‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

সালাত সালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি (২য় কিস্তি)

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,544
Credits
2,602
সালাত ত্যাগকারীর ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণের অবস্থান

ইসলামে সালাত পরিত্যাগকারীর কোন অবস্থাননেই:
যে সকল আমলের মাধ্যমে মানুষের ঈমান টিকে থাকে তার মধ্যে সর্বাধিক বড় মাধ্যম হ’ল সালাত। কেউ সালাত ত্যাগ করলে ইসলামে কোন অংশ থাকবে না বলে সাহাবায়ে কেরাম সতর্ক করে দিয়েছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় থাকাকালীন সালাতের কথা বলা হ’লে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,

إِنَّهُ لَا حَظَّ لِأَحَدٍ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ أَضَاعَ الصَّلَاةَ، فَصَلَّى وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا،​

‘নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তির ইসলামে কোন অবস্থান নেই, যে সালাত বিনষ্ট করে। অতঃপর ওমর (রাঃ) সালাত পড়লেন অথচ তার জখম হ’তে তখনও রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল’।[1]

সালাত ত্যাগকারী ঈমানহীন মানুষ : সালাতহীন মানুষ ঈমানহীন মানুষের মত। কেউ সালাত পরিত্যাগ করলে তার ঈমান থাকবে না। এজন্য সালাত ত্যাগ করা যাবে না। যেমন আছারে এসেছে,

وَعَنْ أبِيْ الدَّرْداَءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قال: لاَ إيْماَنَ لِمَنْ لاَ صَلَاةَ لَهُ وَلَا صَلَاةَ لِمَنْ لَا وُضُوْءَ لَهُ،​

আবু দ্দারদা (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাত পড়ে না তার ঈমান নেই। আর যে ব্যক্তি ওযূ করেনি তার সালাত হবে না’।[2]

عَن ابنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ مَن تَرَكَ الصَّلاَةَ فَلاَ دِينَ لَه،​

ইবনে মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে, তার দ্বীনই নেই’।[3]

মুছ‘আব বিন সা‘দ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা! আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ‘যারা তাদের সালাত থেকে উদাসীন’ (মা‘ঊন ১০৭/৫)। এই আয়াত সম্পর্কে আপনি কি বলেন? আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যার সালাতে উদাসীনতা আসে না? কে এমন আছে সালাত পড়তে গিয়ে যার মনে বিভিন্ন কথা স্মরণ হয় না? তিনি বললেন,

لَيْسَ ذَلِكَ إِنَّمَا هُوَ إِضَاعَةُ الْوَقْتِ يَلْهُو حَتَّى يَضِيعَ الْوَقْتُ​

বিষয়টা এরকম নয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাত নষ্ট করা। যারা আজে-বাজে (দুনিয়াবী) কাজে লিপ্ত থেকে সালাতের সময়কে নষ্ট করে দিবে’।[4]

জাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হ’ল-

مَا كَانَ يُفَرِّقُ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيْمَانِ عِنْدَكُمْ مِنَ الْأَعْمَالِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ،​

‘রাসূল (ﷺ)-এর আমলে আমলসমূহের মধ্যে কোন আমলটি আপনাদের নিকট ঈমান এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে বিবেচিত হ’ত? তিনি বললেন, সালাত’।[5]

عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ حُذَيْفَةَ الْمَسْجِدَ فَرَأَى رَجُلًا يُصَلِّي لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهُ وَلَا سُجُوْدَهُ فَقَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ: مُنْذُ كَمْ صَلَّيْتَ؟ قَالَ: مُنْذُ أَرْبَعِينَ سَنَةً، فَقَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ: مَا صَلَّيْتَ وَلَوْ مُتَّ مُتَّ عَلَى غَيْرِ الْفِطْرَةِ الَّتِي فَطَرَ اللهُ عَلَيْهَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،​

যায়েদ বিন ওয়াহাব হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা আমি হুযায়ফা (রাঃ)-এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার রুকূ‘-সিজদা পূর্ণ করছে না। সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি কতদিন থেকে এভাবে সালাত আদায় কর? লোকটি বলল, চল্লিশ বছর। হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি সালাত আদায় করনি। শাক্বীক্ব বলেন, আমার মনে হয় হুযায়ফা এ কথাও বলেছেন, যদি তুমি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, তাহ’লে নবী করীম (ﷺ)-কে যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন, তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে’।[6]

অনুরূপ বর্ণনা রাসূল (ﷺ) থেকেও এসেছে। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا لَا يُتِمَّ رُكُوعَهُ يَنْقُرُ فِيْ سُجُودِهِ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ مَاتَ هَذَا عَلَى حَالِهِ هَذِهِ مَاتَ عَلَى غَيْرِ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَثَلُ الَّذِي لَا يُتِمُّ رُكُوعَهُ ويَنْقُرُ فِي سُجُودِهِ، مَثَلُ الْجَائِعِ يَأْكُلُ التَّمْرَةَ وَالتَّمْرَتَانِ لَا يُغْنِيَانِ عَنْهُ شَيْئًا-​

‘একদা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার সালাতে পূর্ণভাবে রুকূ‘ করছে না এবং ঠকঠক করে (তাড়াতাড়ি) সিজদা করছে। এ দেখে তিনি বললেন, এ ব্যক্তি যদি এই অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে তার মরণ মুহাম্মাদী মিল্লাতের উপর হবে না। অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার রুকূ‘ সম্পূর্ণরূপে করে না এবং ঠকাঠক (তাড়াহুড়া করে) সিজদা করে তার উদাহরণ সেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত, যে একটি অথবা দু’টি খেজুর তো খায় অথচ তা তাকে মোটেই পরিতৃপ্ত করে না’।[7]

বিলাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি একদা দেখলেন একজন লোক রুকূ‘-সিজদা পরিপূর্ণরূপে করছে না। তখন তিনি বললেন, এ লোক (এ অবস্থায়) মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ধর্মের বাইরে মৃত্যুবরণ করবে।[8]

সালাত আদায় করার পরেও যখন ত্রুটি হওয়ার কারণে মিল্লাতে মুহাম্মাদীর উপর টিকে থাকা যাচ্ছে না সেখানে সালাত পরিত্যাগকারীর অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে তা সহজে বুঝা যায়।

ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ বলেন,

قَدْ صَحَّ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ تَارِكَ الصَّلَاةِ كَافِرٌ، وَكَذَلِكَ كَانَ رَأْيُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ لَدُنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِنَا هَذَا أَنَّ تَارِكَ الصَّلَاةِ عَمْدًا مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا كَافِرٌ،​

‘রাসুল (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, সালাত পরিত্যাগকারী কাফের। অনুরূপভাবে নবী করীম (ﷺ) থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত বিদ্বানগণের অভিমত হ’ল, বিনা কারণে ইচ্ছাকৃত -ভাবে ওয়াক্তের শেষ সীমাতেও সালাত বর্জনকারী কাফের।[9]

ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন,

وَقَدْ جَاءَ عَنْ عُمَرَ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَغَيْرِهِمْ مِنْ الصَّحَابَةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ أَنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ فَرْضٍ وَاحِدَةٍ مُتَعَمِّدًا حَتَّى يَخْرُجَ وَقْتُهَا فَهُوَ كَافِرٌ مُرْتَدٌّ.​

‘সাহাবীদের মধ্যে ওমর, আব্দুর রহমান ইবনু আওফ, মু‘আয বিন জাবাল ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা এসেছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি ফরয সালাত পরিত্যাগ করবে এমতাবস্থায় যে, ওয়াক্ত অতিবাহিত হয়ে গেল তাহ’লে সে কাফের মুরতাদ’।[10]

হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,

بَلَغَنِي أَنَّ أَصْحَابَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانُوا يَقُولُونَ: بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ أَنْ يُشْرِكَ فَيَكْفُرَ أَنْ يَدَعَ الصَّلَاةَ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ​

‘আমার নিকট এ মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীরা বলতেন, বান্দা এবং শিরককারীর মধ্যে পার্থক্য হ’ল এই যে, সে বিনা ওযরে সালাত পরিত্যাগ করল’।[11]

সূরা মা‘আরিজ ২৩ আয়াতের তাফসীরে ইমাম কাতাদা (রহঃ) বলেন,

ذُكِرَ لَنَا أَنَّ دَانْيَالَ نَعَتَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يُصَلُّونَ صَلَاةً لَوْ صَلَّاهَا قَوْمُ نُوحٍ مَا أُغْرِقُوا، وَعَادٌ مَا أُرْسِلَتْ عَلَيْهِمُ الرِّيحُ، وَثَمُودٌ مَا أَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ، فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلَاةِ فَإِنَّهَا خُلُقٌ لِلْمُؤْمِنِينَ حَسَنٌ،​

‘দানিয়াল (আঃ) উম্মতে মুহাম্মাদী (ﷺ)-এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, তারা সালাত আদায় করে। যদি নূহের সম্প্রদায় সালাত আদায় করত তাহ’লে তারা ডুবে মরত না। আ‘দ সম্প্রদায় সালাত আদায় করলে তাদের প্রতি ঝড়-তুফান পাঠিয়ে ধ্বংস করা হ’ত না। ছামূদ সম্প্রদায় সালাত আদায় করলে তাদেরকে গর্জন-ভূমিকম্প পাকড়াও করত না। অতএব তোমাদের জন্য সালাত আদায় করা আবশ্যক। কারণ এটি মুমিনদের জন্য সুন্দর চরিত্রের অংশ’।[12]

সালাত ত্যাগকারীর ব্যাপারে চার ইমামের অভিমত :

হানাফী মাযহাবের অভিমত :


হানাফীদের অভিমত হ’ল অলসতাবশত ইচ্ছাকৃত সালাত পরিত্যাগকারী গুনাহগার। তাকে হত্যা করা যাবে না। বরং শিক্ষাদানের জন্য শাস্তি প্রদান করা হবে এবং তাকে বন্দি করা যাবে, যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করে অথবা তওবা করে’।[13]

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অভিমত উল্লেখ করার পর মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,

وَنِعْمَ الرَّأْيُ رَأْيُ أَبِي حَنِيفَةَ ; إِذِ الْأَقْوَالُ بَاقِيهَا ضَعِيفَةٌ​

‘আবু হানীফা (রহঃ)-এর অভিমতটি কতই সুন্দর! যেখানে অন্যান্য অভিমতগুলো দুর্বল।[14]

মালেকী মাযহাবের অভিমত :

মালেকী মাযহাবের মতে,

تَرْكُ الصَّلاَةِ تَهَاوُنًا وَكَسَلاً لاَ جُحُودًا فَذَهَبَ الْمَالِكِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ إِلَى أَنَّهُ يُقْتَل حَدًّا أَيْ أَنَّ حُكْمَهُ بَعْدَ الْمَوْتِ حُكْمُ الْمُسْلِمِ فَيُغَسَّل، وَيُصَلَّى عَلَيْهِ، وَيُدْفَنُ مَعَ الْمُسْلِمِينَ،​

‘অস্বীকার নয় বরং উদাসীনতা এবং অলসতাবশত সালাত পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে মালেকী ও শাফেঈ মাযহাবের অভিমত এই যে, দন্ড হিসাবে তাকে হত্যা করা হবে। তবে মৃত্যু পরবর্তীতে সে মুসলিমের বিধানে থাকবে। ফলে তাকে গোসল দেওয়া হবে, জানাযার সালাত আদায় করা হবে এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে’।[15]

মালেকী বিদ্বান মুহাম্মাদ ইবনু রুশদ আল-কুরতুবী (রহঃ) বলেন,

الصحيح أنه لا يكون كافراً وإن تركها مضيعاً لها أو مفرطاً فيها، إذا كان مقراً بفرضها،​

‘বিশুদ্ধ মত হ’ল এই যে, সে কাফের হয়ে যাবে না। যদিও সে নিয়মিত সালাত আদায় না করে বা এ ব্যাপারে সীমালংঘনকারী হয় যতক্ষণ না সে এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার করবে’।[16]
এরপর তিনি দলীল হিসাবে নিম্নের হাদীস পেশ করেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,

خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللهُ عَلَى الْعِبَادِ فِي الْيَوْم وَاللَّيلَةَ، مَن جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيًعْ مِنْهُنَّ شَيئَاَ اسْتِخْفَافاً بِهَن، كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ أن يُدْخلَه الجنةَ، ومَن لَم يأتِ بِهِن، فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ الله عَهْدٌ إنْ شَاءَ عَذَّبَهُ، وإنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ،​

‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা সঠিকভাবে আদায় করবে এবং অলসতাহেতু তার কিছুই পরিত্যাগ করবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (সঠিকভাবে) আদায় করবে না, তাঁর জন্য আল্লাহর নিকট কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি প্রদান করবেন এবং ইচ্ছা করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[17]

তিনি এই হাদীস উল্লেখ করে বলেন, ‘সালাত বিনষ্টকারীদের জন্য গুনাহগার নাম আবশ্যক করে, কুফর বা কাফের নাম আবশ্যক করে না। আর হাদীসের বাণী, ‘তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি প্রদান করবেন এবং ইচ্ছা করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’-এর মর্ম হ’ল, তিনি চাইলে কিছু শাস্তি দিয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন বা কোন শাস্তি না দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কেননা যে ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদিও সে জাহান্নামে প্রবেশ করে তবে শাফা‘আতের মাধ্যমে তা থেকে বের হয়ে যাবে যেমনটি আছারগুলো স্পষ্টভাবে প্রমান করে’।[18]

ইবনু রুশদ বলেন,

وسألته عمن ترك الصلاة، قال: يقال له: صل، وإلا ضربت عنقه،​

‘আমি ইমাম মালেক (রহঃ)-কে সালাত ত্যাগকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তাকে বলতে হবে, তুমি সালাত আদায় কর। সে আদায় না করলে তার গর্দান উড়িয়ে দিতে হবে। এরপর ইবনু রুশদ বলেন,

يريد أنه تضرب عنقه إن أبى أن يصلي حتى خرج الوقت مغيب الشمس للظهر والعصر أو طلوعها للصبح، أو طلوع الفجر للمغرب والعشاء. وهذا ما لا اختلاف فيه في المذهب،​

‘এর দ্বারা তিনি উদ্দেশ্য নিয়েছেন যদি সে মাগরিব পর্যন্তও যোহর ও আছরের সালাত আদায় করতে, সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের সালাত আদায় করতে এবং ফজর উদয় পর্যন্ত মাগরিব ও এশার সালাত আদায় করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহ’লে তার গর্দান উড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে মালেকী মাযহাবে কোন মতভেদ নেই’।[19]

তিনি আরো বলেন,

وإن لم يكن شيء من ذلك في نفسه كفرا على الحقيقة،​

‘এর কোনটিই পরিত্যাগ করা প্রকৃত অর্থে কুফর নয়। কিন্তু যে সালাত, ছিয়াম ও ওযূর ফরযিয়াতকে স্বীকৃতি দিবে এবং তা পালনে অস্বীকৃতি জানাবে অথচ সে তা পালনে সক্ষম। এ বিষয়ে ইমাম মালেকের অভিমত হ’ল- এ সকল বিষয়ে তাকে তওবা করতে বলা হবে। সে যদি কোন একটি বিষয়ে তওবা করতে অস্বীকৃতি জানায় তাহ’লে তাকে হত্যা করা হবে। বুঝা যায় যে, তাকে হত্যা করা হবে কাফের হিসাবে। তখন তার যাবতীয় সম্পদ মুসলিম জামা‘আতের জন্য হয়ে যাবে যেমন মুরতাদ, যখন তাকে দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হত্যা করা হয়’।[20]

শাফেঈ মাযহাবের অভিমত :

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,

لَوْ أَنَّ رَجُلًا تَرَكَ صَلَاةً حَتَّى يَمْضِيَ وَقْتَهَا كَانَ قَدْ تَعَرَّضَ شَرًّا إلَّا أَنْ يَعْفُوَ اللهُ.​

‘যদি কোন লোক এক ওয়াক্ত সালাতও ছেড়ে দেয় এবং এভাবে ওয়াক্ত পার হয়ে যায় তাহ’লে সে মন্দে নিপতিত হয়। তবে আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন’।[21]
তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামে প্রবেশ করার পরে যে ব্যক্তি ফরয ছালাক পরিত্যাগ করে তাকে বলা হবে, কেন সালাত আদায় করো না? যদি সে ভুলে যাওয়ার ওযর পেশ করে তাহ’লে আমরা তাকে বলব, যখন তোমার স্মরণ হবে তখনই সালাত আদায় করে নিবে। যদি সে অসুস্থতার কথা বলে তখন আমরা বলব, সাধ্যমত তুমি দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা ইশারায় সালাত আদায় করবে। সে যদি বলে, আমি সুন্দরভাবে সালাত আদায়ে সক্ষম কিন্তু সালাত আদায় করি না। যদি সে স্বীকৃতি দেয় যে, আমার উপর সালাত ফরয। তাহ’লে তাকে বলা হবে, সালাত তোমার জন্য এমন এক ফরয ইবাদত, যা তোমার পক্ষ থেকে অন্য কেউ আদায় করতে পারবে না এবং এটা কেবল তোমার কাজের মাধ্যমে সম্ভব। তুমি সালাত আদায় কর অন্যথায় তোমার নিকট তওবা কামনা করছি। তুমি যদি তওবা কর তাহ’লে ভালো। অন্যথায় তোমাকে হত্যা করা হবে। কারণ যাকাত অপেক্ষা সালাতের গুরুত্ব অনেক বেশি’।[22]

হাম্বলী মাযহাবের অবস্থান :

সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবে বলা হয়েছে, ‘অলসতাবশত সালাত ত্যাগকারীকে তা আদায় করার জন্য আহবান করা হবে। তাকে বলা হবে, সালাত আদায় কর অন্যথায় তোমাকে হত্যা করা হবে। এমতাবস্থায় যদি সে সালাত আদায় করে তো ভালো। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আবশ্যক। তবে তাকে হত্যার পূর্বে তিনদিন বন্দি করে রাখতে হবে। আর প্রত্যেক সালাতের সময় সালাতের দিকে আহবান করতে হবে। এরপরেও যদি সে সালাত আদায় না করে তাহ’লে তাকে হদ্দ বা দন্ড হিসাবে বা কুফরী হিসাবে হত্যা করতে হবে। অর্থাৎ তাকে গোসল দেওয়াবে না, তার জানাযা পড়বে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করবে না। তবে তার পরিবার-পরিজন এবং সন্তানকে দাস বানানো যাবে না এবং বন্দি করাও যাবে না। যেমন মুরতাদের পরিবার ও সন্তানদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে’।[23]

হাম্বলী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য অভিমত হ’ল- সালাত পরিত্যাগকারী কাফের হয়ে যাবে না। বরং কবীরা গুনাহগার হবে এবং কালেমায় বিশ্বাসী হ’লে হদ্দ বা দন্ড হিসাবে তাকে হত্যা করা হবে। যেমন ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন,

وَالرِّوَايَةُ الثَّانِيَةُ، يُقْتَلُ حَدًّا، مَعَ الْحُكْمِ بِإِسْلَامِهِ، كَالزَّانِي الْمُحْصَنِ، وَهَذَا اخْتِيَارُ أَبِي عَبْدِ اللهِ بْنِ بَطَّةَ، وَأَنْكَرَ قَوْلَ مَنْ قَالَ: إنَّهُ يَكْفُر. وَذَكَرَ

أَنَّ الْمَذْهَبَ عَلَى هَذَا، لَمْ يَجِدْ فِي الْمَذْهَبِ خِلَافًا فِيهِ.​

‘দ্বিতীয় অভিমত হ’ল তাকে মুসলিমের বিধানে রেখেই দন্ড হিসাবে হত্যা করা হবে যেমন বিবাহিত যেনাকারকে হত্যা করা হয়। আর এই অভিমতই গ্রহণ করেছেন আবু আব্দিল্লাহ ইবনু বাত্তাহ। তিনি ঐ সকল বিদ্বানের অভিমত প্রত্যাখ্যান করেছেন যারা বলেন যে, সালাত পরিত্যাগকারী কাফের হয়ে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এর উপরেই হাম্বলী মাযহাব। তিনি এ ব্যাপারে মাযহাবে কোন মতপার্থক্য পাননি’।[24]

মোট কথা চার মাযহাবের চূড়ান্ত অভিমত হ’ল কেউ সালাতকে অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু মাঝে মধ্যে আদায় করলে বা এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার না করলে কাফের হবেনা। বরং সে সালাত ত্যাগ করায় মহাপাপী হবে।[25]


[1]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৭৩; আবুবকর ইবনুল খাল্লাল, আস-সুনাহ হা/১৩৮৮; মারওয়াযী, তা‘যীমু ক্বাদরিস সালাত হা/৯২৯, সনদ সহীহ, জামে‘উল ঊছূল হা/৫২২৫
[2]. সহীহুত তারগীব হা/৫৭৫; আস-সুন্নাহ হা/১৩৮৪
[3]. তাবারানী কাবীর হা/৮৮৪৭-৪৮; সহীহুত তারগবি হা/৫৭৪
[4]. আবু ইয়া‘লা হা/৭০৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৭৬; আল-আছারুছ সহীহাহ হা/৩৭৭, সনদ হাসান
[5]. ইবনু বাত্ত্বা, আল-ইবানাতুল কুবরা হা/৮৭৬; মারূযী, তা‘যীমু ক্বাদরিছ সালাত হা/৮৯৩
[6]. বুখারী হা/৩৮৯, ৮০৮; মিশকাত হা/৮৮৪
[7]. তাবারানী কাবীর হা/৩৮৪০; সহীহুত তারগীব হা/৫২৮
[8]. সহীহুত তারগীব হা/৫৩০
[9]. সহীহুত তারগীব হা/৫৭৫-এর আলোচনা
[10]. মুহাল্লা ২/১৫
[11]. আবু বকর ইবনু খাল্লাল, আস-সুন্নাহ হা/১৩৭২; ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাতুল কুবরা হা/৮৭৭
[12]. মুহাম্মাদ বিন নাছর মারূযী, তা‘যীমু কাদরিছ সালাত হা/৬৮
[13]. আল মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ২৭/৫৪
[14]. মিরকাত ২/৫১০
[15]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৭/৫৪
[16]. আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল ১৭/২৩৩
[17]. আবুদাউদ হা/১৪২০; নাসাঈ হা/৪৬১; সহীহুল জামে‘ হা/৩২৪৩
[18]. আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল ১৭/২৩৩
[19]. ঐ, ১/৪৭৬
[20]. ঐ, ১৬/৩৯৪
[21]. কিতাবুল উম্ম ১/২৩৯
[22]. কিতাবুর উম্ম ১/২৯১
[23]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ২৭/৫৫
[24]. ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৩১
[25].
ترك الصلاة المفروضة عمدا حتى يخرج وقتها - إسلام ويب - مركز الفتوى


মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম​
 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW

Share this page