- Joined
- Dec 7, 2022
- Threads
- 151
- Comments
- 158
- Reactions
- 1,358
- Thread Author
- #1
শাসকদের নসীহাহ ও তাদের কর্মের সমালোচনা সংক্রান্ত নীতিমালা
.মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নববির মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-আল্লামা, আল-ফাকিহ, ড. সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলী হাফিযাহুল্লাহ বলেন:
এক ভাই প্রশ্ন করেছেন, শাসকদের নসীহাহ ও তাদের কোনো মন্দ কাজের সমালোচনার মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি?
তার উত্তর হলো: হ্যা, পার্থক্য অবশ্যই আছে।
শাসকদের নসীহাহ করতে হবে সরাসরি তাদের উদ্দেশ্য করে। সক্ষম আলেমদের উপর ওয়াজিব হলো, তারা শাসকদেরকে এমন ভাষায় নসীহাহ করবেন যাতে শাসকদের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত না হয় এবং জনগণের শ্রদ্ধাও উঠে না যায়।
প্রিয় ভাইয়েরা, সর্বজন স্বীকৃত একটি মূলনীতি হলো: মানুষকে তার অবস্থান খেয়াল রেখে উপদেশ দিতে হয়।
উদাহরণতঃ আপনি আপনার বাবাকে যে ভাষায় নসীহাহ করবেন সেটা অবশ্যই সাধারণ জনগণকে যে ভাষায় বলবেন তার মতো নয়।
বাবার সাথে কথা বলতে অবশ্যই তার সাথে মানানসই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
অনুরূপভাবে শাসকদের উপদেশও হবে যথাযথ পদ্ধতিতে এবং অবশ্যই আপনার ও তার মাঝে গোপনভাবে, তার হাত ধরে তাকে (গোপনে) উপদেশ দেবেন। যদি সেই শাসক আপনার উপদেশ গ্রহণ করে তো আলহামদুলিল্লাহ; আর যদি গ্রহণ না করে, তবে আপনি তো আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে একটিমাত্র অবস্থায় শাসককে উপদেশ দেওয়ার জন্য গোপনীয়তা শর্ত নয়। সেটা হলো (নিচের তিনটি শর্ত মিলিয়ে একটা):
১) শাসকের একদম সামনাসামনি, অর্থাৎ উপস্থিতিতে;
২) সর্বজন শ্রদ্ধেয় কোনো আলেমের মাধ্যমে, যাকে গ্রেফতার ও (তার বক্তব্য অন্যদের জন্য) ফিতনার আশঙ্কা না থাকে এবং
৩) জনসাধারণের জন্য ফিতনা স্বরূপ না হওয়া।
উপরোক্ত তিনটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষেই কেবল শাসকের প্রকাশ্য সমালোচনা বৈধ; আর কিছু সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম এই ধরনের সমালোচনাই করেছেন।
•আমাদের প্রথম শর্তের ভিত্তিতে বোঝা যায়, শাসকদের অনুপস্থিতিতে কোনো প্রকাশ্য নিন্দা বা সমালোচনা সঠিক নয়।
•দ্বিতীয় শর্তের ভিত্তিতে বোঝা যায়, যার যার সেইরকম অবস্থা নেই, সে শাসকের সমালোচনা করবে না (সামনাসামনি হলেও)। কারণ, সে সমালোচনা করলে হিতে বিপরীত হয়ে সে নিজেই গ্রেফতার হতে পারে।
•তৃতীয় শর্তের আলোকে বোঝা যায়, যদি কেউ বুঝতে পারে যে, সে প্রকাশ্যে শাসকের সমালোচনা করলে প্রজারা শাসকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, তাহলে এমতাবস্থায় (শাসকের সামনাসামনি হলেও) সে কোনো সমালোচনা করবে না।
মন্দ কাজের প্রতিহতকরণের দুইটি দিক আছে:
১) ব্যক্তি শাসকের বিরুদ্ধে, এটাই হচ্ছে শাসককে নসীহাহ; যেটার মূলনীতি আমরা জেনেছি যে, শুধুমাত্র একটি অবস্থা ছাড়া সর্বাবস্থায় এই উপদেশ গোপনীয়ভাবে দিতে হবে।
২) মন্দ কাজটার বিরোধিতা করা, শাসকের নয়। এরকম হলে শাসকের সাথে লেজ না জুড়িয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। সুদ ও সুদী ব্যাংকগুলোর ব্যাপারটাই খেয়াল করুন। এই মন্দ কাজের প্রতিবাদের দুটো দিক আছে:
১) সরাসরি শাসককে উদ্দেশ্য করে সমালোচনা করা ও তাকে এই কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই (পূর্বে আলোচিত) শাসককে নসীহাহ করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে; খুতবায়, সেমিনারে, বিক্ষোভ সমাবেশে বা মঞ্চে নয়। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এটা মোটেও জায়েয নেই।
২) দ্বিতীয় দিক হলো, এইসমস্ত কারবার ও লেনদেন করতে সতর্ক করা। আলেমদের উপর ওয়াজিব হলো, তারা জনসাধারণকে এইসব ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা থেকে সতর্ক করবেন; তারা আরো বলবেন যে, সুদী কারবার হারাম এবং এটা মহা অপরাধ।
আর এটাই হলো আলেমদের পদ্ধতি।
শাসকের প্রতিবাদ আর জনসাধারণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরোপিত অন্যায় কাজের প্রতিবাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। জনসাধারণকে নিষেধ করতে হবে, তাদেরকে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে জানাতে হবে এবং এ ব্যাপারে বিস্তর দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
.
উৎস: https://h.top4top.io/m_2380uzxqh0.mp3
.
অনুবাদক: ইয়াকুব বিন আবুল কালাম