতীর অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী হবে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে; সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম’ (সূরা ইবরাহীম : ২৩)।
জান্নাতীরা জান্নাতে কোন খারাপ ও বাজে কথা শুনবে না। তাদের সকলের অভিবাদন হবে শুধু সালাম আর সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য, ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত’ (সূরা আল-ওয়াক্বি‘আহ : ২৫-২৬)।
নবী-রাসূলগণের সুন্নাত
সালাম প্রদান করা নবী-রাসূলদের সুন্নাত ও খাঁটি মুমিনদের বৈশিষ্ট। যা আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সালামের শিক্ষা প্রদান করেন। আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন। এ বিষয়ে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আলাইহিস সালাম) (ফেরেশতাদের) বললেন, ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম’। ফেরেশতাম-লী তার উত্তরে ‘আস্সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহ্মাতুল্লাহ’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তারা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।[১]
আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে সালাম প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে’ (সূরা আন-নূর : ২৭)।
সালামের উত্তর, সালাম প্রদানকারীর চেয়ে উত্তম বাক্যে বা তার মতই দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদন প্রাপ্ত হও, তবে তোমরাও তা হতে শ্রেষ্ঠতর সালাম সম্ভাষণ কর অথবা ওভাবেই জবাব দিয়ে দাও; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী’ (সূরা আন-নিসা : ৮৬)।
শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা ‘সালামকে’ আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘নিরাপত্তা ও বরকতের প্রতীক’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি নিজ ঘরে প্রবেশকালেও সালাম দিতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র; এইভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (সূরা আন-নূর : ৬১)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা হিজরত করে প্রথম ভাষণেই তিনি ‘সালাম’ প্রসারের আদেশ করেছেন। কারণ একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে পরস্পর সম্প্রীতি, ভালবাসা প্রতিষ্ঠায় সালামের ভূমিকা অতুলনীয়। হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় পদার্পণ করলে লোকেরা তাঁকে দেখার জন্য ভীড় জমায় এবং বলাবলি হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। আমিও লোকেদের সাথে তাঁকে দেখতে গেলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা হল- ‘হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[২]
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,يَا بُنَيَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُوْنُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ ‘হে বৎস! যখন তুমি পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তুমি সালাম করবে, এটা তোমার এবং পরিবারের জন্য বরকতময় হবে’।[৩] এমনকি পরিবারের নিকট প্রবেশ করার সময় বাড়িতে কেউ না থাকলেও সালাম প্রদান করতে হবে। তখন সালাম প্রদানকারী বলবে,السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক’।[৪]
সর্বোত্তম আমল
সালাম হল ইসলামের সর্বোত্তম আমল। হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন্ কাজ উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খানা খাওয়াবে এবং তুমি যাকে চেন এবং যাকে চেন না সবাইকে সালাম প্রদান করবে।[৫]
পারস্পরিক ভালবাসা, সম্প্রীতি, আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাওয়া
সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়। হাদীসে এসেছে,
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ তোমরা ঈমান আনয়ন না করবে। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দিব না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন কর।[৬]
নেকি বৃদ্ধি হওয়া
সালামের মাধ্যমে বান্দার নেকি বৃদ্ধি হয়। হাদীসে এসেছে,
ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দশ নেকি। এরপর আরেকজন এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিশ নেকি। অতঃপর আরেকজন এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ত্রিশ নেকি।[৭]
জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম
সালাম জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় পদার্পণ করে সর্বপ্রথম যে কথা বলেন তা হল-
‘হে লোকসকল! তোমারা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[৮]
একদা আবূ শুরাইহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমার জন্য জান্নাত আবশ্যক করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
‘মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো (জান্নাত আবশ্যক করে)।[৯]
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি
সালাম প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে নির্বাচিত হওয়া যায়। হাদীসে এসেছে,
আবূ উমামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।[১০]
আবূ আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তিনদিনের অধিক তার কোন ভাইকে পরিত্যাগ করবে এবং কোথাও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ হলে একজন একদিকে আরেকজন অন্যদিকে মুখ ফিরেয়ে নিবে। আর উভয়ের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে প্রথমে সালাম প্রদান করবে।[১১]
মুসলিম ভাইয়ের অধিকার
এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সালাম। হাদীসে এসেছে,
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক্ব রয়েছে। ১. তার সালামের উত্তর দেয়া, ২. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, ৩. জানাযায় যোগদান করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচির জবাব দেয়া।[১২]
আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ
কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিম ভাইকে সালাম প্রদান করার পর মুসাফাহা করলে সগীরা গুনাহ তথা ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
বারা ইবনু আযিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন দু’জন মুসলিম ব্যক্তি মিলিত হয় অতঃপর পরস্পরে মুছাফাহা করে, তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের দু’জনকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।[১৩]
এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উম্মাতকে বার বার সালামের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি একই ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ পর পর দেখা হলেও তাকে সালাম দিতে বলেছেন। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘যখন তোমাদের কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখন সে যেন তাকে সালাম প্রদান করে। অতঃপর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে কোন বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথর আড়াল পড়ে যায়, অতঃপর পুনরায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখনও যেন সালাম বিনিময় করে’।[১৪]
সাহাবীগণও উপরিউক্ত হাদীসের উপর যথাযথ আমল করতেন। হাদীসে এসেছে,
ইসহাক ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তুফাইল ইবনু উবাই ইবনু কা‘ব (রাহিমাহুল্লাহ) সকালে সকালে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করতেন। তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছালে ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যে কোন মামুলী জিনিস বিক্রেতা, দোকানদার, মিসকীন, এমনকি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, একদা আমি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? বেচাকেনার নিকটে আপনি যান না, কোন বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোন জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না, কিংবা বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, হে ভুঁড়িওয়ালা! (তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বললেন) আমি সালাম করার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি।[১৫]
সালাম দেয়ার পদ্ধতি
ইসলাম সালাম দেয়া এবং নেয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে। এরপরও অজ্ঞতার কারণে আমরা ভুল করে থাকি। নিম্নে সালাম দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
সালাম প্রদানকারী : যে আগে সালাম দিবে, সে নিম্নোক্ত বাক্যে সালাম দিবে- (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه)। অর্থ : তোমাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক ।[১৬]
সালামের উত্তর প্রদানকারী : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিবে সে বলবে- (وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ : তোমাদের উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।[১৭]
অনুপস্থিত ব্যক্তির সালামের উত্তর : অনুপস্থিত কোন ব্যক্তি যদি সালাম প্রদান করে, তাহলে তার সালামের উত্তর এভাবে বলবে- (عَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ : তোমার এবং তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।[১৮] অথবা শুধু বলবে- (وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) অর্থ : তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।[১৯]
উল্লেখ্য যে, সালামের জবাবের শেষে وَمَغْفِرَتُهُ)) শব্দও যোগ করা যায়।[২০] তবে যে হাদীসে وَمَغْفِرَتُهُ)) শব্দ যোগ করে চল্লিশ নেকি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, সে হাদীসটি যঈফ।[২১]
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৩৩২৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৪১।
[২]. তিরমিযী, হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪; সনদ সহীহ।
[৩]. তিরমিযী, হা/২৬৯৮; সনদ হাসান গারীব।
[৪]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৫৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৪৫৭, সনদ হাসান।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/১২; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯।
[৬]. সহীহ মুসলিম, হা/৫৪।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৫, সনদ সহীহ।
[৮]. তিরমিযী, হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪; সনদ সহীহ।
[৯]. সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫০৪; সনদ জাইয়িদ।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৭, সনদ সহীহ।
[১১]. সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬০।
[১২]. সহীহ বুখারী হা/১২৪০; সহীহ মুসলিম হা/২১৬২।
[১৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৭০, ১৮৭২১; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭০৩; আবূ দাঊদ, হা/৫২১২; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭১৮; সনদ সহীহ।
[১৪]. আবু দাঊদ, হা/৫২০০, সনদ সহীহ মাওকূফ।
[১৫]. মুওয়াত্বা মালেক, হা/৩৫৩৩; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০০৬, সনদ সহীহ।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৫।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৩৩, সনদ সহীহ।
[১৮]. সহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৩৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯০১।
[১৯]. সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৪৯।
[২০]. সহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৩৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯০১।
[২১]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৬; যঈফ আবু দাঊদ, হা/৫১৯৬; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৬২১।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ইসলাম প্রদান করেনি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লসহ সকল ক্ষেত্রেই মেনে চলার জন্য ইসলাম দিয়েছে বিস্তারিত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তাই মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহান আল্লাহ একে অপরের প্রতি সম্ভাষণ করার পদ্ধতি নবী-রাসূলদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সর্বপ্রথম তিনি আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সালামের শিক্ষা দেন। আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও সালামের উত্তর দেন।
প্রাক-ইসলামী যুগে আরব সমাজে ‘আন‘আমাল্লাহু বিকা আইনান’ (أنعم الله بك عينا) অর্থাৎ আপনার দ্বারা আল্লাহ আপনার প্রিয়জনের চক্ষু শীতল করুন এবং ‘আন‘আমা ছাবাহান’ (أنعم صباحا) অর্থাৎ আপনার সকাল সুন্দর-সমৃদ্ধ হোক বা সুপ্রভাত ইত্যাদি শব্দের প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাক-ইসলামী যুগে ব্যবহৃত শব্দগুলো পরিহার করে পরস্পরকে ’আসসালামু আলাইকুম’ (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ প্রদান করেন।
একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা পারস্পরিক ভালবাসা, বন্ধুত্ব, শান্তি-নিরাপত্তা, কল্যাণ ও দু‘আ কামনা করে, তারই নাম ‘সালাম’। সালাম ইসলামের চিরন্তন অভিবাদন, মুসলিম উম্মাহর সম্ভাষণ, সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে চিনি বা না চিনি প্রথমে সালাম দেয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। আর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব।
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা
‘সালাম’ আরবী শব্দ। অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, অভিবাদন ইত্যাদি। ‘সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে সালাম প্রদানের গুরুত্ব, নিয়ম-নীতি ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ মুসলিমদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার ইসলামের একটি মহান ঐতিহ্য ও বিশেষ সৌন্দর্য। আর পরস্পর সালাম বিনিময় করা একজন মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অধিকার ও দায়িত্ব।
আল্লাহ তা‘আলার অভিবাদন
সালামের গুরুত্ব ও মর্যাদা এতটাই অধিক যে, জান্নাতে জান্নাতীদের সাথে আল্লাহর তা‘আলার অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদেরকে সালাম প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
سَلٰمٌ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ
‘পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে সালাম’ (সূরা ইয়াসিন : ৫৮)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
تَحِیَّتُہُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَہٗ سَلٰمٌ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَرِیۡمًا
‘যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান’ (সুরা আল-আহযাব : ৪৪)।
ফেরেশতাদের অভিবাদন
জান্নাতে জান্নাতীদের সাথে ফেরেশতাদের অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
دَعۡوٰىہُمۡ فِیۡہَا سُبۡحٰنَکَ اللّٰہُمَّ وَ تَحِیَّتُہُمۡ فِیۡہَا سَلٰمٌ وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىہُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
‘সেখানে তাদের আহ্বান হবে, হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র! এবং পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘আসসালামু আলাইকুম’ দ্বারা। আর তাদের শেষ কথা হবে, আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন’ (সূরা ইউনুস : ১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَہَا وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَدۡخُلُوۡنَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ کُلِّ بَابٍ – سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ بِمَا صَبَرۡتُمۡ فَنِعۡمَ عُقۡبَی الدَّارِ
‘স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতাগণ তাদের কাছে হাজির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (এবং বলবেন) তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম’ (সূরা আর-রা‘দ : ২৩-২৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اُولٰٓئِکَ یُجۡزَوۡنَ الۡغُرۡفَۃَ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یُلَقَّوۡنَ فِیۡہَا تَحِیَّۃً وَّ سَلٰمًا
‘তাদেরকে প্রতিদান স্বরূপ দেয়া হবে (জান্নাতে) বালাখানা, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা দেয়া হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৭৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ سِیۡقَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا رَبَّہُمۡ اِلَی الۡجَنَّۃِ زُمَرًا حَتّٰۤی اِذَا جَآءُوۡہَا وَ فُتِحَتۡ اَبۡوَابُہَا وَ قَالَ لَہُمۡ خَزَنَتُہَا سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ طِبۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡہَا خٰلِدِیۡنَ
‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও এর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য’ (সূরা আয-যুমার : ৭৩)।
জান্নাতীদের অভিবাদন
জান্নাতে জান্নাতীর সাথে আরেক জান্নাতীর অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ تَحِیَّتُہُمۡ فِیۡہَا سَلٰمٌ
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী হবে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে; সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম’ (সূরা ইবরাহীম : ২৩)।
জান্নাতীরা জান্নাতে কোন খারাপ ও বাজে কথা শুনবে না। তাদের সকলের অভিবাদন হবে শুধু সালাম আর সালাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡہَا لَغۡوًا وَّ لَا تَاۡثِیۡمًا – اِلَّا قِیۡلًا سَلٰمًا سَلٰمًا
‘তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য, ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত’ (সূরা আল-ওয়াক্বি‘আহ : ২৫-২৬)।
নবী-রাসূলগণের সুন্নাত
সালাম প্রদান করা নবী-রাসূলদের সুন্নাত ও খাঁটি মুমিনদের বৈশিষ্ট। যা আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সালামের শিক্ষা প্রদান করেন। আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন। এ বিষয়ে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُوْلُهُ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا ثُمَّ قَالَ اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ الْمَلَائِكَةِ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّوْنَكَ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ. فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَقَالُوْا السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ فَزَادُوْهُ وَرَحْمَةُ اللهِ فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُوْرَةِ آدَمَ فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ
‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আলাইহিস সালাম) (ফেরেশতাদের) বললেন, ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম’। ফেরেশতাম-লী তার উত্তরে ‘আস্সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহ্মাতুল্লাহ’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তারা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।[১]
আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে সালাম প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ بُیُوۡتِکُمۡ حَتّٰی تَسۡتَاۡنِسُوۡا وَ تُسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَہۡلِہَا ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে’ (সূরা আন-নূর : ২৭)।
সালামের উত্তর, সালাম প্রদানকারীর চেয়ে উত্তম বাক্যে বা তার মতই দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡہَاۤ اَوۡ رُدُّوۡہَا اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ حَسِیۡبًا
‘আর যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদন প্রাপ্ত হও, তবে তোমরাও তা হতে শ্রেষ্ঠতর সালাম সম্ভাষণ কর অথবা ওভাবেই জবাব দিয়ে দাও; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী’ (সূরা আন-নিসা : ৮৬)।
শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা ‘সালামকে’ আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘নিরাপত্তা ও বরকতের প্রতীক’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি নিজ ঘরে প্রবেশকালেও সালাম দিতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاِذَا دَخَلۡتُمۡ بُیُوۡتًا فَسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ تَحِیَّۃً مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُبٰرَکَۃً طَیِّبَۃً کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ
‘তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র; এইভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (সূরা আন-নূর : ৬১)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা হিজরত করে প্রথম ভাষণেই তিনি ‘সালাম’ প্রসারের আদেশ করেছেন। কারণ একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে পরস্পর সম্প্রীতি, ভালবাসা প্রতিষ্ঠায় সালামের ভূমিকা অতুলনীয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رضى الله عنه قَالَ لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ اِنْجَفَلَ النَّاسُ إِلَيْهِ وَقِيْلَ قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لأَنْظُرَ إِلَيْهِ فَلَمَّا اسْتَبَنْتُ وَجْهَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ فَكَانَ أَوَّلَ شَىْءٍ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় পদার্পণ করলে লোকেরা তাঁকে দেখার জন্য ভীড় জমায় এবং বলাবলি হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। আমিও লোকেদের সাথে তাঁকে দেখতে গেলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা হল- ‘হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[২]
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,يَا بُنَيَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُوْنُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ ‘হে বৎস! যখন তুমি পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তুমি সালাম করবে, এটা তোমার এবং পরিবারের জন্য বরকতময় হবে’।[৩] এমনকি পরিবারের নিকট প্রবেশ করার সময় বাড়িতে কেউ না থাকলেও সালাম প্রদান করতে হবে। তখন সালাম প্রদানকারী বলবে,السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক’।[৪]
সর্বোত্তম আমল
সালাম হল ইসলামের সর্বোত্তম আমল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন্ কাজ উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খানা খাওয়াবে এবং তুমি যাকে চেন এবং যাকে চেন না সবাইকে সালাম প্রদান করবে।[৫]
পারস্পরিক ভালবাসা, সম্প্রীতি, আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাওয়া
সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوْا وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتَّى تَحَابُّوْا أَوَ لَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوْا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ.
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ তোমরা ঈমান আনয়ন না করবে। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দিব না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন কর।[৬]
নেকি বৃদ্ধি হওয়া
সালামের মাধ্যমে বান্দার নেকি বৃদ্ধি হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَشْرٌ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ عِشْرُوْنَ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ثَلَاثُوْنَ
ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দশ নেকি। এরপর আরেকজন এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিশ নেকি। অতঃপর আরেকজন এসে বলল, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ত্রিশ নেকি।[৭]
জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম
সালাম জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় পদার্পণ করে সর্বপ্রথম যে কথা বলেন তা হল-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوْا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ
‘হে লোকসকল! তোমারা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[৮]
একদা আবূ শুরাইহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমার জন্য জান্নাত আবশ্যক করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
طِيْبُ الْكَلَامِ وَبَذْلُ السَّلَامِ وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ
‘মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো (জান্নাত আবশ্যক করে)।[৯]
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি
সালাম প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে নির্বাচিত হওয়া যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلَامِ
আবূ উমামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।[১০]
عَنْ أَبِيْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا يَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَاوَخَيْرُهُمَا الَّذِيْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ
আবূ আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তিনদিনের অধিক তার কোন ভাইকে পরিত্যাগ করবে এবং কোথাও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ হলে একজন একদিকে আরেকজন অন্যদিকে মুখ ফিরেয়ে নিবে। আর উভয়ের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে প্রথমে সালাম প্রদান করবে।[১১]
মুসলিম ভাইয়ের অধিকার
এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সালাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيْضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيْتُ الْعَاطِسِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক্ব রয়েছে। ১. তার সালামের উত্তর দেয়া, ২. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, ৩. জানাযায় যোগদান করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচির জবাব দেয়া।[১২]
আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ
কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিম ভাইকে সালাম প্রদান করার পর মুসাফাহা করলে সগীরা গুনাহ তথা ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا
বারা ইবনু আযিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন দু’জন মুসলিম ব্যক্তি মিলিত হয় অতঃপর পরস্পরে মুছাফাহা করে, তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের দু’জনকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।[১৩]
এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উম্মাতকে বার বার সালামের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি একই ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ পর পর দেখা হলেও তাকে সালাম দিতে বলেছেন। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارٌ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ
‘যখন তোমাদের কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখন সে যেন তাকে সালাম প্রদান করে। অতঃপর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে কোন বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথর আড়াল পড়ে যায়, অতঃপর পুনরায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখনও যেন সালাম বিনিময় করে’।[১৪]
সাহাবীগণও উপরিউক্ত হাদীসের উপর যথাযথ আমল করতেন। হাদীসে এসেছে,
ইসহাক ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তুফাইল ইবনু উবাই ইবনু কা‘ব (রাহিমাহুল্লাহ) সকালে সকালে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করতেন। তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছালে ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যে কোন মামুলী জিনিস বিক্রেতা, দোকানদার, মিসকীন, এমনকি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, একদা আমি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? বেচাকেনার নিকটে আপনি যান না, কোন বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোন জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না, কিংবা বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, হে ভুঁড়িওয়ালা! (তুফাইল (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বললেন) আমি সালাম করার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি।[১৫]
সালাম দেয়ার পদ্ধতি
ইসলাম সালাম দেয়া এবং নেয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে। এরপরও অজ্ঞতার কারণে আমরা ভুল করে থাকি। নিম্নে সালাম দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
সালাম প্রদানকারী : যে আগে সালাম দিবে, সে নিম্নোক্ত বাক্যে সালাম দিবে- (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه)। অর্থ : তোমাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক ।[১৬]
সালামের উত্তর প্রদানকারী : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিবে সে বলবে- (وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ : তোমাদের উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।[১৭]
অনুপস্থিত ব্যক্তির সালামের উত্তর : অনুপস্থিত কোন ব্যক্তি যদি সালাম প্রদান করে, তাহলে তার সালামের উত্তর এভাবে বলবে- (عَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ : তোমার এবং তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।[১৮] অথবা শুধু বলবে- (وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) অর্থ : তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।[১৯]
উল্লেখ্য যে, সালামের জবাবের শেষে وَمَغْفِرَتُهُ)) শব্দও যোগ করা যায়।[২০] তবে যে হাদীসে وَمَغْفِرَتُهُ)) শব্দ যোগ করে চল্লিশ নেকি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, সে হাদীসটি যঈফ।[২১]
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৩৩২৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৪১।
[২]. তিরমিযী, হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪; সনদ সহীহ।
[৩]. তিরমিযী, হা/২৬৯৮; সনদ হাসান গারীব।
[৪]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৫৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৪৫৭, সনদ হাসান।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/১২; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯।
[৬]. সহীহ মুসলিম, হা/৫৪।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৫, সনদ সহীহ।
[৮]. তিরমিযী, হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪; সনদ সহীহ।
[৯]. সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫০৪; সনদ জাইয়িদ।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৭, সনদ সহীহ।
[১১]. সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬০।
[১২]. সহীহ বুখারী হা/১২৪০; সহীহ মুসলিম হা/২১৬২।
[১৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৭০, ১৮৭২১; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭০৩; আবূ দাঊদ, হা/৫২১২; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭১৮; সনদ সহীহ।
[১৪]. আবু দাঊদ, হা/৫২০০, সনদ সহীহ মাওকূফ।
[১৫]. মুওয়াত্বা মালেক, হা/৩৫৩৩; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০০৬, সনদ সহীহ।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৫।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৩৩, সনদ সহীহ।
[১৮]. সহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৩৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯০১।
[১৯]. সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৪৯।
[২০]. সহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৩৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯০১।
[২১]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৬; যঈফ আবু দাঊদ, হা/৫১৯৬; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৬২১।
সূত্র: আল-ইখলাছ।
Last edited: