সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত সালাতুত তাসবীহ কি পড়া জায়েয?

যিকরের মূল চারটি বাক্য হলে তাসবীহ ‘সুবহানাল্লাহ’ , তাহমীদ ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ , তাহলীল ‘লা- ইলাহা ইল্লল্লাহ’ এবং তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’। যাকির এই বাক্যগুলি জপ করে বা যিকর করে মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা, প্রশংসা, একত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে। সালাতের মধ্যে এই যিকরগুলি বিশেষ পদ্ধতিতে পালন করা হয় “সালাতুত তাসবীহ” নামাক সালাতে। চার রাক’আত সালাতে প্রতি রাক’আতে ৭৫ বার করে চার রাক’আতে মোট ৩০০ বার উক্ত যিকরগুলি আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে সহীহ ও যয়ীফ অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

সহীহ হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচা আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে (রাঃ) বলেনঃ ”চাচাজি, আমি আপনাকে একটি বিশেষ উপহার ও বিশেষ অনুদান প্রদান করব, যা পালন করলে আল্লাহ আপনার ছোট, বড়, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্য, গোপন সকল গোনাহ ক্ষমা করবেন। - তা এই যে, আপনি চার রাক’আত সালাত আদায় করবেন।

প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন। প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো সূরা পাঠের পর দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:

سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر​

উচ্চারণঃ ‘সুব‘হা-নাল্লাহ, ওয়াল‘হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লা-হু আকবার।’ (পূর্বে উল্লেখিত ৪, ৯, ১ ও ১০ নং যিকর একত্রে)।

এরপর রুকুতে যেয়ে রুকু অবস্থায় উপরের যিকরগুলি ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বার, সাজদা রত অবস্থায় ১০ বার, প্রথম সাজদা থেকে উঠে বসা অবস্থায় ১০ বার, দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে (বসা অবস্থায়) ১০ বার।

এই মোট এক রাক’আতে ৭৫ বার (চার রাক’আতে মোট ৩০০ বার)। সম্ভব হলে আপনি প্রতিদিন একবার এই সালাত আদায় করবেন, না হলে প্রতি সপ্তাহে একবার, না হলে প্রতি মাসে একবার, না হলে প্রতি বৎসর একবার, না হলে অন্তত সারা জীবনে একবার এই সালাত আপনি আদায় করবেন।”

“সালাতুস তাসবীহ” সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত। একমাত্র এই হাদীসটিকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ হিসাবে গ্রহণ করেছেন।[1]

ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (১৮১ হি) থেকে “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারকের মতে এই অতিরিক্ত যিকর আদায়ের নিয়ম: নাময শুরু করে শুরুর দু‘আ বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতেহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাক’আতে।

অর্থাৎ, এই নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজাদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক’আতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক বলেন, যদি এই সালাত রাত্রে আদায় করে তাহলে দুই রাক’আত করে পৃথকভাবে তা আদায় করবে। অর্থাৎ, দুই রাক’আত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দুই রাক’আত পৃথকভাবে আদায় করবে। আর দিনের বেলায় এই সালাত পালন করতে ইচ্ছা করলে একত্রে চার রাক’আত আদায় করতে পারে, অথবা ইচ্ছা করলে পৃথকভাবে দুই রাক’আত করেও আদায় করতে পারে।

সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের সময় রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার মাসনূন তাসবীহ ‘সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম’ ও ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আ’লা’ নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলি পাঠ করতে হবে।[2]

[1] তিরমিযী, আস-সুনান ২/৩৪৭-৩৫০, নং ৪৮১, সুনানু আবূ দাউদ ২/২৯, নং ১২৯৭, সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৪৪২, নং ১৩৮৬, ১৩৮৭, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, সহীহুত তারগীব ১/৩৫৩-৩৫৫।

[2] তিরমিযী, আস-সুনান ২/৩৪৭।



আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

« يا عباسُ ، يا عمَّاهُ ، ألا أُعطيكَ ، ألا أمنَحُكَ ، ألا أُخْبِرُكَ ، أَلا أفعلُ بكَ عشرَ خِصال؟ إِذا أنتَ فعلتَ ذلك غَفَرَ اللهُ لكَ ذَنبَكَ : أَوَّلَهُ وآخِرَهُ ، قديمَه وحديثَه، خطأَه وعمْدَه ، صغيرَه وكبيرَه ، سِرَّه وعلانيتَه ؟ عشرُ خصال: أن تُصلِّي أربع ركعات ، تقرأُ في كلِّ ركعة فاتحةَ الكتاب ، وسورة ، فإذا فرغتَ من القراءةِ في أوَّلِ ركعة وأنتَ قائم ، قلتَ : سبحانَ الله ، والحمدُ لله ، ولا إِله إِلا الله ، واللهُ أكبر - خمسَ عَشْرَةَ مرة - ثم تركعُ فتقولُها وأنتَ راكع عشرا ، ثم تَرفَعُ رأْسك من الركوعِ فتقولها عشرا ، ثم تهوي ساجدا فتقولُها وأنتَ ساجد عشرا ، ثم ترفعُ رأسَكَ من السجود فتقولُها عشرا ، ثم تسجدُ فتقولها عشرا ، ثم ترفع رأْسك فتقولُها عشرا ، فذلك خمس وسبعون في كل ركعة ، تفعلُ ذلك في أربع ركعات . إن استطعتَ أن تُصَلِّيَها في كلِّ يوم مرة فافعلْ ، فإن لم تفعلْ ففي كلِّ جمعة ، فإن لم تَفْعَل ففي كلِّ شهر مَرَّة ، فإن لم تفعلْ ففي كلِّ سَنَة مَرَّة ، فإِن لم تفعلْ ففي كُلِّ عمرِكَ مَرَّة » . ( أخرجه أبو داود و ابن ماجه و البيهقي ) .​

“হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সাথে দশটি কাজ করব না? (অর্থাৎ আমি কি আপনাকে দশটি তাসবীহ শিক্ষা দেব না?) যখন আপনি তা আমল করবেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, অনিচ্ছাকৃত, ইচ্ছাকৃত, ছোট (সগীরা), বড় (কবীরা), অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল প্রকারের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন।

আর সেই দশটি কাজ হল: আপনি চার রাকা‘য়াত সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাকা‘য়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং এর সাথে অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন; অতঃপর যখন প্রথম রাকা‘য়াতে কিরায়াত সম্পন্ন করে অবসর হবেন, তখন ঐ দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার পড়বেন:

« سبحانَ الله والحمدُ لله ، ولا إِله إِلا الله ، واللهُ أكبر »​

(আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আল্লাহ মহান)। অতঃপর রুকূ করবেন এবং রুকূ অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন।

অতঃপর রুকূ থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদায় অবনত হবেন এবং সাজদা অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন।

অতঃপর আবার সাজদায় অবনত হবেন এবং উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। সুতরাং এভাবে প্রত্যেক রাকা‘য়াতে তা পঁচাত্তর বার হবে; আপনি চার রাকা‘য়াতের প্রত্যেক রাকা‘য়াতের মধ্যেই এরূপ করবেন।

যদি আপনি প্রত্যেক দিন একবার এরূপ সালাত আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে তা করবেন; আর যদি তা না পারেন, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক মাসে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক বছরে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে আপনার জীবনে কমপক্ষে একবার আদায় করবেন।”[1]

হাফেয ইবনু নাসির উদ্দিন আদ-দামেস্কী ছন্দ আকারে বলেন:

(যখন তুমি সাওয়াবের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে চাও তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাতুত তাসবীহ আদায় কর)।

(নিশ্চয় তাতে রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাওয়াবের সমাহার, আর প্রত্যেক ক্ষত-বিক্ষত অন্তরের জন্য ব্যবস্থা আছে চিকিৎসার)।

(সুতরাং তুমি তা আদায় করলে তোমাকে দেওয়া হবে পুরস্কার আরও দেওয়া হবে সাওয়াব, যা স্পষ্ট করে বলা থেকে উপরে)।

(তুমি তা ছেড়ে দিও না; কেননা, তার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে বিভিন্নভাবে, যা বিশুদ্ধ হাদিসের কাছাকাছি পর্যায়ের)।

(সুতরাং তুমি সুন্নাহকে আকড়িয়ে ধর যেভাবে তা এসেছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের মাধ্যমে প্রিয় হাবীব থেকে) —

(আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি বিশ্বস্ত রাসূল, অনুসরণীয়-অনুকরণীয়, নেতা এবং প্রধান ব্যক্তিত্ব);

(সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মর্যাদা ও অবস্থানগত দিক থেকে, আর যিনি কথাবার্তায় অসম্ভব রকম বিশুদ্ধভাষী)।

(অতএব, অনবরত আল্লাহর সালাত বর্ষিত হউক তাঁর উপর, সাথে প্রশংসা বিজড়িত সকল প্রকার সালাম ও গুণগান)।

(যতদিন প্রভাত হবে রাতের অন্ধকারের সাথে আর কবরে অদৃশ্য হবে কোনো প্রাণী)।



[1] আবূ দাউদ: (হাদিস নং- ১২৯৮); ইবনু মাজাহ: (হাদিস নং- ১৩৮৭); ইবনু খুযাইমা: (হাদিস নং- ১২১৬); ত্ববারানী, ‘আল-কাবীর’: (১১/২৪৩ - ২৪৪); হাকেম: (১/৩১৮); বায়হাকী: (৩/৫১ - ৫২) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবদুর রাহমান ইবন বিশর ইবন হেকামের সনদে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ শো‘আইব মূসা ইবন আবদিল আযীয আল-কানবারী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হেকামা ইবন আব্বান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বর্ণনা করেন ‘ইকরামা থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে।

আমি বলি: এই হাদিসটির সনদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আর আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা থেকে বর্ণিত এই হাদিসের আরও কয়েকটি সনদ রয়েছে, কিন্তু এসব সনদে তিনি তুষ্ট নন। আর হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণের উক্তিগুলো প্রথম সনদটি উৎকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সমর্থন ও সহযোগিতা করে—

১. ইমাম আবূ দাউদ রহ. বলেন: “সালাতুত তাসবীহ-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস হল আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু’র এই হাদিসটি।” — যেমন দেখুন: ‘আল-লায়ালিল মাসনু‘আ’ ( اللآليء المصنوعة ): ২/২৯; ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ): ১/৪৬৮

২. আল-মুনযিরী বলেন: “এই হাদিসটি অনকেগুলো সনদে এবং এক দল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার দৃষ্টান্ত হলো ‘ইকরামা রা. কর্তৃক বর্ণিত এই হাদিসটি এবং এক দল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন: হাফেয আবূ বকর আল-আজুররী, আমাদের শাইখ আবূ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম আল-মিসরী ও হাফেয আবূল হাসান আল-মুকাদ্দেসী রহ.।” — [‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ): ১/৪৬৮; আরও দেখুন: ‘মুখতাসারু সুনানি আবি দাউদ’ (مختصر سنن أبي داود): ২/৮৯

আর যাবীদী রহ. বলেন: “এই হাদিসটি সহীহ, গরীব এবং সনদ ও মতন উৎকৃষ্ট।” —[ ইতহাফুস সাদাত আল-মুত্তাকীন’ ( إتحاف السادة المتقين ): ৩/৪৭৩ ]।

হাদিসটির সমর্থনে একদল সহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন— ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রা., ফদল ইবন আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা., আলী রা., জা‘ফর ইবন আবি তালিব রা. ও উম্মু সালমা রা. প্রমুখ; যদিও হাদিসের সনদগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়, তবে কিছু সনদ সুসংগঠিত; সুতরাং যেসব সনদ প্রমাণের জন্য যথাযথ, তা আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদিসের সমর্থনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে; আর এ জন্যই ‘সালাতুত তাসবীহ’ বিষয়ক হাদিসটি ‘সহীহ লি-গাইরিহী’। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন। আর হাফেযগণ এই বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে খণ্ড খণ্ড পুস্তক লিখেছেন।

আমি বলি: কোনো কোনো ব্যক্তি এই সালাতের মধ্যে ব্যাপক কিছু সৃষ্টি করেছে, তারা এর সাথে এমন কিছু নতুন বিষয়ের সংজোযন করেছে, যার কোনো শরী‘য়তসম্মত ভিত্তি নেই; যেমন—

১. এই সালাতকে পবিত্র রমযান মাসের সাথে সুনির্দিষ্ট করা, বরং তাদের কেউ কেউ দৃঢ়তার সাথে এই সালাতকে রমযানের সাতাইশতম রাতের সাথে সুনির্দিষ্ট করে দেয় (!)।

২. জামা‘য়াতবদ্ধভাবে ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।

৩. একদিনে একাধিক বার ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।

সুতরাং হে মুসলিম জনগোষ্ঠী! আপনারা নিজেদের উপর দয়া করুন; সুতরাং (সুন্নাহ’র) অনুসরণ করুন, নতুন পন্থা উদ্ভাবন করবেন না; কারণ, পুরাতন নির্দেশনাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
 
Top