পরিচিতি সালফে সলেহীন বা সালাফী মানহাজ কি?

Joined
Feb 23, 2023
Threads
367
Comments
419
Reactions
2,108
বাংলাদেশে সালাফিদের অনেকেই আহলে হাদিস নামে চিনে।
সালাফী মানহাজ যা সবারই প্রায় অজানা।

সালাফী কি?​

সালাফী শব্দ এসেছে সালাফে সলেহীন থেকে।সাহাবা থেকে শুরু করে তাবে-তাবেঈন পর্যন্ত যারা ছিল, (৩ মুসলিম জেনারেশন )যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ উম্মত তাদেরকে বা তাদের ঐ সময়কাল কে সালাফে সলেহীন বলে।অর্থাৎ যারা কোরআন ও সহীহ হাদীস সরাসরি মেনে চলে সাহাবা থেকে তাবে-তাবেঈনদের মত করে তাদেরকে সালাফী বলে।এর পর ৪০০ বছর পর থেকে মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে।

সালাফী কারা?​

সালাফী তারা যারা অন্ধ অনুসরন করে না।সালাফীরাই মুলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত।অধিকাংশ সালাফীরা দাঈ(ইসলামের দাওয়াত দেয় যারা তাদের দাঈ বলে)। সালাফী নতুন কোন মাযহাব না বা কোন রাজনৈতিক দল না।

সালাফীদের দাওয়াত:​

সালাফীরা সাধারণত তাওহীদ ও তাযকিয়াহ (আল ইমরান ১৬৪)এর দাওয়াত দিয়ে থাকে।

সালাফীদের দাওয়াতের লক্ষ্য:​

ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে সঠিক জ্ঞান দেওয়া।
মানুষকে কোরআন ও সহীহ হাদীসের পথে আহবান করা।
বিদয়াত ,শিরক থেকে মানুষদেরকে সাবধান করা এবং তা থেকে মুক্ত করা।
হাদীস কেন ও কিভাবে যয়ীফ ,জাল ও সহীহ হয় মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া।
সকল মুসলিমদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত না হয়ে কোরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার জন্য দাওয়াত দিয়ে থাকে।

সালাফীদের মুলনীতি:​

১।একমাএ অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ (ﷺ)।
২।সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে করতে হবে।
৩। কোরআন ও সহী হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।
৪।সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমাই না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন,কোরআন বা সহী হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ হলে চলবে না।
৫।কোনভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে দলিল ছাড়া কারো উক্তির অনুসরন করা চলবে না।

সালাফীদের বৈশিষ্ট্য:​

১।তাদের নিকট কোন কিছু পেশ করলে আগে তারা তা যাচাই করে সহীহ নাকি যয়িফ না জাল হাদীস।
২।সব কিছুর উর্ধ্বে আল্লাহ ও তার রাসুল।
৩।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ (ﷺ) শেষ নাবী ও রাসুল মানাকে ঈমানের অন্যতম শর্ত মনে করা।
৪।রাসু্লুল্লাহ (ﷺ) নুরের তৈরী নন আমাদের মতো মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ট মানুষ ও নাবী (ﷺ)।
৫।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া ভুলের উর্ধ্বে কেউ নয়।
৬।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ (ﷺ) এর ৪ খলিফাকে খুলাফায়ে রাশেদীন বলে বিশ্বাস করা।
৭।আল্লাহ নিরাকর নয় ও আরশে সমাসীন।
৮।যতবড় জ্ঞানী বা শক্তিশালী ব্যাক্তি হোক না কেন কোরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীত হলে তার কথা মানে না আর কোরআন ও সহীহ হাদীসের পক্ষে হলে গোলামের মত মানে।
৯।ঈমান বাড়ে ও কমে বলে বিশ্বাস করে।
১০।আবু হানীফা (রহ),ইমাম মালেক (রহ),ইমাম শাফেয়ী (রহ),ইমাম আহমাদ (রহ) ৪ ইমাম কে আমরা শ্রদ্ধা করি।
১১।কারও তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরন করে না।
১২।শুধু সহীহ হাদিসকেই আমলের যোগ্য মানে ।
১৩।ইলমে গায়েবের কথা একমাএ আল্লাহ জানে।
১৪।মির্জা আহমেদ কাদিয়ানী কে অমুসলিম মানে।
১৫।এক সাথে ৩ তালাক দিলে এক তালাক গন্য হবে।

সালাফী মানহাজ সম্পর্কে ভুল ধারনা:​

১।অনেকে মনে করে এরা সালাফী ও শাফেয়ীরা এক মত
২।অনেকে মনে করে সালাফীরা মাযহাব মানে না অর্থাৎ লা মাযহাবী (নেই মাযহাব)হ্যাঁ সালাফীরা বানোয়াট মাযহাব মানে না ।কারন ৪ ইমাম কখনই বলেননি তোমরা আমাদের অনুসরন করো কিন্তু তারা বলে গেছে নবী (ﷺ) কে অনুসরন করতে।আর মাযহাব মানার কোন আদেশ পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসে নাই।
৩।অনেকে মনে করে মুহাম্মদ বিন আঃ ওহাবের শির্ক ও বিদআতের বিরুদ্ধে আন্দোলন।আর সালাফী এর মতবাদ আজ থেকে ২০০ শত বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে।

সালাফীরা কি লা মাযহাবী?​

সালাফীরা মুসলিম। সালাফীরা ১০০% হানাফী, ১০০% শাফেঈ, ১০০% মালেকী, ১০০% হাম্বলী।

সালাফীদের চোখে মাযহাব:​

মাযহাব অল্প কয়টি যেমন – ইসলাম মাযহাব, হিন্দু মাযহাব, খ্রিষ্টান মাযহাব, বৌদ্ধ মাযহাব ইত্যাদি।

সালাফীদের ভয়:​

সালাফীরা শিরিক ,বিদয়াত ও ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ গুলোকে ভয় পায়,আর দুর্বল ও যয়িফ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে ভয় পায়।

সালাফীদের অন্যতম বৈশিষ্ট:​

অধিকাংশ সালাফীরা ওয়াজ মাহফিলে বা কিছু বলতে গেলে কোরআন ও সহীহ হাদিসের দলিল সহকারে বলে থাকে।কোন সুরা কোন আয়াত কত নং হাদীস সহকারে বলে।
সালাফীরা অধিকাংশ লোক দাঈ (ইসলামের দাওয়াত দেয় যারা তাদের দাঈ বলে)

সালাফীরা কি সমস্যা না সমাধান?​

১।সালাফীরা সকলেই কোরআন ও সহীহ হাদীস পড়ে।এ জন্য কোন ওয়াজ মাহফিলে বা কোন অনুষ্ঠানে সালাফীরা গেলে কোন আলেম কোন যইফ হাদীস বা জাল হাদীস বর্ননা করলে সালাফীরা বুঝতে পারে এবং তা কারও সাথে বর্ননা করলে তারা বিরোধিতা করে থাকে আর বলে থাকে তুমি বেশি বুঝ তুমি আলেম হইছ ।আসলে সমস্যা হল কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান কম।যারা সামনে বসে ওয়াজ শুনে তারা জানেই না আসলে বক্তা সাহেব কি বলছে ভুল না সঠিক।
২।সালাফীরা প্রতিবাদ করে থাকে।
৩।অধিকাংশ সালাফীরা দাঈ (দাঈ যারা ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকে)
৪।সালাফীদের সহীহ হাদীসের আলোকে দাওয়াতের কারনে অনেক আলেমদের মুখোশ ফাস হয়ে যাচ্ছে (বিশেষ করে পীরপন্থি) মানে তারা যে নকল করে পাশ করে আলেম হয়েছে তার একটা প্রমান মানুষ বুঝতে পারছে।(কিন্তু এইদেশে অনেক বই আছে যাতে অনেক দুর্বল ও জাল হাদীস সহকারে ছাপা রয়েছে ফলে তাদের সকলের দোষ দেওয়া ঠিক না)
৫।সালাফীরা পীর বিরোধী কারন পীররা মুসলিমদেরকে ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ করেছে।
৬।সালাফীরা কবর পাকা বা উচু করা বিরোধী ।কারন মুসলিম ১ম খন্ড ৩১২ পৃঃ ও মেশকাত ১৪৮ পৃঃ এর সহীহ হাদীস।

সব মুসলিম কি সালাফী নয়?​

আপনি কি নিজের পরিচয় দিবেন সালাফী বলে নাকি মুসলিম বলে?

নিশ্চয় মুসলিম পরিচয় দিবেন ,আর সালাফী পরিচয় দিবেন দাঈ হিসাবে।
কে চায় না কোরআন ও সহীহ হাদীস মেনে চলতে সাহাবা,তাবেঈন,তাবে-তাবেঈন দের মত করে?
কে চায় না দাঈ হতে?কারন ইসলামের দাওয়াত না হলে ধ্বংস আর ইসলামের দাওয়াত দেওয়া ফরজ।
কে চায় না আমলে সলেহ বা সঠিক আমল করতে?
কে চায় না বাছাই করতে হাদীস যয়ীফ না সহীহ না দুর্বল?
কে চায় না জানতে ,সে ইসলামের কোন পথে আছে ঠিক পথে নাকি ভুল পথে?
কে চায় না কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিজের জীবন গড়তে?
যদি আপনি এগুলো চান বা মেনে চলেন তাহলেতো আপনি সালাফী।

যদি আপনি তাকলীদ বা গোড়ামী করেন আর অন্ধ অনুসরন করেন তাহলে আপনি সালাফী নন।



শাইখ ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (হাফিজাহুল্লাহ)​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top