কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য জীবিতদের কতিপয় করণীয় রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোযা রাখা।
ক) মানতের রোযা: এ ব্যাপারে প্রায় সকল আলেম একমত যে, মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের রোযা থাকে তবে তার ওয়ারিসগণ তা পালন করতে পারবে। কারণ এ ব্যাপারে হাদীসগুলো স্পষ্ট। যেমন:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,এক মহিলা সাগরে সফর কালে আসন্ন বিপদ দেখে মানত করল যে আল্লাহ যদি তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করেন তবে একমাস রোযা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করলে সে উক্ত রোযা না রেখেই মারা যায়। তখন তার এক নিকটাত্মীয় (বোন অথবা মেয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল। তিনি প্রশ্ন করলে, তার উপর কোন ঋণ থাকলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি বললেন: আল্লাহর ঋণ তো পরিশোধ করা আরও বেশি হকদার। অন্য বর্ণনায় আছে: তিনি তাকে আরও বললেন:" তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা পালন কর।" [1]
মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা পালন করার আরেকটি হাদীস:
সাদ ইবনে উবাদা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন: আমার মা মৃত্যু বরণ করেছেন কিন্তু তার উপর মানত ছিল। তিনি তাকে বললেনে: তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ কর। ”[2]
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা রাখা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
খ) মৃতের পক্ষ থেকে রামাযানের ফরয রোযা রাখা:
মৃতের পক্ষ থেকে ফরয রোযা পালন করা যাবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম শাফঈ, ইবনে হাযম সহ একদল মনিষী বলেন, মৃতের পক্ষ থেকে মানতের এবং রামাযানের ফরয রোযা উভয়টি পালন করা যাবে। কারণ, এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যে ব্যক্তি এমন মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যার উপর রোযা বাকি আছে তার ওলী তথা নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে।" [3] যেহেতু এ হাদীসে সাধারণভাবে রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে তাই মৃতের বাকি থাকা রোযা চাই মানতের হোক বা রামাযানের কাযা হোক তার নিকটাত্মীয়গণ আদায় করতে পারে। |
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ কতিপয় আলেম বলেন, মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা ছাড়া আর কোন রোযা রাখা যাবে না। এ পক্ষের আলেমগণ উপরোক্ত হাদীসের ব্যাপারে বলেন, এটাকে মানতের রোযা হিসেবে ধরতে হবে। কারণ, অন্যান্য হাদীসগুলোর মাধ্যমে এটাই বুঝা যায় এবং তারা তাদের মতের সমর্থনে আর আয়েশা এবং ইবনে আব্বাস রা.এর সিদ্ধান্ত এবং মতমতকেও প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। যেমন:
আয়েশা রা. এর সিদ্ধান্ত: উমরা রা. বর্ণনা করেন, তার মা মারা যান এবং তার উপর রামাযানের রোযা বকি ছিল। আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: আমি কি আমার মায়ের পক্ষ থেকে উক্ত রোযাগুলো পুরা করব? তিনি বললেন: না। বরং প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে অর্ধ সা (প্রায় সোয়া কেজি চাল, গম ইত্যাদি) খাদ্য দ্রব্য প্রদান কর। [4]
ইবনে আব্বাস রা. এর সিদ্ধান্ত: কোন যদি ব্যক্তি রামাযানে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে এবং এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তবে তার পক্ষ থেকে খাবার দিতে হবে এবং তা আর কাযা করার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মৃতের উপর মানতের রোযা বাকি থাকে তবে তার নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে তা কাযা করবে। [5]
উক্ত মত বিরোধের সমাধানে আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. এর মত:
আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দী আলবানী রাহ. “আহকামুল জানাইয কিতাবে উভয় পক্ষের মতামত ও প্রমাণাদী আলোচনা করার পর বলেন:
“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এবং উম্মতের শ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্বাস রা. যে সমাধান দিয়েছেন এবং ইমামুস সুন্নাহ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল যে মত গ্রহণ করেছেন তার প্রতি মনের পরিতৃপ্তি আসে এবং অন্তর ধাবিত হয়। আর এ মাসআলায় এটাই সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ এবং মধ্যপন্থী মত। এর মাধ্যমে কোন হাদীসকেই বাদ দেয়া হয় না বরং সবগুলোর হাদীসের সঠিক অর্থ বুঝতে পারার সাথে সাথে সবগুলোর প্রতি আমল হয়।” [6]
মোটকথা:
১) মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের রোযা বাকি থাকে তবে তার অবিভাবকগণ তা পুরণ করবে।
২) মৃত ব্যক্তির উপর যদি রামাযানের রোযা বাকি থাকে তবে সব চেয়ে মধ্যমপন্থী কথা হল, তার অবিভাবকগণ তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে আধা সা বা প্রায় সোয়া এক কেজি খাদ্যদ্রব্য প্রদান করবে।
[1] মুসনাদ আহমাদ-(মুসনাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের অন্তর্ভূক্ত) আল্লামা আলবানী বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ, দেখুন আহকামুল জানাইয
[2] সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ, কোন ব্যক্তি হঠাৎ মৃত্যু বরণ করলে তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা এবং মানত পুরা করা মুস্তাহাব।
[3] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।
[4] তাহাবী এবং ইবন হাযাম, ইবনুত তুরকুমানী বলেন, এ সনদটি সহীহ।
[5] এটি বর্ণনা করেন আবুদাউদ। এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
[6] আহকামুল জানায়িয, আলবানী রাহ.।
ক) মানতের রোযা: এ ব্যাপারে প্রায় সকল আলেম একমত যে, মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের রোযা থাকে তবে তার ওয়ারিসগণ তা পালন করতে পারবে। কারণ এ ব্যাপারে হাদীসগুলো স্পষ্ট। যেমন:
عن ابن عباس رضي الله عنه: (أن امرأة ركبت البحر فنذرت إن الله تبارك وتعالى أنجاها أن تصوم شهرا، فأنجاها الله عز وجل، فلم تصم حتى ماتت، فجاءت قرابة لها )إما أختها أو ابنتها (إلى النبي (ص)، فذكرت ذلك له، فقال: أرأيتك لو كان عليها دين كنت تقضينه؟ قالت: نعم قال: فدين الله أحق أن يقضى
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,এক মহিলা সাগরে সফর কালে আসন্ন বিপদ দেখে মানত করল যে আল্লাহ যদি তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করেন তবে একমাস রোযা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করলে সে উক্ত রোযা না রেখেই মারা যায়। তখন তার এক নিকটাত্মীয় (বোন অথবা মেয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল। তিনি প্রশ্ন করলে, তার উপর কোন ঋণ থাকলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি বললেন: আল্লাহর ঋণ তো পরিশোধ করা আরও বেশি হকদার। অন্য বর্ণনায় আছে: তিনি তাকে আরও বললেন:" তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা পালন কর।" [1]
মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা পালন করার আরেকটি হাদীস:
أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ - رضى الله عنه - اسْتَفْتَى رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ وَعَلَيْهَا نَذْرٌ . فَقَالَ « اقْضِهِ عَنْهَا »
সাদ ইবনে উবাদা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন: আমার মা মৃত্যু বরণ করেছেন কিন্তু তার উপর মানত ছিল। তিনি তাকে বললেনে: তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ কর। ”[2]
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা রাখা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
খ) মৃতের পক্ষ থেকে রামাযানের ফরয রোযা রাখা:
মৃতের পক্ষ থেকে ফরয রোযা পালন করা যাবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম শাফঈ, ইবনে হাযম সহ একদল মনিষী বলেন, মৃতের পক্ষ থেকে মানতের এবং রামাযানের ফরয রোযা উভয়টি পালন করা যাবে। কারণ, এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
« مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ »
"যে ব্যক্তি এমন মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যার উপর রোযা বাকি আছে তার ওলী তথা নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে।" [3] যেহেতু এ হাদীসে সাধারণভাবে রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে তাই মৃতের বাকি থাকা রোযা চাই মানতের হোক বা রামাযানের কাযা হোক তার নিকটাত্মীয়গণ আদায় করতে পারে। |
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ কতিপয় আলেম বলেন, মৃতের পক্ষ থেকে মানতের রোযা ছাড়া আর কোন রোযা রাখা যাবে না। এ পক্ষের আলেমগণ উপরোক্ত হাদীসের ব্যাপারে বলেন, এটাকে মানতের রোযা হিসেবে ধরতে হবে। কারণ, অন্যান্য হাদীসগুলোর মাধ্যমে এটাই বুঝা যায় এবং তারা তাদের মতের সমর্থনে আর আয়েশা এবং ইবনে আব্বাস রা.এর সিদ্ধান্ত এবং মতমতকেও প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। যেমন:
আয়েশা রা. এর সিদ্ধান্ত: উমরা রা. বর্ণনা করেন, তার মা মারা যান এবং তার উপর রামাযানের রোযা বকি ছিল। আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: আমি কি আমার মায়ের পক্ষ থেকে উক্ত রোযাগুলো পুরা করব? তিনি বললেন: না। বরং প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে অর্ধ সা (প্রায় সোয়া কেজি চাল, গম ইত্যাদি) খাদ্য দ্রব্য প্রদান কর। [4]
ইবনে আব্বাস রা. এর সিদ্ধান্ত: কোন যদি ব্যক্তি রামাযানে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে এবং এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তবে তার পক্ষ থেকে খাবার দিতে হবে এবং তা আর কাযা করার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মৃতের উপর মানতের রোযা বাকি থাকে তবে তার নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে তা কাযা করবে। [5]
উক্ত মত বিরোধের সমাধানে আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. এর মত:
আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দী আলবানী রাহ. “আহকামুল জানাইয কিতাবে উভয় পক্ষের মতামত ও প্রমাণাদী আলোচনা করার পর বলেন:
“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এবং উম্মতের শ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্বাস রা. যে সমাধান দিয়েছেন এবং ইমামুস সুন্নাহ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল যে মত গ্রহণ করেছেন তার প্রতি মনের পরিতৃপ্তি আসে এবং অন্তর ধাবিত হয়। আর এ মাসআলায় এটাই সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ এবং মধ্যপন্থী মত। এর মাধ্যমে কোন হাদীসকেই বাদ দেয়া হয় না বরং সবগুলোর হাদীসের সঠিক অর্থ বুঝতে পারার সাথে সাথে সবগুলোর প্রতি আমল হয়।” [6]
মোটকথা:
১) মৃত ব্যক্তির উপর যদি মানতের রোযা বাকি থাকে তবে তার অবিভাবকগণ তা পুরণ করবে।
২) মৃত ব্যক্তির উপর যদি রামাযানের রোযা বাকি থাকে তবে সব চেয়ে মধ্যমপন্থী কথা হল, তার অবিভাবকগণ তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে আধা সা বা প্রায় সোয়া এক কেজি খাদ্যদ্রব্য প্রদান করবে।
আরও জানতে ডাউনলোড করুন - মৃত্যু ও কবর সম্পর্কে করণীয় ও বর্জনীয়
[1] মুসনাদ আহমাদ-(মুসনাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের অন্তর্ভূক্ত) আল্লামা আলবানী বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ, দেখুন আহকামুল জানাইয
[2] সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ, কোন ব্যক্তি হঠাৎ মৃত্যু বরণ করলে তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা এবং মানত পুরা করা মুস্তাহাব।
[3] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।
[4] তাহাবী এবং ইবন হাযাম, ইবনুত তুরকুমানী বলেন, এ সনদটি সহীহ।
[5] এটি বর্ণনা করেন আবুদাউদ। এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
[6] আহকামুল জানায়িয, আলবানী রাহ.।