উত্তর: লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে কিনা এ বিষয়ে আহালুল আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
আহালুল আলেমগনের সমস্ত মতামতগুলো একসাথে করলে এ বিষয়ে চারটি মতামত পাওয়া যায়। যেমন-
(১). যদি কোন ব্যক্তি স্বহস্তে সরাসরি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে। এখানে স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হাতের তালুর উপর বা নিম্নভাগ দ্বারা কোন প্রকার আবরণ ছাড়াই স্পর্শ করা। ( এটিই সাহাবা ও তাবি‘ঈগণের একটি দল এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ অভিমত)। তারা দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন, বুসরাহ বিনতু সফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন দেখুন তিরমিযী ৮২, নাসায়ী ১৬৩-৬৪, আবু দাঊদ ১৮১, আহমাদ ২৬৭৪৯, ২৭৭৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৯১)
(২). যদি কোন ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবেনা এটি যেভাবেই হোক। (এটি ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মত তিনি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন তালক আল-হানাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাদীস তিরমিযী ৮৫, নাসায়ী ১৬৫, আবু দাঊদ ১৮২,)। তবে কেউ কেউ হাদীসটি দূর্বল বলেছেন আবার কেউ কেউ হাদীসটি মানসূখ হওয়ার দাবী করেছেন।আবু দাউদের, ১৮১ নং হাদীসের টিকা মিশকাতুল মাসাবিহ,৩১৯-২০ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
(৩). কেউ যদি উত্তেজনাবশত ইচ্ছে করে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে,অনিচ্ছাকৃত হলে ওযু ভঙ্গ হবেনা।(জাবির ইবনু যায়দ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বশতঃ লজ্জাস্থাহোত লেগে গেল ওযু ভঙ্গ হবে না। (নায়লুল আওত্বার আবু দাউদের ১৮১ নং হাদীসের টিকা শায়খ ইবনে উসাইমীন এটিকে বিবেচনা করেছেন, ইবনে উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি,১/২৮৪ শারহে বুলূগ আল-মারম,১/২৫৯ শাইখ আলবানী,তামামুল মিন্নাহ ১০৩ পৃ.)।
(৪). যদি কোন ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। এটি ইচ্ছে অনিচ্ছা, সরাসরি অথবা আবরণ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই মতের পক্ষপাতী ছিলেন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২৭৫৯ এবং ৯৯৪৬৮)
উপরোক্ত চারটি মতের মধ্যে হাদীসের আলোকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য মত হলো, কোন ব্যক্তি যদি তার লজ্জাস্থান আবরণ ছাড়া সরাসরি স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু কাপড়ের আড়াল থেকে করলে অযু নষ্ট হবেনা, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শ করুক বা না করুক সব অবস্থায় তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। এ মতের পক্ষে অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরামগণের আসার বর্ণিত আছে। যাদের মতে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ওয়াজিব হবে। তারা হলেনঃ উমার ইবনুল খাত্তাব, তার পুত্র ইবনু উমার, আবু আইয়ুব আনসারী, যায়দ ইবনু খালিদ, আবু হুরাইরাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস, জাবির, আয়িশাহ, উম্মু হাবীবাহ, বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, সা‘দ আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত এবং ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত (রাঃ)। এছাড়া তাবেঈনদের থেকে রয়েছেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার, আত্বা ইবনু আবু রিবাহ, আবান ইবনু উসমান, মুজাহিদ, জাবির ইবনু যায়দ, যুহরী মুসআব ইবনু সা‘দ, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের বিশুদ্ধ মত, হিশাম ইবনু উরওয়াহ, আওযাঈ, শামের অধিকাংশ আলিম। এছাড়া ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম মালিকের প্রসিদ্ধ মত। অর্থাৎ, জমহুর উলামায়ে কেরাম এ মতের পক্ষে রয়েছেন। এই মতের পক্ষে একাধিক বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে যেমন:-
বুস্রাহ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার লিঙ্গ স্পর্শ করলে সে যেন ওযু করে। ( হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবু দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, দারিমী, তায়ালিসি, ত্বাবারানী সাগীর গ্রন্থে বুসরাহ থেকে একাধিক সনদে মারফূভাবে। হাদীসটিকে আরো যারা সহীহ বলেছেন তারা হলেন, ইমাম ইবনু মাঈন, হাযিমী, বায়হাক্বী ও ইবনু হিব্বান প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম। শায়খ আলবানী একে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া, হা/ ১১)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এটিই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম দেখুন। (তিরমিযী ৮২, নাসায়ী ১৬৩-৬৪, আবু দাঊদ ১৮১, আহমাদ ২৬৭৪৯, ২৭৭৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৯১, দারিমী ৭২৪-২৫ মিশকাত ৩১৯, ইরওয়াহ ১১৬, সহীহ আবূ দাউদ ১৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪৭৯)
অপর বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَىْ ذَكَرِهِ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا شَيْءٌ فَلْيَتَوَضَّأْ ‘যখন তোমাদের কেউ নিজ পুরুষাঙ্গের প্রতি হাত বাড়াবে তখন যদি উভয়ের মধ্যে কোন আড় না থাকে, তাহলে সে যেন ওযু করে।' (মুসনাদুশ শাফেঈ হা/৮৮; দারাকুৎনী হা/৬; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২৩৫ হাদীসটি সহীহ)
অন্যত্র আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ مَسَّتْ فَرْجَهَا فَلْتَتَوَضَّأْ ‘যে ব্যক্তি (পুরুষ) তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযু করে এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে যেন ওযূ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৭৬, সনদ হাসান)। এই হাদীসের আলোকে ইমাম আল-শাওকানী এবং শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, লিঙ্গে হাতের ছোঁয়া লাগা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু হাতের কব্জির উপরের অংশের ছোঁয়া লাগলে ওযু নষ্ট হবে না। (ইবনে উসাইমীন আল- শারহুল মুমতি,১/২২৯)
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে শাইখ বলেছেন, কোনো আবরণ ছাড়া লজ্জাস্থান অর্থাৎ অন্ডকোষ স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট হবে,
এমনকি ইচ্ছা ব্যতীতও হলেও। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন লজ্জাস্থান স্পর্শ করা অযু ভঙ্গ করে এবং তিনি কামনা-বাসনাকে শর্ত দেয়নি, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,'যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে, সে যেন অজু করে। সুতরাং, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, তার জন্য অজু করা ওয়াজিব এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তার জন্যেও যেন ওযু করা ওয়াজিব। অতএব, সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু সম্পূর্ণ রূপে ইচ্ছা ও ইচ্ছা ছাড়াই বাতিল হয়ে যায়, সে পুরুষ হোক বা নারী। (বিন বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৭৪৭৪)
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে তবে তার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে স্পর্শ করুক বা না করুক সব অবস্থায় তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। যদি সে এটাকে ইচ্ছা করে স্পর্শ করে, তাহলে এটা (তার জন্য ওযু করা) ওয়াজিব বলে ধারণা খুবই শক্তিশালী। (আল-শারহ আল-মুমতি',১/২৩৪)
পরিশেষে প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে মাসয়ালাটি মতানৈক্যপূর্ণ। তবে আহালুল ইমামগনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী যদি কেউ কোনো আবরণের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কামোদ্দীপনার সাথে হোক আর স্বাভাবিক ভাবে হোক সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু করতে হবে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
আহালুল আলেমগনের সমস্ত মতামতগুলো একসাথে করলে এ বিষয়ে চারটি মতামত পাওয়া যায়। যেমন-
(১). যদি কোন ব্যক্তি স্বহস্তে সরাসরি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে। এখানে স্পর্শ দ্বারা উদ্দেশ্য হাতের তালুর উপর বা নিম্নভাগ দ্বারা কোন প্রকার আবরণ ছাড়াই স্পর্শ করা। ( এটিই সাহাবা ও তাবি‘ঈগণের একটি দল এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ অভিমত)। তারা দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন, বুসরাহ বিনতু সফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন দেখুন তিরমিযী ৮২, নাসায়ী ১৬৩-৬৪, আবু দাঊদ ১৮১, আহমাদ ২৬৭৪৯, ২৭৭৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৯১)
(২). যদি কোন ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবেনা এটি যেভাবেই হোক। (এটি ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মত তিনি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন তালক আল-হানাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাদীস তিরমিযী ৮৫, নাসায়ী ১৬৫, আবু দাঊদ ১৮২,)। তবে কেউ কেউ হাদীসটি দূর্বল বলেছেন আবার কেউ কেউ হাদীসটি মানসূখ হওয়ার দাবী করেছেন।আবু দাউদের, ১৮১ নং হাদীসের টিকা মিশকাতুল মাসাবিহ,৩১৯-২০ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
(৩). কেউ যদি উত্তেজনাবশত ইচ্ছে করে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে,অনিচ্ছাকৃত হলে ওযু ভঙ্গ হবেনা।(জাবির ইবনু যায়দ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বশতঃ লজ্জাস্থাহোত লেগে গেল ওযু ভঙ্গ হবে না। (নায়লুল আওত্বার আবু দাউদের ১৮১ নং হাদীসের টিকা শায়খ ইবনে উসাইমীন এটিকে বিবেচনা করেছেন, ইবনে উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি,১/২৮৪ শারহে বুলূগ আল-মারম,১/২৫৯ শাইখ আলবানী,তামামুল মিন্নাহ ১০৩ পৃ.)।
(৪). যদি কোন ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। এটি ইচ্ছে অনিচ্ছা, সরাসরি অথবা আবরণ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই মতের পক্ষপাতী ছিলেন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২৭৫৯ এবং ৯৯৪৬৮)
উপরোক্ত চারটি মতের মধ্যে হাদীসের আলোকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য মত হলো, কোন ব্যক্তি যদি তার লজ্জাস্থান আবরণ ছাড়া সরাসরি স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু কাপড়ের আড়াল থেকে করলে অযু নষ্ট হবেনা, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শ করুক বা না করুক সব অবস্থায় তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। এ মতের পক্ষে অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরামগণের আসার বর্ণিত আছে। যাদের মতে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ওয়াজিব হবে। তারা হলেনঃ উমার ইবনুল খাত্তাব, তার পুত্র ইবনু উমার, আবু আইয়ুব আনসারী, যায়দ ইবনু খালিদ, আবু হুরাইরাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস, জাবির, আয়িশাহ, উম্মু হাবীবাহ, বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, সা‘দ আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত এবং ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত (রাঃ)। এছাড়া তাবেঈনদের থেকে রয়েছেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার, আত্বা ইবনু আবু রিবাহ, আবান ইবনু উসমান, মুজাহিদ, জাবির ইবনু যায়দ, যুহরী মুসআব ইবনু সা‘দ, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের বিশুদ্ধ মত, হিশাম ইবনু উরওয়াহ, আওযাঈ, শামের অধিকাংশ আলিম। এছাড়া ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম মালিকের প্রসিদ্ধ মত। অর্থাৎ, জমহুর উলামায়ে কেরাম এ মতের পক্ষে রয়েছেন। এই মতের পক্ষে একাধিক বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে যেমন:-
বুস্রাহ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার লিঙ্গ স্পর্শ করলে সে যেন ওযু করে। ( হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবু দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, দারিমী, তায়ালিসি, ত্বাবারানী সাগীর গ্রন্থে বুসরাহ থেকে একাধিক সনদে মারফূভাবে। হাদীসটিকে আরো যারা সহীহ বলেছেন তারা হলেন, ইমাম ইবনু মাঈন, হাযিমী, বায়হাক্বী ও ইবনু হিব্বান প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম। শায়খ আলবানী একে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া, হা/ ১১)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এটিই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম দেখুন। (তিরমিযী ৮২, নাসায়ী ১৬৩-৬৪, আবু দাঊদ ১৮১, আহমাদ ২৬৭৪৯, ২৭৭৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৯১, দারিমী ৭২৪-২৫ মিশকাত ৩১৯, ইরওয়াহ ১১৬, সহীহ আবূ দাউদ ১৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪৭৯)
অপর বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَىْ ذَكَرِهِ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا شَيْءٌ فَلْيَتَوَضَّأْ ‘যখন তোমাদের কেউ নিজ পুরুষাঙ্গের প্রতি হাত বাড়াবে তখন যদি উভয়ের মধ্যে কোন আড় না থাকে, তাহলে সে যেন ওযু করে।' (মুসনাদুশ শাফেঈ হা/৮৮; দারাকুৎনী হা/৬; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২৩৫ হাদীসটি সহীহ)
অন্যত্র আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ مَسَّتْ فَرْجَهَا فَلْتَتَوَضَّأْ ‘যে ব্যক্তি (পুরুষ) তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযু করে এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে যেন ওযূ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৭৬, সনদ হাসান)। এই হাদীসের আলোকে ইমাম আল-শাওকানী এবং শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, লিঙ্গে হাতের ছোঁয়া লাগা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু হাতের কব্জির উপরের অংশের ছোঁয়া লাগলে ওযু নষ্ট হবে না। (ইবনে উসাইমীন আল- শারহুল মুমতি,১/২২৯)
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে শাইখ বলেছেন, কোনো আবরণ ছাড়া লজ্জাস্থান অর্থাৎ অন্ডকোষ স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট হবে,
এমনকি ইচ্ছা ব্যতীতও হলেও। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন লজ্জাস্থান স্পর্শ করা অযু ভঙ্গ করে এবং তিনি কামনা-বাসনাকে শর্ত দেয়নি, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,'যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে, সে যেন অজু করে। সুতরাং, যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, তার জন্য অজু করা ওয়াজিব এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তার জন্যেও যেন ওযু করা ওয়াজিব। অতএব, সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু সম্পূর্ণ রূপে ইচ্ছা ও ইচ্ছা ছাড়াই বাতিল হয়ে যায়, সে পুরুষ হোক বা নারী। (বিন বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৭৪৭৪)
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে তবে তার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে স্পর্শ করুক বা না করুক সব অবস্থায় তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। যদি সে এটাকে ইচ্ছা করে স্পর্শ করে, তাহলে এটা (তার জন্য ওযু করা) ওয়াজিব বলে ধারণা খুবই শক্তিশালী। (আল-শারহ আল-মুমতি',১/২৩৪)
পরিশেষে প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে মাসয়ালাটি মতানৈক্যপূর্ণ। তবে আহালুল ইমামগনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী যদি কেউ কোনো আবরণের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে তার ওযু নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কামোদ্দীপনার সাথে হোক আর স্বাভাবিক ভাবে হোক সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু করতে হবে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
Last edited by a moderator: