সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
FORUM BOT

প্রশ্নোত্তর সালাত কিভাবে আদায় করব? (প্রথমে অংশ)

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,134
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,836
Credits
24,212
সালাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে তা আদায় করেও অনেকে পাপের ভাগী হবে। আর তা হবে ভয়াবহ জাহান্নাম। তাহলে কীভাবে সে সালাত আদায় করলে আল্লাহর পুরস্কার পাওয়া যাবে, কীভাবে আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) তা আদায় করতেন, একমাত্র সেটাই আমাদের অনুকরণ করতে হবে। তিনি আমাদের নির্দেশ করে বলেছেন, “তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ।” (বুখারী- ৬৩১, ইফা-৬০৩, আধুনিক- ৫৯৫) তাহলে তার সালাত আদায় কেমন ছিল এ নিয়েই আমাদের এ ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা। ১. তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন: প্রথমে ওযু করে পবিত্র হতে হবে। কারণ পবিত্রতাবিহীন সালাত কবুল হয় না (মুসলিম: ২২৪)। তবে কোন কারণে গোসল ফরয হলে, এর পূর্বে অবশ্যই ফরয গোসল সম্পন্ন করে নিতে হবে। ইসলামে যেকোন আমলের ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন অপরিহার্য একটি বিষয়। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এ বিষয়ের জ্ঞান অর্জন ফরয। ২. ওয়াক্ত হলে নামায আদায় করা: প্রত্যেক সালাত নির্ধারিত ওয়াক্তের মধ্যে আদায় করা। তবে আউয়াল ওয়াক্তে অর্থাৎ শুরুর সময়ে আদায় করা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিকতর পছন্দনীয়। তাকওয়ার দাবি হলো আগে নামায, পরে কাজ। আগে কাজ, পরে নামায নয়। যারা কাজকর্মকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নামায দেরিতে পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “ঐসব নামাযীদের জন্য ওয়াইল বা ধ্বংস, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফেল।” (সূরা ১০৭; মাউন ৪-৫)। আর গাফেল হলো ঐসব লোক, যারা পেছাতে পেছাতে নামায শেষ ওয়াক্তে পড়ে এবং হুকুম আহকাম গুলো ঠিকমতো আদায় করে না। ৩. কিবলামুখী হওয়া: পূর্ণ দেহসহ কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো। (সূরা বাকারা: ১৪৪, মুসলিম ৩৯৭) ৪. সুতরা: সিজদার জায়গার একটু সামনে (কমপক্ষে আধা হাত উঁচু একটি লাঠি বা অন্য কিছু দিয়ে) সুতরা দেবে (হাকেম- ১/২৫২)। সুতরা ও মুসল্লীর দাঁড়ানোর মাঝখান দিয়ে সালাত চলাকালীন হাঁটা-চলা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে নামাযীর সামনে দিয়ে কোন (সাবালিকা) নারী, গাধা বা কালো কুকুর যাতায়াত করলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায় (মুসলিম: ৫১০)। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। অতঃপর বিনম্র হয়ে খুশূ ও খুযূ-এর সাথে সালাতের জন্য দাঁড়াবে। ৫. দু'পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখার পরিমাণ: এ বিষয়ে সরাসরি কোন হাদীস খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রত্যেক মুসল্লি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াবে। কেউ কেউ দু'পায়ের মাঝে চার আঙুল পরিমাণ ফাঁকা রাখাকে সুন্নাত মনে করে। অথচ চার আঙুল ফাঁকা রাখার কোন কথা হাদীসে নেই। ৬. পাশের মুসল্লির পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানো: জামাআতে দাঁড়ানোর সময় সাহাবাগণ পরস্পর একে অপরের পায়ের সাথে পা ও কাধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে মিশে মিশে দাঁড়াতেন। আনাস (রা) বলেন, “আমাদের কেউ কেউ তার পাশের মুসল্লির কাধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিশিয়ে দাঁড়াত।” (বুখারী: ৭২৫, ইফা ৬৮৯)। সাহাবীগণ দু’জনের মাঝে কোন ফাঁকা রাখতেন না। জামায়াতে নামাযের ক্ষেত্রে দু’জন মুসল্লির মাঝে কোন ফাঁকা রাখা জায়েয- এমন কোন হাদীস নেই; বরং ফাকা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা ফাকা থাকলে সেখানে শয়তান ঢুকে পড়ে। আপনার ডানে ও বামে শয়তান সাথে নিয়ে নামায পড়বেন- এ কেমন কথা! আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়াও, একে অপরের নিকটবর্তী হও এবং ঘাড়গুলোকে সমানভাবে সোজা রেখে দাঁড়াও। সেই মহান সত্তার (আল্লাহর) কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি দেখতে পাই কাতারে কোথাও ফাঁকা থাকলে সেখানেই শয়তান ঢুকে পড়ে কালো ভেড়ার বাচ্চার আকৃতিতে।” (আবু দাউদ: ৬৬৬) ৭. কাতার সোজা করা: জামাআতে নামাযের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করে দাঁড়াতেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলো সোজা করে দাঁড়াও, কেননা কাতার সোজা করা নামাযের পূর্ণতার অংশ।” (মুসলিম: ৪৩৩)। ক. নুমান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (স) মুসল্লিদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা কাতারগুলো সোজা কর।এ কথাটি তিনি ৩ বার বললেন, আল্লাহর কসম করে বলছি! তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নাও, নতুবা আল্লাহ তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন (আবু দাউদ)। অর্থাৎ কাতার বাকা রাখলে ঐ মুসল্লির অন্তর বাঁকা করে দেবেন।” (মুসলিম: ৪৩১) আর কাতার সোজা করার নির্দেশটি দেবেন ইমাম সাহেব; মুয়াযিন সাহেব নন। খ. উমর (রা) সালাতে কাতার ঠিক হলো কি না তা দেখার জন্য একজন লোক নিয়োগ করতেন। কাতার সোজা হয়েছে- এ খবর না দেওয়া পর্যন্ত তিনি তাকবীরে তাহরীমা করতেন না।(তিরমিযী) গ. কাতার সোজা না করলে উমর (রা) ও বেলাল (রা) ঐ মুসল্লির পায়ে আঘাত করতেন। (মিরআতুল মাফাতীহ ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২) কাতার হওয়ার জন্য কমপক্ষে দু’জন হওয়া আবশ্যক। তবে মহিলা মুসল্লি একজন হলেও তিনি পেছনে আলাদা কাতারে দাঁড়াবেন। ৮. সামনের কাতার আগে পূর্ণ করা: যারা আগে আসবেন তারা সামনের কাতারে এগিয়ে। বসবেন অন্যকে সামনের কাতারে যাওয়ার অনুরোধ না করে অধিক সওয়াব লাভের আশায় নিজেই সেই সুযোগ গ্রহণ করুন। আর মসজিদের গেটে বা দরজায় বা সিঁড়িতে বসে মুসল্লিদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। আর যারা পরে আসবেন, তারাও অন্যদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন না। ৯. ইকামাত: আযান ও ইকামাতের শব্দ একই। এ শব্দগুলো ইকামাতে দু’বার বলা যেমন জায়েয (শরহে মাআনীল আসার: ৭৬৪) তদ্রুপ বেজোড় সংখ্যায় একবার বলাও সহীহ (বুখারী ৬০৫-৬০৭)। তবে (আল্লাহু আকবার) এবং কাদ কা-মাতিস্ সলাহ দু’বার বলতে হবে। একাকী নামায এবং দ্বিতীয় জামাআতেও ইকামাত দেওয়া সুন্নাত। ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব ডানে-বামে তাকিয়ে কাতার সোজা করার নির্দেশ দেবেন। আর তার ভাষা হবে আদেশসূচক; অনুরোধের সুরে নয়। আমরা কাতার সোজা করি’- এভাবে বলবেন না; বরং বলবেন, কাতার সোজা করুন'- এরূপ নির্দেশ দেবেন। কারণ তিনি ইমাম, এখানে তিনি নেতা, হাদীসের মর্মও তা-ই। কোন কোন এলাকায় ইকামাতের শুরুতেই মুসল্লিরা না দাঁড়িয়ে তারা দাঁড়ান হাইয়্যা আলাস্ সলা-হ বলার পর। এমন কোন নিয়ম হাদীসে আসেনি; সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকেও এমনটি প্রমাণিত নয়। সঠিক পদ্ধতি হলো, ইকামাতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করা। কারণ বিলম্বে দাঁড়ানোর ফলে কাতার সোজা করা, পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ানো ও সামনের কাতার আগে পূর্ণ করা ইত্যাদি মৌলিক কাজগুলো সম্পাদনে বিশৃঙ্খলা হবার আশঙ্কা থাকে। ১০. নিয়ত: নিয়ত না হলে কোন ইবাদতই বিশুদ্ধ হয় না। নিয়ত শব্দের অর্থ হলো ইচ্ছা পোষণ করা। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল যে সালাতই হোক বা যত রাকআতই হোক, মনে মনে এর নিয়ত করবে। আরবী বা বাংলায় মুখে এর নিয়ত উচ্চারণ করবে না। কেউ কেউ নাওয়াতু আন উসাল্লিয়া... পড়ে থাকেন- এটাও ঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (স) সালাতের নিয়ত কখনো মুখে মুখে উচ্চারণ করেননি; নিয়ত মূলতঃ অন্তরের কাজ; মুখে উচ্চারণের বিষয় নয়। তাই শরী'আতের বিধান হলো মনে মনে নিয়ত করা। আর নিয়তের স্থান হলো কলব বা অন্তর, জিহ্বা নয়। ১১. তাকবীরে তাহরীমা: সালাতের শুরুতে রাসূলুল্লাহ (স.) তার দু’হাত কখনো কাঁধ আবার কখনো কান বরাবর উঠাতেন (আবু দাউদ: ৭২৮)। রাসূলুল্লাহ (স) হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীর দিয়েছেন (বুখারী: ৭৩৭, ইফা ৭০১)। তবে কানের লতি ছোয়ানো সুন্নাত নয়। হাত তোলার সময় আঙুলগুলো সোজা রাখবে এবং হাত কিবলামুখী করে রাখবে। ১২. হাত বাঁধা: রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর নামাযে বুকের উপর হাত রাখতেন। ক. তাঁর সাহাবী ওয়াইল বিন হুজুর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি নবী (স)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) তিনি (স.) তার বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন।” (সহীহ ইবনু খুযাইমা, পৃষ্ঠা ২, আবু দাউদ: ৭৫৯, আলবানী) খ. অপর এক সাহাবী সাহল ইবনে সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “সালাতে লোকদেরকে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখার নির্দেশ দেওয়া হতো।” (বুখারী: ৭৪০, ইফা: ৭০৪) আরবীতে কাফফ’ শব্দের অর্থ হলো, কজি পর্যন্ত হাত, আর ‘যিরা’ অর্থ হলো, হাতের আঙুলের অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত পূর্ণ এক হাত বা বাহু। অতএব, উক্ত হাদীসের মর্ম ও নির্দেশ অনুযায়ী ডান হাতের আঙুলগুলো বাম কনুই’র কাছাকাছি থাকবে।(আবু দাউদ: ৭৫৯ আলবানী)। কেউ কেউ বলেছেন, নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত। তবে নাভির নিচে হাত বাঁধার হাদীসগুলো দুর্বল। (আলবানীর যঈফ আবু দাউদ- ৭৫৬, ৭৫৮) অতএব, সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে এর বিপরীতে দুর্বল হাদীস আমল করা জায়েয নেই। আবার কেউ কেউ বলেন, নারীরা বুকে বাঁধবে আর পুরুষেরা বাঁধবে নাভির নিচে। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (স) যেখানে কোন পার্থক্য করেননি সেখানে আলেমগণ কিভাবে পার্থক্য করেন? স্বতঃসিদ্ধ বিষয় হলো, এ হাদীসের নির্দেশ পুরুষ ও নারী সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত যে, বুকের উপর হাত রাখা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই সুন্নাত। ১৩. দৃষ্টি: দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স.)-এর দৃষ্টি থাকত সিজদার স্থানে, আর বসার সময় তিনি ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে নজর রাখতেন (সুনানে নাসাঈ: ১২৭৫, ১১৬০)। উল্লেখ্য, সালাত অবস্থায় বা নামাযে দু'আর সময় রাসূলুল্লাহ (স.) আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেওয়া হবে (মুসলিম: ৪২৮, ৪২৯) তাছাড়া সামনে ইমামের দিকে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে রাখাও বৈধ নয়। ১৪. ছানা পড়া: অতঃপর ছানা পড়বে। ছানা’কে দু'আ ইসতিফতাহ্ও বলা হয়। ছানা কয়েক প্রকারের আছে। যে সালাতই হোক, এর শুরুতে শুধু ১ম রাকআতে যেকোন একটি ছানা পড়বে। একই সালাতে একাধিক ছানা পড়া সহীহ বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি এখানে দু’টি ছানা দেওয়া হলো প্রথম ছানা “হে আল্লাহ! আমার ও আমার গুনাহখাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও যেমন তুমি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্তের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমার পাপ ও ভুলত্রুটি হলে আমাকে এমনভাবে পবিত্র করো, যেমনভাবে সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।” (বুখারী: ৭৪৪, ইফা ৭০৮, মুসলিম: ৫৯৮)। দ্বিতীয় ছানা: এ ছানাটি পড়াও সুন্নাত “হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি।তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার সত্তা অতি উচ্চে আসীন। আর তুমি ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই।” (আবু দাউদ: ৭৭৬, তিরমিযী: ২৪৩)। কেউ কেউ সালাতের শুরুতে জায়নামাযের দু'আ হিসেবে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ?' পড়ে। এটি ঠিক নয়। কারণ... ইন্নী ওয়াজ্জাহতু... একটি ছানা। আর ছানা পড়তে হয় তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর। (মুসলিম: ৭৭১) ১৫. আউযুবিল্লাহ পাঠ: অতঃপর চুপে চুপে পড়বে ‘বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।' উল্লেখ্য, ছানা ও আউযুবিল্লাহ পড়বে কেবল সালাতের প্রথম রাকআতে। ১৬. বিসমিল্লাহ পাঠ: এরপর চুপে চুপে পড়বে, ‘পরম করুণাময় অত্যন্ত দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূলুল্লাহ (স.) প্রতি রাক'আতেই বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা পড়তেন। ১৭. ফাতিহা পাঠ ও সূরা পড়ার নিয়ম: অতঃপর সূরা ফাতিহা অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ সূরা পুরোটা পড়বে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সূরা ফাতিহা পাঠ করা ছাড়া কোন সালাত আদায় হয় না। সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা রাসূলুল্লাহ (স.) প্রতি আয়াতের পর থেমে থেমে পড়তেন। যেমন , বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আলহামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন আবার পড়তেন, আর রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আবার পড়তেন, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন তারপর থেমে আবার পড়তেন। এভাবে প্রতি আয়াত শেষে থেমে থেমে পূর্ণ সূরা পাঠ করতেন। (আবু দাউদ: ৪০০১, ইবনে মাজাহ: ৮৬৭) উল্লেখ্য, সালাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার পঠিত সূরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াতের জবাব দিয়ে থাকেন (সুবহানাল্লাহ!)। (মুসলিম: ৩৯৫) ১৮. ইমামের পেছনে ফাতিহা পাঠ: সশব্দে ও নিঃশব্দে পঠিত সকল সালাতে মুক্তাদিগণও ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়বে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায হলো না’; (বুখারী: ৭৫৬, ইফা: ৭২০, আধুনিক: ৭১২)। আর ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর এক মতানুসারে, ইমাম যখন সশব্দে কিরাআত পড়েন তখন মুক্তাদীগণ না পড়ে চুপ করে শুনবে। আর নিঃশব্দে পঠিত সালাতে মুক্তাদীরা অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়বে। এ মতটি হানাফী ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ পোষণ করেছেন, তাছাড়া ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা এবং শাইখ আলবানী (র.)ও এ মত গ্রহণ করেছেন।ইমাম আবদুল হাই লাখনভী (র.) তাঁর গ্রন্থে সেটা বর্ণনা করেছেন । বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে পড়া না পড়া উভয়েরই দলীল রয়েছে। তবে পড়ার পক্ষের দলীলগুলো বেশি শক্তিশালী। বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রা) বলেন, “আমরা যোহর ও আসরের সালাতে প্রথম দু'রাকাআতে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা ও অপর একটি সূরা পাঠ করতাম এবং শেষ দু'রাকাআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তাম।” (ইবনে মাজাহ: ৮৪৩)। তবে যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে জামা'আতে শরীক হয় তাহলে সে ঐ রাকাআত পেয়ে গেল। ১৯. আমীন বলা: সূরা ফাতিহার পর ইমাম ও মুক্তাদি সবাই আমীন বলবে। আমীন শব্দের অর্থ হলো ‘হে আল্লাহ, কবুল কর। হাদীসে আছে, মুসল্লীগণ যখন আমীন বলে তখন ফেরেশতারা তাদের সাথে সাথে আমীন বলে। যখন উভয় গ্রুপের আমীন বলার আওয়াজ এক হয়ে যায় তখন এ মুসল্লীদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।(বুখারী: ৭৮০, ইফা ৭৪৪, আধুনিক ৭৩৬) আমীন চুপে চুপে ও সশব্দে পড়া যায়। চুপে চুপে বলার পক্ষে একটি হাদীস রয়েছে (দারা কুতনী: ১২৫৬); যদিও সনদ ও মতনে ত্রুটি থাকায় মুহাদ্দিসগণ এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন। সশব্দে পঠিত কিরাআতবিশিষ্ট সালাতে রাসূলুল্লাহ (স.) ও সাবাহায়ে কেরাম জোরে আওয়াজ করে আমীন বলতেন। এ মর্মে বেশ কয়টি প্রমাণ রয়েছে: ক. ওয়ায়েল বিন হুজর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (স)-কে গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম অয়ালাদ দোয়াল্লীন পড়তে শুনেছি। অতঃপর তিনি নিজের স্বরকে লম্বা করে ‘আমীন’ বলেছেন।” (তিরমিযী: ২৪৮) খ. অন্য এক হাদীসে এসেছে, । “সাহাবী ইবনু যুবায়ের (রা) আমীন’ বলতেন এবং তাঁর পেছনের মুসল্লিরাও বলতেন। ফলে ‘আমীন’ বলার আওয়াজে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত।” (বুখারী, তাগলীকুত তালীক ২/৩১৮, হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী [র]) (তিরমিযি: ২৪৮, আবু দাউদ: ৯৩২, ইবনে মাজাহ: ৮৫৫, দারেমী: ১২৮৩)। গ. মুজাদ্দিদে আলফেসানী (র) বলেন, “জোরে আমীন বলার হাদীসের সংখ্যাও বেশি এবং সেগুলো অধিকতর বিশুদ্ধ।' (আবকারুল মিনান, পৃষ্ঠা ১৮৯)। এ সুন্নাত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (স)-এর যামানা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মক্কা মুকাররমার কাবা ঘর ও মদীনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীতে জোরে আওয়াজের সাথে আমীন বলার সুন্নাত আজো চালু রয়েছে। তবে ইমামের আমীন বলার সাথে মুক্তাদীগণ ‘আমীন' বলবে; ইমামের আগে বলবে না। ২০. কিরাআত পাঠ: আমীন বলার পর একটু চুপ থেকে (সাকতা করে) কুরআন থেকে তিলাওয়াত করবে। ক. সকল প্রকার সালাতের প্রথম দু'রাকআতে ফাতিহা পাঠের পর অপর একটি সূরা পড়বে, অথবা কোন সূরার অংশবিশেষ পড়বে। খ. আর তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর রাসূলুল্লাহ (স.) কখনো সূরা মিলাতেন, আবার কখনো মিলাতেন না। গ. প্রথম রাকআতে সূরা পাঠ তুলনামূলকভাবে একটু দীর্ঘায়িত করতেন। ঘ. যোহর ও আসরের সালাতে ইমামের পেছনে প্রথম দু'রাকআতে মুক্তাদীগণও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে পারে। আবার শুধু ফাতিহা পাঠ করেও ক্ষান্ত হতে পারে। ঙ. একই রাকআতে সূরার অংশবিশেষ বা পূর্ণ সূরা বা একাধিক সূরা পাঠ করা জায়েয। ২১. সাকতা: সূরা পাঠ শেষ হলে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (স.) সামান্য পরিমাণ সময় চুপ থেকে দম নিতেন। অতঃপর রুকুতে যেতেন এবং রুকূতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন।(আবু দাউদ: ৭৭৮) ২২. রুকুতে যাওয়ার পদ্ধতি: রুকুতে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (স.) পুনরায় দু’হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠাতেন। রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় সাহাবায়ে কেরামও এভাবে দু'হাত উঠাতেন। (বুখারী: ৭৩৬-৭৩৮, ইফা ৭০০-৭০২, আধুনিক ৬৯২৬৯৪, মুসলিম: ৩৯১) ২৩. রুকুর পদ্ধতি: রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) হাঁটুতে হাত রাখতেন এবং তাঁর পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত তাঁর পিঠটা মাটির সমান্তরালে এমন সোজা করে রাখতেন, যার উপর পানি রাখলেও ঐ পানি সমান উচ্চতায় স্থির হয়ে থাকবে।(ইবনে মাজাহ: ৮৭২) ২৪. রুকু অবস্থায় হাত রাখার নিয়ম: হাঁটুতে হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখবে।(আবূ দাউদ: ৭৩১) ২৫. রুকুর তাসবীহ: রুকুতে তিনি (ক) নিমোক্ত তাসবীহ তিন বা ততোধিক বার পাঠ করতেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ‘আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।' (খ) তিনি কখনো কখনো রুকুতে এ দু'আও পড়তেন, ‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’’ “হে দুর্দান্ত প্রতাপশালী, রাজত্ব, অহংকার ও বড়ত্বের মালিক আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” (আবু দাউদ: ৮৭৩) যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে না রাসূলুল্লাহ (স.) ঐ ব্যক্তিকে সালাত চোর বলে আখ্যায়িত করেছেন। (ইবনু আবী শাইবা- ১/৮৯/২) বুখারীতে আছে, বিশিষ্ট সাহাবী হুযাইফা (রা.) একবার দেখলেন যে, এক ব্যক্তি তার সালাতে রুকু সিজদা ঠিকমত আদায় করছে না। তখন তাকে তিনি বললেন, যদি তুমি এভাবে সালাত আদায় করতে থাক আর এ অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তাহলে সে মৃত্যু হবে মুহাম্মদ (স.)-এর তরীকার বাইরে। (বুখারী: ৩৮৯, ইফা ৩৮২, আধুনিক ৩৭৬) অপর এক হাদীসে এসেছে- রুকূ সিজদা ঠিকমতো আদায় না করলে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।(বুখারী: ৭৯১, ইফা ৭৫৫, আধুনিক ৭৪৭) ২৬. রুকু থেকে উঠার নিয়ম: অতঃপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময়ও রাসূলুল্লাহ (স.) তাকবীরে তাহরীমার মতোই তাঁর দু'হাত কাঁধ (বা কান) বরাবর উঠাতেন। এ কাজকে আরবীতে ‘রাফউল ইয়াদাইন' বলা হয়। তবে সিজদা করার সময় রাফউল ইয়াদাইন’ করতেন না। (বুখারী: ৭৩৫, ইফা ৬৯৯, আধুনিক ৬৯১; মুসলিম: ৩৯০) রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁর নামাযে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ করতেন- এ মর্মে ৩৩টির মতো সহীহ হাদীস রয়েছে। তাছাড়াও ইমাম বুখারী (র.) তাঁর সংকলিত ‘জুযউ রাফয়িল ইয়াদাইন' গ্রন্থে এর পক্ষে সহীহ ও যঈফ মিলিয়ে মোট ১৯৮টি হাদীস জমা করেছেন। উল্লেখ্য যে, যারা রাফউল ইয়াদাইন করে না তাদের পক্ষেও দলীল আছে। সেটি সাহাবী ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তবে এর সংখ্যা মাত্র একটি। আর দুর্বল হাদীস ও সহীহ আছার মিলিয়ে এর পক্ষে আরো ৪/৫টি বর্ণনা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ‘রাফউল ইয়াদাইনের পক্ষের হাদীসের সংখ্যা দুইশতেরও বেশি। এগুলোর শুদ্ধতাও বেশি। অতএব এই আমল করলে সাওয়াবও অনেক বেশি হবে, ইনশাআল্লাহ। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেছেন, হাদীস সহীহ হলে এটাই আমার মাযহাব। অতএব, হানাফী হলেও এমন একটা সুন্নাত আমলের মধ্যে মাযহাবের কোন সমস্যা নেই। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (র) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (স.) আজীবন রাফউল ইয়াদাইন করেছেন (যাদুল মাআদ)। অতএব, বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে কটাক্ষ না করি, খড়গহস্ত না হই। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ‘রাফউল ইয়াদাইনে অভ্যস্ত নয় তারাও মনে দ্বিধা-সংকোচ না রেখে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর মহব্বতে এ সুন্নাতটি আমল করা উচিত। ২৭. কাওমার সময়: রুকু থেকে উঠার নাম কাওমা। রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) যে পরিমাণ সময় ব্যয় করতেন রুকু থেকে উঠেও তিনি প্রায় সেই পরিমাণ বা তার কাছাকাছি সময় পরিপূর্ণ সোজা হয়ে (স্থিরভাবে) দাঁড়িয়ে থাকতেন। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, আধুনিক ৭৪৮)। অনেকেই রুকু থেকে সোজা হয়ে পরিপূর্ণভাবে দাঁড়ানোর আগেই সিজদায় চলে যান। এতে একটি ওয়াজিব বাদ পড়ে যায়। এটি বহুল প্রচলিত একটি মারাত্মক ভুল। অথচ আনাস ইবনে মালেক (রা) একবার নবী (স.)-এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি দেখাতে গিয়ে তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠালেন তখন (এত দীর্ঘ সময়) দাঁড়িয়ে রইলেন যে, অন্যরা মনে করল তিনি (বোধহয় সিজদার কথা) ভুলেই গিয়েছেন। এভাবে ধীরস্থিরভাবে রাসূলুল্লাহ (স.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (স) ইমাম হয়ে বা একাকী সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় তিনি বলতেন, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার কথা শুনেছেন।' (বুখারী ৭৮৯, ইফা ৭৫৩) ২৮. রুকু হতে উঠার পর দুআ ক. রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী সালাত আদায়কারী সকলেই বলতেন, রাব্বানা লাকাল হামদ , “হে আমাদের রব! তোমারই জন্য সকল প্রশংসা।” (বুখারী: ৭৪৫)। খ. অথবা বলতেন, রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি “হে আমাদের রব! তোমারই জন্য অধিক বরকতময় ও উত্তম প্রশংসা।” (বুখারী: ৭৯৯, ইফা ৭৬৩, আধুনিক ৭৫৫) উপরোক্ত দু'আটির ব্যাপারে একবার রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি দেখলাম এ দু'আ পাঠের সাওয়াব (এত বেশি যে, পাঠকের আমলনামায় তা) কে আগে লিখবে এ নিয়ে ৩০ জনের অধিক ফেরেশতা প্রতিযোগিতায় লেগে গেছে।(বুখারী: ৭৯৯, ইফা ৭৬৩, আধুনিক ৭৫৫) গ. রাব্বানা লাকাল হামদ' বলার পর নবী (স) কখনো এ দু'আটিও পড়তেন মিল’আস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল’আল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমা, ও মিল’আ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু ঘ. মাঝে মধ্যে এর সাথে আরও কিছু বৃদ্ধি করে বলতেন, আহলাস সানা-য়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা ক্বালাল ‘আবদু, ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা মানি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা ইয়ানফা‘য়ু যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু এর দ্বারা বুঝা গেল যে, এ দুআগুলো পড়ার সময় পর্যন্ত দেরি করা কাওমার সময় বলে বিবেচিত হবে। এ দুআগুলো পাঠ করলে কাউমার (রুকূর পর স্থির হয়ে দাঁড়ানোর) হকও আদায় হয়ে যাবে। ২৯. সিজদায় যাওয়ার পদ্ধতি: রাসূলুল্লাহ (স.) সিজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখবে।(আবু দাউদ: ৮৪০, নাসাঈ: ১০৯৪, হাদীসটি সহীহ)। অন্য হাদীসে আছে, তিনি আগে দুই হাঁটু মাটিতে রাখতেন (আবু দাউদ: ৮৩৮, ৮৩৯)। ৩০. সিজদা করার পদ্ধতি: নবী করীম (স.) সিজদারত অবস্থায় হাতের তালু মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন (বুখারী: ৮২৮, ইফা ৭৯০, আধুনিক ৭৮২)। সাতটি অঙ্গের উপর ভর দিয়ে সিজদা করতেন (বুখারী: ৮১২, মুসলিম: ৪৯০)। যেমন- (ক) কপাল ও নাক [তিনি (স.)] হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে নাককে কপালের অন্তর্ভুক্ত করেন) [বুখারী: ৮১২], ইফা ৭৭৫, আধুনিক ৭৬৭। (খ) দুই হাত (গ) দুই হাঁটু (ঘ) দুই পায়ের আঙুলসমূহের অগ্রভাগ। কপালের মতো নাকও মাটিতে রাখতে হবে। তিনি (স.) হাতের আঙুলগুলো সোজা করে নরমভাবে কিবলামুখী করে রাখতেন। দুই পায়ের গোড়ালি একত্রে ভালোভাবে মিলিয়ে রাখতেন (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৬৫৪)। সে সময় রাসূল (স.)-এর মুখমণ্ডল তাঁর দুই হাতের মধ্যবর্তী স্থানে কাধ বা কান বরাবর রাখতেন এবং হাতের কজি থেকে কনুই পর্যন্ত তার বাহু যমীন থেকে উপরে উঠিয়ে রাখতেন। সাবধান! কুকুরের মতো কনুই পর্যন্ত হাত দুটো যমীনে বিছিয়ে দেবে না (বুখারী: ৮২২, আধুনিক ৭৭৬)। তিনি দুই পায়ের আঙুলে ভর করে হাঁটু দাঁড় করিয়ে রাখতেন। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। সিজদা লম্বা হবে এবং পিঠ সোজা থাকবে। আল্লাহ ঐ বান্দার সালাতের দিকে তাকান না, যে ব্যক্তি তার সালাতে রুকু ও সিজদার মধ্যে নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে না (আহমাদ- ২/৫২৫; তাবরানী; মুজামুল কবীর- ৮/৩৩৮)। রাসূলুল্লাহ (স.) পেট থেকে উরু এতটুকু পরিমাণ দূরে রাখতেন, যাতে উক্ত ফাঁকা অংশ দিয়ে একটি বকরির বাচ্চা বা ছাগল ছানা আসা-যাওয়া করতে পারে (মুসলিম: ৪৯৬)। তাছাড়া দুই উরুর মাঝখানে একটু ফাঁকা থাকবে। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই এই একই পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর মতো সিজদা করবে। মেয়েদের আলাদা পদ্ধতিতে সিজদা করার কোন কথা হাদীসে নেই। মেয়েদের কেউ কেউ হাত ও কনুই পর্যন্ত বাহু জমিনে বিছিয়ে বিছানার সাথে একেবারে মিশে গিয়ে সিজদা করে। অথচ এমনভাবে সিজদা করতে আল্লাহর রাসূল (স.) নিষেধ করেছেন। সিজদা করার এ পদ্ধতিকে রাসূলুল্লাহ (স.) কুকুরের বসার সাথে তুলনা করেছেন। আনাস বিন মালেক (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “সিজদার সময় তোমাদের কেউই যেন দুই বাহু বিছিয়ে না দেয়, যেমনভাবে বিছিয়ে দেয় কুকুর।” (বুখারী: ৮২২, ইফা ৭৮৪, আধুনিক ৭৭৬) ৩১. সিজদার তাসবীহ: সিজদায় রাসূল (স) নিমের তাসবীহটি পড়েছেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা - “আমি আমার সুউচ্চ মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” ৩২. সিজদার দু'আ: সিজদা অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। তাই রাসূলুল্লাহ (স.) সে সময় বেশি বেশি দু'আ করতে বলেছেন (মুসলিম: ৪৮২)। কেননা এটি দু'আর উত্তম মুহূর্ত তা ফরয বা নফল যে কোন সালাতেই হোক না কেন। সিজদায় আমাদের রাসূলুল্লাহ (স.) বহু ধরনের দু'আ করতেন। তন্মধ্যে নিয়ে একটি দু'আ উল্লেখ করা হলো: আল্লা-হুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউয়ালাহু ওয়া ‘আখিরাহু, ওয়া ‘আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু “হে আল্লাহ! আমার সব গোনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও, হোক তা ছোট বা বড়, আগের বা পরের, প্রকাশ্য বা গোপন ।” (মুসলিম: ৪৮৩)। আবার কোন কোন তাসবীহ রাসূলুল্লাহ (স.) রুকু ও সিজদাহ উভয় অবস্থাতেই পড়তেন, আয়েশা (রা) বলেন, নবী (স.) রুকু ও সিজদায় পড়তেন, সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূহ “আমাদের এবং সমস্ত ফেরেশতা ও জিবরীলের প্রতিপালক অত্যন্ত পূত-পবিত্র।” (মুসলিম: ৪৮৭) রাসূলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, রুকুতে আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা আর সিজদাতে অধিক পরিমাণে দুআ কর (মুসলিম: ৪৭৯)। উল্লেখ্য, রুকু ও সিজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত নিষেধ। তবে, কুরআনে বর্ণিত দুআগুলো সিজদায় দু'আ হিসেবে পড়া যেতে পারে। কোন কোন ফকীহ সিজদায় আরবী ছাড়া অন্যকোন ভাষায় দুআ না করাই শ্রেয় বলে মত ব্যক্ত করেছেন। ৩৩. দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে সময়ের পরিমাণ: সিজদায় যে পরিমাণ সময় ব্যয় করবে এখানেও প্রায় সে পরিমাণ সময় লম্বা করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (স.)-এর রুকু, সিজদা, দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরবর্তী কিয়ামের সময়ের পরিমাণ প্রায় সমান সমান বা তার কাছাকাছি ছিল। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, মুসলিম: ৪৭১) ৩৪. দু' সিজদার মাঝখানে যে দুআ পড়া সুন্নাত: দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ের বৈঠকে আল্লাহর রাসূল (স) নিম্নবর্ণিত দুআগুলো পড়তেন, আল্লা-হুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়া‘আফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি রহম কর, আমাকে হেদায়াত দাও, আমাকে সুস্থ ও নিরাপদে রাখ এবং আমাকে রিযক দান কর।” (আবু দাউদ: ৮৫০)। দু’ সিজদার মাঝখানে স্থিরভাবে বসার ক্ষেত্রে অনেকে তাড়াহুড়া করেন। ইমাম সাহেব তাকবীর বলার আগেই কেউ কেউ দ্বিতীয় সিজদার জন্য ঝুঁকে পড়েন, এতে ওয়াজিব লঙ্ঘিত হয়ে যায়। উক্ত দুআগুলো পড়ার অভ্যাস করলে স্থিরভাবে বসার হকও আদায় হয়ে যাবে। ৩৫. দ্বিতীয় সিজদা: ‘আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে এবং প্রথম সিজদার ন্যায় তাসবীহ ও দুআ পড়বে। (বুখারী: ৮২৫, ইফা ৭৮৭, আধুনিক: ৭৭৯) ৩৬. জলসায়ে ইসতিরাহা: দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে রাসূলুল্লাহ (স.) একটু সময় স্থির হয়ে বসতেন (বুখারী: ৮২৩, আধুনিক ৭৭৭)। এ বৈঠককে ‘জলসায়ে ইসতিরাহা' বা আরামে বসা বলা হয়। ৩৭. সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর নিয়ম: আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে হাত পরে হাঁটু উঠাবে অথবা, মাটিতে হাতের উপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াবে। উভয়ই জায়েয।(আবু দাউদ: ৮৪০) ৩৮. দ্বিতীয় রাকআত এবং পরবর্তী রাকআতের পদ্ধতি: প্রথম রাকআত ছাড়া পরবর্তী কোন রাকআতে আর ছানা পড়তে হয় না এবং আউযুবিল্লাহ পড়ারও দরকার নেই। তবে প্রতি রাকআতেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। আর বাকি সব। নিয়ম-কানুন প্রথম রাকআতের মতোই। তবে প্রথম রাকআতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকআতের কিরাআত পড়া ছোট করা ভালো। (মুসলিম: ৪৫১) ৩৯. প্রথম বৈঠকের পদ্ধতি: দুই রাকআত নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) আল্লাহু আকবার বলে সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে পুরোপুরি সোজা হয়ে বসতেন। সে সময় বাম পা বিছিয়ে এর উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া করে (পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে) বসতেন। বসা অবস্থায় দুই হাত উরুতে রাখতেন (নাসাঈ: ১২৬৪; তিরমিযী: ২৯২)। এ কায়দার বৈঠককে ‘ইফতিরাশ’ বলা হয়। ৪০. দ্বিতীয় বৈঠকের পদ্ধতি: তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় বৈঠকে বাম পা ডান পায়ের নিচ দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপর ভর করে বসবে। তখন ডান পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে খাড়া করে রাখবে। এ পদ্ধতির বৈঠককে তাওয়াররুক' বলা হয়।(দেখুন, বুখারী: ৮২৮, ইফা ৭৯০, আধুনিক ৭৮২)। চলমান.....
সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম
 
Top