শিরক শির্ক মানে কি?

Joined
Feb 23, 2023
Threads
347
Comments
399
Reactions
1,899
শির্ক শব্দের আভিধানিক অর্থ :

ইবন মানযুর বলেছেন : ‘আশ-শির্কাতু’ ও ‘আশ-শারকাতু’ (الشرْكَةُ وَ الشَّرْكَةُ) সমার্থবোথক দু’টি শব্দ। যার অর্থ : দু’শরীকের সংমিশ্রণ। তিনি আরো বলেন : ‘ইশতারাকনা’ (اشْتَرَكْنا) আমরা শরীক হলাম শব্দের অর্থ : ‘তাশারাকনা’ (تَشَارَكْنَا) আমরা পরস্পর শরীক হলাম। দু’জন শরীক হলো আর পরস্পর শরীক হলো বা একে অপরের সাথে শরীক হলো কিংবা শরীক হওয়া, এ-সব শব্দের অর্থ ‘আল-মুশারিক’ (الْمُشَارِكُ) বা অংশীদার। ‘আশ-শির্কু’ (الشِّرْكُ) শরীক করাও শরীক হওয়ার মতই। এর বহু বচন হলো : ‘আশরাক’ ও ‘শুরাকা-উ’ ‘(أَشْرَاكٌ وَ شُرَكَاءٌ) অর্থাৎ : সকল শরীকান বা অংশীদার।

তিনি আরো বলেন : ‘আশ-শির্কু’ (اَلشِّرْكُ) শব্দটি ‘আল-হিস্সাতু’ (اَلْحِصَّةُ) : অংশের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : [ مَنْ أَعْتَقَ شِرْكاً لَهُ فِيْ عَبْدٍ...]’’- ‘‘যে তার কোন ক্রীতদাসের অংশকে মুক্ত করে দিল...।’’[1] বলা হয়ে থাকে ‘‘طَرِيْقٌ مُشْتَرَكٌ’’ অর্থাৎ সম্মিলিত রাস্তা, যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। ‘আশরাকা বিল্লাহি’ (أِشْرَكَ بِاللهِ) সে আল্লাহর সাথে শরীক করলো, অর্থাৎ আল্লাহর রাজত্বে কাউকে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করলো।[2] (নাউযু বিল্লাহি)

আল-মুনজিদ নামক অভিধানে বলা হয়েছে : (أَشْرَكَ فِيْ أَمْرِهِ) অর্থাৎ- তার কাজে সে (অপর কাউকে) শরীক করে নিয়েছে। (أَشْرَكَ بِاللهِ) অর্থাৎ- সে আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। আর যে তা করলো সে মুশরিক হয়ে গেল।[3]

শেখ যাকারিয়্যা আলী ইউছুফ বলেন :

‘‘কোন ক্ষেত্রে ‘শারাকতুহু’ ও আশ-রাকতুহু’ (شَرَكْتُهُ وَ أَشْرَكْتُه) তখনই বলা হয় যখন সে ক্ষেত্রে আমি কারো ‘শরীক’ (شَرِيْكٌ) অংশীদার হয়ে গেলাম, ‘শা-রাকতুহু’ (شَارَكْتُهُ)শব্দটিও শরীক এর অর্থ প্রকাশ করে।‘আশরাকতুহু’ (أَشْرَكْتُهُ) শব্দের অর্থ: আমি তাকে শরীক করে নিলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَأَشۡرِكۡهُ فِيٓ أَمۡرِي ٣٢ ﴾ [طه: ٣٢]

(হে আল্লাহ) ‘‘তুমি হারূনকে আমার নবুওতের অংশীদার করে দাও।’’[4]


তিনি আরো বলেন : কোনো বস্তুতে একাধিক শরীক হলে সে বস্তুতে তাদের প্রত্যেকের অংশ সমান হওয়াটি অত্যাবশ্যক নয়, তাদের একের অংশ অপরের অংশের চেয়ে অধিক হওয়ার পথেও তা কোন অন্তরায় সৃষ্টি করে না, যেমন মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রেসালতের ক্ষেত্রে স্বীয় ভাই হারূন আলাইহিস সালামকে তাঁর সাথে শরীক করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ قَالَ قَدۡ أُوتِيتَ سُؤۡلَكَ يَٰمُوسَىٰ ٣٦ ﴾ [طه: ٣٦]
‘‘হে মূসা! তোমার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হলো।’’[6]
এ কথা বলে আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালাম-এর কামনা পূর্ণ করে থাকলেও রেসালতের ক্ষেত্রে হারূন আলাইহিস সালাম-কে সমান অংশীদার করে দেন নি; বরং সে ক্ষেত্রে হারূন আলাইহিস সালাম-এর অংশ মূসা আলাইহিস সালাম-এর অংশের চেয়ে কম ছিল।[7]উপর্যুক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদের নিকট এ-কথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘শির্ক’ শব্দমূলটি মূলগতভাবেই মিশ্রণ ও মিলনের অর্থ প্রকাশ করে থাকে এবং এ মৌলিক অর্থটি এর সকল রূপান্তরিত শব্দের মধ্যে নিহিত থাকে। আর দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যকার অংশীদারিত্ব যেমন ইন্দ্রিয় অনুভূত বস্তুসমূহের মধ্যে হতে পারে[8], তেমনি তা কোন অর্থগত বা গুণগত[9] বস্তুতেও হতে পারে।
[1]. বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল এত্ক, বাব নং ৪, হাদীস নং ২৩৮৬, ২/৮৯২; মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুল এত্ক, হাদীস নং ১৫০১, ৩/১২৮৭।
[2]. ইবন মানযুর, লেছানুল ‘আরব; শব্দমূল : الشِّرْكُ, (কুম:নাশরু আদাবিল হাওযাঃ সংস্করণ বিহীন, ১৮০৫হি.), ১০/৪৪৮-৪৫০।
[3]. অধ্যাপক আনতুয়ান না‘মাঃ ও গং, আল-মুনজিদ; (বৈরুতঃ দারুল মাশরিক, সংস্করণ ২১, ১৯৭২ খ্রি.), পৃ.৩৮৪।
[4] . আল-কুরআন, সূরা ত্বাহা : ৩২।
[5] . আল-কুরআন, সূরা আহকাফ : ৪।
[6] . আল-কুরআন, সূরা ত্বাহা : ৩৬।
[7]. যাকারিয়্যা আলী ইউছুফ, আল-ঈমান ওয়া আ-ছারুহু ওয়া আশশির্কু ওয়া মাযাহিরুহু; (কায়রো : মাকতাবাতুস সালাম আল- আলমিয়্যা : ২য় সংস্করণ, তারিখ বিহীন), পৃ. ৭৮।
[8]. যেমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কোনো বাড়ী, জমি বা গাড়ীতে সমঅংশে বা বেশ-কমে অংশীদার হওয়া।
[9]. যেমন মানুষ এবং ঘোড়া প্রাণী হওয়ার ক্ষেত্রে সমানভাবে অংশীদার এবং দু’টি ঘোড়া বাদামী বা লাল বর্ণের হওয়ার ক্ষেত্রে সমানভাবে শরীক হতে পারে।

ড.মুহাম্মদ মুযযম্মিল আলী
 
Similar threads Most view View more
Back
Top