শিষ্যের প্রতি ইমাম সুফিয়ান সাওরীর উপদেশ– পর্ব: ৫

  • Thread Author
ভাই আমার, শাসকদের দরজা থেকে দূরে থাকবে। তাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার মতোই। তাদের কেউ যদি তোমার কাছে আসে, তাহলে মলিন মুখে তার দিকে তাকাবে। তারা যাদের সাথেই মেশে, তাদেরকে কলুষিত ও অপবিত্র করে ছাড়ে। তাদের কোনো কিছুকেই পরোয়া করবে না। যদি পরোয়া করো, তবে তারা নিজেদেরকে সত্য পথে আছে বলে মনে করবে।

প্রিয় ভাই, জেনে রেখো, তোমাদের পিতা হলেন আদম (আলাইহিস সালাম)। তিনি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ছিলেন। আল্লাহ নিজ হাতে তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তার মাঝে রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। ফেরেশতাদের সিজদার মধ্য দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন। এরপর দিয়েছেন জান্নাতে বসবাস করার অনন্য সুযোগ। কিন্তু শুধু একটি ভুলের কারণে তাকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন।

মনে রাখবে, যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করে, তাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না। এজন্য আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকবে। তিনি সবসময় তোমাকে দেখছেন, তোমার ঘাড়ের রগেরও নিকটবর্তী তিনি। তাই তাঁর ব্যাপারে শঙ্কিত ও লজ্জিত থাকবে।

প্রিয় ভাই, কৃত্রিমভাবে তাকওয়া প্রকাশ করবে না। যে ভয় তোমার অন্তরে নেই, তা চেহারায় ফুটিয়ে তুলবে না। প্রবৃত্তিপরায়ণ লোকদেরকে তাদের আমোদ-ফুর্তির কারণে ঈর্ষা করবে না। কেননা তাদের সামনে এমন এক দিন রয়েছে, যেদিন চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যাবে। অন্তরসমূহ বেরিয়ে পড়তে চাইবে এবং পৌঁছে যাবে কণ্ঠনালিতে। সেদিন ভয়ে দেহসমূহ প্রকম্পিত হবে। পা টলে যাবে। সেদিনের সেই লজ্জা ও অনুশোচনা এবং আজকের এই আমোদ-ফুর্তির কথা স্মরণ রাখবে।

প্রিয় ভাই, হালাল উপার্জন করবে। যারা হালাল উপার্জন করে, তাদের সাথে থাকবে। প্রয়োজনে তাদের আহার গ্রহণ করবে। যারা হারাম উপার্জন করে, তাদের সাথে বসবে না, তাদের আহার গ্রহণ করবে না। কাউকে ইশারা-ইঙ্গিতেও হারামের সন্ধান দেবে না।

মনে রাখবে, প্রত্যেক গুনাহরই তাওবা রয়েছে। তবে তাওবা করার চেয়ে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া সহজ। আল্লাহর সহনশীলতা ও ধৈর্যের সুযোগ নিয়ে গুনাহর প্রতি দুঃসাহসী হয়ে উঠো না।

মনে রেখো, তুমি এমন রবের অবাধ্যতা করছ, যিনি ছোট গুনাহের কারণেও শাস্তি দিতে পারেন, আবার বড় গুনাহও মাফ করে দিতে পারেন।

সবচেয়ে বুদ্ধিমান তো সে, যে একটি গুনাহ করার পর তা সবসময় স্মরণে রেখেছে; আজীবন সেই গুনাহর ভয় নিয়েই কাটিয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর সবচেয়ে বড় নির্বোধ তো সে, যে একটি ভালো কাজ করার পর তা চোখের সামনে ধরে রেখেছে, সেটার সাওয়াবের আশা রেখে অন্যান্য গুনাহকে তুচ্ছ মনে করেছে। এভাবেই জীবনের অবশিষ্ট সময় পার করে দিয়েছে এবং পরিণামে জাহান্নামে গিয়েছে।

প্রিয় ভাই, আল্লাহর ও তোমার মধ্যকার সম্পর্ক আগে ঠিক করবে, তাহলে তিনি তোমার ও মানুষের মধ্যকার সমস্ত বিষয় ঠিক করে দেবেন।

আখিরাতের বিনিময়ে যদি দুনিয়াকে বিক্রি করে দাও, তাহলে দুক্ষেত্রেই লাভবান হবে। দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত বিক্রি করবে না, তাহলে দুকূলই হারাবে।

— সিয়ারু আলামিন নুবালা, খন্ড : ৭
 
Back
Top