সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Habib Bin Tofajjal

মুসলিম নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকার অপরিহার্যতা - ১

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
Q&A Master
Salafi User
LV
17
 
Awards
33
Credit
16,583
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সত্য দ্বীন ও হেদায়াত সহকারে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যাতে তিনি মানব জাতিকে তাদের প্রতিপালকের ইচ্ছায় অন্ধকার পথ থেকে বের করে সত্য-সঠিক আলোর পথে পরিচালিত করেন। তাঁর নির্দেশনাবলী পালন ও নিষেধকৃত কাজগুলো থেকে বিরত থেকে, তাঁর প্রতি পূর্ণ নম্র ও বিনয়ী হয়ে তাঁর ইবাদতকে বাস্তবায়ন করার জন্য আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে প্রেরণ করেন। তিনি নম্র ও বিনয়ী হয়ে আল্লাহর ইবাদতের বাস্তবায়নকে আত্মার কামনা ও প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য দিবেন। মহৎ চারিত্রিক গুণাবলীকে পূর্ণতা দানকারী এবং এর সার্বিক মাধ্যম অবলম্বন করে তার প্রতি আহবানকারী ও অসৎ চারিত্রিক গুণাবলীকে ধ্বংসকরী এবং তাতে নিপতিত হওয়ার সকল পথের সতর্ককারী হিসাবে আল্লাহ তাকে প্রেরণ করেন। যার ফলে সব দিক থেকে পরিপূর্ণ রূপে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শরী‘আতের আগমন ঘটেছে, যার বিন্যাস ও পূর্ণতা সাধনে কোন সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী হননি। কারণ এটা মহা বিজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। যার দ্বারা বান্দাদের সংশোধন করেছেন, তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে।

আর মহৎ চারিত্রিক গুণাবলী যা দিয়ে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে পাঠান হয়েছে সেটাতো উত্তম চরিত্র, লজ্জার ভূষণ। যাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈমানের অন্যতম শাখা হিসাবে গণ্য করেছেন। এটা অনস্বীকার্য যে, শরী‘আত নির্দেশিত নারীর লজ্জাশীলতাও শালীনতা ও সেই চারিত্রিক গুণে বিভূষিত হওয়া উচিৎ যা তাকে সন্দেহের উপকরণ ও ফিতনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে দূরে রাখবে। আর এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, নারীর চেহারা ঢেঁকে পর্দা করা ও ফিতনার স্থানসমূহ আবৃত রাখাই বড় শালীনতা ও লজ্জাশীলতা, যা সে করবে এবং সে গুণে অলংকৃত হবে। যাতে ফিতনা থেকে নিরাপদ ও দূরে থাকতে পারে।

এই পবিত্র অহী ও রেসালাতের দেশ, শালীনতা ও লজ্জাশীলতার পূণ্যময় ভূমির মানুষেরা সুদৃঢ সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। নারীরা প্রয়োজনে ঢিলা-ঢালা পোশাক পরে বড় চাদরে আবৃত হয়ে পর্দা সহকারে বাইরে বের হ’তেন এবং আগন্তুক গায়র মাহরাম পুরুষদের সাথে মেলা-মেশা থেকে বিরত থাকতেন। আর আরবের অধিকাংশ শহরে এই নিয়মই চালু আছে। ফালিল্লাহিল হামদ। কিন্তু পর্দা সম্পর্কে কতিপয় ব্যক্তির আলোচনা ও তাদের আমলহীন দর্শন থেকে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। তারা নারীদের চেহারা উন্মুক্ত করে চলাফিরা করাকে কিছুই মনে করে না। ফলে কোন কোন মানুষের মনে নারীর পর্দা ও তার চেহারা ঢাকা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে,
নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকা ওয়াজিব, না মুস্তাহাব? নাকি অনুসরণীয় কোন অভ্যাস ও প্রথাকে অনুসরণ করে। আর ওয়াজিব না মুস্তাহাব তার কোন বিধানও নির্ণয় করা হচ্ছে না। এই সন্দেহ দূরীকরণ ও বাস্তব সত্য বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্যই আল্লাহর প্রতি আশা রেখে সহজভাবে তাঁর বিধান বর্ণনা করার ইচ্ছায় লিখা আরম্ভ করছি। যাতে সত্য সত্য রূপে প্রকাশিত হয়। আল্লাহ আমাদের সত্যকে সত্য রূপে দেখার ও তাঁর অনুসরণকারী হিসাবে সঠিক দিক নির্দেশনা দানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আর মিথ্যাকে বাতিল রূপে গণ্য করে তা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।

হে মুসলিম! জেনে রাখুন, আগন্তুক গায়র মাহরাম পুরুষদের থেকে নারীর পর্দা করা ও তার মুখমন্ডল আবৃত রাখা একটি আবশ্যিক বিষয়। এর আবশ্যকতার প্রমাণ বহন করে স্বয়ং আল্লাহর কিতাব, নবীর সুন্নাত বা হাদীস, বিশুদ্ধ মতামত ও বহুল প্রচলিত যুক্তি।

কুরআনের দলীল সমূহ :

প্রথম দলীল : আল্লাহর বাণী

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلاَ يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّ وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-

‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, তারা যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতৃপুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সকলকাম হ’তে পার’ (নূর ৩১)।

অত্র আয়াত দ্বারা পর পুরুষদের থেকে নারীর পর্দার আবশ্যকতার উপর বহু দিক দিয়ে দলীল গ্রহণ করা যায়।

(ক) আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করার নির্দেশ দান করেছেন। লজ্জাস্থান হেফাযত করার সাথে সাথে তা সংরক্ষণ হওয়ার মাধ্যমগুলো হেফাযত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে কোন জ্ঞানী সন্দেহে পতিত হবে না যে সে মাধ্যমগুলোর অন্যতম হ’ল, নারীর চেহারা আবৃত করা। কেননা চেহারা খুলে রাখাই তার দিকে তাকানোর কারণ। তার সৌন্দর্য নিয়ে ভাবা ও আনন্দ পাওয়া এবং এসবই তার সাথে মেলা-মেশার পর্যায়ে পৌঁছার কারণ।

হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, فَزِنَى الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَى اللِّسَانِ النُّطْقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِى وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ أَوْ يُكَذِّبُهُ ‘চোখদ্বয়ের যেনা হ’ল নারীর প্রতি তাকান। জিহবার যেনা হচ্ছে কথা বলা। প্রবৃত্তি (যেনার) আশা-আকাঙ্খা করে। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়ন করে অথবা তাকে যেনা থেকে বিরত রাখে’ (বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬)। অতএব মুখমন্ডল ঢাকাই যখন লজ্জাস্থান হেফাযতের মাধ্যম। সুতরাং তা অবশ্য পালনীয়। কেননা মাধ্যম সমূহ ও মূল লক্ষ্যের বিধান অভিন্ন।

(খ) আল্লাহর বাণী وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ ‘আর তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে’ (নূর ৩১)। আর ওড়না হ’ল যা দ্বারা নারী মাথা আবৃত করে। যেমন বোরকার নিকাব। সুতরাং যখন ওড়না দ্বারা বক্ষদেশ ও গ্রীবা আবৃত করা অবশ্য পালনীয় হবে, তখন চেহারা আবৃত করাও অবশ্য পালনীয় হবে। চেহারা ঢাকা হয়তো উপরোক্ত দলীল দ্বারা আবশ্যক, নতুবা কিয়াস দ্বারা। কারণ বক্ষদেশ ও গ্রীবা ঢাকা ওয়াজিব হ’লে চেহারা ঢাকা ওয়াজিব হওয়াটা আরো যৌক্তিক। কেননা চেহারাই হ’ল সৌন্দর্য ও ফিতনার কেন্দ্রভূমি। মানুষের মধ্যে সৌন্দর্য পিয়াসীরা কেবল মুখমন্ডল সম্বন্ধে জানতে চায়। সুতরাং মুখমন্ডল সুন্দর হ’লে দেহের অন্যান্য অঙ্গের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাকায় না। আর এ কারণে যখন বলা হবে মেয়েটি সুন্দরী, এর দ্বারা শুধু মুখমন্ডলের সৌন্দর্যের কথাই বুঝা যায়। সুতরাং বুঝা গেল মুখমন্ডলই হ’ল চাহিদা ও সংবাদ প্রদানের দিক দিয়ে সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্র। বিষয়টি যদি এমনই হয়, তাহ’লে কিভাবে বুঝা যায় যে, এই বিজ্ঞানময় শরী‘আত বক্ষদেশ ও গ্রীবা ঢাকার আদেশ করবে আর মুখমন্ডল খোলা রাখার অনুমতি প্রদান করবে?

(গ) আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাধারণত প্রকাশমান সৌন্দর্য ব্যতীত অন্য সকল সৌন্দর্য-শোভা প্রকাশ করতে নিষেধ করলেন। সেটা হ’ল যা প্রকাশ হওয়া আবশ্যক। যেমন পোশাকের বাহ্যিক দিক (যা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়)। এজন্য আল্লাহ বলেছেন, সাধারণত যা প্রকাশ পায়; সাধারণত তারা যা প্রকাশ করে বলেননি। তিনি আবার কতিপয় (মাহরাম) ব্যক্তি ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করলেন। ২য় বার নিষেধ করাটা প্রমাণ করে যে, ২য় বারে নিষিদ্ধ শোভা ১ম বারে নিষিদ্ধ শোভা থেকে আলাদা। ১ম শোভা হ’ল বাহ্যিক সৌন্দর্য, যা প্রত্যেক নারী প্রকাশ করে এবং তা গোপন রাখা সম্ভব নয়। আর ২য় শোভা হ’ল গোপন সৌন্দর্য, যা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্যদের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়। সেটা আল্লাহর সৃষ্ট হোক যেমন চেহারা অথবা মানব সৃষ্ট হোক যেমন অভ্যন্তরীণ সুন্দর পোশাক যা দ্বারা সে নিজেকে শোভামন্ডিত করে তোলে। যদিও এই সৌন্দর্য বিশেষ ব্যক্তিদের নিকট প্রকাশ প্রত্যেকের জন্য জায়েয। কিন্তু প্রথমটির মতো সর্বসাধারণের জন্য নয়। দ্বিতীয় সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে (নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে) ব্যতিক্রম হ’ল সর্বজনবিদিত উপকারিতা।

(ঘ) আল্লাহ তা‘আলা নারীদের তাদের গোপন শোভা প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন এমন পুরুষদের সামনে যাদের যৌন ক্ষমতা নেই। আর তারা হ’ল ঐ সকল দাস যাদের যৌন উত্তেজনা নেই। আর এমন ছোট শিশু, যারা যৌবনে পদার্পণ করেনি এবং নারীদের আকর্ষণীয় অঙ্গগুলোর ব্যাপারে অনুভূতি হয়নি। এর দ্বারা দু’টি বিষয় প্রমাণিত হয়।

  • নারীদের গোপন শোভাগুলো এই দু’শ্রেণীর দূর সম্পর্কীয় মানুষ ছাড়া কারো সামনে প্রদর্শন করা হালাল নয়।
  • বিধান ও তার পরিধির কারণ নারীর সাথে ফিতনায় আপতিত হওয়ার আশংকার ওপর নির্ভরশীল। আর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে নারীর সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্র ও ফিতনার জায়গা হল তার মুখমন্ডল। যার ফলে তা আবৃত করা ওয়াজিব। যেন যৌনক্ষম পুরুষেরা তার চেহারা দেখে ফিতনায় নিপতিত না হয়।
(৫) আল্লাহর বাণী وَلاَ يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِن زِيْنَتِهِنَّ ‘তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে’ (নূর ৩১)।
অর্থাৎ মেয়েরা রাস্তায় এমন সজোরে হাঁটবে না যাতে তাদের পায়ে পরিহিত নুপুর ও গহনা যা দ্বারা পা অলংকৃত করে তার গোপনীয়তা প্রকাশ পায়। নারীদের নুপুর ও অনুরূপ গহনার শব্দ শুনে পুরুষদের ফিতনায় পতিত হওয়ার আসংকায় যখন তাদেরকে সজোরে পদক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন মুখমন্ডল খুলে কী করে রাস্তায় চলতে পারে?

কোনটা বেশী ভয়ংকর ফিতনা? যুবকের নারীর পায়ের গহনার শব্দ শুনা, সে যুবক জানে না সে কে ও তার সৌন্দর্যই বা কি? সে জানে না যে, সে যুবতী, না বৃদ্ধা? সুন্দরী না কুশ্রী? কোনটা বেশী ভয়ংকর ফিতনা? এটা, না-কি একজন যৌবন ভরা, মসৃণ ও কমনীয়া সুন্দরী নারীর প্রতি তাকানোতে, যা যৌনক্ষম প্রত্যেক পুরুষের দৃষ্টি কাড়ে ও ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে যায়। যা দ্বারা জানা যায় কোনটা অতি বড় ফিতনা এবং আবৃত করা ও গোপন রাখা অধিক উপযুক্ত।

২য় দলীল : আল্লাহর বাণী

وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاء اللَّاتِيْ لاَ يَرْجُوْنَ نِكَاحاً فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَّضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِيْنَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-

‘বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বর্হিবাস (বাহ্যিক পোশাক) খুলে রাখে; তবে এটা হ’তে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (নূর ৬০)। আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণের দিক হ’ল, ঐ সকল বৃদ্ধা নারী যাদের অধিক বয়সের কারণে পুরুষদের সাথে বিবাহের আগ্রহ নেই, তাদের পোশাক খুলে রাখাকে আল্লাহ তা‘আলা অপরাধ হিসাবে গণ্য করেননি। আল্লাহ গোনাহ গণ্য করবেন না এ শর্তে যে, শোভা-সৌন্দর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে নগ্নতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে হবে না। আরও জেনে রাখা দরকার যে, পোশাক খুলে রাখার অর্থ এই নয় যে, তারা উলঙ্গ অবস্থায় অবস্থান করবে। বরং এর অর্থ হ’ল সাধারণ জামা-চাদরের উপরের পোশাক খুলে রাখা যা সাধারণত ঢেকে রাখা হয় না, বরং অধিক সময় প্রকাশ থাকে যেমন মুখমন্ডেল ও কব্জিসহ দু’হাত।

অতএব বৃদ্ধা নারীদের জন্য অনুমোদিত উল্লিখিত পোশাক হ’ল লম্বা জামা বা দীর্ঘ চাদর, যা গোটা দেহ ঢেকে ফেলে। আর এই বৃদ্ধাদের ব্যাপারে বিধানকে বিশেষিত করাটাই প্রমাণ করে, যে সকল যুবতী বিবাহে আগ্রহী তাদের বিধান এর বিপরীত। আর যদি পোশাক খুলে রাখা ও জামা-ওড়না পরার ক্ষেত্রে সকল নারীর বিধান একই হয়, তাহ’লে বিশেষ করে বৃদ্ধাদের কথা আলোচনা করার যৌক্তিকতা থাকতো না।

আল্লাহর বাণী, غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِيْنَةٍ ‘সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে’ (নূর ৬০)। যুবতী নারী যে বিবাহের কামনা করে তার পর্দা ওয়াজিব হওয়ার অন্য একটি দলীল। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী যখন তার চেহারা খুলে রাখে সে তার সৌন্দর্য প্রকাশের দ্বারা নগ্নতার প্রদর্শনের ইচ্ছা করে। আর তার রূপ প্রকাশের মাধ্যমে তা পুরুষকে অবহিত করতে ও বিশেষভাবে তার প্রশংসা করা হোক এটাই সে চায়। এর বিপরীত বিষয় বিরল, আর এ বিরলের জন্য বিধান নয়।

৩য় দলীল : আল্লাহর বাণী-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلاَبِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْراً رَّحِيْماً-

‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা অধিক সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (আহযাব ৫৯)।

প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের এ মর্মে নির্দেশ দেন যে, যখন তারা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হবে, তখন অবশ্যই একটা বড় চাদর দিয়ে মাথার উপর থেকে মুখমন্ডল ঢেকে দিবে এবং একটা চোখ খুলে রাখবে। ছাহাবায়ে কেরামের তাফসীর দলীল হিসাবে গণ্য। অধিকন্তু কতিপয় আলেম হাদীসটি মারফূ হওয়ার দাবী করেছেন। ইবনে আববাসের বাণী ويبدين عينا واحدا ‘কেবল একটা চোখ খোলা রাখবে’। এক চোখ খোলা রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে, কেবল পথ দেখার যরূরী প্রয়োজনে। যদি প্রয়োজন না হ’ত তাহ’লে এক চোখ খোলা রাখার অনুমতিও দেওয়া হ’ত না।

আর جلباب হ’ল বড় চাদর যা ওড়নার ওপর পরা হয়। যেমন আবা (এক প্রকার ঢিলা জামা বিশেষ)।

উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর আনছারী নারীরা যখন বাইরে বের হ’তেন তাদের মাথার উপর কালো কাপড় পরতেন, যেন তাদের মাথার উপর কালো কাক স্থির বসে আছে। আবু ওবাইদা সালমানী সহ অন্যান্যরা উল্লেখ করেন, মুসলিম নারীরা তাদের মাথার উপর দিয়ে বড় চাদর ঝুলিয়ে নিতেন, যাতে রাস্তা দেখার জন্য চোখদ্বয় ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ পেত না।

৪র্থ দলীল : আল্লাহর বাণী

لَّا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِيْ آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلاَ أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلاَ نِسَائِهِنَّ وَلاَ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ وَاتَّقِيْنَ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْداً-

নবী পত্নীদের জন্য তাদের পিতৃগণ, পুত্রগণ, ভ্রাতৃস্পুত্রগণ ভগ্নিপুত্রগণ, সেবিকাগণ এবং তাদের অধিকার ভুক্ত দাস-দাসীগণের তা পালন না করা অপরাধ নয়। হে নবী-পত্নীগণ! আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করেন’ (আহযাব ৫৫)। হাফেয ইবনে কাছীর বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নারীদেরকে পর-পুরুষদের থেকে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়ায় এ কথা স্পষ্ট হ’ল যে, এ সকল নিকট আত্মীয়দের থেকে পর্দা করা আবশ্যক নয়। যেমন আল্লাহ সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ এসকল লোকদেরকে পৃথক করেছেন। কুরআন কারীমের উল্লিখিত চারটি দলীল পর পুরুষের থেকে মহিলাদের পর্দা ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয়। আর প্রথম আয়াতটি নারীদের পর্দা ফরয হওয়ার বিষয়টি পাঁচটি দিক দিয়ে শামিল করে।

[চলবে]
মূল : মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল উছায়মীন
অনুবাদ : আব্দুর রহীম বিন আবুল কাসেম​
 
Last edited:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,339Threads
Total Messages
17,179Comments
Total Members
3,673Members
Latest Messages
jahidhashanLatest member
Top