বিশুদ্ধ আকীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারণ। কেননা বিশুদ্ধ আকীদাই কল্যাণকর আমল করার শক্তিশালী প্রেরণাদায়ক উপাদান। বিশুদ্ধ আকীদা ছাড়া যে কোনো ব্যক্তি ধারণা-কল্পনা ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যেতে পারে, যা অতি সহজেই তার মন মস্তিষ্কে দানা বেঁধে সুখী জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ থেকে তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে তার জীবন হয়ে পড়বে সঙ্গীন ও সংকীর্ণ। এরপর সে আত্মহত্যার মাধ্যমে হলেও তার জীবনকে শেষ করে এ সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে, যেমন এ ব্যাপারটি বহু লোকের জীবনে বাস্তব হয়ে উঠেছে যারা সঠিক আকীদার হিদায়াত লাভ করতে পারে নি। সঠিক আকীদা যে সমাজকে পরিচালিত করে না সে সমাজ একটি পাশবিক সমাজ, যা সুখী জীবনের সকল মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে, যদিও সে সমাজ বৈষয়িক জীবনের বহু উপাদানের মালিক হয়ে থাকে, যে উপাদানগুলো অধিকাংশ সময় সমাজকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যায়। আমরা অমুসলিম সমাজের মধ্যে এ ধরনের বহু দৃশ্য অবলোকন করি। কেননা বৈষয়িক এ উপাদানসমূহ সঠিক উপদেশ ও দিকনির্দেশনার মূখাপেক্ষী, যাতে এগুলোর কার্যকারিতা ও কল্যাণ থেকে উপকৃত হওয়া যায়। আর সঠিক ও বিশুদ্ধ আকীদা ছাড়া অন্য কোনো কিছু সত্যিকার দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎ কাজ কর।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
“আর আমরা নিশ্চয় দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং বিহঙ্গকূলকেও। তার জন্য নমনীয় করেছিলাম লৌহ। (নির্দেশ দিয়েছিলাম) তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম প্রস্তুত করো এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা কর। আর সৎকাজ কর। তোমরা যা কিছু করো আমি তার সম্যকদ্রষ্টা। আর আমরা সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বায়ূকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ অতিক্রম করত এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমরা তার জন্য গলিত তাম্রের এক প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। তার রবের অনুমতিক্রমে জিন্নদের কতক তার সম্মুখে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি আস্বাদন করাবো। তারা সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেক নির্মাণ করত। (আমি বলেছিলাম) হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো, আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।” [সূরা সাবা, আয়াত: ১০-১৩]
অতএব, বৈষয়িক শক্তি থেকে আকীদার শক্তি বিচ্ছিন্ন না হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা বাতিল আকীদার দিকে ধাবিত হয়ে সঠিক আকীদা থেকে বৈষয়িক শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করলে বৈষয়িক শক্তি ধ্বংস ও অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনটিই আজ কাফির রাষ্ট্রসমূহে পরিদৃষ্ট হচ্ছে, যারা বৈষয়িক শক্তির অধিকারী বটে, তবে কোনো সহীহ আকীদা তারা পোষণ করে না।
সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেগুলো জানা অপরিহার্য। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. সহীহ আকীদা সম্পর্কে অজ্ঞতা। আর এ অজ্ঞতার কারণ হচ্ছে সহীহ আকীদার পঠন থেকে বিমুখ থাকা অথবা সহীহ আকীদা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না থাকা বা কম থাকা। যার ফলে এমন এক প্রজন্ম সৃষ্টি হয় যারা সে আকীদার কিছুই জানে না এবং এও জানে না সে আকীদার বিরোধী বস্তুগুলো কি, সে আকীদার বিপরীত চিন্তাভাবনাগুলো কি। যার ফলে সে প্রজন্ম হক্ব ও সত্যকে বাতিল বলে বিশ্বাস করে এবং বাতিলকে হক্ব বলে বিশ্বাস করে। যেমন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘ইসলামের রজ্জুতো এভাবে একটি একটি করে নষ্ট হয়ে যাবে যখন ইসলামের মধ্যে এমন ব্যক্তি তৈরি হবে যারা জাহিলিয়্যাতের পরিচয় জানবে না।’[1]
২. বাপ-দাদা তথা পূর্বপুরুষগণ যে মতাদর্শের ওপর ছিলেন সে ব্যাপারে গোড়ামী প্রদর্শন এবং বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কঠোরভাবে তা আঁকড়ে থাকা আর হক্ব ও সত্য হওয়া সত্ত্বেও এর বিপরীত যা রয়েছে তা পরিত্যাগ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো। তারা বলে, আমরা তো অনুসরণ করবো যার ওপর আমাদের পূর্ববর্তী পুরুষদেরকে আমরা পেয়েছিলাম। (তারা কি এমনই করবে?) যদিও তাদের পূর্ববর্তী পুরুষগণ কিছুই উপলব্ধি করতো না এবং সুপথ পেত না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭০]
৩. দলীল-প্রমাণ জানা ছাড়াই আকীদার ক্ষেত্রে মানুষের বক্তব্য অন্ধভাবে মেনে নেওয়া। যেমনটি বাস্তবে লক্ষ্য করা যায় জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশ্আরীয়া, সূফিয়া প্রমূখ সত্যবিরোধী দলসমূহের ক্ষেত্রে। কেননা তারা তাদের পূর্ববর্তী ভ্রষ্ট ইমাম ও নেতৃবৃন্দের অন্ধ অনুকরণ করেছে। ফলে তারা বিশুদ্ধ আকীদা থেকে বিভ্রান্ত এবং বিচ্যুত হয়ে গেছে।
৪. অলী-আওলিয়া ও সৎলোকদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা, তাদেরকে তাদের মর্যাদার উপরে স্থান দেওয়া এবং তাদের ব্যাপারে এ আকীদা পোষণ করা যে, তারা কল্যাণ সাধন অথবা অকল্যাণ রোধ করতে পারেন। অথচ কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউই তা করতে সক্ষম নন। আর তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে হাজত পূরণ ও দো‘আ কবুলের ক্ষেত্রে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যার ফলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরই ইবাদাত করা হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তাদের মাযারসমূহে পশু যবেহ করা, মানত করা, দো‘আ করা, আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে নৈকট্য ও সাওয়াব অর্জন করা যায় বলে বিশ্বাস করা। যেমনটি করেছিল নূহ আলাইহিস সাল্লামের সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যখন তারা বলেছিল,
“তোমরা তোমাদের ইলাহদেরকে পরিত্যাগ করো না, তোমরা পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সূওয়া‘আ, ইয়াগুস, ইয়া‘উক ও নাসরকে।” [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩]
এরকমই আজ অনেক দেশে দেখা যায় কবরপূজারীদের ক্ষেত্রে।
৫. আল্লাহর পার্থিব নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা থেকে গাফিল থাকা, আল্লাহর নাযিলকৃত আল-কুরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা থেকে সরে যাওয়া ও বস্তুবাদী সভ্যতার চোখধাঁধাঁনো নানা অর্জন নিয়ে মত্ত থাকা; যার ফলে তাদের ধারণা হয় যে, এসব কিছু একমাত্র মানুষেরই সামর্থের ফসল। ফলে তারা মানুষকে অতি মাত্রায় সম্মান দিতে থাকে এবং এ সকল অর্জন শুধু মানুষের পরিশ্রম ও আবিষ্কারের ফসল বলে আখ্যায়িত করতে থাকে। ইতঃপূর্বে আল-কুরআনের ভাষায় কারূন যেমন বলেছিল,
“সে বলেছিল, নিশ্চয় এগুলোতো আমি প্রাপ্ত হয়েছি আমার জ্ঞানের ভিত্তিতেই।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৮]
যেমনিভাবে অন্য সূরাতে মানুষ বলছে: هَٰذَا لِي অর্থাৎ “এটি আমার।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৫০]
إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ “নিশ্চয় আমি তা প্রাপ্ত হয়েছি জ্ঞানের আলোকেই।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৯]
অথচ ঐ সত্ত্বার বিশালত্ব ও মহত্ত্বের ব্যাপারে তারা কোনো চিন্তা ও গবেষণা করে নি যিনি এ বিশ্বজগতের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর সে সবের মধ্যে রেখে দিয়েছেন চোখধাঁধানো সব বৈশিষ্ট্য, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টির সে সব বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ও তা থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে মানুষকে সামর্থ দান করেছেন। আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা করো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৬]
“তারা কি নযর দেয় নি আসমান ও যমীনের সৃষ্টির প্রতি এবং সে সকল কিছুর প্রতি যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন?” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৫]
“আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আসমান থেকে তিনি পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর নির্দেশে এটি সমূদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে। তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে। আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তার প্রতিটি হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩২-৩৪]
৬. অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারগুলো সঠিক দিক-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“প্রত্যেক নবজাতক ফিৎরাত তথা ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহুদি অথবা নাসারা কিংবা মাজুসি তথা অগ্নিউপাসকে পরিণত করে।”[2]
সুতরাং শিশুর ঝোঁক, প্রবণতা ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়নে বাবা-মায়ের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
৭. ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শিক্ষা ও প্রচার মাধ্যমগুলো তাদের দায়িত্ব আদায় থেকে দূরে থেকেছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারিক্যুলাম ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাপারটিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। অথবা তার প্রতি আদৌ কোনো গুরুত্বই থাকে না। আর অডিও-ভিজুয়াল ও পঠন উপযোগী প্রচার মাধ্যমসমূহসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রই ধ্বংস ও অধঃপতনের উপকরণে পরিণত হয়েছে অথবা এগুলো শুধুমাত্র বৈষয়িক ও আনন্দ-উল্লাসের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং সে সব বিষয়ে কোনোই গুরুত্ব প্রদান করে না যা নৈতিকতা ও চরিত্রকে মূল্য দিয়ে থাকে এবং সহীহ আকীদার বীজ বপন করে। ফলে এদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এমন এক প্রজন্ম যারা নাস্তিকবাদের সৈন্যদের সামনে জ্ঞানহীন, সে লোকদের প্রতিরোধ করার মতো সামর্থ যাদের কাছে আর অবশিষ্ট নেই।
এ অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার উপায়সমূহকে নিম্নে এভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে।
(ক) মহান আল্লাহর গ্রন্থ আল-কুরআন ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’র দিকে ফিরে আসা, যাতে এ উভয় উৎস থেকে সহীহ আকীদা অর্জন করা যায় যেমনিভাবে সালাফে-সালেহ তথা পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণ এ উৎসদ্বয় থেকে তাদের আকীদা আহরণ করতেন। আর এ উম্মতের সর্বশেষ লোকদেরকে সংশোধন শুধুমাত্র সেই বস্তুই করতে পারে যা উম্মতের প্রথম অংশকে সংশোধন করেছিল। এর পাশাপাশি জানা থাকতে হবে বিভ্রান্ত দলসমূহের আকীদা এবং তাদের সংশয়সমূহ, যেন তাদের সে সংশয়গুলো অপনোদন করা যায় এবং এ সকল দল সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা যায়। কেননা যারা অনিষ্ট সম্পর্কে জানে না তারা সে অনিষ্টে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
(খ) শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে সহীহ আকীদা তথা সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ আকীদা পড়ানোর প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করা, শিক্ষাক্রমের মধ্যে আকীদা বিষয়ে যথেষ্ঠ পরিমাণে পাঠদানের ঘন্টা বাড়ানো এবং এ বিষয়ে পরীক্ষার খাতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত গুরুত্ব আরোপ করা।
(গ) সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহ সিলেবাসভূক্ত করা এবং সূফিয়া, বিদ‘আতী, জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া ও মাতুরিদিয়াহসহ আরো যে সব বিভ্রান্ত দলসমূহ রয়েছে তাদের গ্রন্থসমূহ সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া। অবশ্য এ দলসমূহ সম্পর্কে শুধু এজন্য জ্ঞানার্জন করা যেতে পারে যাতে তাদের মধ্যে যে বাতিল আকীদা রয়েছে তার জবাব দেওয়া যায় এবং তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা যায়।
(ঘ) এমন এক দল সংস্কারক দা‘ঈ ইলাল্লাহ তৈরি হওয়া যারা মানুষের জন্য সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলিমদের আকীদাকে নবায়ন করবে এবং সে আকীদা থেকে যারা বিচ্যূত হয়েছে তাদের বিভ্রান্তি অপনোদন করবে।
[1] মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ ২/৩৯৮, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৩, মুখতাসার সিরাত আর-রাসূল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ১/৩৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯২৮।
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١]
“হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎ কাজ কর।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ ١٠ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهۡرٞ وَرَوَاحُهَا شَهۡرٞۖ وَأَسَلۡنَا لَهُۥ عَيۡنَ ٱلۡقِطۡرِۖ وَمِنَ ٱلۡجِنِّ مَن يَعۡمَلُ بَيۡنَ يَدَيۡهِ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَمَن يَزِغۡ مِنۡهُمۡ عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ١٢ يَعۡمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ مِن مَّحَٰرِيبَ وَتَمَٰثِيلَ وَجِفَانٖ كَٱلۡجَوَابِ وَقُدُورٖ رَّاسِيَٰتٍۚ ٱعۡمَلُوٓاْ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ وَقَلِيلٞ مِّنۡ عِبَادِيَ ٱلشَّكُورُ ١٣﴾ [سبأ: ١٠، ١٣]
“আর আমরা নিশ্চয় দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং বিহঙ্গকূলকেও। তার জন্য নমনীয় করেছিলাম লৌহ। (নির্দেশ দিয়েছিলাম) তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম প্রস্তুত করো এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা কর। আর সৎকাজ কর। তোমরা যা কিছু করো আমি তার সম্যকদ্রষ্টা। আর আমরা সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বায়ূকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ অতিক্রম করত এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমরা তার জন্য গলিত তাম্রের এক প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। তার রবের অনুমতিক্রমে জিন্নদের কতক তার সম্মুখে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি আস্বাদন করাবো। তারা সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেক নির্মাণ করত। (আমি বলেছিলাম) হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো, আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।” [সূরা সাবা, আয়াত: ১০-১৩]
অতএব, বৈষয়িক শক্তি থেকে আকীদার শক্তি বিচ্ছিন্ন না হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা বাতিল আকীদার দিকে ধাবিত হয়ে সঠিক আকীদা থেকে বৈষয়িক শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করলে বৈষয়িক শক্তি ধ্বংস ও অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনটিই আজ কাফির রাষ্ট্রসমূহে পরিদৃষ্ট হচ্ছে, যারা বৈষয়িক শক্তির অধিকারী বটে, তবে কোনো সহীহ আকীদা তারা পোষণ করে না।
সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেগুলো জানা অপরিহার্য। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. সহীহ আকীদা সম্পর্কে অজ্ঞতা। আর এ অজ্ঞতার কারণ হচ্ছে সহীহ আকীদার পঠন থেকে বিমুখ থাকা অথবা সহীহ আকীদা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না থাকা বা কম থাকা। যার ফলে এমন এক প্রজন্ম সৃষ্টি হয় যারা সে আকীদার কিছুই জানে না এবং এও জানে না সে আকীদার বিরোধী বস্তুগুলো কি, সে আকীদার বিপরীত চিন্তাভাবনাগুলো কি। যার ফলে সে প্রজন্ম হক্ব ও সত্যকে বাতিল বলে বিশ্বাস করে এবং বাতিলকে হক্ব বলে বিশ্বাস করে। যেমন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘ইসলামের রজ্জুতো এভাবে একটি একটি করে নষ্ট হয়ে যাবে যখন ইসলামের মধ্যে এমন ব্যক্তি তৈরি হবে যারা জাহিলিয়্যাতের পরিচয় জানবে না।’[1]
২. বাপ-দাদা তথা পূর্বপুরুষগণ যে মতাদর্শের ওপর ছিলেন সে ব্যাপারে গোড়ামী প্রদর্শন এবং বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কঠোরভাবে তা আঁকড়ে থাকা আর হক্ব ও সত্য হওয়া সত্ত্বেও এর বিপরীত যা রয়েছে তা পরিত্যাগ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ بَلۡ نَتَّبِعُ مَآ أَلۡفَيۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَآؤُهُمۡ لَا يَعۡقِلُونَ شَيۡٔٗا وَلَايَهۡتَدُونَ ١٧٠﴾ [البقرة: ١٧٠]
“যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো। তারা বলে, আমরা তো অনুসরণ করবো যার ওপর আমাদের পূর্ববর্তী পুরুষদেরকে আমরা পেয়েছিলাম। (তারা কি এমনই করবে?) যদিও তাদের পূর্ববর্তী পুরুষগণ কিছুই উপলব্ধি করতো না এবং সুপথ পেত না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭০]
৩. দলীল-প্রমাণ জানা ছাড়াই আকীদার ক্ষেত্রে মানুষের বক্তব্য অন্ধভাবে মেনে নেওয়া। যেমনটি বাস্তবে লক্ষ্য করা যায় জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশ্আরীয়া, সূফিয়া প্রমূখ সত্যবিরোধী দলসমূহের ক্ষেত্রে। কেননা তারা তাদের পূর্ববর্তী ভ্রষ্ট ইমাম ও নেতৃবৃন্দের অন্ধ অনুকরণ করেছে। ফলে তারা বিশুদ্ধ আকীদা থেকে বিভ্রান্ত এবং বিচ্যুত হয়ে গেছে।
৪. অলী-আওলিয়া ও সৎলোকদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা, তাদেরকে তাদের মর্যাদার উপরে স্থান দেওয়া এবং তাদের ব্যাপারে এ আকীদা পোষণ করা যে, তারা কল্যাণ সাধন অথবা অকল্যাণ রোধ করতে পারেন। অথচ কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউই তা করতে সক্ষম নন। আর তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে হাজত পূরণ ও দো‘আ কবুলের ক্ষেত্রে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যার ফলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরই ইবাদাত করা হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তাদের মাযারসমূহে পশু যবেহ করা, মানত করা, দো‘আ করা, আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে নৈকট্য ও সাওয়াব অর্জন করা যায় বলে বিশ্বাস করা। যেমনটি করেছিল নূহ আলাইহিস সাল্লামের সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যখন তারা বলেছিল,
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣﴾ [نوح: ٢٣]
“তোমরা তোমাদের ইলাহদেরকে পরিত্যাগ করো না, তোমরা পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সূওয়া‘আ, ইয়াগুস, ইয়া‘উক ও নাসরকে।” [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩]
এরকমই আজ অনেক দেশে দেখা যায় কবরপূজারীদের ক্ষেত্রে।
৫. আল্লাহর পার্থিব নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা থেকে গাফিল থাকা, আল্লাহর নাযিলকৃত আল-কুরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা থেকে সরে যাওয়া ও বস্তুবাদী সভ্যতার চোখধাঁধাঁনো নানা অর্জন নিয়ে মত্ত থাকা; যার ফলে তাদের ধারণা হয় যে, এসব কিছু একমাত্র মানুষেরই সামর্থের ফসল। ফলে তারা মানুষকে অতি মাত্রায় সম্মান দিতে থাকে এবং এ সকল অর্জন শুধু মানুষের পরিশ্রম ও আবিষ্কারের ফসল বলে আখ্যায়িত করতে থাকে। ইতঃপূর্বে আল-কুরআনের ভাষায় কারূন যেমন বলেছিল,
﴿قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ ﴾ [القصص: ٧٨]
“সে বলেছিল, নিশ্চয় এগুলোতো আমি প্রাপ্ত হয়েছি আমার জ্ঞানের ভিত্তিতেই।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৮]
যেমনিভাবে অন্য সূরাতে মানুষ বলছে: هَٰذَا لِي অর্থাৎ “এটি আমার।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৫০]
إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ “নিশ্চয় আমি তা প্রাপ্ত হয়েছি জ্ঞানের আলোকেই।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৯]
অথচ ঐ সত্ত্বার বিশালত্ব ও মহত্ত্বের ব্যাপারে তারা কোনো চিন্তা ও গবেষণা করে নি যিনি এ বিশ্বজগতের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর সে সবের মধ্যে রেখে দিয়েছেন চোখধাঁধানো সব বৈশিষ্ট্য, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টির সে সব বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ও তা থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে মানুষকে সামর্থ দান করেছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦﴾ [الصافات: ٩٦]
“আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা করো সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৬]
﴿أَوَلَمۡ يَنظُرُواْ فِي مَلَكُوتِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَيۡءٖ ﴾ [الاعراف: ١٨٤]
“তারা কি নযর দেয় নি আসমান ও যমীনের সৃষ্টির প্রতি এবং সে সকল কিছুর প্রতি যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন?” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৫]
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡفُلۡكَ لِتَجۡرِيَ فِي ٱلۡبَحۡرِ بِأَمۡرِهِۦۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡأَنۡهَٰرَ ٣٢ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ دَآئِبَيۡنِۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ ٣٣ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ ﴾ [ابراهيم: ٣٢، ٣٤]
“আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আসমান থেকে তিনি পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর নির্দেশে এটি সমূদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে। তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে। আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তার প্রতিটি হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩২-৩৪]
৬. অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারগুলো সঠিক দিক-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ»
“প্রত্যেক নবজাতক ফিৎরাত তথা ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহুদি অথবা নাসারা কিংবা মাজুসি তথা অগ্নিউপাসকে পরিণত করে।”[2]
সুতরাং শিশুর ঝোঁক, প্রবণতা ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়নে বাবা-মায়ের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
৭. ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শিক্ষা ও প্রচার মাধ্যমগুলো তাদের দায়িত্ব আদায় থেকে দূরে থেকেছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারিক্যুলাম ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাপারটিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। অথবা তার প্রতি আদৌ কোনো গুরুত্বই থাকে না। আর অডিও-ভিজুয়াল ও পঠন উপযোগী প্রচার মাধ্যমসমূহসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রই ধ্বংস ও অধঃপতনের উপকরণে পরিণত হয়েছে অথবা এগুলো শুধুমাত্র বৈষয়িক ও আনন্দ-উল্লাসের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং সে সব বিষয়ে কোনোই গুরুত্ব প্রদান করে না যা নৈতিকতা ও চরিত্রকে মূল্য দিয়ে থাকে এবং সহীহ আকীদার বীজ বপন করে। ফলে এদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এমন এক প্রজন্ম যারা নাস্তিকবাদের সৈন্যদের সামনে জ্ঞানহীন, সে লোকদের প্রতিরোধ করার মতো সামর্থ যাদের কাছে আর অবশিষ্ট নেই।
এ অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার উপায়সমূহকে নিম্নে এভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে।
(ক) মহান আল্লাহর গ্রন্থ আল-কুরআন ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’র দিকে ফিরে আসা, যাতে এ উভয় উৎস থেকে সহীহ আকীদা অর্জন করা যায় যেমনিভাবে সালাফে-সালেহ তথা পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণ এ উৎসদ্বয় থেকে তাদের আকীদা আহরণ করতেন। আর এ উম্মতের সর্বশেষ লোকদেরকে সংশোধন শুধুমাত্র সেই বস্তুই করতে পারে যা উম্মতের প্রথম অংশকে সংশোধন করেছিল। এর পাশাপাশি জানা থাকতে হবে বিভ্রান্ত দলসমূহের আকীদা এবং তাদের সংশয়সমূহ, যেন তাদের সে সংশয়গুলো অপনোদন করা যায় এবং এ সকল দল সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা যায়। কেননা যারা অনিষ্ট সম্পর্কে জানে না তারা সে অনিষ্টে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
(খ) শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে সহীহ আকীদা তথা সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ আকীদা পড়ানোর প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করা, শিক্ষাক্রমের মধ্যে আকীদা বিষয়ে যথেষ্ঠ পরিমাণে পাঠদানের ঘন্টা বাড়ানো এবং এ বিষয়ে পরীক্ষার খাতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত গুরুত্ব আরোপ করা।
(গ) সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহ সিলেবাসভূক্ত করা এবং সূফিয়া, বিদ‘আতী, জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া ও মাতুরিদিয়াহসহ আরো যে সব বিভ্রান্ত দলসমূহ রয়েছে তাদের গ্রন্থসমূহ সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া। অবশ্য এ দলসমূহ সম্পর্কে শুধু এজন্য জ্ঞানার্জন করা যেতে পারে যাতে তাদের মধ্যে যে বাতিল আকীদা রয়েছে তার জবাব দেওয়া যায় এবং তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা যায়।
(ঘ) এমন এক দল সংস্কারক দা‘ঈ ইলাল্লাহ তৈরি হওয়া যারা মানুষের জন্য সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলিমদের আকীদাকে নবায়ন করবে এবং সে আকীদা থেকে যারা বিচ্যূত হয়েছে তাদের বিভ্রান্তি অপনোদন করবে।
তাওহীদ পরিচিতি
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ ২/৩৯৮, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৩, মুখতাসার সিরাত আর-রাসূল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ১/৩৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯২৮।